যখন আমরা কোনও খাদ্য গ্রহণ করি, আমরা ভাবি ওই খাদ্যের সমস্ত পুষ্টিগুণ আমাদের শরীর গ্রহণ করছে। কিন্তু আদতে তা হয় না। হজম হল এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে আমাদের শরীর খাদ্য থেকে পর্যাপ্ত পুষ্টিগুণ গ্রহণ করতে সক্ষম হয়। এটি প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত জটিল। আমাদের শরীরে থাকা অনুসেচক, অঙ্গের কার্যক্ষমতা, এমনকী কতটা ভালভাবে চিবিয়ে খাওয়া হচ্ছে, এই সবকিছুই আমাদরে হজম প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে। আবার হজম প্রক্রিয়া কতটা ভাল ভাবে কাজ করছে, তা সরাসরি শরীরের জৈব শোষণ ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। পাশাপাশি প্রভাবিত হয় উৎসেচক উৎপাদন এবং অঙ্গ সঞ্চালনের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়াও। বলা যেতে পারে গোটা বিষয়টাই পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত।
খাদ্য থেকে পুষ্টিগুণ আলাদা করার পরেই শরীর সেই পুষ্টিকে কাজে লাগাতে পারে। এই প্রক্রিয়া শুরু হয় চিবিয়ে খাওয়ার থেকে। যাকে সাহায্য করে মুখ নিঃসৃত লালা। পাচনতন্ত্রের মধ্যেও একই প্রক্রিয়া চলে, যেখানে খাদ্যগুলি দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে যায় – ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্ট এবং মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট। এই পুষ্টি শোষিত হয় অন্ত্রাশয়ের দেওয়ালে এবং ছড়িয়ে পড়ে রক্তের মধ্যে।
ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্টস বনাম মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস
খাদ্য থেকে নির্গত পুষ্টিকে দুটি ভাগে বিভক্ত করা যায়। ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্টস এবং মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস। ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্ট হল প্রধান পুষ্টিগুণ যা মূলত পাওয়া যায় কার্বোহাইড্রেটস যুক্ত খাদ্য (ভাত, গম, জোয়ার, বাজরা, রাগি, চিনি), প্রোটিন যুক্ত খাদ্য (ডিম, মাছ, মাংস, ডাল, ও দুগ্ধজাত দ্রব্য) এবং ফ্যাট জাতীয় খাদ্য (তেল, মাখন, ঘি) ইত্যাদির মধ্যে। এই ধরনের পুষ্টি শরীরের বৃদ্ধি এবং শক্তির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্টসের ৯০ শতাংশই শরীর ব্যবহার করতে পারে।
ভিটামিন, মিনারেলস, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং কিছু ফাইটোকেমিক্যালস (সবুজ শাক-সবজি, ফল – যেগুলি খুব কম পরিমানে হলেও শরীরের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন)- হল মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টসের অন্তর্ভূক্ত। আমাদের শরীর খুবই কম পরিমানে এই পুষ্টিগুলি ব্যবহার করতে সক্ষম। যার পোশাকি নাম বায়োঅ্যাভেইলঅ্যাবিলিটি অর্থাৎ জৈব শোষণ ক্ষমতা। বিভিন্ন বিষয়ের উপর এই ক্ষমতা নির্ভর করে। যেমন খাদ্যের উৎস, কীভাবে খাওয়ারটি তৈরি হচ্ছে ইত্যাদি।
যে যে বিষয় জৈব শোষণ ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে
এই জৈব শোষণ ক্ষমতা মানুষ অনুসারে পরিবর্তিত হয়। দু’জন আলাদা মানুষ সম পরিমান খাদ্য গ্রহণ করলেও, তাদের শরীর কিন্তু সেই খাদ্য থেকে ভিন্ন পরিমানে পুষ্টিগুণ শোষণ করে। বিভিন্ন বিষয়ের উপর এই শোষণ ক্ষমতা নির্ভর করে। যদি কোনও মানুষের শরীরে ভিটামিন বি ১২-এর খামতি থাকে, ওই ভিটামিনের অন্তর্গত প্রোটিন গ্রহণ করতে পারবে না। আরও অনেকগুলি বিষয় রয়েছে, যেগুলি জৈব শোষণ ক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে। সেগুলি হল –
হজমে সমস্যা
কোনও খাদ্যের মধ্যে থাকা পুষ্টিগুণের ২০ শতাংশ থেকে ৯৮ শতাংশ পর্যন্ত গ্রহণ করতে পারে শরীর। ক্রোহেন রোগ, কিংবা অন্ত্রে প্রদাহের মতো সমস্যা কিন্তু শরীরের পুষ্টি গ্রহণের ক্ষমতার উপরে বিশেষভাবে প্রভাব ফেলে।
সহায়ক পুষ্টি
কিছু পুষ্টি একসঙ্গে গ্রহণ করলে, তা একে অপরের জৈব ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এই যেমন, ক্যালসিয়াম সবথেকে কার্যকরী হয় যখন তা ম্যাগনেসিয়ামের সঙ্গে গ্রহণ করা হয়। ভিটামিন ডি, ক্যালসিয়াম শোষণ করতে সাহায্য করে। ভিটামিন সি-এর সঙ্গে উচ্চ আয়রণ যুক্ত খাদ্য গ্রহণ করলে, তা আয়রণের জৈব কার্যক্ষমতা বা়ড়িয়ে দেয়। সেই কারণে সুষম ডায়েট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আবার অন্যদিকে, কিছু মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস এমনও রয়েছে যা একসঙ্গে গ্রহন করতে, একে অপরের কার্যক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়। যেমন ট্যানিনস। এটি একটি পলিফেনল যা মজুদ থাকে চা এবং ওয়াইনের মধ্যে। এটি আবার আয়রনের কার্যক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়।
নিউট্রিশনাল সাপ্লিমেন্ট সাহায্য করে সুষম ডায়েটে
প্রকৃতভাবে বলতে গেলে, খাদ্যই হল পুষ্টির সর্বোত্তম উৎস। একটি সুষম ডায়েট শরীরে সঠিক পরিমানে মাইক্রো এবং ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্টস প্রদান করে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে সর্বদা সেই ডায়েটে থাকা সম্ভব হয়ে ওঠে না। এই ক্ষেত্রে নিউট্রিশনাল সাপ্লিমেন্টসগুলি সেই অভাব মিটিয়ে দিতে সক্ষম। অর্থাৎ সেই সমস্ত পুষ্টি আপনাকে গ্রহণ করতে হবে, যা আপনার শরীরে বিশেষভাবে প্রয়োজন।