class="post-template-default single single-post postid-19483 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

পিজি হাসপাতালের নবজাতক বিভাগের চেয়ারম্যান ডা. মো. আবদুল মান্নানের পরামর্শ : নবজাতকের স্বাস্থ্য পরিচর্যা

নবজাতকের লিভারে প্রদাহ নবজাতকের স্বাস্থ্য

নবজাতকের স্বাস্থ্য পরিচর্যা

সদ্য ভূমিষ্ঠ নবজাতকের বেঁচে থাকা ও সুস্বাস্থ্য নির্ভর করে মা-বাবা ও পরিবার-পরিজনের ওপর। এ জন্য জন্মমুহূর্তে তাৎক্ষণিক ও পরবর্তী পরিচর্যা গুরুত্বপূর্ণ। লিখেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নবজাতক বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আবদুল মান্নান

জন্মের পর প্রথম ২৮ দিন পর্যন্ত শিশুকে নবজাতক বলা হয়। এ সময় অনেক মা ও পরিবারের সদস্যদের দেখা যায় শিশুর যত্ন ও পরিচর্যা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়তে। বস্তুত এ সময় সঠিক যত্ন না পেলে শিশুটির নানাবিধ সমস্যা হতে পারে।

 

 

নবজাতকের স্বাস্থ্য জন্মের পরপরই করণীয়

► প্রসবের সঙ্গে সঙ্গে পরিষ্কার, শুষ্ক ও উষ্ণ কাপড় দিয়ে নবজাতকের পুরো শরীর মুছে দিতে হবে। ভেজা কাপড়টি সরিয়ে আরেকটি শুষ্ক ও উষ্ণ কাপড়ে মুড়িয়ে মায়ের ত্বকের সঙ্গে ত্বক লাগানো অবস্থায় রাখতে হবে।

► শালদুধ পান করাতে হবে।

► যথাসম্ভব গরম বা উষ্ণ রাখতে হবে। জন্মের পর ৭২ ঘণ্টার মধ্যে গোসল করানো যাবে না। এতে শরীরের তাপমাত্রা কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

► শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি স্বাভাবিক আছে কি না লক্ষ রাখতে হবে।

► নাভির যত্ন নিতে হবে।

► নবজাতকের ওজন কম হলে নবজাতক বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হয়ে বিশেষ যত্ন নিতে হবে। দুধ টেনে খেতে না পারলে মায়ের দুধ চেপে বের করে খাওয়াতে হবে। শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে হবে।

► ত্বক ও চোখের যত্ন নিতে হবে। যেকোনো বিপদচিহ্ন দেখামাত্র দ্রুত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মী বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিতে হবে।

 

  

নবজাতকের স্বাস্থ্য : মায়ের দুধ খাওয়ানোর নিয়ম

জন্মের পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এক ঘণ্টার মধ্যে বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। প্রথম কয় দিন মায়ের যে শালদুধ বের হয় সেটি কোনোভাবেই ফেলে দেওয়া উচিত নয়। এটি নবজাতকের জন্য প্রথম টিকা। প্রোটিন বেশি থাকার কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি রয়েছে এ দুধে। মায়ের দুধ ছাড়া মধু, চিনি বা অন্য কিছু খাওয়ানো যাবে না। জন্মের পর থেকে ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শুধু বুকের দুধ শিশুর জন্য যথেষ্ট। এর পর থেকে বুকের দুধের পাশাপাশি বাড়তি খাবার দিতে হবে।

 

সঠিক পদ্ধতি

► মা আরামদায়ক অবস্থানে, দেয়ালে বা বালিশে হেলান দিয়ে বসে অথবা শুয়ে বুকের দুধ খাওয়াবেন।

► শিশুর বুক ও পেট মায়ের ত্বকের সঙ্গে, মাথা, কাঁধ, পিঠ একই সমতলে রেখে সম্পূর্ণ মায়ের দিকে মুখ ফেরানো থাকবে।

► শিশুটিকে ভালোভাবে ধরে মুখ বড় করে হা করাবেন। নিচের ঠোঁট বাইরের দিকে উল্টানো থাকবে। চিবুক মায়ের স্তন স্পর্শ করবে।

► সঠিক অবস্থান ও সংযুক্তি নিশ্চিত করে বুকের দুধ দিলে নবজাতকের বুকের দুধ পানে একধরনের আওয়াজ বা শব্দ পাওয়া যাবে এবং দুধ পান শেষে নিজেই মায়ের স্তন ছেড়ে দেবে বা ঘুমিয়ে পড়বে।

► কম ওজনের নবজাতক বা অপরিণত নবজাতককে বুকের দুধ চেপে বের করে কাপ বা নলের সাহায্যে খাওয়ানো যেতে পারে।

► একটি সুস্থ শিশু দু-তিন ঘণ্টা পর পর অথবা ২৪ ঘণ্টায় ৮-১২ বার মায়ের বুকের দুধ পান করবে। নবজাতক যথেষ্ট দুধ পেলে দুধ পানের পর শান্তভাবে ঘুমিয়ে পড়বে এবং ২৪ ঘণ্টায় ছয় থেকে আটবার প্রস্রাব করবে।

 

মোড়ানোর পদ্ধতি

► শুকনা ও পরিষ্কার এক টুকরা বড় আকারের সুতি কাপড়ের ওপর নবজাতককে মুড়িয়ে নিতে হবে। লক্ষ রাখতে হবে, কাপড়ের কিছু অংশ যাতে মাথার ওপরের দিকে ও কিছু অংশ পায়ের নিচের দিকে বাড়তি থাকে।

► প্রথমে মাথার ওপরের দিকের কাপড়ের বাড়তি অংশ দিয়ে নবজাতকের মাথা কপাল পর্যন্ত ঢেকে নিতে হবে। কাপড়ের ওপরের দুই কোনা দুই কাঁধের ওপর এসে কাঁধ ঢেকে যাবে।

► এবার পায়ের দিকের কাপড়ের বাড়তি অংশ দিয়ে পা ঢেকে দিতে হবে। শরীরের দুই পাশের বাড়তি কাপড় দিয়ে বুক ও পেট ভালোভাবে ঢেকে দিতে হবে।

► পরিপূর্ণভাবে মোড়ানোর পর শিশুকে গরম রাখার জন্য মায়ের বুকে দিতে হবে এবং শালদুধ খাওয়ানোর চেষ্টা করতে হবে।

► নবজাতককে যে ঘরে রাখা হবে তার তাপমাত্রা ২৮০-৩০০ সেন্টিগ্রেডের মধ্যে রাখাই উত্তম। বাইরের বাতাস আসে এ রকম ঘরে শিশুকে না রাখাই উচিত। কাপড় পরাতে হবে বেশি কিন্তু ঘামতে দেওয়া যাবে না।

► নবজাতকের তাপমাত্রা নিরূপণের জন্য থার্মোমিটার বা হাতের সাহায্যে হাতের তালু বা পায়ের পাতা ও পেট স্পর্শ করে তাপমাত্রা আন্দাজ করা যাবে।

► জন্মের পরপরই শুষ্ক, উষ্ণ কাপড়ে নবজাতককে ভালোভাবে মুছে দিয়ে ভেজা কাপড় সরিয়ে আরেকটি শুকনো কাপড় দিয়ে মা ও নবজাতককে ঢেকে দিতে হবে। এ পদ্ধতিকে বলে ত্বকের সঙ্গে ত্বক স্পর্শ সেবা।

 

নবজাতকের স্বাস্থ্য :   গোসল

নবজাতকের গোসল খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। তাকে গোসল করাতে হবে, তবে জন্মের পরপরই নয়। এত দিন মায়ের গর্ভে শিশুটি একটি উষ্ণতার ভেতর ছিল। বাইরের বাতাসের সঙ্গে সমন্বয় করতে একটু সময় লাগে। তাই সঙ্গে সঙ্গে গোসল না করিয়ে ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা পর গোসল করাতে হবে। পানির মধ্যে স্যাভলন, ডেটল এসব দেওয়ার দরকার নেই। কুসুম গরম পানি দিয়ে যে ঘরে বাতাস নেই এ রকম জায়গায় গোসল করাতে হবে।

 

নাভির যত্ন

নবজাতকের নাভি নিয়ে অনেক কুসংস্কার রয়েছে। আসলে কিন্তু নাভির যত্নে কিছুই করার প্রয়োজন নেই। নাভি এমনিতেই শুকিয়ে গিয়ে কিছু দিন পর নিজে নিজেই পড়ে যাবে।

সদ্য কাটা নাভি শরীরে জীবাণু প্রবেশের একটি সহজ পথ। এ জন্য জন্মের সময় ও পরে পরিচর্যার সময় সঠিক স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে হাত ধুয়ে নাভির সঠিক যত্ন নিতে হবে।

► নাভি কাটার পর শুধু একবার ৭.১ শতাংশ ক্লোরহেক্সিডিন লাগিয়ে নাভি শুকনো রাখতে হবে। কোনো ধরনের ব্যান্ডেজ বা কাপড় দেওয়া যাবে না।

► নাভিতে প্রস্রাব, পায়খানা লেগে গেলে তাৎক্ষণিক পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে কাপড় দিয়ে মুছে শুকিয়ে ফেলতে হবে।

► জন্মের পর রক্ত বা সিকোনিয়াম নাভিতে লেগে থাকলে তা মুছে পরিষ্কার করতে হবে।

► প্রসব-পরবর্তী সময়ে রক্তক্ষরণ হলে প্রথম গিঁটের আগে অতিরিক্ত আরেকটি গিঁট দিতে হবে।

► নাভি দিয়ে দুর্গন্ধযুক্ত পুঁজ বের হলে ও চারপাশের ত্বক লালচে হলে বুঝতে হবে নাভির সংক্রমণ হয়েছে। তখন প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি করে শিরায় অ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন প্রয়োগ করে চিকিৎসা নিতে হবে।

► অল্পমাত্রার নাভির ইনফেকশনে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রেখে স্পিরিট লাগালে উপকার পাওয়া যায়।

 

চোখের যত্ন

অত্যন্ত সংবেদনশীল একটি অঙ্গ হলো চোখ। আঙুল, শাড়ির আঁচল, গামছা বা অপরিষ্কার কাপড় দিয়ে কখনোই নবজাতকের চোখ মোছা উচিত নয়। সব সময় পরিষ্কার, নরম সুতি কাপড় দিয়ে চোখ পরিষ্কার করতে হবে। একবার যে কাপড় চোখ পরিষ্কার করার জন্য ব্যবহার করা হয়, তা না ধুয়ে দ্বিতীয়বার ব্যবহার করা উচিত নয়।

 

ত্বকের যত্ন

অতিরিক্ত পাউডার বা তেল ব্যবহার ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। এতে ত্বকের রোমকূপগুলো বদ্ধ হয়ে যায় বলে সাধারণ শারীরিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। ঘামাচি বা র‌্যাশও হতে পারে। এ জন্য নবজাতককে স্বস্তিদায়ক পরিবেশে রাখা উচিত। ঘেমে গেলে বারবার শুকনো নরম কাপড় দিয়ে গা মুছে দিন।

 

চুলের যত্ন

চুল কাটার ব্যাপারে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। শীতকালে জন্ম নিলে ঠাণ্ডার কবল থেকে অনেকখানি বাঁচায় চুল। তবে ফাঙ্গাস, অ্যালার্জি বা অন্য কোনো ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে মাথায় খুশকি বা মাথার চামড়া উঠে যেতে পারে। তখন চিকিৎসকের পরামর্শমতো ব্যবস্থা নিতে হবে। তেল বা শ্যাম্পু ব্যবহারের আগেও চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো। নবজাতকের স্বাস্থ্য

 

https://www.youtube.com/watch?v=Geg0SPadJxM&feature=youtu.be&fbclid=IwAR0QsvcqjH0dMmsEQj-NPglRMt4gW5oe32oH3C-jCb4BnnI893b6ABrzpvk

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!