বয়স আশির কোঠায়, শিক্ষকতা থেকে অবসর নিয়েছেন প্রায় ১৬ বছর৷ কিন্তু সমাজকে শিক্ষা দেওয়া এখনও থামাননি রাজকুমার পাল৷ রোজ সকাল-বিকেলে নিয়ম করে পরিস্কার করেন আড়ংঘাটার যুগোল কিশোর সেতুটি৷ সরকার কিংবা অন্য কারও কাছে কোন রকমের সাহায্য আশা না করে একাই ব্রিজ পরিস্কার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন আনন্দপুর নদীয়ার রাজকুমার পাল৷
নদীয়ার তাহেরপুর থানার দুটি জায়গা আনন্দপুর এবং আংড়ঘাটার মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে চুর্নী নদীর উপর নির্মিত যুগোল কিশোর সেতুটি৷ এই গুরুত্বপূর্ণ ব্রিজটি নির্মানের পেছনও রয়েছেন রাজকুমার বাবু৷ প্রায় ২৩ বছর আগে তাঁরই প্রচেষ্ঠাই এবং তৎকালীন রাজ্য সরকারের উদ্যোগে তৈরি হয়েছিল এই ব্রিজ৷ তাই এই ব্রিজটির জন্য যথেষ্ট স্নেহ রয়েছে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকের মনে৷ পরিষ্কার
কেন্দ্র এং রাজ্য সরকার ভারতের স্বচ্ছতার জন্য একাধিক উদ্যোগ নিয়েছে৷ যদিও তার প্রভাব সর্বস্তরে পড়েনি৷ ব্রিজে থেকে রেলস্টেশন, বাসস্টপ, রাস্তাঘাটা যত্রতত্র ময়লা ফেলা লোকের সংখ্যাটা কম নয়৷ সেখানে একজন ৮০ বছরের প্রাক্তন শিক্ষক কোন পারিশ্রমিক কিংবা প্রচার ছাড়াই প্রতিদিন একটি ব্রিজ পরিস্কার রাখছেন৷ এটাকেই সাধারণ মানুষের জন্য দৃষ্টান্ত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷
ঘোড়াঘাটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন রাজকুমার পাল৷ ২০০২ সালে নিয়মমাফিক চাকরি থেকে অবসর নেন৷ এই বছরই চাকরি জীবনে নিয়মানুবর্তিতা এবং সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার জন্য রাষ্ট্রপতি ডক্টর এপিজে আবদুল কালামের হাত থেকে পুরস্কারও নেন৷ এই ৮০ বছর বয়সে কী থেকে প্রতিদিন যুগল কিশোর সেতু পরিস্কার করার উৎসাহ পান? প্রশ্নের উত্তরে রাজকুমার বাবু বলেন, ‘‘এটা আমার কর্তব্য৷ আমি ব্রীজ নির্মান করানোর জন্য প্রচুর ছুটোছুটি করেছিলাম৷ তারপর এই ব্রিজ তৈরি হল৷ কিন্তু ওখানেই তো দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না৷ এটাকে সুস্থ রাখা, পরিস্কার রাখাও আমাদের দায়িত্ব৷’’ পরিষ্কার
অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আরও বলেন, ‘‘সবকাজ সরকার করবে এই ভাবনাটাই ভুল৷ নাগরিক হিসেবে আমাদেরও কিছু দায়িত্ব বর্তায়৷ দিনের শেষে দেশটাতো আমাদেরই৷’’ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে কলকাতায় যেখানে একের পর এক ব্রিজ ভেঙ্গে পড়ছে৷ ব্রিজের উপর জমা থাকছে জল-ময়লা৷ সেখানে সাধারণ মানুষ থেকে প্রশাসন সবাকে যেন এক নতুন সহজপাঠের, ‘‘দেশ আমাদের, ব্রিজ আমাদের, এটাকে পরিস্কার রাখার দায়িত্বও আমাদের’ শিক্ষা দিচ্ছেন অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক রাজকুমার পাল৷ এমনটাই মত বিশেষজ্ঞদের৷