class="post-template-default single single-post postid-19244 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

ল্যাবএইড হাসপাতালের কিডনি বিভাগের প্রধান ডা. এম এ সামাদের পরামর্শ : মূত্রতন্ত্রের প্রদাহ যখন সমস্যা করণীয়

মূত্রতন্ত্রের

মূত্রতন্ত্রের প্রদাহ যখন সমস্যা

ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন বা ইউটিআই প্রচলিত একটি সমস্যা। মূত্রতন্ত্রের এই প্রদাহ বা সংক্রমণ বারবার হতে থাকলে ক্রনিক কিডনি রোগসহ মারাত্মক জটিলতা তৈরি হতে পারে। তবে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিলে সমস্যা অনেকাংশে এড়ানো যায়। লিখেছেন ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতালের কিডনি বিভাগের প্রধান পরামর্শক অধ্যাপক ডা. এম এ সামাদ

সাধারণত পুরুষদের তুলনায় নারীদের মূত্রতন্ত্রের প্রদাহ বেশি হয়ে থাকে

কিডনির কাজ হলো রক্ত পরিস্রুত করে দেহের অপ্রয়োজনীয় বস্তু বা আবর্জনা মূত্র বা প্রস্রাব আকারে শরীর থেকে নিষ্কাশিত করা। প্রথমে কিডনি থেকে ইউরেটার দিয়ে প্রস্রাব আসে ইউরিনারি ব্লাডারে এবং তা ইউরিথ্রা হয়ে বের হয়ে যায়। এই পুরো রাস্তা, অর্থাৎ ইউরেটার থেকে শুরু করে ইউরিথ্রা পর্যন্ত ট্র্যাক্টকে ইউরিনারি ট্র্যাক্ট বলে। এই জায়গাটার কোনো অংশে সংক্রমণ হলে সেটাই ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (ইউটিআই) বা মূত্রতন্ত্রের প্রদাহ।

 

প্রকারভেদ

কয়েক ধরনের মূত্রতন্ত্রের প্রদাহ হয়। প্রথমত, উপসর্গবিহীন। দ্বিতীয়ত, শুধু মূত্রাশয় ও মূত্রপথ আক্রান্ত হয় (নিম্ন মূত্রতন্ত্রের প্রদাহ)। তৃতীয়ত, মূত্রপথ থেকে জীবাণুগুলো মূত্রাশয় ও মূত্রনালি হয়ে কিডনি পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে (পাইলোনেফ্রাইটিস)। অর্থাৎ উভয় ধরনের প্রদাহ একই সঙ্গে হতে পারে।

 

উপসর্গ

কিছু কিছু ক্ষেত্রে মূত্রতন্ত্রের প্রদাহে উপসর্গ নাও থাকতে পারে। কিছু উপসর্গ হলো :

♦     প্রস্রাবে দুর্গন্ধ, ঘন ঘন প্রস্রাব।

♦     ঝাপসা অথবা লালচে রং।

♦     প্রস্রাব করার সময় ব্যথা অনুভূত হওয়া বা জ্বালাপোড়া।

♦     প্রস্রাবের জন্য প্রচণ্ড বেগ হওয়া অথচ পরিমাণে কম হওয়া (ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাব হওয়া বা আরো প্রস্রাব করার ইচ্ছা)।

♦     তলপেটে ব্যথা, ভার ভার বা অস্বস্তি লাগা।

♦     কাঁপুনি জ্বর, দুর্বলতা, বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।

♦     কিডনি আক্রান্ত হলে কোমরের দুই পাশে ঠিক নাভির উল্টো দিকে ব্যথা হতে পারে।

 

ঝুঁকি বেশি যাদের

♦     কম পানি পান করে যারা।

♦     প্রস্রাব আটকে রাখার প্রবণতা যাদের।

♦     গর্ভবতী ও ডায়াবেটিক রোগী।

♦     মূত্র নির্গমন পথে কোনো বাধা থাকলে (যেমন : প্রস্টেট বড় হওয়া, মূত্রনালিতে পাথর হওয়া ইত্যাদি)।

♦     যাদের কিডনি দুর্বল।

♦     ষাটোর্ধ্ব ও যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম।

♦     মেনোপজের পর অন্য কোনো কারণ থাকলে।

♦     দীর্ঘদিন ধরে প্রস্রাবের ক্যাথেটার ব্যবহার করলে।

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া : ডায়াবেটিস বা অন্য কোনো দীর্ঘস্থায়ী রোগ থাকলে অথবা কেমোথেরাপি বা অন্য কোনো ওষুধের কারণে দেহের স্বাভাবিক প্রতিরোধশক্তি ব্যাহত হলে ইউটিআই দেখা দিতে পারে।

নারীদের বেশি হয় : মূত্রতন্ত্রের প্রদাহ সাধারণত পুরুষের তুলনায় নারীদের বেশি হয়। কারণ তাদের মূত্রনালির দৈর্ঘ্য ছোট এবং তা মলদ্বারের কাছাকাছি থাকায় জীবাণু সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। এ ছাড়া যৌনজীবনে অধিক সক্রিয় নারীদের এটা বেশি হয়। আবার যৌন মিলনের সময় জীবাণু প্রবেশের কারণেও হতে পারে।

 

সতর্কতা

♦     প্রস্রাবের মারাত্মক প্রদাহ হলে এবং এর যথাযথ চিকিৎসা না করালে কিডনি পর্যন্ত নষ্ট হয়ে যেতে পারে অথবা কিডনি পুঁজে ভরে যেতে পারে। মূত্রপথ থেকে প্রস্রাবের থলি বা মূত্রাশয়, সেখান থেকে মূত্রনালির মাধ্যমে এই জীবাণু কিডনি পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে।

♦     কারো ইউটিআই দেখা দিলে আগে এর চিকিৎসা করে মূত্রতন্ত্রে অন্য কোনো অপারেশন করা উচিত।

♦     গর্ভাবস্থায় সংক্রমণ হলে এবং তখন যথাযথ চিকিৎসা না নিলে মায়ের ক্ষতির পাশাপাশি গর্ভজাত সন্তানের ক্ষতি, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।

♦     প্রবীণ অথবা ছোট শিশুরা নিজেদের সমস্যাগুলো হয়তো বোঝাতে পারে না, তখন এই জীবাণুগুলো বারবার আক্রমণ করতে পারে। প্রথমে এই জীবাণুগুলো মূত্রতন্ত্রে থাকে, এরপর রক্তে ছড়িয়ে সেপটিসেমিয়া হতে পারে। এভাবে বারবার আক্রমণ হতে হতে জীবাণুগুলো সেপটিসেমিক শকে চলে যায়। তখন জীবাণু ছড়িয়ে রক্তচাপ কমে কিডনির অকার্যকারিতাসহ মরণাপন্ন অবস্থা তৈরি হয়। ওই সময় আইসিইউতে চিকিৎসা দিয়েও জটিলতা এড়ানো যায় না।

 

রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা

প্রথমেই রোগের ইতিহাস জানতে হবে। এ ক্ষেত্রে বয়স, লিঙ্গ, প্রস্রাবের নালিতে বাধা, প্রস্টেট বড় কি না, উপসর্গ কোন ধরনের ইনফেকশনের পরিচয়বাহী, কোমরে ব্যথা, জ্বর, কাঁপুনি আছে কি না ইত্যাদি বিবেচনায় আনতে হবে। এরপর কালচার করে বা প্রস্রাব ও রক্তের নানা পরীক্ষা করে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ বা যথাযথ চিকিৎসা নিলে রোগ ভালো হয়ে যায়।

 

ইউটিআই প্রতিরোধে করণীয়

♦     প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে পানি খাওয়া, যাতে দৈনিক কমপক্ষে দুই লিটার পরিমাণ প্রস্রাব নির্গত হয়। এতে প্রস্রাবের মাধ্যমে মূত্রথলির ভেতরে থাকা জীবাণু বের হয়ে যায়। তা ছাড়া কিডনি সুস্থ রাখতেও পর্যাপ্ত পানি পান জরুরি।

♦     কখনো প্রস্রাব আটকে না রাখা। ঘুমোতে যাওয়ার আগে এবং ঘুম থেকে ওঠার পর প্রস্রাব করার অভ্যাস করা।

♦     মলদ্বারের জীবাণু মূত্রপথে এসে যাতে সংক্রমণ না করে, সেদিকে খেয়াল রাখা।

♦     প্রস্রাবের রাস্তার জ্বালা-যন্ত্রণা বা জীবাণুজনিত আক্রমণ সন্দেহ হলে চিকিৎসা করা। এ সময় যৌন সম্পর্ক স্থাপন না করা।

♦     সহবাসের আগে ও পরে মূত্রনালি ভালোভাবে পরিষ্কার করা। যৌন সঙ্গমের পর প্রস্রাব করা।

♦     কোষ্ঠকাঠিন্য যেন না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখা।

♦     মেয়েদের মাসিকের সময় ঘন ঘন স্যানিটারি প্যাড বদলানো।

♦     ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, বিশেষ করে আন্ডারওয়্যার বা এজাতীয় পোশাক যেন অন্য কারো সংস্পর্শে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখা।

♦     টাটকা ফলের রস, বিশেষ করে ভিটামিন ‘সি’ জাতীয় ফলের রস বেশি করে খাওয়া।

♦     ইউটিআই হলে চিকিৎসকের পরামর্শে পূর্ণ ডোজ অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!