Sunday, May 5
Shadow

ময়মনসিংহের খবর : ঈশ্বরগঞ্জে আশ্রয় দেওয়ার নামে কিশোরীকে ধর্ষণ

গণধর্ষণ

ময়মনসিংহের খবর :  ঈশ্বরগঞ্জে রেলস্টেশন থেকে তুলে নিয়ে এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় কয়েক যুবকের বিরুদ্ধে। আশ্রয় দেওয়ার নাম করে মেয়েটিকে একটি ঘরে নিয়ে হাত বেঁধে চালানো হয় নির্যাতন। এ সময় মেয়েটি তার কাছে থাকা ব্লেড দিয়ে নিজেকে রক্তাক্তও করতে চায়। কাতরকণ্ঠে অনুরোধ জানায় তার সর্বনাশ না করার। তবে ছাড়েনি ওই যুবকরা। একে একে চারজন চালায় পাশবিক নির্যাতন।

শনিবার রাতে ঘটে এ ঘটনা। ঘটনা জানাজানির পর নির্যাতিতাকে নিয়ে রোববার স্থানীয়ভাবে সালিশ বৈঠক বসে। পরে খবর পেয়ে পুলিশ মেয়েটিকে উদ্ধার করে। আটক করে নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত তিনজনকে।

জানা গেছে, মেয়েটির গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ শহরের লতিবপুর এলাকায়। তবে বাবা-মায়ের সঙ্গে ঢাকার কালাচাঁদপুর এলাকায় থাকে সে। সেখানে মেয়েটি একটি বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। তার বাবা পেশায় রিকশাচালক। স্বাধীনতা দিবসের ছুটিতে মেয়েটি কিশোরগঞ্জের বাড়িতে বেড়াতে আসে। পরে শনিবার ঢাকায় ফেরার জন্য কিশোরগঞ্জ থেকে ময়মনসিংহ রেলস্টেশনে যাওয়ার সময় ট্রেনে মাহফুজুর রহমান রানা নামে এক তরুণের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। রানা ঈশ্বরগঞ্জের সোহাগী ইউনিয়নের সাহেবনগর গ্রামের মজিবুর রহমানের ছেলে। বাজিতপুরের ভাগলপুরের একটি মাদ্রাসার ছাত্র সে। সেও ট্রেনে বাড়ি ফিরছিল। পরিচয়ের সূত্র ধরে দু’জনের মধ্যে সখ্য গড়ে উঠলে সোহাগী স্টেশনে রানার সঙ্গে নেমে পড়ে মেয়েটি। পরে এলাকায় ঘোরাঘুরি শেষে শনিবার রাত ৯টার দিকে ঈশ্বরগঞ্জ রেলস্টেশনে যায় তারা। সেখানে মেয়েটিকে ময়মনসিংহগামী ট্রেনে তুলে দিতে চাইলে তারা জানতে পারে ওই সময় কোনো ট্রেন নেই। ওই অবস্থায় তারা স্টেশন থেকে ফিরতে চাইলে স্থানীয় কয়েক যুবক তাদের গতিরোধ করে। তাদের দেখে সন্দেহ হচ্ছে জানিয়ে চরনিখলা গ্রামের নবী হোসেনের ছেলে রোকন মিয়া তাদের মোবাইল ফোন নিয়ে নেয়। এ সময় লোকজন জড়ো হলে সটকে পড়ে রোকন। পরে সেখানে হাজির হয় রেলস্টেশন এলাকার বাসিন্দা মিন্টু মিয়ার ছেলে সুজন। তার সঙ্গে যুক্ত হয় মামুন মিয়া, বাবুল মিয়া, রনি ও স্বপন দাস। রানা ও মেয়েটিকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাতে কোনো ট্রেন না থাকায় তাদের নিজের বাসায় আশ্রয় দেওয়ার কথা বলে সুজন। রাত ১১টার দিকে তাদের সে নিজের বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে রানাকে অন্য একটি ঘরে আটকে রেখে মেয়েটির হাত বেঁধে পাশবিক নির্যাতন শুরু করে সুজন। এর পর স্বপন, বাবুল, রনিও পাশবিক নির্যাতন চালায়। সব শেষে রানাকেও বাধ্য করা হয় মেয়েটির ওপর নির্যাতন চালাতে। পরে রাত ৩টার দিকে মেয়েটিকে বাসা থেকে বের করে দেওয়া হয়। রেলস্টেশন এলাকায় রাতে অবস্থানের পর বিষয়টি জানাজানি হয়। সকালে খবর পাঠানো হয় নির্যাতিত মেয়েটির পরিবারের কাছে। ডেকে আনা হয় রানার পরিবারের লোকজনকেও। স্থানীয় কয়েকজন বিষয়টি নিয়ে সালিশ বসায়। এ সময় মেয়েটি তার ওপর পাশবিক নির্যাতনের বর্ণনা দেয়। এ খবর পরে পুলিশ দুপুরে মেয়েটিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। আটক করা হয় রানা, বাবুল ও মামুনকে।

ভুক্তভোগী কিশোরী জানায়, ট্রেনে রানাকে দেখে তার ভালো লাগে। ছেলেটিকে ভাই ডেকে তার সঙ্গে গল্প শুরু করে। পরে এলাকাটিও ঘুরে দেখে।

মেয়েটি জানায়, তার ওপর চারজন পাশবিক নির্যাতন চালায়। এ সময় তাকে ছেড়ে দিতে সে অনেক অনুরোধ জানায়। নিজের ব্যাগে থাকা ব্লেড দিয়ে নিজেকে রক্তাক্তও করতে চেয়েছিল। চারজন তার ওপর নির্যাতন শেষে রানাকে বাধ্য করে তার ওপর নির্যাতন চালাতে।

স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর হারুন অর রশিদ জানান, মেয়েটির ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে জানতে পেরে তিনি ঘটনাস্থলে যান। ঘটনার ভয়াবহতা দেখে সাংবাদিক ও পুলিশকে খবর পাঠান।

ঈশ্বরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জয়নাল আবেদীন সরকার বলেন, এ ঘটনায় অন্যান্য অভিযুক্তকে গ্রেফতারে চেষ্টা ও মামলার প্রস্তুতি চলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!

error: Content is protected !!