ঠাকুরগাঁও থেকে রংপুরের দূরত্ব ১১০ কিলোমিটার। গণপরিবহন বন্ধ। সাত মাসের মেয়েকে নিতে হবে রংপুরের হাসপাতালে। অ্যাম্বুলেন্স ভাড়াও নেই ঠাকুরগাঁওয়ের চার্জার রিকশার চালক তারেক ইসলামের কাছে। অগত্যা শনিবার সকালে রিকশা চালিয়ে মেয়েকে নিয়ে রংপুরের উদ্দেশে রওনা দেন। আগের দিন রাতে ঝড় হওয়ায় রিকশা ঠিকমতো চার্জ দিতে পারেননি তিনি। ধীরগতিতে চলা রিকশার চার্জ শেষ হয়ে যায় পথে। অবশেষে অন্যদের সাহায্য নিয়ে ৯ ঘণ্টায় শনিবার বেলা ৩টার দিকে মেয়েকে নিয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছান তারেক।
এখন হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে শিশুটির চিকিৎসাসেবা চলছে। স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে এক্স–রে করা হয়েছে। শিশুটি আপাতত সুস্থ রয়েছে। শিশু সার্জারি ওয়ার্ডের কর্তব্যরত চিকিৎসক সহকারী রেজিস্ট্রার উপেন্দ্রনাথ রায় প্রথম আলোকে বলেন, শিশুটির পেটে নাড়ি পেঁচিয়ে যাওয়ার ঘটনা হতে পারে। প্রয়োজনে অস্ত্রোপচার করা হতে পারে। এক্সে–রেসহ অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। তবে শিশুটি আগের থেকে এখন অনেক ভালো রয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্টগুলো এলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিকে এ ধরনের একটি খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়লে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসহ একটি সুপারশপ প্রতিষ্ঠান শিশুটির চিকিৎসাসেবায় এগিয়ে এসেছে।
তারেক ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সাত মাস বয়সী শিশু জান্নাত রক্ত পায়খানা করায় ১৩ এপ্রিল রাতে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে চিকিৎসা চলা অবস্থায় পরদিন ১৪ এপ্রিল চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেলে রেফার্ড করেন। কিন্তু কীভাবে রংপুরে আসবেন? লকডাউনে পরিবহন বন্ধ। ওই সময় তাঁর কাছে রযেছে মাত্র ২০০ টাকা। অ্যাম্বুলেন্স ভাড়ার কথা ভাবতেও পারছিলেন না। অন্যের কাছে ধানদেনার চেষ্টা করেও কিছু পেলেন না। অবশেষে নিজের রিকশা চালিয়েই সন্তানকে নিয়ে রংপুরে আসার সিদ্ধান্ত নিলেন। সঙ্গে তাঁর স্ত্রী ও শাশুড়ি ছিলেন।
তারেক বলেন, সকাল ছয়টার দিকে বাসা থেকে বের হন। পথে আসতে আসতে রংপুরের তারাগঞ্জ এলাকায় এসে রিকশার চার্জ শেষ হয়ে যায়। এক অটোচালক বাচ্চার অসুস্থতার কথা জেনে তাঁকে প্রায় ১০ কিলোমিটার পথ এগিয়ে দেন। আর রিকশাটি রংপুরে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। এরপর আরেকটা অটোরিকশায় করে তিনি মেডিকেলে আসেন। রংপুরে আসার পর শিশু জান্নাতকে হাসপাতালের শিশু বিভাগে (১৮ নম্বর ওয়ার্ড) ভর্তি করা হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক দেখার পর কিছু ওষুধ ও স্যালাইন দিয়েছেন। এরই মধ্যে কিছু মানুষ এগিয়ে এসেছেন। আরও অনেকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।