‘শেখ হাসিনা’ স্টেডিয়াম নির্মাণে তোড়জোড়
পূর্বাচলে ৩৭ একর জায়গা পেয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। আগেই ঘোষণা হয়েছিল সেখানেই নির্মিত হবে দেশের আরো একটি ক্রিকেট স্টেডিয়াম। সেটির নামকরণ হবে শেখ হাসিনা স্টেডিয়াম। তবে শঙ্কা ও সংশয় ছিল কবে এই স্টেডিয়াম দেখবে আলোর মুখ! কেউ বলছিল তিন বছর কেউ বা ৫ বছর। তবে বিসিবি এই স্টেডিয়াম নির্মাণে শুরু করেছে তোড়জোড়। খুব দ্রুতই তারা কাজ শুরু করতে প্রস্তুত। গতকাল এক সভা শেষে বিসিবির পরিচালক মাহবুবুল আনাম জানিয়েছেন কাজ শুরুর দুই বছরের মধ্যেই নির্মাণ সম্পন্ন হবে স্টেডিয়ামটি। তিনি বলেন, ‘স্টেডিয়ামের কাজ আগামী শীত মৌসুমের আগে শুরু করা হবে না।
বিসিবি অলরেডি একটা কনসেপ্ট ড্রয়িং করেছে। ওই কনসেপ্ট ড্রইংটাকে এনলার্জ করা এবং এর মধ্যে আমাদের অন্য যে জিনিসগুলো থাকবে, ড্রেসিংরুম বলেন বা যাই বলেন, সেগুলোকে আরও ডিটেইল করা। বিসিবি বোর্ড ইতিমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখানে আরো একটা স্টেডিয়াম থাকবে। যেটা একাডেমি গ্রাউন্ডের মতন হবে। তার মানে আমরা দুটো মাঠ পাবো। ৩৭ একর আছে, ওখানে কী কী করা সম্ভব সেটা আমরা ভেবে রেখেছি। আমরা আশা করছি কাজ শুরুর দুই বছরের মধ্যেই শেষ করব।’
অন্যদিকে গতকাল বিসিবিতে স্টেডিয়াম প্রসঙ্গে কী আলোচনা হয়েছে তা নিয়েও বিষদ জানিয়েছেন বিসিবির এই পরিচালক। মাহবুবুল আনাম বলেন, ‘আমাদের প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টের প্রথম সভা ছিল। কিছুটা পরিচিতি সভার মতো। কিভাবে আমরা এই পরিকল্পনাটি করব তাঁর একটা রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে। এই কমিটিতে বাইরে থেকে বেশ কিছু এক্সপারটিজ আমরা অন্তর্ভুক্ত করব। বুয়েট থেকে প্রতিনিধি নেব। যারা অডিট করে থাকে তাদের থেকেও প্রতিনিধি নিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হব। আপনারা জানেন যে পূর্বাচলের এই জমিটি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পক্ষে রেজিস্ট্রি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এই জমিটি বরাদ্ধ করেছে, রাজউকের মাধ্যমে, প্রতীকী মূল্যে। এই মাসের মধ্যেই আমরা মাঠের পজিশনে আমরা কাজ করব। পজিশন পেলেই আমার কাজ গতিসম্পন্ন হবে। অন্যান্য যেই পরিকল্পনা রয়েছে সেগুলো সামনের দিকে আগাবো।’
দেশের বর্তমানে যে কটি মাঠ আছে তার মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর সিলেট স্টেডিয়াম। শুধু দেশেই নয় এশিয়ার সেরা স্টেডিয়ামের একটিও এটি। এ ছাড়া বাকি যে গুলো আছে, চট্টগ্রাম, খুলনা, মিরপুর ও ফতুল্লা তা কোন অবস্থাতেই সৈন্দর্যের দিক থেকে মানসম্পন্ন হয়। শুধু তাই নয় এনএসসির তৈরি এই স্টেডিয়াম গুলোর এখন বেহাল অবস্থা। তবে শেখ হাসিনা স্টেডিয়ামকে সৈন্দর্য্যের দিক থেকেও অনন্য করার পরিকল্পনা নিয়েছে বিসিবি।
এ নিয়ে বিসিবির পরিচালক বলেন, ‘আমাদের ইচ্ছে স্টেডিয়ামটা এমন হবে যেটা শুধু এশিয়াতেই নয়, পুরো বিশ্বের মধ্যে সুন্দর হবে। যেহেতু এটা গ্রিন ফিল্ড স্টেডিয়াম, সেহেতু এখানে আমাদের অনেক কিছু করার সুযোগ রয়েছে। আপনারা জানেন যে মিরপুর স্টেডিয়ামকে আমরা কনভার্ট করেছি। সেই জন্য আমরা আন্তর্জাতিক মানের, যারা স্টেডিয়াম করেছে, তাদের কনসালটিং ফার্মকে নিযুক্ত দেয়ার ব্যাপারে একটা আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়া করা হবে এবং স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে টেন্ডার পদ্ধতিতে করা হবে।’
বর্তমানে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে চলছে বিসিবির অফিসিয়াল কার্যক্রম। ধারণা করা হচ্ছে বিসিবির অফিসও নিয়ে যাওয়া হবে পর্বাচলের শেখ হাসিনা স্টেডিয়ামে। এ বিষয়ে মাহবুবুল আনাম বলেন, ‘ওটা পরবর্তীতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে। আমি মনে করি না এই মাঠের (মিরপুর) প্রয়োজনীয়তা ফুরাবে। এটা একটা ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট গ্রাউন্ড। এটাকে সেভাবেই মেন্টেইন করা হবে।’ নতুন স্টেডিয়াম নির্মানের সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও পুরাতন গুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। দেশের হোম অব ক্রিকেট বলে পরিচিত মিরপুর শেরেবাংলার অবস্থাও ভাল নয়। প্রেস বক্স থেকে শুরু করে স্টেডিয়ামের বিভিন্ন জায়গাতে বৃষ্টি হলেও পানি ঢুকে পড়ে। এছাড়াও ফতুল্লা, কক্সবজার, খুলনার স্টেডিয়ামেরও অবস্থা শোচনীয়।
সেগুলোর অভিষ্যৎ নিয়ে জাবাব দিতে গিয়ে তার দায় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ এনএসসি’র উপরই চাপিয়েছেন বিসিবি’র এই পরিচালক। তিনি বলেন, ‘প্রপাটিগুলো ন্যাশনাল স্পোর্টস কাউন্সিলের। আমাদেরকে ব্যবহার করার জন্য অনুমতি দেয়া হয়। যেহেতু ব্যবহার করার অনুমতি দেয়া হয় সেহেতু মেন্টেইন করা ডিফিকাল্ট। এই স্টেডিয়ামটা (মিরপুর) বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড লিজ নিয়েছে, সেই জন্য এটার সকল মেন্টেন্যান্স আমরা করে থাকি। যে কোনো স্টেডিয়ামই বিসিবিকে যদি লিজ বা অন্য কোনো প্রক্রিয়ার আমাদেরকে দেয়া হয় তাহলে আমরা সেগুলোর মেন্টেন্যান্স দেখব।’
https://www.youtube.com/watch?v=wfEPaBfx6p4