Thursday, April 25
Shadow

সিনেমা বানানোর পাঁচ ধাপ

সিনেমা বানানোর
বাংলাদেশে একটি সিনেমা নির্মাণে সাধারণত ৩ থেকে ৬ মাস সময় লাগে। আর এ সময়ে পার হতে হয় পাঁচটি ধাপ।

১. ডেভেলপমেন্ট
২. প্রি প্রোডাকশন
৩. প্রোডাকশন
৪. পোস্ট প্রোডাকশন
৫. ডিস্ট্রিবিউশন

ডেভেলপমেন্ট
প্রথম পর্যায়ে, একটি আইডিয়া থেকে তৈরি হয় সিনেমার স্ক্রিপ্ট। প্রডিউসার অথবা ডিরেক্টর গল্প নির্বাচন করেন যা সংগ্রহ করা হয় কোন বই থেকে, সত্য ঘটনা অবলম্বনে অথবা কোন লেখকের নতুন কোন গল্প থেকে। গল্প নির্বাচনের পর তৈরি করা হয় একটি গল্প সংক্ষেপ এবং এ থেকে পূর্নাঙ্গ ক্রিপ্ট লেখেন একজন স্কিপ্ট রাইটার। স্ক্রিপ্ট রাইটার কে হবেন তা ঠিক করে থাকেন ডিরেক্টর এবং প্রডিউসার।
স্ক্রিপ্ট তৈরি হলে এর জন্য উপযুক্ত শিল্পি নির্বাচন করে তাদের সাথে বসে গল্প নিয়ে আলোচনা হয়। শিল্পিরা আগ্রহী হলে তাদের সাথে চুক্তি করা হয় এবং সেই সাথে সিডিউল নেয়া হয়। সিডিউল গ্রহনের সময় শিল্পিদেরকে সাইনিং মানি দিতে হয়।

প্রি প্রোডাকশন
এ পর্যায়ে সিনেমার ডিজাইন এবং প্ল্যান তৈরি করা হয়। প্রোডাকশন কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে অফিস নেয়া হয়। সিনেমার স্টোরিবোর্ড তৈরি করা হয় একজন চিত্রশিল্পির মাধ্যমে এবং একটি সম্ভাব্য প্রোডাকশন বাজেট প্রনয়ন করা হয়।

  • ডিরেক্টর এবং প্রডিউসার নিন্মোক্ত জনবল নিয়োগ করেন সিনেমা নির্মানের জন্য।
  • এসিস্ট্য্যান্ট ডিরেক্টর শ্যুটিং সিডিউল ম্যানেজসহ আরো অনেক গুরুত্বপূর্ন দায়িত্ব পালন করেন।
  • প্রোডাকশন ম্যানেজার প্রোডাকশন বাজেট এবং প্রোডাকশন সিডিউল ম্যানেজ করেন। বাজেট অনুযায়ী সিনেমা নির্মানের যাবতীয় লজিস্টিকস তার অধীনে হয়।
  • সিনেমাটোগ্রাফার সিনেমার গল্পকে ক্যামেরা বন্দী করেন। ডিরেক্টর, শব্দগ্রাহক এবং এসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টরের সাথে সমন্বয় সাধন করে সিনেমাটোগ্রাফার তার কাজটি করেন।
  • আর্ট ডিরেক্টর সিনেমার শৈল্পিক দিকের দ্বায়ীত্ব পালন করেন। তিনি প্রোডাকশন সেট, কস্টিউম, মেকাপ ইত্যাদির আয়োজন করেন।
  • প্রোডাকশন ডিজাইনার প্রোডাকশন সেট, কস্টিউম, মেকাপ প্রভৃতি নান্দনিক করে তোলেন আর্ট ডিরেক্টরের সাথে।
  • স্টোরিবোর্ড আর্টিস্ট কাগজে গল্পের ছবি তৈরি করেন, যার মাধ্যমে ডিরেক্টর এবং প্রোডাকশন ডিজাইনারকে তাদের আইডিয়া প্রোডাকশন টিমের কাছে তুলে ধরতে পারেন। প্রোডাকশন সাউন্ড মিক্সার শ্যুটিংয়ের সময় প্রয়োজনীয় শব্দ গ্রহন করেন।
  • সাউন্ড ডিজাইনার শ্যুটিং পরবর্তি প্রয়োজনীয় সকল ইফেক্ট সাউন্ড তৈরি করেন ফোলি আর্টিস্ট এর সাহায্যে।
  • মিউজিক কম্পোজার সিনেমার গানসহ ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক তৈরি করেন।
  • ডান্স কোরিওগ্রাফার সিনেমায় গান অনুযায়ী ডান্স কোরিওগ্রাফ করেন।
  • ফাইট কোরিওগ্রাফার সিনেমার ফাইট ও অন্যান্য একশান দৃশ্য গুলো তার ফাইটার ও স্টান্টদের সমন্বয়ে সম্পন্ন করেন।

প্রোডাকশন
এ পর্যায়ে স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী দৃশ্য ধারণের মাধ্যমে সিনেমা তৈরি হয়। এসময় আরো অনেক টেকনিশিয়ান একসঙ্গে কাজ করে যেমন স্ক্রিপ্ট সুপারভাইজার, স্টিল ফটোগ্রাফার, লাইটম্যান, প্রভৃতি। বাংলাদেশে একটি সিনেমার শ্যুটিং সম্পন্ন করতে ১ থেকে ৩ মাস সময় লাগে। শ্যুটিং সম্পন্ন হবার পর রাশ ফুটেজ এডিটরের কাছে দেয়া হয় এডিটিং এর জন্য।

পোস্ট প্রোডাকশন
এ পর্যায়ে সিনেমা এডিটর স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী দৃশ্যগুলো সাজিয়ে নেন। তারপর সাউন্ড ডিপার্টমেন্ট সিনেমার সাউন্ড ট্র্যাক তৈরি করে। সাউন্ড ইফেক্টস, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক, এডিআর, ডায়লগ আর গান নিয়েই সিনেমার সাউন্ড ট্র্যাক তৈরি হয়। ভিডিও আর সাউন্ড ট্র্যাক মিক্স করে একটি প্রিন্ট রেডি করা হয়। এরপর প্রিন্টটি একজন কালারিস্ট কে দেয়া হয় কালার গ্রেডিং এর জন্য। কালার গ্রেডিং এর মাধ্যমে সিনেমার ফাইনাল প্রিন্ট করা হয়। এর পর সিনেমার প্রিন্ট সেন্সর এ জমা দেয়া হয়।

ডিস্ট্রিবিউশন
সেন্সর ছাড়পত্র পাওয়ার পর প্রযোজক সমিতিতে সিনেমা মুক্তির তারিখ চেয়ে একটি আবেদন করা হয়। মুক্তির তারিখ চূড়ান্ত হলে সিনেমা হলের বুকিং এজেন্ট প্রোডাকশন অফিসে এসে সিনেমার আর্টিস্ট, ট্রেইলর, গান প্রভৃতি দেখে হলে প্রদর্শনের জন্য বুকিং করেন। হল বুকিংয়ে তিন ধরনের নিয়ম আছে। মিনিমাম গ্যারান্টি, ফিফটি ফিফটি পার্সেন্টেজ এবং ফিক্স এমাউন্ট। প্রডিউসার এর সাথে বসে বুকিং এজেন্ট কােন পদ্ধতিতে সিনেমা প্রদর্শন করবেন তা ঠিক করেন এবং দরদাম ঠিক করেন। ইতিমধ্যে সিনেমার প্রচারণা করতে হয় প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেকট্রনিক মিডিয়া, ইউটিউব, ফেসবুক প্রভৃতিতে। সিনেমা মুক্তির আগেই সিনেমার গান প্রচার করা হয়। এভাবে দর্শকদের ভিতরে সিনেমাটির প্রতি আগ্রহী করে তোলা হয়। মুক্তির পর যত বেশি দর্শক হলে গিয়ে সিনেমাটি দেখবে তত বেশি লাভ প্রডিউসার তুলে আনতে পারবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!

error: Content is protected !!