class="post-template-default single single-post postid-19632 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ১০টি ভ্রান্ত ধারনা

টিন স্বাস্থ্য

স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ১০টি ভ্রান্ত ধারনা

স্বাস্থ্য সংক্রান্ত এমন অনেক কিছু (ধারনা) আমাদের দেশে প্রচলিত আছে যার বিশ্বাসের কোনো সত্যতা নেই, মেডিকেল সাইন্সেও তার কোন ভিত্তি নেই। কিন্তু বহুযুগ লালিত এই বিশ্বাসগুলো এতটাই শক্তিশালী যে ডাক্তাররা পর্যন্ত রোগীর বিভ্রান্তি কাটাতে সক্ষম হন না অনেক সময়। সেরকম কিছু বিষয় নিয়েই আমাদের এ পোস্ট টি।

১. বেশি মিষ্টি খেলে ডায়াবেটিস হয়
বেশি মিষ্টি খেলে ডায়াবেটিস হবে-এ ধারণাটি মোটামুটি সব মানুষের মধ্যেই আছে। প্রকৃতপক্ষে ডায়াবেটিস হওয়ার জন্য মিষ্টি দায়ী নয় ।ডায়াবেটিস হওয়ার পর মিষ্টি খেলে রক্তে সুগারের পরিমাণ বেড়ে যায়। কিন্তু ডায়াবেটিস হওয়ার আগে যতই মিষ্টি খাওয়া হোক, সুগারের পরিমাণ কিন্তু ঠিকই থাকবে। যদি প্যানক্রিয়াস বা অগ্ন্যাশয়ে ঠিকমতো ইনসুলিন তৈরি এবং নিঃসরণ হয়, তাহলে মিষ্টিতে কোনো ক্ষতি হবে না। আসলে ডায়াবেটিস হওয়ার জন্য দায়ী হচ্ছে অতিরিক্ত ওজন, কায়িক পরিশ্রমের অভাব ,পারিবারিক ইতিহাস এবং আরও অন্যান্য কারন।

২. মুখে মধু, বাক্যে অমৃত
শিশুর জন্মের সঙ্গে সঙ্গে নাকি মুখে মধু দিলে সেই বাচ্চা হয় মিষ্টভাষী। তাই জন্মের সঙ্গে সঙ্গে তার মুখে কয়েক ফোঁটা মধু দেন নিকটাত্মীয়রা । কেউ কেউ দেয় পানি, এমনকি কৌটার দুধও। কিন্তু ডাক্তারি বিদ্যায় পরিষ্কারভাবে বলা আছে, বাচ্চার জন্মের পর থেকে ছয় মাস বয়স পর্যন্ত বুকের দুধ ছাড়া তার প্রয়োজন নেই এক ফোঁটা পানিও। অন্য কিছু তো তার মুখে দেয়ার প্রশ্নই আসে না। ৬ মাস পর্যন্ত মধু, পানি এবং কৌটার দুধ থেকে শুরু করে যেকোনো খাবার শিশুর শরীরের জন্য ক্ষতিকর। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এগুলো দেবার পর শিশু পেটে ব্যথা, বমি, ডায়রিয়া ইত্যাদি সমস্যায় আক্রান্ত হয়।

৩.বেশি খেলে গর্ভের বাচ্চা বড় হয় না
বয়স্ক মহিলাদের মধ্যে এ ধারণাটি ব্যাপক। গ্রামে প্রায় সবার মধ্যেই আছে এ ধারণাটি। তাদের যুক্তি, গর্ভকালীন বেশি খেলে পেটের জায়গা দখল হয়ে যায় খাবার দিয়ে। ফলে গর্ভের বাচ্চাটি বড় হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা পায় না। এটি খুবই ভুল ধারণা। গর্ভকালীন মায়ের জন্য বরঞ্চ আরো অতিরিক্ত খাবার প্রয়োজন বাচ্চা সঠিক বেড়ে ওঠার জন্য। গর্ভকালীন মা কম খেলে বাচ্চা বরং ওজনে কম হতে পারে।

৪.টক খেলে ক্ষত শুকায় না
কোথাও কেটে গেলে বা অস্ত্রোপচারের পর টক-জাতীয় খাবার খেলে ক্ষত শুকাতে সময় লাগে। কেউ কেউ এমন ধারনাও করেন টক খেলে ক্ষতস্থান পাঁকে। অনেক শিক্ষিত লোকের মধ্যেও এ ধারণাটি আছে। কিন্তু লেবু, কমলা, আমড়া, বরই, কামরাঙা ইত্যাদি টক-জাতীয় ফল হলো ভিটামিন ‘সি’র একটি ভালো উৎস। এই ভিটামিন ‘সি’ কোলাজেন তৈরির মাধ্যমে ক্ষতস্থান দ্রুত শুকিয়ে যেতে সাহায্য করে। তাই কাটাছেঁড়ার ক্ষত শুকাতে টক-জাতীয় খাবার ক্ষতি নয়, উপকার করে।

৫.ক্রিম রং ফর্সা করে
বিজ্ঞাপনের শক্তিশালী ভাষার কাছে বিজ্ঞান নিতান্তই অসহায়। ত্বকের মেলানিন নিয়ন্ত্রণ করে বা কমিয়ে ক্রিম করছে নারীকে অপরূপ। ইদানীং পুরুষদের রং ফর্সা করারও ক্রিম এসেছে। ত্বকের কেরাটিনযুক্ত স্কোয়ামাস এপিথেলিয়াম ভেদ করে ক্রিমের কোনো উপাদানই ভেতরে যেতে পারে না এবং এগুলো ত্বকে অ্যাবজর্ব বা শোষিতও হয় না। বরং খাওয়া-দাওয়ার মাধ্যমে ত্বকের প্রয়োজনীয় পুষ্টি নিশ্চিত করুন, তাতে ফ্রেশ ও সুন্দর থাকতে পারবেন। তবে শীতকালে ক্রিমের ব্যবহার উপকারী। এ সময় ক্রিমের ব্যবহারে ত্বকের পানি বা ময়েশ্চার বের হয়ে যাওয়া ঠেকানো যায়।

৬.তেল চুল লম্বা করে, মাথা ঠাণ্ডা রাখে
অনেকে ভাবে, তেল মাথা ঠাণ্ডা রাখে এবং চুল শক্ত, ঘন ও লম্বা করে। কেউ কেউ আবার চুলে লাগায় ভিটামিন। এতে নাকি চুল পড়াও বন্ধ হয়। এর সবই ভুল। তেল মাথার মোটা চামড়া ও খুলি ভেদ করে ব্রেইন পর্যন্ত যাওয়ার কোনো সুযোগই পায় না, ঠাণ্ডা করা তো দূরের কথা। তবে অনেক তেলে মেন্থল মেশানো থাকে বলে একটা ঠাণ্ডা অনুভূতি তৈরি করতে পারে কেবল মাথার চামড়ায়। চুল শরীরের অংশ, কিন্তু এটা নির্জীব। মৃতকোষ এরা। এদের সারাদিন ভিটামিনে ডুবিয়ে রাখলেও কোনো লাভ নেই। ঘন, লম্বা ও শক্ত করার তো প্রশ্নই ওঠে না। বরং মাথার চুল পরিষ্কার রাখলে চুল সুস্থ থাকবে। এতেই চুল পড়া কমবে। তবে তেল চুলে ময়েশ্চার বজায় রাখে এবং জটা বাঁধা রোধ করে বলে চুল ছিঁড়ে যাওয়ার সমস্যা কমিয়ে দেয়।

৭.দিনে আট গ্লাস পানি খেলে রোগমুক্ত থাকা যায়
১৯৪৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশন বোর্ড দেশটির জনগণকে দৈনিক আট গ্লাস ফ্লুইড বা তরল খাবার গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছিল। সেখান থেকে একান-ওকান হয়ে পৃথিবীজুড়ে প্রচলিত হয়ে গেছে এই মতবাদ। পানি যে আমাদের জন্য খুব দরকারী একটি জিনিস তাতে সন্দেহ নেই। তবে চা, দুধ, ফল এমনকি শাক-সবজিও শরীরের পানির চাহিদা পূরণ করতে পারে। তৃষ্ণা পেলে অবশ্যই পানি খাবেন। কিন্তু অতিরিক্ত পানিও বিপদের কারণ হতে পারে। এতে শরীরে সোডিয়ামের পরিমাণ কমে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন আপনি।

৮.ভিটামিন খেলে শক্তি বাড়বে
ভিটামিন হলো খাদ্যের একটি অত্যাবশ্যকীয় জৈব রাসায়নিক উপাদান, যা শরীরের ভেতরে তৈরি হয় না এবং অবশ্যই খাবার থেকে গ্রহণ করতে হয়।আমাদের ধারণা, ভিটামিন শরীরে শক্তি জোগায়, ভিটামিন খেলে দুর্বলতা কমবে বা খারাপ স্বাস্থ্য ভালো হবে। আসলে ধারণাটা ঠিক নয়। ভিটামিন থেকে শরীরে সরাসরি কোনো শক্তি উৎপন্ন হয় না। তবে বিভিন্ন প্রকার খাদ্য, যেমন শর্করা, আমিষ ও স্নেহজাতীয় খাবারের বিপাক-প্রক্রিয়ায় ভিটামিন অংশ নেয়। ফলে দেহে কোনো একটি ভিটামিনের অভাব হলে সেই নির্দিষ্ট উপাদানের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়।

৯. ভিটামিন খেলে গর্ভের বাচ্চা বেশি বড় হয়ে যায়
অনেকের ধারনা গর্ভ কালীন সময়ে মা যদি ভিটামিন খায় তবে নাকি গর্ভের বাচ্চা বেশি বড় হয়ে যায়। তাতে বাচ্চা প্রসবের সময় প্রসবে মার বেশি কষ্ট হয়, প্রসবে সমস্যা হতে পারে তাই মাকে ভিটামিন না খাবার পরামর্শ দেয় তারা। এটা ভুল ধারনা। আয়রন, ফলিক অ্যাসিড এগুলো বরং বাচ্চার কিছু জন্মগত ত্রুটি না হবার ক্ষেত্রে বিশেষ ভুমিকা রাখে।

১০.দুশ্চিন্তায় চুল পাকে
অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা মানুষের ভেতরের আর বাইরের বয়স দুটোই বাড়িয়ে দেয়। তবে এর কারণে যে চুল পেকে যায় এই ধারণাকে সমর্থন করে এমন কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি আজো। বরং মানুষের চুল পাকে জিনগত কারণে। তাই চিন্তা করলেন আর নাই করলেন তার সঙ্গে চুল পাকার সম্পর্ক নেই।

ডায়াবেটিক রোগীকে ইনসুলিন নিতে হবে বললেই চোখ-মুখ শুকিয়ে যায়। তারা মুখে খাওয়ার ট্যাবলেট খেতে নিরাপদ বোধ করে। এর কারণ কিন্তু কেবল ইনজেকশন নেয়ার ভয় নয়। বহু ডায়াবেটিস রোগীই মনে করে, ইনসুলিন নেয়া ক্ষতিকর। ইনসুলিন মানেই ডায়াবেটিসের শেষ চিকিৎসা। আসলে ডায়াবেটিস রোগীর জন্য এমনকি গর্ভ কালীন সময়ে ও ইনসুলিন নিরাপদ একটি ওষুধ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!