কর্টিসল হরমোনের সমতা রক্ষায় খাদ্য
স্বাভাবিক স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য বজায় রাখার গুরুত্বপূর্ণ হরমোনগুলোর একটি হলো ‘কর্টিসল’। এটি এড্রিনাল গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয়, যাকে স্ট্রেস বা মানসিক চাপ হরমোনও বলে। দেহের অভ্যন্তরে প্রাকৃতিকভাবে কোনো সমস্যা হলে এই হরমোন তৈরি হয়ে স্বাভাবিক ভারসাম্য ঠিক রাখে। কর্টিসল রক্তের গ্লুকোজের সমতা বজায় রাখা, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, পরিপাকক্রিয়া চলমান রাখা, ঘুমচক্র ঠিক রাখাসহ দেহে কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট ও প্রোটিন সঠিকভাবে ব্যবহার হতে সহযোগিতা করে। এ ছাড়া মাতৃগর্ভে ভ্রূণের বর্ধনে সহায়তা, দেহের অভ্যন্তরে প্রদাহজনিত সমস্যা, হাড়ের ক্ষয় ইত্যাদি রোধ করে।
সমতা বজায় রাখা জরুরী
কর্টিসল নামক এই স্টেরয়েড হরমোন অতিমাত্রায় বেড়ে গেলে বা অতিমাত্রায় কমে গেলে দেহে নানা সমস্যা তৈরি হয়। অতিমাত্রায় বেড়ে গেলে অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি, উচ্চ রক্তচাপ, ঘন ঘন প্রস্রাব, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যাওয়া, অতিরিক্ত পিপাসা লাগা, ত্বক ফেটে যাওয়া, পেশির দুর্বলতা ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া নারীদের অনিয়মিত মাসিক, প্রজনন, যৌনক্ষমতা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া, মানসিক অবস্থার পরিবর্তন, স্মরণশক্তি কমে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে।
আবার শরীরে কম মাত্রায় কর্টিসল প্রস্তুত হলে পেশির দুর্বলতা, অবসাদ, দুশ্চিন্তা এবং বিরক্তিভাব, মাথা ঘোরানো, বমি বমি ভাব, চর্মরোগ, হজমে সমস্যা, রক্তচাপ কমে যাওয়া, অরুচি ইত্যাদি দেখা দেয়।
খাদ্যের ভূমিকা
কর্টিসল হরমোনের সমতা বজায় রাখতে খাবারদাবারের রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব। নিয়মিত সুষম খাদ্য গ্রহণ, স্বাস্থ্যকর ও সুন্দর জীবনযাপন মনকে প্রফুল্ল রাখে। তাই নিয়মিত খাওয়া উচিত—
► দুধ, দই, পনির, সয়া, টফু ইত্যাদি ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার।
► সামুদ্রিক মাছ, অলিভ অয়েল, নারিকেল তেল, বাদাম।
► নানা রঙের শাকসবজি, ফলমূল।
► মাছ, মাংস, ডিম, ডাল।
► গোটা শস্যদানা, আঁশসমৃদ্ধ খাবার, ডার্ক চকোলেট।
► প্রচুর পানি পান করা ইত্যাদি।
পরিহার করুন
► কোমল পানীয়, চা ও কফি ইত্যাদিতে থাকা ক্যাফেইন এ হরমোন উৎপাদনে বাধা দেয়।
► সাদা চাল, আটা, ময়দা ও চিনি (পরিশোধিত) ইত্যাদি বর্জন।
► ডুবো তেলে ভাজা, টিনজাত, প্রক্রিয়াজাত, বোতলজাত খাদ্য।
► মিষ্টি, চর্বিজাতীয় খাবার, ঘি, মাখন, মগজ, ফাস্ট ফুড ইত্যাদি।
► অতিরিক্ত লবণ, চিনি পরিহার।
পরামর্শ
কর্টিসল হরমোন স্বাভাবিক মাত্রায় রাখতে হলে আরো কিছু করণীয় আছে। তা হলো—
► মানসিক চাপ, রাগ, ক্ষোভ ইত্যাদি কমিয়ে সবার সঙ্গে সর্বদা হাসিখুশি থাকা।
► নিয়ম করে প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো।
► কাজের ফাঁকে ফাঁকে বিশ্রাম নেওয়া।
► যোগব্যায়াম, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম, মেডিটেশন ইত্যাদি করা।
► ধূমপান ও মদ্যপান পুরোপুরি পরিহার।
► অতিরিক্ত ওজন কমানো ইত্যাদি।
লেখক : পুষ্টিবিদ
ডায়েট প্লানেট বাংলাদেশ
https://www.youtube.com/watch?v=r0t64gzuqtg