Friday, May 3
Shadow

হার্টের অসুখে : ২৫-৩০ বছর বয়সেও হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে কেন?

হার্টের অসুখে

বয়স ৩০-এর গণ্ডি ছোঁয়ার আগেই বহু মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন হার্টের অসুখে । কেন এমনটা হচ্ছে? হার্টের অসুখে-এর এই সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবেই বা কীভাবে?  করোনারি আর্টারি রোগ একটি ঘাতক রোগ। এই অসুখে আক্রান্তদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। আর সব থেকে ভয়ের বিষয় হলো, বয়স ৩০-এর কোটায় থাকা নবীন প্রজন্মের মধ্যেও এই রোগ দেখা দিচ্ছে। শুনতে অবাক লাগলেও ২৫-৩০ বছরের মধ্যেও হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে। এবং তা বাড়ছেও।

প্রিম্যাচিওর করোনারি আর্টারি ডিজিজ
৫৫ বছরের কমবয়সী পুরুষ এবং ৬৫ বছরের কমবয়সী মহিলাদের মধ্যে এস্ট্যাবলিশড কোলেস্টেরল প্লাক দেখা গেলে, সেই অবস্থাকে প্রিম্যাচিওর করোনারি আর্টারি ডিজিজ বলা হয়। কিন্তু এই ধারণাটি ইউরোপিয়ান ও আমেরিকান রোগীদের ক্ষেত্রে বেশি প্রযোজ্য।

করোনারি আর্টারি ডিজিজের ঝুঁকির কারণগুলি কী?
 ডায়াবেটিস এবং প্রিডায়াবেটিস দু’টি রোগই করোনারি আর্টারি ডিজিজের কারণ হতে পারে। এর ফলে অ্যাথেরোক্লেরোসিস দীর্ঘ দিন আগেই আরম্ভ হয়ে যায়।
 উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশনের কারণেও হতে পারে করোনারি আর্টারি ডিজিজ।
 শরীরের কোলেস্টেরলের সমস্যা (ডিসলিপিডেমিয়া) থাকলেও মানুষের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।

 মোটা শরীর বা স্থূলত্বও এই রোগের অন্যতম কারণ।
 নিকট আত্মীয়ের মধ্যে কারও করোনারি আর্টারি ডিজিজের ইতিহাস থাকলে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
 মানুষের ধূমপানের প্রবণতাও বেড়েছে কয়েকগুণ। আবার বহু মানুষ পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন। তার থেকেও সমস্যা বাড়ছে।

 কমবয়সী স্কুল ও কলেজে যাওয়া শহুরে ছাত্র-ছাত্রীদের বাইরে খেলাধুলা কমে গেছে। পাশাপাশি মানুষ দৈনিক জীবনে এখন অনেক বেশি সময় বসে কাটায়।
 আধুনিক জীবনযাপনে দুশ্চিন্তা বেড়েছে।

 নাইট ডিউটির ঠেলায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে চাকরি করা মানুষের ঘুমের স্বাভাবিক সময় ও অভ্যেস বদলেছে।
 রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস থেকে এই রোগে অক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বিশেষত মহিলাদের মধ্যেই এমনটা বেশি হতে দেখা যায়।
 শহুরে এলাকায় এবং মেট্রোপলিটান শহরে বায়ু দূষণ এই রোগের সম্ভাব্য ঝুঁকির কারণের মধ্যে খুব সম্প্রতি যোগ করা হয়েছে।

আর এই সবের কারণে এই রোগের মোকাবিলা করা আরো কঠিন হয়ে উঠেছে।

চিকিৎসা
গত ২০ বছর ধরে আমরা লক্ষ করছি, বয়স ৩০-এর কোটায় থাকা বহু রোগী অ্যাকিউট মায়োকার্ডিয়াল ইনফ্রাকশন নিয়ে ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডে ভর্তি হচ্ছেন। এই রোগীর চিকিৎসায় জরুরি ভিত্তিতে করোনারি অ্যাঞ্জিওগ্রাফি করার প্রয়োজন পড়ছে। অনেক ক্ষেত্রে যতক্ষণে তারা চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আসছেন, ততক্ষণে তাদের হার্টের গুরুত্বপূর্ণ অংশের ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। এর ফলে দুর্বল হার্ট নিয়ে তারা সারা জীবনের জন্য সমস্যায় থাকবেন। কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা আরো জটিল আকার ধারণ করে জীবন নিয়ে টানাটানি পর্যন্ত ফেলে দিচ্ছে।

আমরা দেখেছি, গত ১০ বছরে বয়স ২০ থেকে ৪০-এর মধ্যে থাকা ২ হাজারেরও বেশি রোগীকে হয় অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টির মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়েছে, কিংবা তাদের বাইপাস সার্জারি করতে হয়েছে। আর এই সংখ্যাটা প্রতি বছরই আশঙ্কাজনকভাবে আরো বেড়েই চলেছে।

এই সংখ্যা বৃদ্ধির কারণটা আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে যখন আমরা আমাদের ডেমোগ্রাফিক চিত্রের দিকে তাকাই।

হার্টের অসুখে সমাধান
 এই সমস্যা সমাধানে ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন ও রক্তে কোলেস্টেরলের আধিক্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। তাই প্রতিনিয়িত চিকিৎসকের পরামর্শে থাকা বাঞ্ছনীয়।

 পাশাপাশি কমবয়সীদের মধ্যে ধূমপান ত্যাগ করার প্রবণতা বাড়াতে হবে।
 খেলাধূলা ও শারীরিক ব্যায়ামে উৎসাহ দেয়ার জন্য জনসচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন।
সমস্যার বিষয় হলো, করোনারি আর্টারি রোগে একবার আক্রান্ত হলে বাকি জীবনে চিকিৎসার আওতায় থাকতে হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!

error: Content is protected !!