Saturday, June 14

পাঠ্যবইয়ের বাইরে শেখা: তোমার সত্যিকারের জানার শুরু এখানেই!

লেখা: মোঃ জামাল হোসেন (শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালক, ন্যাশনাল গার্লস মাদ্রাসা, ফেনী)

আমরা প্রতিদিন স্কুলে যাই, বই খুলে পড়ি, ক্লাসে শিক্ষক যা বলেন তা খাতায় লিখি। পরীক্ষা আসে, মুখস্থ করি, নম্বর পাই। কিন্তু ভেবে দেখেছো কি, এই বইয়ের বাইরেও এক বিশাল জগত আছে, যেটি তোমার কৌতূহল, যুক্তিবোধ আর বাস্তব জীবনের প্রস্তুতিকে বাড়িয়ে তোলে? আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর কবিতায় বলেছেন,

“থাকব না কো বদ্ধ ঘরে, দেখবো এবার জগৎটাকে-

কেমন করে ঘুরছে মানুষ যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে।”

এই বাইরের জগতটাকে জানতে হবে, জানার চেষ্টা করতে হবে।

আজ আমরা কথা বলবো এমন কিছু শেখার বিষয়ে, যা তোমার পাঠ্যসূচির মধ্যে নেই, কিন্তু জীবনে একান্ত প্রয়োজনীয়।

Extracurricular education

১. অন্ধ অনুসরণ থেকে সরে এসো, ‘কেন’ জিজ্ঞাসা করো

তুমি হয়তো ভূগোলে পড়েছো – নদী পাহাড় কিভাবে তৈরি হয়। কিন্তু কখনো ভেবেছো – নদী শুকিয়ে গেলে গ্রামের মানুষ কী করে? পাহাড় কেটে রাস্তা বানানো কতটা বিপদ ডেকে আনতে পারে? এসব প্রশ্নের উত্তর পাঠ্যবইয়েই নেই – খুঁজে নিতে হয়। ভেবে দেখেছো কি, যদি পৃথিবীর সব গাছ কেটে ফেলে তবে কি হতে পারে?


২. চারপাশকে বই বানাও

– তোমার বাসার বিদ্যুৎ বিল কেমন আসে?
– কলের পানির অপচয় কেন বন্ধ করা দরকার?
– টেলিভিশনে যে বিজ্ঞাপন দেখো, তা সত্যি না ভুয়া, বোঝার উপায় কী?

– মিথ্যা কথা বললে বা প্রতারণা করলে কি প্রভাব পরতে পারে?

–  কেন আল্লাহ্‌ আমাদের সকল খারাপ কাজ করতে নিষেধ করেছেন? এর ক্ষতিকর প্রভাব কী হতে পারে? 

এসব হলো বাস্তব জীবনের ধর্মীয়,সামাজিক, গণিত ও বিজ্ঞানের মতো বিষয় – যেগুলো প্রতিদিন তোমার সামনে ঘটে যাচ্ছে, কিন্তু চোখ খোলা না থাকলে দেখা যায় না।


৩. ভুল না শিখে সত্যকে ভিন্নভাবে শেখা

অনেক সময় আমরা ভয়ে প্রশ্ন করি না – যদি ভুল বলি?আবার মনে হতে পারে যে, অন্যরা কি বলবে? অন্যরা হাসবে না তো? মনে রেখো, ভুল না করলে কেউ শেখে না। কিন্তু তোমার শেখার পদ্ধতি যদি নিজের মতো হয় – তবেই তা দীর্ঘস্থায়ী হবে।


৪. বইয়ের বাইরে পড়ো এবং জানার চেষ্টা কর

পাঠ্যবইয়ের বাইরে থেকে বিভিন্ন বই যেমন গল্প, ভ্রমণ কাহিনি, জীবনী বা বিজ্ঞান বিষয়ক ছোট বড় বই পড়ো। বিশেষ করে সকলকে অন্যান্য এই সকল বইয়ের পাশা পাশি অবশ্যই ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করা এবং সাথে সাথে নবীদের কাহিনী, সাহাবাদের কাহিনী, বিভিন্ন মনিষী, আবার মালালা ইউসুফজাই, এপিজে আব্দুল কালাম বা সত্যজিৎ রায়ের জীবনী পড়ে দেখো – তাদের জীবন থেকেও অনেক কিছু শেখা যায়।


৫. শেখার জন্য দরকার মনের ইচ্ছে

ইন্টারনেট অনেক সময় ভীষণ দরকারি, কিন্তু কেবল ইউটিউব দেখে, ভিডিও দেখে শেখা একমাত্র পথ নয়। আবার এখানে ভালোর পাশা পাশি খারাপের অনুপাত বেশি। তুমি পত্রিকা, রেডিও, পরিবারের অভিজ্ঞতা, এমনকি নিজের একটি খাতা তৈরি করে শেখার জন্য নিজের মত করে একটি জগত তৈরি করতে পারো।


৬. শিখতে হলে কৌতূহল থাকতে হবে

শিখার জন্য তোমাকে প্রচণ্ড রকমের কৌতূহলি হতে হবে। তুমি যদি প্রতিদিন নিজেকে একটা প্রশ্ন করো – “আজ আমি নতুন কী শিখলাম?” – তাহলেই তুমি বইয়ের বাইরে সত্যিকারের শেখার পথে এগিয়ে যাচ্ছো।


শেষ কথা

শুধু সার্টিফিকেটের জন্য নয়, শিখতে হবে একজন প্রকৃত মনুষ্যত্ব সম্পন্ন মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার জন্য। স্কুলের শিক্ষা তোমার জীবনের ভিত্তি তৈরি করে। কিন্তু নিজের আগ্রহ আর কৌতূহলই তৈরি করবে তোমার ভবিষ্যৎ পথ। কেবল নম্বর নয়, শেখার আনন্দটাই আসল।

তাই, পাঠ্যবইয়ের বাইরের জগতে একবার চোখ মেলে দেখো – দেখবে, শেখা আসলে কখনো থামে না। আবারও নজরুলের সেই ইচ্ছেটা – “থাকব না কো বদ্ধ ঘরে, দেখবো এবার জগৎটাকে-

কেমন করে ঘুরছে মানুষ যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!