ফ্যাকো ও গ্লুকোমা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এম নজরুল ইসলাম বললেন, নীরব অন্ধত্বের প্রধান কারণ গ্লুকোমা
বিশ্বের প্রায় ৭ কোটি লোক গ্লুকোমায় ভুগছে। বাংলাদেশে পঁয়ত্রিশোর্ধ্ব ব্যক্তিদের শতকরা প্রায় তিনজনের গ্লুকোমা রয়েছে। তারপরও গ্লুকোমা নিয়ে সাধারণ মানুষ ততটা সচেতন নয়। অথচ শুরুতে চিকিৎসা নিলে ভালো থাকা যায়। গ্লুকোমা সম্পর্কে কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন বাংলাদেশ আই হাসপাতালের গ্লুকোমা বিভাগের চেয়ারম্যান, ফ্যাকো ও গ্লুকোমা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এম নজরুল ইসলাম
প্রশ্ন : চোখের রোগ গ্লুকোমা আসলে কী? কী কী কারণে এটা হতে পারে?
এম নজরুল ইসলাম : রক্তের যেমন চাপ বা প্রেসার আছে, তেমনি চোখেরও একটি নির্দিষ্ট চাপ রয়েছে। চোখের স্বাভাবিক চাপ ১০-২০ মিমি মারকারি। কোনো কারণে চোখের এই চাপ বেড়ে গেলে অপটিক নার্ভের ক্ষতি হয় এবং ধীরে ধীরে নার্ভটি শুকিয়ে যায়। একপর্যায়ে দৃষ্টির পরিসীমা কমতে কমতে চোখ অন্ধও হয়ে যায়। এ অবস্থাকেই বলা হয় গ্লুকোমা। এ রোগের মারাত্মক দিক হচ্ছে—রোগটি উপসর্গহীন ও অপরিবর্তনীয়। এটি নীরবে চোখকে অন্ধত্বের দিকে নিয়ে যায় বলে একে নীরব ঘাতক বা সাইলেন্ট কিলার বলা হয়। অনেক প্রকারের গ্লুকোমা রয়েছে। যেমন—প্রাথমিক অ্যাংগেল খোলা গ্লুকোমা, প্রাথমিক অ্যাংগেল বন্ধ গ্লুকোমা, স্বাভাবিক চাপ গ্লুকোমা, সেকেন্ডারি গ্লুকোমা, জন্মগত গ্লুকোমা ইত্যাদি।
এই রোগের সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া না গেলেও চোখের উচ্চচাপকেই এর প্রধান কারণ বলে ধরে নেওয়া হয়। তবে স্বাভাবিক চাপেও কারো কারো এই রোগ হতে পারে। অনেক সময় চোখে আঘাত পেলেও পরবর্তী সময়ে গ্লুকোমা হতে পারে। আবার ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা দীর্ঘদিন ধরে স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধের ব্যবহার, বংশগত কারণ, চল্লিশের বেশি বয়স হলে, ডায়াবেটিস, মাইগ্রেন থাকলে, সময়মতো চোখের ছানির অপারেশন না করালে, অল্প আলোয় অনেকক্ষণ ধরে পড়াশোনা করলে, সেলাই করলে বা টেলিভিশন দেখলে, মায়োপিক চশমা ও প্লাস পাওয়ার ব্যবহার করলে, চোখে জন্মগত ত্রুটি থাকাসহ নানা কারণে গ্লুকোমা হতে পারে।
প্রশ্ন : ‘গ্লুকোমা’ আছে কি না পরীক্ষা না করে বোঝার উপায় কী? গ্লুকোমা হলে কী ধরনের পরীক্ষা করতে হয় এবং এসব পরীক্ষা দ্বারা কী বোঝা যায়?
এম নজরুল ইসলাম : কারো সন্দেহ হলে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা উচিত। যেমন—দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা, চোখের চাপ পরীক্ষা, দৃষ্টির ব্যাপ্তি বা ভিজ্যুয়াল ফিল্ড পরীক্ষা, রেটিনার রঙিন ছবি, ওসিটি মেশিনের সাহায্যে রেটিনার নার্ভ ফাইবার অ্যানালিসিস, অপটিক ডিস্কের পরীক্ষা ইত্যাদি নানা ধরনের আধুনিক পরীক্ষার সাহায্যে গ্লুকোমা ও এর ধরন সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়।
এ রোগের বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কোনো উপসর্গ থাকে না। রোগের শেষ মুহূর্তে লক্ষণ প্রকাশ না পাওয়া পর্যন্ত রোগী বুঝতে পারে না যে এ রকম জটিল রোগ রয়েছে। চশমা পরিবর্তনের সময় বা নিয়মিত চোখ পরীক্ষার সময় হঠাৎ রোগ ধরা পড়ে। তবে কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যেমন—ঘন ঘন চশমার গ্লাস বদলাতে হয়, চোখে ঝাপসা দেখা বা আলোর চারপাশে রংধনুর মতো দেখা যায়, ঘন ঘন মাথা ব্যথা বা চোখে ব্যথা হয়, দৃষ্টিশক্তি বা দৃষ্টির পারিপার্শ্বিক ব্যাপ্তি ধীরে ধীরে কমে আসে, অনেক সময় চলতে গিয়ে দরজার পাশে বা অন্য কোনো পথচারীর গায়ে ধাক্কা লাগে, মৃদু আলোয় কাজ করলে চোখে ব্যথা অনুভূত হয়, ছোট শিশুদের অথবা জন্মের পর চোখের কর্নিয়া ক্রমেই বড় বা সাদা হয়ে যেতে পারে, চোখ লাল হওয়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া ইত্যাদি।
প্রশ্ন : চোখের প্রেসার স্বাভাবিক থাকলেও কি গ্লুকোমা হতে পারে?
এম নজরুল ইসলাম : হ্যাঁ, চোখের প্রেসার স্বাভাবিক ১০-২০ মিমি মারকারি থেকেও এক ধরনের গ্লুকোমা হতে পারে। যাকে বলা হয় লো টেনশন গ্লুকোমা বা নরমাল টেনশন গ্লুকোমা। প্রাথমিক অ্যাংগেল খোলা গ্লুকোমার মতো এটি এক ধরনের গ্লুকোমা, যেখানে অপটিক নার্ভ ও দৃষ্টির পরিসীমায় প্রমাণিত পরিবর্তন দেখা যায়; কিন্তু চোখের চাপ স্বাভাবিক—অর্থাৎ ২১ মিমি মারকারির কম থাকে। এ জন্য এ ধরনের গ্লুকোমাকে নরমাল টেনশন গ্লুকোমাও বলা হয়। চোখের চাপ কম থাকলেও কেন গ্লুকোমা হয়, এ নিয়ে অনেক মতভেদ ও তত্ত্ব আছে। অনেকের মতে, কিছু মানুষের স্বাভাবিক মাত্রার চোখের চাপও ওই বিশেষ চোখটির জন্য বেশি এবং অপটিক নার্ভের পরিবর্তন করতে সক্ষম। অনেকে মনে করেন, ওই রোগীর জীবনে জন্মের সময় বা পরে কোনো একসময়ে রক্তের চাপ অত্যন্ত কমে যাওয়ায় চোখের ভেতরে ও অপটিক নার্ভে রক্ত সরবরাহ কমে গিয়ে অপটিক নার্ভের ক্ষতিসাধন করেছিল। ফলে তার চোখের কাপডিস্ক অনুপাত বেড়ে যায় এবং দৃষ্টির পরিসীমা কমে যায়। পরবর্তীকালে রক্তের চাপ স্বাভাবিক হয়ে যাওয়ার ফলে বিনা ওষুধেই চোখের চাপ স্বাভাবিক বা কম থাকে। অন্য এক তত্ত্ব অনুযায়ী রোগীর চোখের চাপ যখন মাপা হয়, তখন হয়তো স্বাভাবিক থাকে; কিন্তু দিনে বা রাতে কোনো একসময়ে চোখের চাপ স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায় এবং অপটিক নার্ভের ক্ষতিসাধন করে থাকে। বিষয়টি বিবেচনায় রেখে লো টেনশন গ্লুকোমা রোগীদের প্রতি দুই ঘণ্টা অন্তর অন্তর মোট ২৪ ঘণ্টা চোখের চাপ মাপা হয়ে থাকে। এই পরীক্ষার নাম ফেজিং, যাতে যদি দেখা যায়, কোনো বিশেষ সময়ে রোগীর চোখের চাপ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়ে যায়, তাহলে এতে রোগ নির্ণয়সহ চিকিৎসারও সুবিধা হয়। দিন-রাতের ঠিক যে সময়টিতে ওই চাপ বেড়ে যায়, তার এক ঘণ্টা আগে চোখের চাপ কমানোর ড্রপ দিলে চাপ স্বাভাবিক থাকবে এবং চোখের ক্ষতির আশঙ্কা কমে যাবে। রোগ নির্ণয় হয়ে গেলে প্রাথমিক অ্যাংগেল খোলা গ্লুকোমার অনুরূপ অপারেশন করেও এই রোগটির চিকিৎসা করা যেতে পারে। এ রোগে সাধারণত চোখের চাপ ১২ মিমি মারকারি বা তার চেয়ে কম রাখার চেষ্টা করা হয়।
প্রশ্ন : চোখের প্রেসার বাড়লেই কি গ্লুকোমা হয়?
এম নজরুল ইসলাম : অনেক মানুষের চোখের চাপ স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি থাকতে পারে; কিন্তু এদের পরীক্ষা করে যদি দেখা যায়, অপটিক ডিস্কের কাপডিস্ক অনুপাত স্বাভাবিক এবং দৃষ্টির পরিসীমাও স্বাভাবিক, তাহলে তাদের বলা হয় অকুলার হাইপারটেনশন। এসব রোগীর কেউ কেউ ভবিষ্যতে অ্যাংগেল খোলা গ্লুকোমা রোগীতে রূপান্তরিত হতে পারে বিধায় এদের ‘গ্লুকোমা সাসপেক্ট’ বলা হয়। এসব রোগীকে ওয়াটার ড্রিংকিং টেস্ট করে যদি পজিটিভ পাওয়া না যায়, তাহলে অন্তত বছরে একবার পরীক্ষা করলেই চলে। কোনো ওষুধের প্রয়োজন হয় না। বিশেষজ্ঞদের মতে, ওই একটু বেশি চোখের চাপ হয়তো ওই চোখের জন্য স্বাভাবিক এবং তা অপটিক নার্ভের জন্য ক্ষতিকর নয়। অকুলার হাইপারটেনশনের রোগীদের সাধারণত কোনো চিকিৎসা দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। তবে যদি ফলোআপ পরীক্ষায় অপটিক নার্ভ বা দৃষ্টির পরিসীমার কোনো পরিবর্তন হতে থাকে, তাহলে প্রাথমিক অ্যাংগেল খোলা গ্লুকোমার মতো চিকিৎসা করাতে হবে।
প্রশ্ন : কারো হয়তো দৃষ্টিশক্তি ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। এটা ছানি না গ্লুকোমার লক্ষণ?
এম নজরুল ইসলাম : ছানি ও গ্লুকোমা উভয় রোগেই চোখের দৃষ্টি ধীরে ধীরে কমতে থাকে। যার ফলে গ্লুকোমার কারণে দৃষ্টি কমতে থাকলেও অনেকে চোখের ছানি ভেবে ভুল করে থাকেন। ছানি অনেকের কাছেই পরিচিত একটি চোখের অসুখ। এটা পাকতে সময় লাগে এবং অপারেশন করে চিকিৎসা করা হয়। অনেকে এ ক্ষেত্রে অজ্ঞতার কারণে গ্লুকোমাকে ছানি মনে করে পাকার জন্য অপেক্ষা করেন এবং যখন রোগী প্রায় অন্ধ হয়ে যান, তখন ছানি পেকে গেছে ভেবে চিকিৎসকের কাছে আসেন। এ অবস্থায় সত্যি যদি ছানি রোগ হয়, তাহলে তার সঠিক চিকিৎসা সম্ভব, কিন্তু রোগী যদি গ্লুকোমায় ভুগে অন্ধ হয়ে যান, তাহলে এর আর কোনো চিকিৎসা নেই। অথচ এই রোগী যদি প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসকের কাছে আসতেন, তাহলে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করা যেত ও অন্ধত্ব এড়ানো সম্ভব হতো।
প্রশ্ন : অনেকক্ষণ পড়াশোনা, সেলাই করা বা টিভি দেখলে কি গ্লুকোমা হয়?
এম নজরুল ইসলাম : অল্প আলোতে অনেকক্ষণ ধরে পড়াশোনা, সেলাই করলে বা টেলিভিশন দেখলে ওই একইভাবে চোখের চাপ বেড়ে গিয়ে অ্যাংগেল বন্ধ গ্লুকোমার সূত্রপাত হতে পারে। তবে সব মানুষের এ অসুবিধা হয় না। একমাত্র যাঁরা অন্ধকার বা অল্প আলোতে কাজ করার সময় চোখে বা মাথায় ব্যথা অনুভব করেন, তাঁরা চক্ষু চিকিৎসককে দেখিয়ে গ্লুকোমা আছে কি নেই—এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেন।
প্রশ্ন : গ্লুকোমা প্রতিরোধের উপায় কী? গ্লুকোমা হলেই বা করণীয় কী?
এম নজরুল ইসলাম : গ্লুকোমা প্রতিরোধে এ বিষয়ে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি করা ও চক্ষু বিশেষজ্ঞসহ অন্যান্য চিকিৎসকদেরও এ রোগ নির্ণয়ে অংশগ্রহণ করা উচিত। প্রত্যেক মানুষের উচিত বছরে অন্তত একবার চোখ পরীক্ষা করা এবং জেনে নেওয়া যে গ্লুকোমা হয়েছে কি না। এ ছাড়া চল্লিশোর্ধ্ব ব্যক্তিদের নিয়মিত চেকআপ করা দরকার। গ্লুকোমার রোগী তাঁর রোগ ও চিকিৎসার অভিজ্ঞতা আশপাশের লোকজনকে জানালে সহজেই রোগটি সম্পর্কে সচেতন হতে পারবেন এবং মানুষ অন্ধত্বের হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারবে।
আর যাঁদের গ্লুকোমা ধরা পড়েছে, তাঁদের উচিত গ্লুকোমা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে কি না জানতে কমপক্ষে তিন মাস অন্তর চোখ পরীক্ষা করা, চিকিৎসকের পরামর্শে নির্ধারিত মাত্রার ওষুধ নিয়মিত ব্যবহার, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া শিশুদের স্টেরয়েড না দেওয়া, দীর্ঘদিন একই ওষুধ ব্যবহারে এর কার্যকারিতা কমে গেলে বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে আবার চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে প্রয়োজনে শল্যচিকিৎসা নেওয়া।
প্রশ্ন : ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের সঙ্গে কি চোখের উচ্চচাপ বা গ্লুকোমার কোনো সম্পর্ক আছে?
এম নজরুল ইসলাম : ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপের সঙ্গে চোখের উচ্চচাপ বা গ্লুকোমার সম্পর্ক রয়েছে। দেখা যায়, রক্তের চাপ প্রতি ১০ মিমি মারকারি বাড়ার দরুন চোখের চাপ ১ মিমি মারকারি বেড়ে যায়। যদিও স্বাভাবিক অবস্থায় দু-এক দিনের মধ্যেই চোখের এই বাড়তি চাপ ঠিক হয়ে যায়। এই দিক দিয়ে রক্তের চাপ খুব বেশি না বাড়লে চোখের তেমন ক্ষতি হয় না। বরং ৬০-৭০ বছর বয়সে রক্তের ধমনি ও শিরা শক্ত হয়ে যাওয়ার ফলে চোখে রক্ত সরবরাহ কমে গিয়ে অক্সিজেন সরবরাহ কম হয় এবং অপটিক নার্ভ ফাইবারের ক্ষতি হতে পারে। এই দিক দিয়ে বয়স্ক রোগীদের রক্তের চাপ কোনো কারণে অস্বাভাবিকভাবে কমে গেলে অপটিক নার্ভের প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায় এবং এর ফাইবারের ক্ষতিসাধন করে ও দৃষ্টির পরিসীমা কমে যায়।
প্রশ্ন : গ্লুকোমার সবচেয়ে আধুনিক চিকিৎসা কী? দেশে কী ধরনের চিকিৎসা হচ্ছে?
এম নজরুল ইসলাম : গ্লুকোমা যে পর্যায়ে নির্ণয় হোক না কেন, তার আধুনিক চিকিৎসা বাংলাদেশেই রয়েছে। পৃথিবীব্যাপী এ রোগের প্রচলিত তিন ধরনের চিকিৎসা হলো—ওষুধের দ্বারা চিকিৎসা, লেজার চিকিৎসা ও শল্যচিকিৎসা বা সার্জারি। ওষুধ ও লেজার প্রয়োগ করে কাজ না হলে শল্যচিকিৎসা বা সার্জারি করতে হয়। এ রকম প্রচলিত একটি চিকিৎসা ট্রাবেকুলেকটোমি। গ্লুকোমার চিকিৎসায় এটি সারা বিশ্বে ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রে ব্যবহার হচ্ছে। এটি একটি বাইপাস সার্জারি। হার্টে ব্লক হলে রক্ত চলাচলে যেমন ব্যাঘাত ঘটে, তেমনি চোখের ভেতরের তরল পদার্থ বেরিয়ে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ হলে চোখের চাপ বাড়তে থাকে। এ জন্য তখন একটি বাইপাস করে দিতে হয়, যাতে তরলটি বেরিয়ে গিয়ে রক্তের সঙ্গে মিশে যেতে পারে। এতে চোখের ভেতরে চাপ কমে। আবার ট্রাবেকুলেকটোমি সফল না হলে চোখের পাশে ভাল্ভ প্রতিস্থাপন করা হয়, যা আমরা বাংলাদেশে করছি। এর সফলতা অনেক বেশি।
প্রশ্ন : চোখের চাপ কমিয়ে রাখার জন্য এক চোখে সর্বোচ্চ কতবার অপারেশন করা যায়? প্রথম অপারেশনের পর সাধারণত কয় বছর পর্যন্ত প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকে?
এম নজরুল ইসলাম : সাধারণত ৭৫ ভাগ ক্ষেত্রে ট্রাবেকুলেকটোমি সফল হয়। বাকি ক্ষেত্রে ওষুধের প্রয়োজন হতে পারে। তবে প্রয়োজনে একই অপারেশন ওই একই চোখের অন্য স্থানে দ্বিতীয়বারও করা যেতে পারে। আবার ট্রাবেকুলেকটোমি সফল না হলে অনেক সময় আহমেদ গ্লুকোমা ভাল্ভ (এজিভি) ইমপ্লান্ট করার প্রয়োজন হতে পারে। যা কিছুটা ব্যয়বহুল।
অপারেশন সফল হলে প্রথম অপারেশনের পর সারা জীবনই প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকতে পারে। তবে কারো অপারেশনের পরও চোখের চাপ নিয়ন্ত্রণে না এলে চোখের ড্রপ ব্যবহার করা যেতে পারে।
প্রশ্ন : গ্লুকোমা রোগীদের পড়াশোনা, টিভি-চলচ্চিত্র দেখার ক্ষেত্রে কোনো বিধি-নিষেধ আছে কি না?
এম নজরুল ইসলাম : না, কোনো বিধি-নিষেধ নেই। তবে রোগীর দৃষ্টির পরিসীমা কমে ১০ ডিগ্রির কম যদি হয়, তাহলে গাড়ি চালানো উচিত নয় এবং কারো সাহায্য নিয়ে পথেঘাটে চলাচল করা উচিত।
প্রশ্ন : সর্বাধুনিক চিকিৎসা ‘আই স্টেন্ট ইমপ্লান্ট’ সম্পর্কে কিছু বলুন?
এম নজরুল ইসলাম : গ্লুকোমার সর্বাধুনিক চিকিৎসার একটি হলো ‘আই স্টেন্ট ইমপ্লান্ট’। সম্প্রতি এটি দেশে আমরাই প্রথম চালু করেছি। তবে একটু ব্যয়বহুল হওয়ার কারণে সেটি এখনো সচরাচর করা যাচ্ছে না।
এই চিকিৎসায় স্টেন্টের ভেতর দিয়ে চোখের ভেতরের ফ্লুইড (অ্যাকুয়াস হিউমার) অ্যাংগেল থেকে বেরিয়ে রক্তে মিশে যায়। তবে এই চিকিৎসা অল্প বা মাঝারি গ্লুকোমার রোগীর চোখের চাপ কমাতে খুবই কার্যকর। কিন্তু অ্যাডভান্স বা শেষ পর্যায়ের গ্লুকোমা রোগীদের জন্য এই পদ্ধতি তেমন কার্যকর নয়। তাদের জন্য এখনো ট্রাবেকুলেকটোমি অপারেশনই সবচেয়ে বেশি কার্যকর।
https://www.youtube.com/watch?v=Geg0SPadJxM&feature=youtu.be&fbclid=IwAR1IH_GjxbAjoJiJB6V97I3cmgyyFKy_ekZgxLaCQEn7DcDtkmK99H1pzpQ