class="post-template-default single single-post postid-19160 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মো. গোলাম আব্বাসের পরামর্শ : জলাতঙ্ক মানে নিশ্চিত মৃত্যু, আক্রান্ত হলে করণীয়

জলাতঙ্ক

জলাতঙ্ক মানে নিশ্চিত মৃত্যু

জলাতঙ্ক বা র‌্যাবিস ভাইরাসজনিত এক ধরনের জুনোটিক রোগ, যা প্রাণী থেকে মানুষে ছড়ায়। মানুষ ও সব গবাদি পশুর জন্য এটি মারাত্মক রোগ। সাধারণত রোগাক্রান্ত গৃহপালিত ও বন্য প্রাণী যেমন—কুকুর, বিড়াল, শিয়াল, বেজি, বানরের কামড়, আঁচড় বা লালার সংস্পর্শে এ রোগ হয়ে মানুষের মৃত্যু ঘটাতে পারে। অথচ সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিলে ভয়াবহতা এড়ানো যায়। লিখেছেন ঢাকার সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মো. গোলাম আব্বাস

জলাতঙ্কের লক্ষণ প্রকাশের পর শতভাগ ক্ষেত্রে মৃত্যু অবধারিত। অথচ এ রোগটি এখন আধুনিক ব্যবস্থাপনায় শতভাগ প্রতিরোধযোগ্য

জলাতঙ্কের মূল কারণ র‌্যাবডো (র‌্যাবিস) ভাইরাস, যা লিসা ভাইরাস গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত। কুকুর, বিড়াল, শিয়াল, বেজি, বানর, বাদুড়সহ যেকোনো বন্য প্রাণীর লালা বা রস যেকোনোভাবে মানুষের শরীর তথা একবার মস্তিষ্কের টিস্যুতে প্রবেশ করলে জলাতঙ্ক হয়ে মৃত্যু নিশ্চিত। ১৮৮৫ সালে প্রথম জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেন বিজ্ঞানী লুই পাস্তুর। তাই কেউ আক্রান্ত হলে প্রধান কাজ হবে জলাতঙ্কের টিকা দেওয়া।

 

লক্ষণ

কারো শরীরে জলাতঙ্কের লক্ষণ দেখা দিলে আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে উন্মত্ত বা পাগলামো আচরণ এবং মৌন আচরণ—এই দুই ধরনের আচরণ দেখা দিতে পারে।

অস্বাভাবিক আচরণ : আক্রান্ত ব্যক্তির কথাবার্তা ও ভাবভঙ্গি হবে অস্বাভাবিক। সে উদ্দেশ্য ছাড়াই ছুটে বেড়াবে, ক্ষুধামান্দ্য হবে, বিকৃত আওয়াজ করবে, বিনা প্ররোচনায় অন্যকে কামড়াতে আসবে ইত্যাদি।

♦ পানির পিপাসা খুব বেড়ে যাবে, তবে পানি খেতে পারবে না। পানি দেখলেই আতঙ্কিত হবে, ভয় পাবে।

♦ আলো-বাতাসের সংস্পর্শে এলে আতঙ্ক আরো বেড়ে যাবে।

♦ খাবার খেতে খুবই কষ্ট হবে, খেতে পারবে না।

♦ শরীরে কাঁপুনি, মুখ দিয়ে অতিরিক্ত লালা নিঃসরণ হবে। কণ্ঠস্বর কর্কশ হতে পারে।

♦ মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাবে, আক্রমণাত্মক আচরণ দেখা দেবে।

মৌন আচরণ : আক্রান্ত স্থান একটু অবশ অবশ লাগবে। শরীর নিস্তেজ হয়ে ঝিমোতে পারে।

♦ মানুষের চোখের আড়ালে থাকা, শরীরে কাঁপুনি ও পক্ষাঘাত দেখা দিতে পারে।

 

আক্রান্ত হলে করণীয়

♦ কুকুর, বিড়াল, শিয়াল, বেজি, বানরসহ যেকোনো বন্য প্রাণী কামড়ালে প্রথমেই কাপড় কাচার ক্ষারযুক্ত সাবান (র‌্যাবিস  ভাইরাসের সেলকে গলিয়ে ফেলে ক্ষার) দিয়ে প্রবহমান পানিতে কমপক্ষে ১৫/২০ মিনিট ক্ষতস্থান ধুতে হবে। এতে ৭০-৮০ শতাংশ জীবাণু মারা যায়।

♦ যেকোনো আয়োডিন/অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম লাগিয়ে কামড়ানো বা আঁচড় দেওয়ার ‘জিরো আওয়ার’-এর মধ্যে, অর্থাৎ যত দ্রুত সম্ভব টিকা দিয়ে ঝুঁকিমুক্ত থাকতে হবে।

♦ কামড় যদি গভীর হয় বা রক্ত বের হয়, তবে ক্ষতস্থানে র‌্যাবিস ইমিউনোগ্লোবিউলিনসহ  (আরআইজি) অ্যান্টির‌্যাবিস ভ্যাকসিন যত দ্রুত সম্ভব দিতে হবে। বেশি রক্তপাত হলে তা বন্ধের ব্যবস্থা নিতে হবে।

♦ আক্রান্ত ব্যক্তির ভীতি দূর করতে হবে। জলাতঙ্কে আক্রান্ত পশুটি মেরে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে।

♦ সাধারণত কামড়ানোর ৯ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে জলাতঙ্কের লক্ষণ দেখা দেয়। তাই লক্ষণ প্রকাশের আগেই চিকিৎসা শুরু করতে হবে।

 

চিকিৎসা

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়মানুসারে চিকিৎসকরা তিনটি ধাপে জলাতঙ্কের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।

ধাপ ১ : যদি আক্রান্ত ব্যক্তির ত্বকে কোনো ক্ষত না থাকে এবং পশু যদি জিহ্বা দিয়ে চাটে, তাহলে তেমন ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন নেই। ক্ষারযুক্ত সাবান দিয়ে জীবাণুমুক্ত করে ধুয়ে নিলেই হবে।

ধাপ ২ : প্রথমে ক্ষারযুক্ত সাবান দিয়ে ১৫/২০ মিনিট ক্ষতস্থান ফেনা তুলে ধুতে হবে। যদি প্রাণীটি আঁচড় দেয় এবং রক্তক্ষরণের ঘটনা না ঘটে, তাহলে যত দ্রুত সম্ভব চারটি ভ্যাকসিন নিতে হবে। ০.১ মিলি করে দুই বাহুতে প্রথম দিন, তৃতীয় দিন, সপ্তম দিন ও ২৮তম দিনে দিতে হয়। গর্ভবতী নারীদেরও দেওয়া যায়।

ধাপ ৩ : প্রথমে ক্ষারযুক্ত সাবান দিয়ে ১৫/২০ মিনিট ক্ষতস্থান ফেনা তুলে ধুতে হবে। যদি চামড়ার ক্ষতস্থানে কামড়ের দাগ পাওয়া যায় ও প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শে টিকার পাশাপাশি র‌্যাবিস ইমিউনোগ্লোবিউলিনও নিতে হয়।

 

যা করা যাবে না

♦ ক্ষতস্থানে কোনো সেলাইন, বরফ, চিনি, লবণ ইত্যাদি ক্ষারক পদার্থ ব্যবহার করা যাবে না।

♦ বাটিপড়া, পানপড়া, চিনিপড়া, মিছরিপড়া, ঝাড়ফুঁক ইত্যাদি জলাতঙ্কের হাত থেকে কাউকে বাঁচাতে পারে না।

♦ ক্ষতস্থান কখনোই অন্য কিছু দিয়ে কাটা, চোষন করা বা ব্যান্ডেজ করা যাবে না। এতে বরং ইনফেকশন হতে পারে।

♦ ক্ষতস্থানে বরফ, ইলেকট্রিক শক দেওয়া যাবে না। হাত-পা বাঁধাও যাবে না।

 

জেনে রাখা দরকার

♦ জলাতঙ্কের টিকা গ্রহণে শতভাগ জলাতঙ্ক প্রতিরোধ করা যায়। মহাখালী সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, টঙ্গী জেনারেল হাসপাতাল, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং দেশের ৬৩টি জেলা সদরে অবস্থিত হাসপাতালের জরুরি বিভাগে বিনা মূল্যে জলাতঙ্কের এই টিকা প্রদান করা হয়। কামড়ানো প্রাণীর দেহে র‌্যাবিসের জীবাণু না থাকলেও টিকা নিতে কোনো অসুবিধা নেই।

♦ আগে নাভির গোড়ায় মোটা সুচ দিয়ে ১৪টি ইনজেকশন দেওয়া হতো। এখন ছোট সুচ দিয়ে চামড়ার মধ্যে ইনজেকশনের মতো টিকা নিতে হয়। এতে ব্যথা নেই বললেই চলে।

♦ সুস্থ কুকুর বা প্রাণী কামড়ালে র‌্যাবিস হয় না। র‌্যাবিস ভাইরাসে আক্রান্ত কুকুর (পাগলা কুকুর) কামড়ালে বা ক্ষতস্থানে চেটে দিলে সে ব্যক্তি র‌্যাবিসে আক্রান্ত হয়।

♦ মনে রাখতে হবে, জলাতঙ্ক হয়ে গেলে কোনো চিকিৎসা নেই। লক্ষণ প্রকাশের এক থেকে সাত দিনের মধ্যে রোগীর যতই চিকিৎসা করা হোক না কেন, শেষে সে মারা যাবে—এটা শতভাগ নিশ্চিত।

♦ কুকুর বা অন্য কোনো বন্য প্রাণী কামড়ালে পেটে বাচ্চা হয়—এ ধারণা সঠিক নয়।

 

কারো জলাতঙ্ক হলে

♦ রোগীর চিকিৎসার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিকেও সতর্ক থাকতে হবে। সেবাদানকারীকেও ভ্যাকসিন নিতে হবে।

♦ আক্রান্ত রোগীর প্লেটের অবশিষ্ট খাবার খাওয়া যাবে না। ব্যবহৃত জিনিসপত্র সাবধানতার সঙ্গে ধুতে হবে। হাতে কাটাছেঁড়া থাকলে সেবাদানকারীকে আরো বেশি সতর্ক থাকতে হবে, ওই অংশ দিয়ে শরীরে জীবাণু ছড়িয়ে পড়তে পারে।

♦ কেউ কেউ কামড় বা নখ দিয়ে আঁচড়ে ধরার চেষ্টা করলে তা থেকে সতর্ক

থাকতে হবে।

 

জলাতঙ্ক প্রতিরোধে করণীয়

অসচেতনতাই জলাতঙ্ক ছড়ানোর জন্য বেশি দায়ী। সচেতন হলে জলাতঙ্ক থেকে শতভাগ ঝুঁকিমুক্ত থাকা যায়। তাই প্রয়োজন কিছু সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ

♦ পোষা কুকুর বা প্রাণীকে জলাতঙ্ক রোগের প্রতিষেধক টিকা নিয়মিত দেওয়া উচিত।

♦ বেওয়ারিশ কুকুরকে মাসডক ভ্যাকসিনেশনের আওতায় আনতে হবে। আক্রান্ত কুকুর যাতে পরপর অনেক লোককে কামড়াতে না পারে, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।

♦ অনেকে কুকুরকে অযথাই লাথি দেয়, ইচ্ছা করে ঢিল মারে। ফলে কুকুরটি বিরক্ত হয়ে ওই ব্যক্তি বা অন্য কাউকে কামড়ে দেয়। বেওয়ারিশ বা রাস্তার কুকুরকে কখনো বিরক্ত করা ঠিক না।

♦ আক্রান্ত পশু মারা গেলে কোথাও ফেলে না রেখে মাটির নিচে পুঁতে ফেলতে হবে।

♦ শিশুরা কুকুর বা বিড়ালকে খাবার দিতে যায়। কুকুর তখন জোর করে কেড়ে নিতে গিয়ে কামড় দিয়ে বসে। এ থেকে সাবধান থাকতে হবে।

♦ কোনো কারণে কুকুর আক্রমণ করতে চাইলে মূর্তির মতো সোজা দাঁড়িয়ে যেতে হবে। হাতে কোনো ব্যাগ বা অন্য কিছু থাকলে যথাসম্ভব আড়াল করে রাখতে হবে। দেখা গেছে, এতে ৭০ থেকে ৯০ ভাগ ক্ষেত্রে কুকুর অনিষ্ট করে না বা কামড় দেয় না।

https://www.youtube.com/watch?v=Geg0SPadJxM&feature=youtu.be&fbclid=IwAR2g_zPXDCHYTQDIa6q98jL37xUyMpcaOjfXFyXbYzPl1HtqpZD17O-a5zo

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!