class="post-template-default single single-post postid-15308 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

ভারতীয় বাংলা ছবির প্রভাবশালী সাত নারী

পুরুষশাসিত পিতৃতান্ত্রিক সমাজ আমাদের। এখানে নারীকে প্রধান চরিত্র করে কে লিখবে? তবু কিন্তু লেখা হয়েছিল। আর সেসব কোনো চাপিয়ে দেওয়া গল্পের চরিত্র নয়। বাঙালি সমাজে নারী র অবস্থা আর অবস্থানের গল্পকেই বড় পর্দার জন্য তুলে এনেছিলেন কয়েকজন চলচ্চিত্রকার। তাঁরাও বাঙালি পুরুষ। যে নারীরা সেই চরিত্রগুলোকে বিশ্বাসযোগ্য করে ফুটিয়ে তুলেছিলেন পর্দায়, তাঁদের নিয়ে এই আয়োজন।

কঠোর-কোমল সর্বজয়া (ছবি: পথের পাঁচালী)
সর্বজয়াকে মনে পড়ে? ‘পথের পাঁচালী’ ছবির অপু ও দুর্গার মা। যে চলচ্চিত্র নিয়ে আজও আলোচনা হয়, সেটার শক্ত-সমর্থ-লড়াকু এক নারী চরিত্র এই সর্বজয়া। শক্ত হাতে সংসারের হাল ধরে রেখেছিলেন তিনি। যেন কঠোর এক ব্যবস্থাপক। সেই একই মানুষ যখন একজন বৃদ্ধার সঙ্গে কঠোর আচরণ করেন, তখন সেটা আশ্চর্য করে মানুষকে। করুণা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিনীত এই চরিত্রের মধ্য দিয়ে সত্যজিৎ রায় দেখিয়েছেন একজন কোমল মা আর কঠোর গৃহব্যবস্থাপক বাঙালি নারীকে।

নীতা চরিত্রে সুপ্রিয়া দেবীনীতা চরিত্রে সুপ্রিয়া দেবীসর্বহারা নীতা (ছবি: মেঘে ঢাকা তারা) 
বিএ পাস করে সংসারের হাল ধরে নীতা। দেশভাগের পর শরণার্থী হয়ে তাদের পরিবার ঠাঁই নেয় কলকাতায়। বড় ভাই গান করার জন্য সংসার ছাড়ে। ছোট দুই ভাইবোনকে লেখাপড়া করায় সে। প্রেমিক কথা দিয়েছিল, পিএইচডি করে ফিরেই তাকে বিয়ে করবে। কিন্তু ফেরার পর নীতা জানতে পারে, ছোট বোন গীতা ভালোবাসে তার প্রেমিককে। তার পরিবার চায় গীতাই বিয়ে করুক ছেলেটাকে। নীতা বিয়ে করে চলে গেলে সংসার দেখবে কে! অভিনেত্রী সুপ্রিয়া দেবীকে দিয়ে ঋত্বিক ঘটক যে আত্মত্যাগী সর্বহারা বাঙালি নারীর ছবি এঁকেছেন, তা অনবদ্য।

‘পারমিতার এক দিন’ ছবিতে অপর্ণা সেন ও ঋতুপর্ণাআশ্চর্য বন্ধু পারমিতা ও সনকা (ছবি: পারমিতার এক দিন)
শিক্ষিতা মেয়ে পারমিতা। অপারগ স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে যায় বিয়ের শুরুতেই। কিন্তু শাশুড়ির সঙ্গে বন্ধুত্ব রয়েই যায় তাঁর। পারমিতার জীবন বদলে যায়। বিজ্ঞাপনী সংস্থায় চাকরির সুবাদে চৌকস এক পরিচালকের সঙ্গে প্রেম হয়। বিয়েও করে ফেলে তারা। কিন্তু শাশুড়ি সনকার সঙ্গে যোগাযোগ রাখে সে। একটি পুরুষকে ঘিরে দুঃখের সময় বন্ধুত্ব হয়েছিল তাদের। মৃত্যুশয্যায় শাশুড়ির সেবায় গিয়ে হাজির হয় পারমিতা। পারমিতার চরিত্রে ঋতুপর্ণা এবং সনকার চরিত্রে অপর্ণা সেন বাঙালি নারীর যে গল্প বড় পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছেন, সেটা যেন দুঃখী মানুষের বন্ধুত্বের গল্প।

চারু চরিত্রে মাধবী মুখোপাধ্যায়চারু চরিত্রে মাধবী মুখোপাধ্যায়নিরুপায় চারু (ছবি: চারুলতা)
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘নষ্ট নীড়’ গল্পকে ভেঙে সত্যজিৎ রায় ফাঁদলেন এক অসাধারণ গল্প। সেলুলয়েডে দেখানো হলো চারু নামের এক নিঃসঙ্গ গৃহবধূকে। মাধবী মুখোপাধ্যায় অভিনীত চারু এক ধনাঢ্য গৃহবধূ। অথচ নিঃসঙ্গ। কাজের মধ্যে ডুবে থাকা স্বামীর কাছে তাঁর ন্যূনতম দাম নেই। এই ফাঁকে তরুণ দেবর জাগিয়ে তোলে তার শরীর ও হৃদয়কে। স্বামীর মনোযোগ না পাওয়া স্ত্রী দেবর অমলের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে। একসময় অমলের বিয়ের খবরে কান্নায় ভেঙে পড়ে সে। এমন নিরুপায় নারী চরিত্র কেবল বাঙালি সমাজেই মেলে।

‘বন্দনা’ অপর্ণা সেন‘বন্দনা’ অপর্ণা সেনঅসহায় বন্দনা (ছবি: শ্বেত পাথরের থালা)
‘শ্বেত পাথরের থালা’ প্রভাত রায়ের ছবি। স্বামীহারা স্ত্রী বন্দনা। বাঙালির সমাজে এমন নারীদের অবস্থা কতটা শোচনীয় হতে পারে, সেটাই দেখিয়েছেন পরিচালক। দেখিয়েছেন তাঁর প্রতি সমাজের পুরুষের মনোভঙ্গি। বন্দনা চরিত্রে ছবিতে অপর্ণা সেনের অনবদ্য অভিনয় ফুটিয়ে তোলে, পরিস্থিতি সামান্য বদলে গেলে বাঙালি নারীকে কতটা বিপত্তির মধ্যে পড়তে হয়। আর সেটা শিক্ষিত-অশিক্ষিত, গৃহিণী বা কর্মজীবী সব নারীর ক্ষেত্রে একই রকম।

‘বসন্ত বিলাপ’ ছবির পোস্টার‘বসন্ত বিলাপ’ ছবির পোস্টারঅনুরাধা (ছবি: বসন্ত বিলাপ)
১৯৭৩ সালের বাংলা ছবি ‘বসন্ত বিলাপ’। অহংবোধ থেকে চার তরুণ-তরুণীর প্রেম নিয়ে ছবির কাহিনি। এ ছবিতে অপর্ণা সেন করেছেন অনুরাধার চরিত্র। নারীর প্রতি পিতৃতান্ত্রিক সমাজের আচরণগুলো এ ছবিতে দেখানো হয়েছে। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে অপর্ণার অভিনয় ছবির সাধারণ গল্পকে পৌঁছে দিয়েছে এক অন্য মাত্রায়। বাণিজ্যিক উপাদান আর হাস্যরসের কমতি নেই ছবিতে। কিন্তু অভিনয় দিয়ে ছবিটিকে ব্যতিক্রম স্তরে নিয়ে গেছেন অপর্ণা।

‘বিসর্জন’ ছবিতে জয়া আহসান‘বিসর্জন’ ছবিতে জয়া আহসানবহুমুখী পদ্মা (ছবি: বিসর্জন)
জয়া আহসান অভিনয় করেছেন ‘বিসর্জন’ ছবিতে। খুব সাধারণ সেই গল্প। প্রয়াত স্বামীর স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকতে চাওয়া নারী পদ্মা। মধ্যবয়সী এক ব্যবসায়ী তার প্রেমে পড়ে, যে পদ্মাকে বিয়ে করতে চায়। ছবিতে স্বামীহারা এক বাঙালি নারীর অসহায়ত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন জয়া। নারীর গোপন বাসনা, পুত্রবধূর দায়িত্ব, সন্তানের প্রতি কর্তব্যের মধ্যেও প্রেমের দোলাচলে বাঁধা পড়ে সে।
সূত্র : টাইমস  অব ইন্ডিয়া

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!