মোটর নিউরন চিকিৎসায় অকুপেশনাল থেরাপি
মস্তিষ্ক ও স্পাইনাল কর্ডের মধ্যে মোটর নিউরন নামে বিশেষ স্নায়ুকোষ থাকে, যা শরীরের মাংসপেশির কাজগুলো নিয়ন্ত্রণ করে। যেমন—চলাফেরা, কথা বলা, খাদ্যবস্তু গেলা, হাঁটা, শ্বাস-প্রশ্বাস, কোনো কিছু মুঠ করে ধরার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ ইত্যাদি নিয়ন্ত্রিত হয় এই নিউরনের মাধ্যমে। মোটর নিউরন স্নায়ুতন্ত্রের একটি অস্বাভাবিক অবস্থা, যা মাংসপেশির স্বাভাবিক কাজগুলো ব্যাহত করে এবং মাংসপেশি ক্রমান্বয়ে দুর্বল করে তোলে।
সাধারণত ব্রেনের স্নায়ুকোষ থেকে তথ্যগুলো (যেটিকে বলা হয় আপার মোটর নিউরন) ব্রেনের ব্রেন স্টিম এবং স্পাইনাল কর্ডের স্নায়ুকোষগুলোতে প্রেরণ করা হয়। পরবর্তী সময় এই তথ্যগুলো শরীরের বিভিন্ন মাংসপেশিতে চলে যায়। আপার মোটর নিউরন লোয়ার মোটর নিউরনকে পরিচালিত করে শরীরের বিভিন্ন মুভমেন্ট বা নড়াচড়া করায়, যেমন হাঁটা, খাবার চুষে খাওয়া ইত্যাদি। লোয়ার মোটর নিউরন শরীরের বিভিন্ন অংশ, যেমন হাত, পা, বুক, মুখমণ্ডল,গলা ও জিহ্বার নড়াচড়া নিয়ন্ত্রণ করে।
যখন তথ্যগুলো প্রেরণের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বাধার সৃষ্টি হয়, তখন মাংসপেশিগুলো তাদের কাজগুলো ঠিকভাবে করতে পারে না। ফলে মাংসপেশিগুলো ক্রমেই দুর্বল হয়, শুকিয়ে যায় এবং একপর্যায়ে রোগী শারীরিকভাবে অক্ষম হয়।
অকুপেশনাল থেরাপি ঝুঁকি বেশি যাদের
বাংলাদেশে মোটর নিউরনে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অনেক। যেকোনো বয়সে এ রোগ দেখা দিতে পারে। ৪০ বছর বয়সের পর এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। সাধারণত নারীর তুলনায় পুরুষের এই রোগ বেশি হয়। তবে কেন হয়, এর সঠিক কারণ এখনো জানা যায়নি। ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে রোগটি উত্তরাধিকার সূত্রে, পারিবারিক ইতিহাস, ভাইরাস, পরিবেশ ইত্যাদির কারণে দেখা দিতে পারে। পেশায় সৈনিক ও ফুটবলাররা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়।
অকুপেশনাল থেরাপির ভূমিকা
মোটর নিউরন সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করার মতো কোনো চিকিৎসা বা ওষুধ এখনো আবিষ্কার হয়নি। তবে রোগের বিস্তার ঠেকানোর জন্য নিউরোলজিস্ট, অকুপেশনাল থেরাপিস্ট, ফিজিওথেরাপিস্ট, সোশ্যাল ওয়ার্কার ও নার্স সমন্বয়ে একটি হেলথ কেয়ার টিম কাজ করে।
♦ অকুপেশনাল থেরাপিস্টরা মোটর নিউরনে আক্রান্ত রোগী ও রোগীর পরিবারের সঙ্গে কাজ করে চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। বাড়ির প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন ধরনের মোডিফিকেশন, যেমন র্যাম্প তৈরি, প্রবেশগম্য গৃহ তৈরি, প্রবেশগম্য বাথরুম তৈরি ইত্যাদি করে থাকেন। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের কাজ, যেমন : জামা-কাপড় পরা, খাওয়া, ব্রাশ করা ইত্যাদি নিজে নিজে করার জন্য রোগীদের নানা ধরনের টেকনিক শেখাতে হয়।
♦ রোগী যাতে নিজে নিজে চলাফেরা করতে পারে, এ জন্য বিভিন্ন ধরনের অ্যাসেসটিভ ডিভাইস সম্পর্কে পরামর্শ দেওয়া হয়।
♦ রোগীর বর্তমান ও পরবর্তী অবস্থা বিবেচনা করে বাড়ির পুরো পরিবেশ রোগীর উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়।
♦ রোগীর প্রতিদিনের কাজগুলো প্রায়োরিটি অনুযায়ী খুঁজে বের করে তা সহজে করার পরিকল্পনা করা হয়।
♦ শরীরের মাপ অনুযায়ী হুইলচেয়ার প্রদান।
♦ রোগের ধরন অনুযায়ী নানা ধরনের থেরাপি প্রদান করা হয়।
মোটর নিউরন ডিজিজে আক্রান্ত রোগী দুই থেকে পাঁচ বছর বা আরো বেশিদিন বাঁচতে পারে। এসব রোগী মানসিক ও শারীরিকভাবে অনেক বেশি পিছিয়ে পড়ে। তাই এ সময় রোগীর তার পরিবারের সঙ্গে থাকা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। বিভিন্নভাবে রোগীর মনোবল বাড়াতে হবে। মানুষ তার অদম্য ইচ্ছাশক্তির কারণে যেকোনো অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলতে পারে। প্রখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী ও গণিতজ্ঞ স্টিফেন হকিং টানা ৪৯ বছর মোটর নিউরন ডিজিজ নিয়ে বেঁচে ছিলেন এবং তাঁর কাজকর্ম চালিয়ে গেছেন।
লেখক : অকুপেশনাল থেরাপিস্ট, ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল, মোটর নিউরন মোটর নিউরন
https://www.youtube.com/watch?v=Geg0SPadJxM&feature=youtu.be&fbclid=IwAR28UxjTLzBH6rq0RRf7t_WsGFM0gx642XSx29cf1G-DNOoqXl6-mLqW1eo