class="post-template-default single single-post postid-28932 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

চোখের নিচে কালো দাগ দূর করবেন কী করে?

চোখের নিচে কালো দাগচোখের নিচে কালো দাগ বা উপরের পাতাসহ চোখের নিচের পাতায় কালো দাগ এই অংশের রঙের চেয়ে গাঢ় হঠাৎ করে দেখলে মনে হয় শেড বা ছায়া পড়েছে। একে আইব্যাগও (eyebags) বলে। অনেক কারণে চোখের নিচে কালো দাগ পড়তে পারে। নারী এবং পুরুষ উভয়েরই এই দাগ হতে পারে। সাধারণত পূর্ণ বয়স্কদের এরকম দাগ হতে পারে।  অনেক ক্ষেত্রে কিশোর বয়সেও হয়ে থাকে। ঘুম কম হওয়া, প্রখর রোদে সানগ্লাস পরে বাইরে ঘোরাঘুরি করা, অতিরিক্ত ধূমপান ও মদ্যপান ইত্যাদি কারণে চোখে কালি পড়ে বা কালো দাগ হয়।

দেহের অন্যান্য অংশের ত্বকের চেয়ে চোখের নিচের অংশের ত্বক অনেক পাতলা হয়। অনেক সময় এই অংশের ত্বকের নিচের রক্তনালিগুলো ত্বকের উপরে স্পষ্ট ভাবে দেখা যায়। রক্তনালি বেশি মাত্রায় প্রসারিত হলে এরকম হয় এবং চোখের নিচে কালো দাগ পড়ার এটিও একটি কারণ। চোখের চারপাশে ফ্যাট প্যাড (Fat pad) থাকে এবং চোখের উপর ও নিচের পাতার মাসল এই ফ্যাট প্যাডকে সঠিক জায়গায় ধরে রাখে। বয়সের কারণে ত্বক এবং মাসল যখন স্থিতিস্থাপকতা (clasticity) হারায় তখন চোখের চারপাশের ত্বক ঝুলে যায়। চোখের নিচে কালো হওয়ার মূল কারণ এই অংশে ঠিকমত রক্ত সরবরাহ না হওয়া।

 

চোখের নিচে কালো দাগ পড়ার কারণ

যে সমস্ত কারণে চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে নিম্নে তা বর্ণনা করা হলঃ

 

  • বংশগত কারণে চোখের নিচে কালো দাগ হতে পারে। অনেক পরিবারে দেখা যায় বংশ পরম্পরায় এরকম হয়ে আসছে। বিশেষ করে যাদের গায়ের রং ফর্সা এবং চোখ কোটরে বসা তাদের ক্ষেত্রে।
  • ঘুম কম হলে বা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটলে মুখ ফ্যাকাশে বা মলিন হয়ে যায়। এতে ত্বকের রক্তনালিগুলো স্পষ্ট হয়ে ওঠে যা ত্বক নীলচে বা কালচে করতে সাহায্য করে।
  • সূর্যের আলো চোখের চারপাশে বয়সের দাগ ফেলে এবং ত্বক পাতলা করে ফেলে। যার কারণে চোখের চারপাশে কালো দাগ পড়তে পারে। এছাড়া হাইপারপিগমেন্টেশন বা অতিরিক্ত মেলানিনের কারণে ত্বক কালো হয়ে যেতে পারে।
  • চোখের নিচের ত্বকের রক্তনালী প্রসারিত হলে এবং রক্ত জমাটবদ্ধতা দেখা দিলেও চোখের নিচে কালো দাগ হতে পারে। অতিরিক্ত লবণ এবং ধূমপানও এর একটি বড় কারণ। কিছু রোগ যেমন- হার্ট, থাইরয়েড, কিডনি, লিভার ডিজিজ হলে অথবা ঔষধের কারণে অনেক সময় রক্তনালি প্রসারিত হয়ে এই সমস্যা বাড়াতে পারে।
  • অতিরিক্ত কাজের চাপ, মানসিক দুশ্চিন্তা, অবসাদ, ক্লান্তি ইত্যাদির কারণে চোখের নিচে কালো দাগ পড়তে পারে।
  • এলার্জির কারণে অনেক সময় চোখের নিচে কালি পড়ে। এলার্জেন যেমন ধূলাবালি, ফুলের রেনু, পোষা প্রাণীর লোম ইত্যাদির কারণে চোখ চুলকায় তখন চোখ ঘষলে চোখের নিচে কালো দাগ পড়তে পারে। আবার এলার্জি জনিত জ্বর এবং ফুড এলার্জির কারণেও এই সমস্যা হতে পারে।
  • আয়রনের অভাবে এনিমিয়া দেখা দেয়। দেহে আয়রনের অভাব হলে টিসুগুলো পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন পায় না। ফলে চোখের নিচের ত্বক তখন নীলচে কালো রং ধারন করে।
  • দেহে পর্যাপ্ত পানি না থাকলে অর্থাৎ পানির অভাবে চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে।
  • অতিরিক্ত ওজন কমে যাওয়ার কারণেও এ সমস্যা দেখা দিতে পারে। সুষম খাদ্যের অভাব এবং অতিরিক্ত ডায়েটিং এর অন্যতম একটি কারণ।

 

চিকিৎসা পদ্ধতি

চোখের নিচে কালো দাগ হওয়া কোন মেডিক্যাল সমস্যা নয়। তারপরও যেহেতু এটা চোখের সাথে সম্পর্কিত এবং দেখতে খারাপ লাগে সেজন্য এর চিকিৎসা প্রয়োজন। অনেক ডাক্তার লেজার থেরাপি বা মেডিক্যাল পিলের কথা বলে থাকেন যা কালো দাগ দূর করার জন্য উপকারী। আবার কিছু ত্বক বিশেষজ্ঞ আছেন যারা হাইড্রোকুইনোন ওয়েল ফ্রি ময়েশ্চারাইজিং ক্রিমের সাথে মিশিয়ে ব্যবহারের পরামর্শ দেন। কয়েক মাস ব্যবহারের পর দাগ হালকা হয়ে যায়। কারণ এতে রয়েছে ব্লিচিং এজেন্ট। কিন্তু এগুলোর কোনটাই স্থায়ী সমাধান নয়। বর্তমানে হারবাল চিকিৎসা জনপ্রিয় হওয়ায় রোগ নিরাময়ে এবং সৌন্দর্য চর্চায় হারবালের রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদানের সাহায্যে চিকিৎসা করা হয় বলে এর কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। নিম্নে চোখের নিচের কালো দাগ দূর করার জন্য কতিপয় হারবাল পদ্ধতি দেয়া হল।

  • ঠান্ডা টি ব্যাগ বা বরফ পাতলা কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে চোখে লাগাতে হবে। চায়ের ট্যানিন চোখের পাতার ফোলা এবং দাগ দূর করতে কার্যকর। টি ব্যাগ সারারাত ফ্রিজে রেখে সকালে ব্যবহার করলে ভাল কাজ দেবে। এক্ষেত্রে হারবাল টি ব্যাগ ব্যবহার করা না। কারণ হারবাল টি ব্যাগ তেমন কার্যকর নয়।
  • ঠান্ডা শসার স্লাইস বা আলুর টুকরো চোখের দাগ দূর করার জন্য খুবই কার্যকর। চোখ বন্ধ করে ঠান্ডা শসার স্লাইস চোখের উপরে দিয়ে রাখতে হবে ১৫-২০ মিনিট।
  • যারা দাগ দূর করার জন্য আই ক্রিম ব্যবহার করেন তারা অবশ্যই খেয়াল রাখবেন ক্রিমটি ভিটামিন কে সমৃদ্ধ কিনা, কারণ অনেক সময় ভিটামিন কে’ র অভাবে চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে। সাম্প্রতিককালের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, ভিটামিন কে এবং রেটিনল সমৃদ্ধ আই ক্রিম দাগ দূর করতে ভীষণ কার্যকর।

 

চোখের নিচে কালো দাগ দূর করতে অবশ্যই মানতে হবে

  • প্রচুর পরিমাণে পানি ও তরল খাবার, খেতে হবে। দিনে কমপক্ষে ৩-৪ লিটার বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে।
  • চোখের দাগ দূর করার জন্য ঘুম অপরিহার্য। প্রতিদিন কমপক্ষে ৭-৮ ঘন্টা বিরতিহীন ভাবে ঘুমাতে হবে।
  • সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত অযথা রোদে ঘোরাঘুরি করবেন না। যদি একান্তই বাইরে যেতে হয় তাহলে সানস্ক্রিন ক্রিম (SPF-300). ছাতা এবং সানগ্লাস ব্যবহার করুন।
  • এলার্জি জনিত কারণে সাধারণত চোখ চুলকায়। সে জন্য এলার্জি সিজনে সাবধান থাকতে হবে এবং যে সমস্ত জিনিস এলার্জি তৈরি করে সেসব থেকে দূরে থাকতে হবে। কখনো চোখ চুলকাবেন না। কারণ চোখ চুলকানো বা ঘষার সময় ত্বকের নিচে ছোট ছোট ক্যাপিলারিগুলো ভেঙে যায়, যার কারণে চোখের নিচের পাতা ফুলে যায় এবং কালো হয়ে যায়।
  • প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, কে, ই ও বি১২  সমৃদ্ধ ফলমূল ও শাকসবজি খেতে হবে। কারণ এ সমস্ত ফলমূল ও শাকসবজি ত্বককে বিভিন্ন রোগের হাত থেকে রক্ষার সাথে সাথে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
  • এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফলমূল বা ফলের তৈরি বিভিন্ন জুস খেতে হবে। এন্টিঅক্সিডেন্ট রক্তনালিকে মজবুত করে। রক্তনালির প্রাচীরকে প্রসারিত হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে।
  • খাবারের সাথে অতিরিক্ত লবণ বাদ দিতে হবে। অতিরিক্ত লবণ রক্ত সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে ত্বকের নিচের রক্তনালিগুলো স্পষ্ট হয়ে ওঠে এবং নীলচে রং ধারণ করে।
  • ধূমপান বর্জন করতে হবে। ধূমপান শুধু শ্বসনতন্ত্রেরই ক্ষতি করে না রক্তনালিরও ক্ষতি করে। ধূমপানের কারণে ত্বকের নীচে রক্তনালিগুলো স্পষ্ট হয়ে ওঠে ও নীলচে রং ধারণ করে।

 

সতর্কতা

  • টি-ব্যাগের ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে। যাদের এলার্জি আছে তাদের ক্ষেত্রে কেমোমাইল পূর্ণ টি ব্যাগ ব্যবহারের কারণে চোখে এলার্জি দেখা দিতে পারে বা চোখ ফুলে যেতে পারে।
  • বরফ বা অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি সরাসরি চোখে ব্যবহার করবেন না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!