class="post-template-default single single-post postid-20858 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

ডায়াবেটিস টিপস : ডায়াবেটিক ফুট

ডায়াবেটিস টিপস : ডায়াবেটিক রোগীদের অনেকেরই পায়ে ঘা হয়, যাকে বলে ডায়াবেটিক ফুট। পায়ের ঘা বিস্তার লাভ করলে একপর্যায়ে পচন ধরে এবং তখন পুরো পা কেটে ফেলতে হয়। অথচ সময়মতো সঠিক চিকিৎসা নিলে সম্পূর্ণ ভালো হয়। এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন বারডেমের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বিআইএইচএস জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.)  ডা. মো. আব্দুল মজিদ ভূঁইয়া

ডায়াবেটিসের কারণে পায়ে ক্ষত তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ডায়াবেটিক রোগীদের এমন পাকে বলা হয় ডায়াবেটিক ফুট। শুরুতে চিকিৎসা না নিলে একপর্যায়ে বেহাল অবস্থা হয়। তখন গ্যাংগ্রিন হয়ে অনেকের পায়ে পচন ধরে। তখন কারো হাঁটুর নিচ থেকে, কারো আবার হাঁটুর ওপর থেকে পা কেটে ফেলতে হয়। কেউ মাসের পর মাস পায়ে তৈরি হওয়া ক্ষত নিয়মিত ড্রেসিং করেন। চিকিৎসা খরচের ভারে নুইয়ে পড়েন অনেকে।

 

কারণ

দীর্ঘদিন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের যেসব কারণে পায়ে ক্ষত তৈরি হওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি, সেগুলো হলো : পায়ের বোধশক্তি কমে আসা (নিউরোপ্যাথি), পায়ের রক্ত চলাচলের পরিমাণ কমে যাওয়া (পেরিফেরাল ভাস্কুলার ডিজিজ), ছোট কোনো ক্ষত বা পায়ের তলায় তৈরি হওয়া ফাটল (ক্র্যাক) দিয়ে জীবাণুর অনুপ্রবেশ ইত্যাদি।

নিউরোপ্যাথি : নিউরোপ্যাথির কারণে পায়ের বোধশক্তি কমে আসে। পা তখন গরম বা ঠাণ্ডা কোনো বস্তুর সংস্পর্শে এলেও রোগী তা বুঝতে পারে না। তৈরি হয় ছোট একটি ক্ষত, যেটা পরবর্তী সময়ে বড় হতে থাকে। আবার বোধশক্তি না থাকায় অনেক সময় পায়ে ছোটখাটো আঘাত বা পায়ে কোনো কিছু ফুটে গেলেও রোগী বুঝতে পারে না। সেখান থেকে তৈরি হয় বড় ক্ষত।

পেরিফেরাল ভাস্কুলার ডিজিজ : পায়ের হাড়, মাংস—অর্থাৎ পায়ের টিস্যু বা কোষগুলো বাঁচিয়ে রাখার জন্য সঠিক মাত্রায় রক্তপ্রবাহ প্রয়োজন। ডায়াবেটিক রোগীদের এই রক্তপ্রবাহে ব্যাঘাত ঘটে, ফলে পায়ে সহজে ক্ষত সৃষ্টি হয়, তৈরি হওয়া ক্ষত সহজে সারে না। রক্তপ্রবাহ একেবারেই বন্ধ হয়ে গেলে পায়ে পচন ধরে, যেটাকে বলা হয় গ্যাংগ্রিন। রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে তাত্ক্ষণিক ব্যবস্থা না নিলে পায়ের ওই অংশ কেটে ফেলা লাগতে পারে।

 

পায়ের তলায় ফাটল (ক্র্যাক) : দীর্ঘদিনের ডায়াবেটিক রোগীদের পায়ের তলার চামড়া শুকিয়ে ফাটল তৈরি হয়। এই ফাটলগুলো দিয়ে রোগজীবাণুর সংক্রমণ ঘটে এবং পায়ে ও পায়ের হাড়ে ক্ষত (অস্টিওমায়েলাইটিস) সৃষ্টি হতে পারে।

 

প্রতিরোধে করণীয়

❏  পানি অতিরিক্ত গরম অনুভূত হচ্ছে কি না তা বুঝতে বাসায় অন্য কারো সাহায্য নিন। বেশি গরম পানি ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।

❏  হিটার বা আগুনের খুব বেশি কাছাকাছি বসবেন না। হট ব্যাগ ব্যবহারে সাবধানতা অবলম্বন করুন।

❏  ছোটখাটো কাটাছেঁড়ার ব্যাপারে সতর্ক হোন।

❏  পা যদি রুক্ষ হয় বা পায়ে যদি ফাটল থাকে, তাহলে ভেসলিন বা অলিভ অয়েল মাখুন।

❏  গোসলের পর নখ নরম থাকে, তাই গোসলের পর নখ কাটুন। নখ অতিরিক্ত বাঁকা বা শক্ত থাকলে সার্জারি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।

❏  নিয়মিত নিজে নিজে আঙুল, আঙুলের ফাঁকা জায়গা, পায়ের তলা পরীক্ষা করুন।

❏  ডায়াবেটিস রোগীরা জুতা পায়ে দেওয়ার সময় বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করবেন, যাতে পায়ে কোনো খোঁচা না লাগে, কোনো ক্ষত যেন তৈরি না হয়।

❏  পায়ে সামান্যতম জখম হলেই সেটা ঘায়ে পরিণত হতে পারে। পায়ে ঘা হলে ডায়াবেটিক রোগীদের ঘা সহজে শুকাতে চায় না এবং সময়মতো চিকিৎসা না নিলে ঘায়ের বিস্তৃতি ঘটে, পায়ে গ্যাংগ্রিন হয়। তখন পুরো পা কেটে ফেলতে হয়।

❏  রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণ না করলেও যেকোনো সময় পায়ে ঘা দেখা দিতে পারে। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।

❏  কোনো কারণে পায়ে ঘা বা ক্ষত দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে ফুট কেয়ার বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হোন।

❏  অজ্ঞতার কারণে এই রোগীরা কবিরাজ, হাতুড়ে ডাক্তারসহ বিভিন্ন জায়গায় যায়। কিন্তু সঠিক চিকিৎসার অভাবে পরে তাদের পা কেটে ফেলতে হয়।

 

ডায়াবেটিস টিপস : সতর্কতা

❏  পায়ে হঠাৎ করে ব্যথা ও ফুলে লাল হয়ে গেলে, ফোসকা পড়লে, ছোট কোনো ক্ষত তৈরি হলে, পায়ে কিছু বিঁধলে, গরম পানি বা গরম কোনো বস্তুতে পা ঠেকলে সতর্ক হতে হবে।

❏  পায়ের নখ পুরু ও বাঁকা হয়ে আঙুলের মধ্যেই প্রবেশ করলে, পায়ের হাড়ের গঠনগত কোনো ত্রুটি থাকলে। পায়ে এর আগে কোনো ক্ষতের ইতিহাস থাকলে, পায়ের বোধশক্তি এতটাই কম যে ঠাণ্ডা বা গরমের অনুভূতি বোঝা যাচ্ছে না—এমন হলেও সতর্ক হয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। প্রতি তিন থেকে ছয় মাস পর পর পা পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া ভালো।

 

জুতা সম্পর্কে

বাইরে বের হওয়ার সময় স্যান্ডেল না পরে চামড়ার জুতা পরুন। জুতা পরলে পায়ের আঙুল ও গোড়ালি সুরক্ষিত রাখে। জুতা হতে হবে সমতল, নরম, হালকা; কিন্তু জুতার সোল শক্ত হওয়া আবশ্যক, যাতে কোনো ধারালো বস্তু জুতার সোল ভেদ করে পায়ে ক্ষত তৈরি না করে। জুতার মাপও সঠিক হওয়া চাই, যাতে বড়ও না হয় আবার ছোটও না হয়। দরকার হলে মাপ দিয়ে জুতা বানান।

 

একমাত্র ডায়াবেটিক ফুট কেয়ার ইউনিট

ফুট কেয়ার হচ্ছে আলাদা একটা প্রযুক্তি, যেখানে পায়ের ঘায়ের নিয়মিত ড্রেসিং থেকে শুরু করে, ডিব্রাইবমেন্ট (ক্ষতস্থান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা), ক্ষতস্থানের অপারেশন, প্রয়োজনে স্কিন গ্রাফটিং, পারটিয়াল অ্যাম্পুটেশন, পুষ্টিবিদের পরামর্শে পুষ্টি ও খাদ্য গ্রহণ, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি বোঝায়। এখানকার সার্জনরা ও নার্সরা ফুট কেয়ার সার্জারির ওপর বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, যাঁরা সার্বক্ষণিক তদারকিতে রোগীদের সেবা দেন।

সময়মতো সঠিক জায়গায় চিকিৎসা করালে ডায়াবেটিসজনিত পায়ের ঘা নিয়ন্ত্রতযোগ্য, নিরাময়যোগ্য ও সম্পূর্ণভাবে প্রতিরোধযোগ্য। অর্থাৎ সময়মতো সঠিক চিকিৎসা নিলে পা না কেটে চিকিৎসা দিয়ে রক্ষা করা যায়। অনেক সময় হয়তো একটা আঙুল কেটে ফেলতে হয় অথবা সব আঙুল কেটে ফেলতে হয়। এতে পা রক্ষা করা সম্ভব হলে রোগীটি হাঁটতে পারে। কিন্তু বিলম্বের কারণে ঘা বিস্তৃতি লাভ করে অনেক সময় হাঁটু পর্যন্ত উঠে যায়। তখন হাঁটুর ওপর থেকে পা কেটে ফেলে দিতে হয় রোগীকে বাঁচানোর জন্য।

তাই ডায়াবেটিক রোগীদের পায়ে সামান্য ক্ষত তৈরি হলে সঙ্গে সঙ্গে ডায়াবেটিক ফুট কেয়ারে যাওয়া উচিত। বাংলাদেশের একমাত্র ডায়াবেটিক ফুট কেয়ার ইউনিট হলো বারডেমের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বিআইএইচএস জেনারেল হাসপাতাল। মিরপুর বাঙলা কলেজের বিপরীতে অবস্থিত এই হাসপাতালের পরীক্ষা-নিরীক্ষা থেকে শুরু করে, ওটি, সার্জারির চার্জ ইত্যাদি অন্যান্য বেসরকারি হাসপাতালের চেয়ে এক-চতুর্থাংশ বা এক-তৃতীয়াংশ কম। ২০১৭ সালের এপ্রিলে চালুর পর অদ্যাবধি প্রায় চার হাজার ডায়াবেটিক ফুট রোগী এখানে চিকিৎসা নিয়েছেন।

 

অনুলিখন : ডা. মোস্তাফিজুর রহমান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!