class="post-template-default single single-post postid-10234 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

পাঁচ মসলার ঘ্রাণ এক গাছে

গাছের নাম অলস্পাইস। বাংলা নাম নেই। গাছে কোনো ফুল নেই, ফল নেই। কেবল পাতা আর পাতা।

বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্রের একটি বাগানে বেশ কয়েকটি অলস্পাইসগাছের দেখা মিলল। বর্ষার জল খেয়ে গাছগুলো একেবারে তরতাজা; উজ্জ্বল চকচকে সবুজ রং নিয়ে পাতাগুলো ঊর্ধ্বমুখী হয়ে আকাশের সঙ্গে যেন মিতালি পাতাতে চায়। হাওয়ায় দুলছে গাছের ঝাঁকড়া ডালপালা। গাছগুলোর উচ্চতা প্রায় চার মানুষ সমান হবে। পাতাগুলো দেখতে অনেকটা লবঙ্গগাছের মতো, তবে লবঙ্গগাছের পাতার চেয়ে এর পাতা কিছুটা ডিম্বাকার বা উপবৃত্তাকার, চওড়াও বেশি।

অলস্পাইস ও লবঙ্গগাছ—দুটো পাশাপাশি থাকায় বিভ্রান্ত হচ্ছিলাম। পার্থক্যটা ধরিয়ে দিলেন আশিকুল ইসলাম। অলস্পাইসের পাতা কিছুটা পুরু, চকচকে ও সুঘ্রাণযুক্ত। চিরসবুজ এ গাছের বাকল ও ডালপালা দেখতে অনেকটা পেয়ারা ও লবঙ্গগাছের মতো, বাকল মসৃণ ও ধূসর বাদামি। কচি ডালের রং সবুজ ও নরম।

মসলা গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আশিকুল ইসলাম জানালেন, অলস্পাইসগাছের পাতায় আছে পাঁচ রকমের মসলার ঘ্রাণ। জায়ফল, জয়ত্রী, লবঙ্গ, দারুচিনি ও গোলমরিচ—সব ঘ্রাণ একসঙ্গে! এ কারণেই হয়তো এর নাম রাখা হয়েছে অলস্পাইস।

এর পাতা ছায়ায় শুকিয়ে গুঁড়ো করে রাখা হয়। সেই গুঁড়ো রান্নায় ব্যবহার করা হয়। বিদেশে একে বলা হয় কারি পাউডার। বাঙালির রান্নাকে সুস্বাদু করতে এ পাতা ব্যবহারের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান আশিকুল ইসলাম। এর ইংরেজি নাম পিমেন্টা বা জ্যামাইকান পিমেন্টা। একে মির্টেল পেপার নামেও ডাকা হয়।

জগতের সব মসলার ঘ্রাণ এতে নেই। তবু নাম অলস্পাইস কেন? ১৬২১ সালে ইংরেজরা এ গাছে দারুচিনি, লবঙ্গ ও জায়ফলের ঘ্রাণ পেয়েছিলেন বলে এর নাম দিয়েছিলেন অলস্পাইস। আজ সারা বিশ্বে এ গাছের সে নামটাই পরিচিত।

অলস্পাইসের উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম pimenta dioica। পরিবার মির্টেসি। গাছ মাঝারি আকারের। দ‌ক্ষিণ মেক্সিকো ও মধ্য আমেরিকা এর আদিনিবাস। এখন বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বেশ কয়েক বছর আগে বগুড়ায় মসলা গবেষণা কেন্দ্রে এ গাছের একটি মাতৃবাগান গড়ে তোলা হয়। গবেষণাও চলছে এ গাছ নিয়ে। কল্যাণপুর হর্টিকালচার সেন্টার, চাঁপাইনবাবগঞ্জেও অলস্পাইসগাছ রয়েছে।

অলস্পাইসগাছে ফুল ফোটা শুরু হয় মে থেকে, ফল পাওয়া যায় আগস্ট পর্যন্ত। থোকা ধরে প্রচুর ফল হয়। ফল বুটের দানার মতো গোলাকার; কাঁচা ফলের রং সবুজ, পাকলে কালো হয়। সাধারণত এর কাঁচা ফল সংগ্রহ করা হয়। কাঁচা ফল রোদে শুকিয়ে বাদামি করা হয়। কাঁচা পাতা রোদে শুকিয়ে তেজপাতার মতো ব্যবহার করা যায়।

বাড়ির বাগানে কয়েকটা অলস্পাইসগাছ থাকলে সারা বছর বাড়ির বাতাসে একরকমের সুঘ্রাণ উপভোগ করা যেতে পারে। এ গাছ বাঁচে প্রায় ১০০ বছর। বীজ ও শাখা কলম করে এর চারা তৈরি করা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!