শারীরিক অসুস্থতাজনিত মানসিক সমস্যা বলতে কী বোঝায়?
যখন মানসিক অসুস্থতার কথা বলা হয়, তখন ধরে নেওয়া হয় যে, তার পিছনে রয়েছে শারীরিক, বংশ পরম্পরা বা পরিবেশগত কারণ। এই সব কারণের ফলে একজনের মস্তিষ্কের কাজকর্মের ব্যাঘাত ঘটে এবং মানসিক স্বাভাবিকতা নষ্ট হয়।
কয়েকটি শারীরিক অসুস্থতা যেমন– মস্তিষ্কে আঘাত, স্নায়ুর দুর্বলতা, সার্জারি, তীব্র
শরীরগত কারণে মানসিক সমস্যা বা অরগ্যানিক ব্রেন সিনড্রোম কোনও অসুখ নয়, বরং এর মধ্য দিয়ে বোঝা যায়, যে কোনও অবস্থার ফলে ক্রমশ মস্তিষ্কের কার্যাবলির অবক্ষয় ঘটছে।
মস্তিষ্কের কোষগুলি শারীরিক আঘাত (যেমন- মস্তিষ্কের গুরুতর ক্ষত, স্ট্রোক, রাসায়নিক এবং টক্সিনের প্রভাব, শরীরগত কারণে মস্তিষ্কের অসুখ, যথেচ্ছ তামাকের ব্যবহার) বা সাইকো-সোশ্যাল কারণে (যেমন– প্রতারণার শিকার হওয়া, শারীরিক বা মানসিক ভাবে তিরস্কার এবং গুরুতর মানসিক যন্ত্রণা) ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই সব পরিস্থিতির শিকার হলে একজনের মধ্যে চিন্তাশক্তি, মনে রাখার ক্ষমতা, বোঝা বা শেখার আগ্রহ নষ্ট না হলেও, বিচারশক্তি কমে যায়। এই ক্ষেত্রে তাকে নিয়মিত দেখাশোনা করার দরকার হয়। যদি এই ধরনের ব্যক্তির প্রতি অবহেলা করা হয়, তাহলে সমস্যা আরও গভীরে চলে যায়। শারীরিক কারণে মানসিক অসুস্থতা সাময়িক এবং তীব্র, যা ডেলিরিয়াম বা নিয়মিত এবং দীর্ঘমেয়াদি বা ডিমেনশিয়া নামে পরিচিত।
শরীরগত দিক থেকে মানসিক অবস্থার কারণ
বহু কারণেই একজন ব্যক্তি এহেন পরিস্থিতির শিকার হতে পারেন।
শারীরিক অবস্থা অরগ্যানিক মেন্টাল ডিস্অর্ডারের অন্যতম কারণ:
কঠিন বা জটিল পরিস্থিতি থেকে মস্তিষ্কে আঘাত
- মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে রক্তক্ষরণ (ইনট্রাসেরিব্রাল হেমারেজ)
- মস্তিষ্কের একটি বিশেষ অংশে রক্তক্ষরণ (সাবারাকনয়েড হেমারেজ)
- মস্তিষ্কে চাপ পড়ে খুলির মধ্যে রক্ত জমাট বাধা (সাবডুরাল হেমাটোমা)
- আঘাতপ্রাপ্ত হওয়া।
শ্বাস–প্রশ্বাসজনিত অবস্থা
- শরীরে কম অক্সিজেন প্রবাহিত হওয়া
- কাবন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যায়
কার্ডিওভাসকুলার সমস্যা
- স্ট্রোক
- একাধিকবার স্ট্রোকের ফলে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হওয়া
- হার্টে সংক্রমণ
- ট্রানসিয়েন্ট ইসকিমিক অ্যাটাক (টিআইএ)
ডিজেনারেটিভ ডিস্অর্ডার
- অ্যালঝাইমার্স
- ডিমেনশিয়া
- হানটিংটন ডিসিস্
- মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস্
- পার্কিনসন্স
অন্যান্য সমস্যা
- অরগ্যানিক অ্যামনেসিক সিনড্রোম: এর ফলে মানুষ বর্তমান এবং অতীত স্মরণ করতে পারে না। নতুন কিছু শেখার ক্ষমতাও কমে যায়।
- ডেলিরিয়াম: এটি তীব্র কিন্তু সাময়িক অরগ্যানিক সেরিব্রাল সিনড্রোম। এর ফলে মানুষের চেতনা, মনোযোগ, ধারণা, চিন্তাশক্তি, মনে রাখার ক্ষমতা, আচরণজনিত নানা সমস্যা এবং হঠাৎ ঘুম ভেঙে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়।
- মস্তিষ্কের অসুখ বা কাজকর্মের ব্যাঘাত হলে ব্যক্তিত্বের সমস্যা এবং আচরণগত ত্রুটি লক্ষ করা যায়।
মানসিক স্বাস্থ্যের সব খবর নিয়ে ‘মনের খবর’ জানুয়ারি সংখ্যা এখন সর্বত্র পাওয়া যাচ্ছে। আজই সংগ্রহ করে নিন আপনার কপিটি।
শারীরিক অসুস্থতার জন্য মানসিক সমস্যার লক্ষণগুলি কী?
মস্তিষ্কের ঠিক কোন অংশটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তার উপর নির্ভর করে লক্ষণগুলি চিহ্নিত করা এবং সমস্যার কারণ খোঁজার চেষ্টা করা হয়। এই সমস্যার কতগুলি সাধারণ লক্ষণ হল:
- ভুলে যাওয়া: এর ফলে মানুষ তার পরিবার এবং বন্ধুদের চিনতে পারে না বা সম্পূর্ণ ভুলে যায়।
- দ্বিধাগ্রস্ততা: স্থান-কাল-পাত্রের বোধ হারিয়ে ফেলা। চারপাশে কী ঘটে চলেছে তা-ও মনে রাখা সম্ভব হয় না।
- কথোপকথনের সময় খেই হারিয়ে ফেলা এবং বুঝতে না পারা।
- উদ্বেগ এবং ভয়।
- মনোযোগ বিঘ্নিত হওয়া।
- কিছুক্ষণের জন্য ভুলে যাওয়া (একে সাময়িক অ্যামনেসিয়াও বলে)।
- দৈনন্দিন কাজ করার ক্ষেত্রে নানা অসুবিধা।
- পেশির স্বাভাবিক সঞ্চালন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলা।
- দেখার সমস্যা।
- সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা।
- হাঁটা-চলার সময় ভারসাম্যের অভাব।
- মাঝে মধ্যেই প্রচণ্ড রেগে যাওয়া বা বদ্ধমূল ভুল ধারণার বশবর্তী হয়ে পড়া।
কীভাবে অরগ্যানিক মেন্টাল ডিস্অর্ডার সঠিকভাবে চিহ্নিত করা যাবে?
এই রোগটির উপসর্গগুলি অনেক সময়েই অন্য যে কোনও মানসিক অসুস্থতার লক্ষণগুলির মতোই হয়। সেই ক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্যের বিশেষজ্ঞদের কয়েকটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রোগ চিহ্নিত করতে হয়। এই পরীক্ষাগুলি হল:
- ম্যাগনেটিক রেসোন্যান্স ইমাজিন (এম আর আই)-এর দ্বারা মস্তিষ্কের ক্ষত চিহ্নিত করা যায়।
- পসিট্রন এমিশন টোমোগ্রাফি (পি ই টি) পরীক্ষার মধ্য দিয়ে মস্তিষ্কের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাটিকে খুঁজে বের করা যায়।
- সেরিব্রস্পাইনাল ফ্লুইড মার্কারের সাহায্যে ব্যাকটেরিয়াল মেনিনজাইটিস-এর মতো সংক্রমণজনিত অসুখটিকে নির্ধারণ করা সম্ভব।
শারীরিক কারণে হওয়া মানসিক সমস্যার চিকিৎসা
রোগের গুরুত্ব বা গভীরতা অনুযায়ী চিকিৎসা করা হয়। যেমন সাময়িক সমস্যার ক্ষেত্রে বিশ্রাম এবং যথাযথ ওষুধ প্রয়োগই যথেষ্ট। অনেক সময়েই চিকিৎসা পদ্ধতির ক্ষেত্রে রিহ্যাবিলিটেশন এবং সাপোর্টিভ মাধ্যম গ্রহণ করা হয়।
সেরে ওঠার জন্য চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে ফিজিক্যাল (হাঁটাহাঁটির সাহায্য) এবং অকুপেশনাল (নতুন করে দৈনন্দিন কাজ শেখা) থেরাপি।
Related posts:
মানুষ কেন আত্মহত্যা করে?
ক্যানসারের রোগীদের জন্য সুখবর
ঘুমের আগে মাত্র ৩ মিনিটে পেয়ে যান সুন্দর, দীপ্তিময় ত্বক!
অ্যালার্জি থেকে বাঁচার প্রাকৃতিক উপায়
হাত পা উজ্জ্বল রাখার ঘরোয়া উপায়
এই ৫ অভ্যাস অজান্তেই কমিয়ে দিচ্ছে আমাদের আইকিউ
দ্য লিভার সেন্টার, ঢাকার পরিচালক অধ্যাপক ডা. মবিন খানের পরামর্শ : জন্ডিস থেকে বাঁচতে
ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের অর্থোপেডিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান কল্লোলের পরামর্শ : হাঁটু মচকে গেলে যা করবেন
ব্যথার জন্য পরামর্শ : পেইন ও ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ আলী
সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মো. গোলাম আব্বাসের পরামর্শ : জলাতঙ্ক মানে নিশ্চিত মৃত্যু, আক্রান্ত হলে করণীয়
পিজি হাসপাতালের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শাহজাদা সেলিমের পরামর্শ : শিশুর দৈহিক বৃদ্ধিতে কৃত্রিম গ্রোথ হরমোন
প্রস্রাবের রং দেখে বুঝতে পারবেন স্বাস্থ্যের খবর
প্রাকৃতিক উপাদানে অ্যালার্জি দূর !
Shaving or waxing which is better?
HOW TO APPLY FOR MEDICAL VISA IN INDIA
ফেনীতে বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস পালন করলো জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি
Spleen enlargement is dangerous: Why does the spleen grow?
Have A Healthy Winter
Cough in Kids | Treatments and When to see a doctor
Galito’s – becoming top food place in Dhaka
