Saturday, April 27
Shadow

হৃদরোগ আটকাতে রুই কাতলা ইলিশ

হৃদরোগ
হৃদরোগ আটকাতে পারে রুই কাতলা ইলিশ

সারাদিনে গাদাগুচ্ছের অ্যানিম্যাল ফাট আর তিমিমাছের মাংস খায় এস্কিমোরা। বেশি চর্বি তো তোমরা বল, হার্টের পক্ষে ক্ষতিকর। এতে নাকি হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা বাড়ে। তাই যদি হবে তবে এস্কিমোদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাক কেন এত কম? মোক্ষম প্রশ্নটা ছুড়ে দিয়ে পাকানো গোফে মোচড় দিলেন পাচকড়িবাবু। ভাবটা এমন, এত যে বিজ্ঞান বিজ্ঞান কর , দাও দেখি এর উত্তরটা ।

দেখি কেমন পার ব্যাপারটা প্রথম চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের নজরে আসে সত্তরের দশকের প্রথমদিকে। এস্কিমোদের খাদ্যাভ্যাস আর শরীরী রোগ নিয়ে অনেকদিন ধরে পর্যবেক্ষণ করছিলেন একদল গবেষক । আশ্চর্য একটা ব্যাপারী নজরে এল তাদের। দেখা গেল এস্কিমোদের মধ্যে হৃদরোগ, বিশেষ করে করোনারি ধমনীতে রক্তসঞ্চালন কমে যাওয়া ইসকিমিক হার্ট ডিজিস (Ischacmic Heart Discase) এর হার অন্যদের তুলনায় অনেক অনেক কম। অথচ এস্কিমোদের যা খাওয়াদাওয়া, তাতে একজন এস্কিমো সারাদিনে গড়ে পাচশো গ্রাম প্রাণীজ চর্বি আর তিমিমাছের মাংস খায়। এতে বেশি মাত্রায় চর্বি খাওয়া সত্বেও এস্কিমোরা তা হলে হৃদরোগের হাত থেকে বাচে কীসের জোরে?

একটা সময় পর্যন্ত ভাবা হত , বেশি সম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড ( SAFA) যুক্ত খাবার  শরীরে গেলেই করোনারি ধমনীর পথ সরু হেয় করোনারি হৃদরোগের সম্ভাবনা বাড়ে। যে কোনও চর্বি বাব তেলেই থাকে ফ্যাটি অ্যাসিড। ফ্যাটি অ্যাসিড হতে পারে সম্পৃক্ত (SAFA) বাই অসম্পৃক্ত (Unsaturated) । অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড হতে পারে দু’ রকম মুফা (MUFA) বা মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড আর পুফা (PUFA) বা পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড । পুফায় থাকে হালের গবেষণার ফলাফল বদলের সম্ভাবনা বাড়ে না। এই ব্যাপারটা নির্ভর করে আপনার রোজকার খাবারে ওমেগা ৬ আর ওমেগা ৩ এই দুটো বস্তু কী নুপাতে উপস্থিত থাকছে তার ওপর। শরীরের পক্ষে এদের আদর্শ অনুপাত হল ৬: ১।

 

দেখা গেছে ওমেগা ৬ শরীরে বেশি টুকলে হৃদয়রোগীর পক্ষে ক্ষতিকর খারাপ কোলেস্টরল (Low Desnsity Liproprotein Cholesterol) এর মাত্রা বাড়ে। অন্য দিকে ওমেগা ৩ বেশি টুকলে মাত্রা বাড়ে ভালো কোলেস্টরলের। এরকম High Desnsity Liproprotein Cholesterol হৃদরোগীর পক্ষে ভালো , কেন না শরীরের অসুখে খাবেন -৫

কোষগুলোতে জমা কোলেস্টেরলকে বার করে নিয়ে আসে এই কোলেস্টেরল । বার করে নিয়ে আসে করোনারি হৃদরোগের সম্ভাবনা কমতে বাধ্য।

পাচকড়িবাবুর মোক্ষম প্রশ্নের উত্তরটা লুকিয়ে আছে প্রচুর অ্যানিম্যাল ফ্যাট খেতে অভ্যস্ত এস্কিমোদের দৈনিক খাদ্যে বেশ খানিকটা ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের নি:শব্দ উপস্থিতির মধ্যে। তিমি মাছ ও অন্য বড় মাছে, যা এস্কিমোরা খায় রোজ , ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে । আর ওমেগা ৩ নামের হৃদয়ের বন্ধু (Heart Friendly)ফ্যাটি অ্যাসিডের প্রাচুর্যই এস্কিমোদের হৃদরোগের কবল থেকে বাচায়। হৃদরোগের কবল থেকে এস্কিমোদের বাচাতে একে এক ধরনের প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা ( Natural Defence) বলা যেতে পারে ।

একটা সময় পর্যন্ত মাছ আমাদের কাছে ছিল চর্বিহীন বা কম চর্বির প্রোটিন খাদ্য [ সারণি ১০ দেখুন] । বাস্তবে প্রোটিনের প্রাচুর্যের জন্য মাছের এত কদর এই বঙ্গদেশে। মিঠে বা নোনা যে জলেই হোক, মাছ আমাদের দৈনন্দিন প্রোটিনের অনেকটাই জোগাতে পারে। প্রোটিন ছাড়াও আপনার আমার শরীরের জন্য একান্ত প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম আর ফসফরাসের জোগান দেয় মাছ। পাওয়া যায় অল্পস্বল্প কপার, ম্যাঙ্গানিজ আর কোবাল্টও। পুষ্টিমুল্যের দিক থেকে দেখলে রুই কাতলার তুলনায় ল্যাটা, ট্যাংরা, খয়রা, তোপসে বা পুটি এসব কুচো মাছ অবশ্যই বেশি পুষ্টিকর। কেন না ছোট মাছে প্রোটিন থাকে র্ই কাতলার চাইতে বেশি। বেশি ক্যালসিয়াম আর ফসফরাসের মাত্রাও। রুইমাছে তো এই দুটো বস্তু নেই একফোটাও।

অন্য বড় মাছের ক্যালসিয়াম আর ফসফরাসের বেশির ভাগটাই মানুষের পেটে না ঢুকে চলে যায় বেড়ালের পেটে বা ডাস্টবিনে । কেন না মাছের ক্যালসিয়াম আর ফসফরাসের বেশির ভাগটাই থাকে কাটার । কাটা চিবিয়ে খাওয়া যায় বলে ছোট মাছের শরীরের এই দুটো বস্তু আমাদের শরীরে কাজে লাগে অনেকটাই।

এস্কিমোদের ভেতর গবেষণা চালিয়ে চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা শিখেছেন অনেক। মাছ শুধু শরীরের প্রয়োজনীয় প্রোটিন ক্যালসিয়াম ফসফরাসের উৎস নয়; নির্দিষ্ট কিছু বড় মাছ থেকে শরীরে যায় হৃদয়ের বন্ধু ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। একশো গ্রাম বড় মাছের তেলে পুফার পরিমাণ মোটামুটি ৩৫ গ্রাম। এর বেশির ভাগটাই ওমেগা ৩ ওমেগা ৬ অল্পস্বল্প । মাছের তেল ভাই হৃদরোগীর শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর তো নয়ই সবিশেষ উপকারী । যারা হৃদরোগে ভূগছেন না, তাদের ক্ষেত্রেও করোনারি ধমনীর অ্যাসিড। সাহায্য করে হৃদরোগে সঠিকমাত্রায় রক্ত সরবরাহ বজায় রাখতে । কমে করোনারি হৃদরোগে আক্রান্ত হবার ভয়।

পাঠক জানতে চাইবেন , কোন কোন বড় মাছে ওমেগা  ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড বেশি থাকে?  ঠান্ডা জলে বড় হওয়ার চর্বিযুক্ত হ্যালিবাট , হেরিং ম্যাকেরেল বা আটলান্টিক মাছ তাই শুধু প্রেআটিনের ভালো উৎস নয় , হৃদরোগ আটকাতে রুই- কাতলা ইলিশের মতো মাছের নির্দিষ্ট ভূমিকার কথা এখন প্রশ্নাতীতভাবে প্রমাণিত। পাকা মাছ হৃদরোগীদের পক্ষে ক্ষতিকর বলে এতকালের যে প্রচলিত ধারণা তার সামনে রুই- কাতলা ইলিশের হৃদয়ের হৃদয়ের বন্ধুর ভূমিকা্ ছুড়ে দিয়েছে জবরদস্ত চ্যালেঞ্জ। সব দিক বিবেচনা করে বলা যায়, কুচো মাছের পাশাপাশি সপ্তাহে দু’ তিনদিন এরকম মাছ  একশো থেকে দেরশো গ্রাম খাওয়া দরকার। বিশেষ কের যারা চল্লিশ পার করেছেন এর পরামর্শ তাদের জন্য।

কয়েকটা দেশের খোলা বাজারে নিয়ে আসা হয়েছে মাছের তেলের ক্যাপসুল এরকম ক্যাপসুল খেয়ে হৃদরোগ আটকাবার ধারণা শুধু অপ্রয়োজনীয় নয়, ক্ষেত্রবিশেষে ক্ষতিকর হতে পারে । বেশিমাত্রায় এরকম ক্যাপসুল খেয়ে শরীরী বিপত্তি ঘটা অসম্ভব নয়। বিশেষ করে যারা হৃদরোগ আটকাতে নিয়মিত অ্যাসপিরিনের বড়ি খান, তাদের শরীরে এর প্রতিক্রিয়া হতে পারে মারাত্নক । এদেশেও এরকম ক্যাপসুল এসে গেল বলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!

error: Content is protected !!