class="post-template-default single single-post postid-49670 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

মালেক সাহেবের আত্মহত্যা ও তার আগে

suicide story

সকালে শেভ করে আফটার শেভ মেখে নেন মালেক সাহেব।

ভালো করে নাস্তা করেন।

গোসল করেন। স্যুট টাই পরেন। চশমা পরেন।

মিস্ত্রি ডাক দেন। ফ্যান ঠিকঠাক মতো স্ট্রং আছে কিনা সেটা পরীক্ষা করান।

তিনি মিস্ত্রিকে বলেন তিনি আত্মহত্যা করবেন। মিস্ত্রি বিশেষ পাত্তা দেয় না। টাকা নিয়ে চলে যায়।

এরপর মালেক অনলাইনে একটি আত্মহত্যার ভিডিও দেখেন। নির্বিকার। চশমা পরিষ্কার করেন।

মালেক সাহেব দড়িটা সিলিং ফ্যানে লাগান। এতে তার খুব খাটনি হয়।

মালেক সাহেব ফোন করেন বড় ছেলেকে। বলেন, তার কথা তার মনে পড়ছে। ছেলে বলবে বাবা তুমি চলে আসতে পারো আমাদের কাছে। মালেক সাহেব ফোন রেখে দেন।

মালেক সাহেবের স্ত্রী ফোন ধরেন না।

একজন দেনাদারকে ফোন করে বলেন, টাকা ফেরত দেওয়া নিয়ে আর চিন্তা করতে হবে না। তিনি আত্মহত্যা করবেন। দেনাদার ভয়ে ফোন রেখে দেয়। তারপর তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। মালেক সাহেব হাসেন। 

মালেকের জানালার পাশে একটা ছোট মানিপ্ল্যান্ট চারা। পানি শুকিয়ে এসেছে। মালেক উঠে গিয়ে তাতে পানি দেন। নিচে খানিকটা ময়লা ছিল, পরিষ্কার করেন। চারাগাছের মরাপাতা কেটে ফেলে দেন বাইরে।

মালেক তার ব্রিফকেস আবার পরিপাটি করে গোছান। ব্রিফকেস বন্ধ করে চেয়ারের পাশে রাখেন।

ফাঁসির দড়ি তৈরি। মালেক সাহেব চেয়ারে দাঁড়িয়ে দড়ি টেনেটুনে আবার চেয়ারে বসেন। সময় দেখেন।

তার চোখ যায় মানিপ্লান্টের দিকে।

এমন সময় কলিং বেল।

এক স্মার্ট তরুণী। কাঁধে ট্রাভেল ব্যাগ।

তরুণী: এটা কি নাদিয়াদের বাসা?

মালেক: না এটা নাদিয়াদের বাসা না।

মেয়ে: অনেক দূর থেকে এসেছি। সেই শরীয়তপুর। ভুল ঠিকানায় আসিনি। ঠিকানা তো ঠিকই আছে।

মালেক: কিন্তু এটা তো নাদিয়ার বাসা না।

তরুণী আমি তো এখানে কিছুই চিনি না। নাদিয়াকে না পেলে বিপদে পড়বো। বাসা থেকে পালিয়ে এসেছি। ও ফোনও ধরছে না।

মালেক: ভেতরে আসতে চাইলে আসো। রেস্ট নাও। পানি খাবে?

মেয়েটা দ্রুত ঢুকে চেয়ারে বসবে। লাগেজ রাখবে। লাগেজ থেকে চিরুনি বের করবে। দুটো পারফিউমের বোতল। একটা নেবে। সেটা গায়ে স্প্রে করবে। আরেকটা ধরে চেক করে আবার রেখে দেবে।

 

মেয়ে: কোথাও যাচ্ছিলেন বুঝি।

মালেক: হ্যা।

মেয়ে: কোথায়?

মালেক: কোথায় আর, যেখানে সবাই যায়। হাহাহা।

মেয়ে: মানে কি। কী বলছেন।

মালেক: আমি যেখানে যাচ্ছি, সেখানে সবাইকে যেতেই হবে।

মেয়ে: পানি দিন। ফ্রিজে যদি কোক টোক থাকে তাহলে ভালো হয়।

মালেক উঠে দাঁড়ালেন।

মেয়ে এই সময় তার ব্যাগ থেকে দ্বিতীয় স্প্রে বোতল বের করবে। সে চোরের মতো আশপাশে তাকিয়ে হতাশ হবে।

মালেক: এই নাও, ফ্রেস জুস।

মেয়ে: থ্যাঙকু। একা থাকেন?

মালেক: একা হয়ে গেছি।

মেয়ে: ওপরে দড়ি কেন? দেখে তো মনে হচ্ছে ফাঁসের দড়ি। সুইসাইড করবেন নাকি।

মালেক: ঠিক ধরেছো।

মেয়ে: ও মাই গড। প্লিজ আজ করবেন না। এসে তো ফেঁসে গেলাম মনে হচ্ছে। করলে কাল-পড়শু করুন। আমি আজ চলে যাই। থানা পুলিশ হলে বিরাট মুশকিল।

মালেক: তুমি নাদিয়ার বাসায় চলে যাবে। সমস্যা কী। আমি মরি বাঁচি তাতে কার কী।

মেয়ে: কে? নাদিয়া কে?

মালেক: না কেউ না। এমনি বললাম। তোমার হাতে ওটা কি অজ্ঞান করার স্প্রে?

মেয়ে: আমি নিজেও জানি না। বরকত ভাই দিয়েছে। খুব ভালো নাকি কাজ হয়। একবার স্প্রে করলে বেহুঁশের মতো সব দিয়ে দেবেন।

মালেক: বাহ। কাজের জিনিস তো। কখনও ব্যবহার করেছো?

মেয়ে মাথা নাড়লো। সে করেনি।

মালেক: আমার জন্য এনেছো? আমাকে অজ্ঞান করে লাভ নেই। শুধু শুধু স্প্রে টার অপচয় হবে। মরে গেলে জন্মের মতো বেহুঁশ। হাহাহা। তখন যা মন চায় নিয়ে নিও। ব্রিফকেসটা এমনি এমনি গুছিয়ে রেখেছি। দেখতে ভালো লাগছে। মারা যাওয়ার আগে কজন মানুষ গোছগাছ করতে পারে বলো। দেখেই শান্তি লাগছে। মৃত্যুযাত্রার আমি এক সুখী পথিক।

মেয়ে: এসব কী বলছেন। প্লিজ এ কাজ করবেন না। মহা মুসিবতে পড়বো আংকেল।

মালেক: তুমি চাইলে আমি একটা সুইসাইড নোট লিখে যাব। আমার মৃত্যুর জন্য যে-ই দায়ী হোক… আচ্ছা তোমার নাম তো জানা হলো না।

মেয়ে: আ.. আমার নাম.. কুলসুম।

মালেক: নাহ.. তোমাকে দেখে কুলসুম মনে হচ্ছে। ভয় নেই। মৃত্যুপথযাত্রীর কাছে সব বলা যায়।

মেয়ে: বার বার এই এক কথা বলবেন না তো। আপনি মরতে পারবেন না।

মালেক: আমি মরলে তোমার টেনশন কীসের। ঠিক আছে। তুমি চলে যাও। আমি আরও পরে আত্মহত্যা করবো। তুমি সন্দেহের বাইরেই থাকবে।

মেয়ে: আ আমি কিছু নিব না। আই প্রমিজ।

মালেক: শোনো নিতু, তুমি ভালো মেয়ে। তবে যে কাজটা করছো। সেটা ভালো না। ধরা পড়লে জীবনটা শেষ হয়ে যাবে।

নিতু: আপনি নাম জানলেন কী করে।

মালেক হাসবেন।

মালেক: এক কাজ করো। আমি মারা গেলে ওই মানিপ্ল্যান্ট গাছটা নিতে পারো। আমি মরে গেলে ওই বেচারাকে পানি দেওয়ার কেউ থাকবে না।

মেয়ে: না না। আমি চলে যাব। কোথায় যাব এখন? আবার সেই শরীয়তপুর। উফফ এত্ত টায়ার্ড লাগছে।

মালেক: তুমি একটু খাওয়া দাওয়া করো। আমি দেখি কী ব্যবস্থা করা যার। এরপর রেস্ট নাও। আত্মহত্যার জন্য হাতে অনেক সময় আছে।

মেয়ে: না আমি কিছু খাব না। বমি পাচ্ছে। আমি ঘুমাবো।

মালেক: আচ্ছা। ঘুমাও। আমি একটু বাইরে যাই। একটা সিগারেট খেতে ইচ্ছে করছে।

 

ঘড়ি টিক টিক।

 

মালেক সাহেব খাবার হাতে এসে দেখেন মেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। তিনি তার লাগেজ সরিয়ে রাখেন। ফ্যানটা ছেড়ে দেন। ফ্যানের সঙ্গে দড়িও ঘুরতে থাকে। ফ্যান অফ করে দড়ি খুলে তারপর আবার ছেড়ে দেন।

দড়িটা গুছিয়ে রাখেন ড্রয়ারে।

 

মানিপ্ল্যান্ট থেকে চুইয়ে পড়লো এক ফোঁটা পান। ফ্যানের বাতাসে একটা কাগজের টুকরো সরে গেলো।

 

নিতু শাড়ি পরে একেবারে সেজেগুজেই বাথরুম থেকে বের হলো।

মালেক সাহেব ম্যাগাজিন পড়ছেন।

নিতু: পত্রিকা পড়ছেন যে। মরেই তো যাবেন। খবর টবর নিয়ে কী করবেন।

মালেক: (মুচকি হাসি) আত্মহত্যার নিউজ খুঁজি। আজ কেউ আত্মহত্যা করে নাই।

মেয়ে: প্রতিদিন করে নাকি?

মালেক: বছরে মিনিমাম ১৩ হাজার জন করে.. তাহলে… ধরো… দিনে ৩৫ জনের করার কথা।

মেয়ে: বলেনকি। আপনি তো একদম ক্যালকুলেটর।

মালেক: ব্যবসা করতাম। হিসাব নিকাশ করতে হতো। চলো বাইরে যাই। বাইরে বিকালের নাস্তা খাই না অনেক দিন।

 

দুজন হাঁটছে।

নিতু: আমার ব্যাপারে কিছু জানতে চাইলেন না যে।

মালেক: তোমার বাবা নেই। মা কষ্ট করে সংসার চালাচ্ছে। সংসারের হাল ধরার জন্য তুমিও মরিয়া। তাই এ কাজ বেছে নিয়েছো।

নিতু হাসলো।

মালেক: তার মানে হয়নি।

নিতু: উল্টোটাও হতে পারতো। মা নেই। বাবা বেকার।

মালেক: আমার আত্মহত্যার কথা শুনে তুমি খুব অন্যমনস্ক হয়েছিলে। তার মানে কেউ না কেউ।.

নিতু: থাক। এ বিষয়টা থাক।

মালেক: আমি মনে হয় তোমার প্রথম ক্লায়েন্ট না।

নিতু: অবশ্যই না। এ পর্যন্ত দশ বারোটার বেশি কাজ করেছি। আমার একাউন্টে লাখ লাখ টাকা। কোটিও হতে পারে। আমি নিজেও জানি না।

মালেক: তারপরও…।

নিতু: নেশা হয়ে গেছে। মানুষকে ভয় দেখাতে ভালো লাগে। ভয় পেয়ে কাঁপতে কাঁপতে যখন আমার হাতে সব তুলে দেয়, কী যে ভালো লাগে।

মালেক: স্প্রে টাকি তোমার হাতে আছে?

নিতু: নিরাপত্তার জন্য সঙ্গে রাখি। দেখবেন? এই নিন।

 

এক লোক আসছে।

মালেক: ভাই, এক মিনিট। আমি একটা পারফিউম কোম্পানি থেকে এসেছি।

লোক: না না ভাই। আমি এসব কিনবো না।

মালেক: কিনতে হবে না ভাই। আমি শুধু ঘ্রাণ নিয়ে দেখবেন আর বলবেন গন্ধটা কেমন। গন্ধ যদি ভালো লাগে তাহলে একটা উপহার আছে। কিনতে চাইলে দাম মাত্র দুশ টাকা।

লোক: বাহ.. দিন তো দেখি।

লোকটা মালেকের হাত থেকে স্প্রে নিয়ে নিজে ভালো করে স্প্রে করবে। গন্ধ নেবে। চোখ কুঁচকাবে।

নিতু মিটিমিটি হাসছে। লোকটা মাথা ঘুরে পড়ে যাবে। মালেক আর নিতু দৌড়ে পালাবে। দুজন খুব খুশি।

মালেক আকাশে তাকাবেন। ঘাসের ডগা ছিড়বেন। গাছে হাত বোলাবেন। জীবনটা ভালো লাগছে তার কাছে।

 

দরজায় কলিং বেল দেবে মালেক আর নিতু। দরজা খুলবে এক যুবক।

যুবক: কী চাই?

মালেক: আমরা এসেছি ডেঞ্জারাস মাল্টিমিডিয়া কোম্পানি থেকে।

যুবক: অ্যাঁ

মালেক: জ্বি। আমরা দুজন ডাকাত। উনি সিনিয়র ডাকাত। আমি তার অ্যাসিস্ট্যান্ট।

যুবক: ফাইজলামি করেন?

নিতু: আমরা কি ভেতরে আসতে পারি.. মিস্টার হ্যান্ডসাম?

যুবক: ইয়ে মানে।

মালেক ধাক্কা দিয়ে ভেতরে ঢুকবে। এরপর সিনেমার নায়কের মতো করে বলবে, চুপচাপ সোনা দানা সব দিয়ে দে। তা না হলে .. তা না হলে. তোকে বাঙ্গির জুস খাইয়ে দেবো।

লোকজন সব জিনিসপত্র এনে দিল। মালেক আর নিতু জুস খেলো সোফায় বসে।

এরপর সব গোছগাছ শেষ।

 

মালেক: অনেক করেছেন। এবার আমরা আসি।

যুবক: এসব নেবেন না স্যার।

নিতু এগিয়ে এসে বলল, না গো.. আরেকদিন আসবো। তখন সব নিয়ে যাব।

 

রাতে মালেক আর নিতু এক বিছানায় মাথা লাগিয়ে শুয়ে আছে। বন্ধুর মতো।

মালেক: দোস্ত, জীবনটা তো লাইফ হয়ে গেলো।

নিতু: যাও এবার সুইসাইড করো গিয়া।

মালেক: সুইসাইডের মায়েরে বাপ।

নিতু: হা হাহাহা।

মালেক: এবার নতুন কিছু করি চলো।

নিতু: একটা বুদ্ধি আসছে।

মালেক: জলদি কও।

নিতু: যারা সুইসাইড করতে চায়, তাদের আমাদের দলে নিয়া নেই। মরেই তো যাবে। মরার আগে আউলাঝাউলা যা মন চায় করুক না।

মালেক: বুদ্ধি তো খারাপ না। চলো। এখুনি শুরু করি। একটা হটলাইন চালু করি। আমাদের একটা অফিস হবে। একটা স্লোগান ঠিক করি।

নিতু: কি স্লোগান।

মালেক: মরবি যখন বাঁইচা ল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!