class="post-template-default single single-post postid-20906 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

মানুষের সব আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল

ওয়ালি উল্লাহ সিরাজ: ইখলাস শব্দটি আরবী। শাব্দিক অর্থ আন্তরিক হওয়া, অকপট হওয়া, সৎ হওয়া, বিশ্বস্ত, নিবেদিত ইত্যাদি। ইখলাসের আরেকটি অর্থ হয় নিয়্যতের বিশুদ্ধতা। পারিভাষিকভাবে বর্ণনা করলে বলতে হয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিটি পদক্ষেপে বিশুদ্ধ কর্ম সম্পাদনকে ইখলাস বলে। ইখলাস হল আন্তরিকতার সাথে কর্ম সম্পাদন করা, বান্দার যাবতীয় কর্ম আল্লাহর নিকট গৃহীত বা মকবুল হওয়ার প্রশ্নে ইখলাস জড়িত। ইবাদত-বন্দেগী যাই বলি ইখলাস কে ব্যতিরেখে কোন কিছুই গ্রহণযোগ্য নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করছেন, হে মুহাম্মাদ! তাদেরকে বলে দাও, আমার রব তো সততা ও ইনসাফের হুকুম দিয়েছেন। তাঁর হুকুম হচ্ছে, প্রত্যেক ইবাদতে নিজের লক্ষ্য ঠিক রাখো এবং নিজের দ্বীনকে একান্তভাবে তাঁর জন্য করে নিয়ে তাঁকেই ডাকো। যেভাবে তিনি এখন তোমাদের সৃষ্টি করেছেন ঠিক তেমনিভাবে তোমাদের আবার সৃষ্টি করা হবে (সূরা: আরাফ, ২৯)
এই আয়াতের ব্যাখ্যায অনেক মুফাস্সির লিখেছেন, এর অর্থ হচ্ছে, তোমাদের এসব অর্থহীন রীতি-আনুষ্ঠানিকতার সাথে আল্লাহর দ্বীনের কি সম্পর্ক? তিনি যে দ্বীনের শিক্ষা দিয়েছেন তার মূলনীতিগুলো নিম্নরূপঃ

এক. মানুষের নিজের জীবনকে সত্য, সততা, ন্যায়নিষ্ঠা ও ভারসাম্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

দুই. ইবাদতের ক্ষেত্রে সঠিক লক্ষ্যের ওপর অবিচল থাকতে হবে অর্থাৎ তার ইবাদতে আল্লাহ ছাড়া আর কারোর বন্দেগীর সামান্যতম স্পর্শও থাকবে না। আসল মাবুদ আল্লাহর দিকে ফিরা ছাড়া আর কোন দিকে ফিরে তার আনুগত্য, দাসত্ব, হীনতা ও দ্বীনতার সামান্যতম প্রকাশও ঘটতে পারবে না।

তিন. পথনির্দেশনা, সাহায্য, সমর্থন, পৃষ্ঠপোষকতা, হেফাজত ও সংরক্ষণের জন্য একমাত্র আল্লাহরই কাছে দোয়া চাইতে হবে। কিন্তু এক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে, এসব বিষয়ের জন্য দোয়া প্রার্থীকে পূর্বাহ্ণেই নিজের দ্বীনকে একান্তভাবে আল্লাহ জন্য নির্দিষ্ট করতে হবে। জীবনের সমগ্র ব্যবস্থা, কুফরী, শিরক, গোনাহ ও অন্যের বন্দেগীর ভিত্তিতে পরিচালিত হবে। কিন্তু সাহায্য চাওয়া হবে আল্লাহর কাছে এ বলে, হে আল্লাহ! তোমার বিররুদ্ধে আমার এ বিদ্রোহে আমাকে সাহায্য করো’, এমনটি যেন না হয়।

চার. এ মর্মে বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে যে, এ দুনিয়ায় সে যেভাবে জন্ম নিয়েছে ঠিক তেমনিভাবে অন্য একটি জগতেও তার জনম হবে এবং সেখানে আল্লাহর কাছে তার সমস্ত কাজের হিসেব দিতে হবে।
নিয়তে সত্যবাদিতা ও ইখলাসের গুরুত্ব সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাধিক হাদিস বর্ণনা করেন এবং তিনি আমলের ভিত্তি এ দুটিকেই নির্ধারণ করেন। যেমন- ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনুহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সমস্ত আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল, প্রতিটি মানুষ যা নিয়ত করে, সে তাই পাবে। হাদিসটি রাসূলের হাদিসসমূহ হতে একটি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস। কারণ, শরয়ী বিধানের জন্য এটি একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক হাদিস। যাবতীয় সব ইবাদত এরই অন্তর্ভুক্ত, কোন ইবাদত এ হাদিসের বাহিরে নয়। যেমন- সালাত, সাওম, জিহাদ, হজ ও সদকা ইত্যাদি সব ইবাদত বিশুদ্ধ নিয়ত ও ইখলাসের মুখাপেক্ষী।
মনে রাখনে, ‘মানুষের সব আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল’ এ হাদিসটিতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধু গুরুত্বপূর্ণ কায়দাটির কথা বলেই থেমে যাননি, বরং নিয়ত ও ইখলাসের গুরুত্ব বিবেচনা করে, তিনি কতক আমলের কথা উল্লেখ করেন এবং নিয়তকে বিশুদ্ধ করার উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!