class="post-template-default single single-post postid-17840 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

ইউনিভার্সেল হাসপাতালের চিফ কনসালট্যান্ট ডা. ফারহানা ইসলাম বললেন, চাই নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন

রক্ত পরিসঞ্চালন

চাই নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন

ডা. ফারহানা ইসলাম

কম ঝুঁকিপূর্ণ রক্তদাতা থেকে রক্ত সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় স্ক্রিনিং পরীক্ষার মাধ্যমে যে রক্ত পরিসঞ্চালন করা হয়, তাকে নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন বলে। এটি অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলেও অনেকে এ বিষয়ে অবগত নয়।

সাধারণত কম ঝুঁকিপূর্ণ রক্তদাতা নির্বাচন ও রক্ত সংগ্রহ, সব রক্তপরিসঞ্চালন কেন্দ্রে বাধ্যতামূলক হেপাটাইটিস বি ও সি, এইচআইভি, ম্যালেরিয়া ও সিফিলিস—এই পাঁচটি স্ক্রিনিং করা, অপ্রয়োজনে রক্ত পরিসঞ্চালন না করা এবং রক্তের সঠিক ও যৌক্তিক ব্যবহার নিশ্চিত করাই নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন কৌশল।

 

রক্তদাতার যোগ্যতা

কেউ রক্ত দিতে চাইলে তার বয়স হতে হবে ১৮ থেকে ৬০ বছর, ওজন ন্যূনতম ৫০ কেজি, নাড়ির গতি ৬০-১০০, হিমোগ্লোবিন কমপক্ষে ১২.০ গ্রাম/ডিএল (৭৫ শতাংশ) পুরুষ এবং ১১.৫ গ্রাম/ডিএল (নারী)। তাপমাত্রা ৯৭-৯৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট, স্বাভাবিক রক্তচাপ (ওষুধ বাদে)। তবে গর্ভকালীন এবং প্রসব-পরবর্তী ছয় মাস পর্যন্ত বা মাতৃদুগ্ধ দানকালীন পর্যন্ত নারী রক্তদাতারা বিরতি নিয়ে আবার রক্ত দিতে পারেন।

আরো পড়ুন : বারডেম জেনারেল হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান ডা. আবিদ হোসেন মোল্লান পরামর্শ : শিশুদের ডায়াবেটিস হলে চিকিৎসা ও করণীয়

রক্তদানের উপকারিতা

রক্তদানে রয়েছে যথেষ্ট উপকারিতা। যেমন—

❏ কারো দেওয়া এক ব্যাগ রক্ত একজন মুমূর্ষু ব্যক্তি, শিশু কিংবা একজন মায়ের জীবন ফিরিয়ে দিতে পারে।

❏ দানকৃত রক্ত থেকে রক্তের উপাদান পৃথকীকরণের মাধ্যমে সর্বোচ্চ তিনজন ব্যক্তি উপকৃত হতে পারেন।

❏ প্রতিবার বিনা মূল্যে পাঁচটি রোগের স্ক্রিনিং করে নিশ্চিত হওয়া যায়।

❏ নিয়মিত রক্তদান করলে দেহের রক্তকণিকাগুলো তৈরি হয়, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো সতেজ ও সক্রিয় থাকে।

 

যাঁরা দিতে পারবেন না

রক্তস্বল্পতা, ওজন কম, অস্বাভাবিক রক্তচাপ, হেপাটাইটিস বি ও সি, ম্যালেরিয়া, এইডস অথবা কোনো যৌনরোগাক্রান্ত, বহুগামী বা সমকামী, ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদকদ্রব্য গ্রহণকারী ব্যক্তিরা রক্তদান করতে পারেন না।

 

প্রস্তুতি

নিয়মিত আহার ও স্বাভাবিক পানি খেয়ে রক্ত দান করা যায়। তবে ভারি খাবার খেয়ে সঙ্গে সঙ্গে রক্ত দেওয়া উচিত নয়। রক্তদানের পর একটু বেশি পানি পান করতে হয়। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত কোনো ভারী কাজ করা উচিত নয়।

 

রক্তের উপাদান ও প্রক্রিয়া

হোল ব্লাড/লোহিত কণিকা : লোহিত কণিকা, শ্বেতকণিকা, অণুচক্রিকা ও প্লাজমা দ্বারা রক্ত গঠিত, যাদের রক্তের উপাদান বলা হয়। রেফ্রিজারেটেড সেন্ট্রিফিউজ মেশিনের মাধ্যমে উপাদানগুলো পৃথক করা হয়। লোহিত কণিকা শরীরের বিভিন্ন কোষে অক্সিজেন সরবরাহ করে। এদের গড় আয়ু ৯০-১২০ দিন। এক ব্যাগ রক্ত থেকে এক ইউনিট প্যাক্টড সেল পাওয়া যায়, যা ক্রনিক অ্যানিমিয়ায় ব্যবহৃত হয়। এক ইউনিট প্যাক্টড সেল সাধারণত এক গ্রাম/ডেসিলিটার হিমোগ্লোবিন বাড়ায়। সংরক্ষণ তাপমাত্রা +২ – +৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। ব্লাড ব্যাংকের ফ্রিজে সংরক্ষণ করা হয়। ফ্রিজ থেকে বের করার ৩০ মিনিটের মধ্যে শুরু করতে হয় এবং চার ঘণ্টার মধ্যে শেষ করতে হয়।

প্লাটিলেট : প্লাটিলেট (অণুচক্রিকা) রক্তপাত বন্ধ ও রক্ত জমাট বাঁধতে সহায়তা করে। প্লাটিলেট এজিটেটরে + ২২ – +২৪ ডিগ্রি তাপমাত্রায় দুই থেকে পাঁচ দিন সংরক্ষণ করা যায়। সাধারণত দেহে প্লাটিলেট কমে গেলে অথবা প্লাটিলেট কার্যকারিতা কমে গেলে দেহে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়। তখন প্লাটিলেট দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। সঙ্গে সঙ্গে এর পরিসঞ্চালন শুরু করে ৩০ মিনিটের মধ্যে শেষ করতে হয়।

ফ্রেশ ফ্রোজেন প্লাজমা : রক্তের সেলগুলো পৃথক করলে যে জলীয় অংশ থাকে, তাকে প্লাজমা বলে। ফ্রেশ ফ্রোজেন প্লাজমা ৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় প্লাজমা ফ্রিজে সংরক্ষণ করা হয়। গলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু করে ৩০ মিনিটের মধ্যে শেষ করতে হয়। রক্ত সংগ্রহ করার ছয় ঘণ্টার মধ্যে তৈরি করা হয়। নির্ধারিত তাপমাত্রায় প্রায় ১২ মাস কার্যক্ষম থাকে। সাধারণত লিভার ডিজিজ, ডিআইসি, ম্যাসিভ ট্রান্সফিউশন ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।

 

রক্তের কোনো বিকল্প নেই। তাই রক্তের যৌক্তিক ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরি। রক্তের উপাদান ব্যবহার করে রক্তের যৌক্তিক ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়। আসুন রক্তদানে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করি।

 

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক ও চিফ কনসালট্যান্ট

ব্লাড ট্রান্সফিউশন ও ব্লাড ব্যাংক বিভাগ

ইউনিভার্সেল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল

https://www.youtube.com/watch?v=r0t64gzuqtg

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!