অজুর পরে কোন কারণে যদি হাঁটু বের হয়ে যায় তাহলে অজু ভেঙে যাবে-আমাদের সমাজে এ কথা বেশ প্রচলিত। বাস্তবতা হলো-হাঁটু থেকে কাপড় সরলে অজু ভাঙবে না; বরং প্রচলিত কথাটি ভুল।
যেকারণে অজু ভাঙবে না
আমরা জানি, অজু ভঙ্গের কারণ ৭ টি। শুধুমাত্র ওই কারণগুলো পাওয়া গেলেই অজু ভাঙবে, অন্যথায় নয়। হাঁটু বের হওয়া অজু ভঙ্গের কোন কারণ নয়। তাই উপরোক্ত অবস্থায় অজু ভাঙবে না।
অজু ভঙ্গের কারণগুলো হলো
অজু ভঙ্গের কারণ মোট ৭ টি। যথা: এক, পেশাব-পায়খানার রাস্তা দিয়ে কোনকিছু বের হওয়া। দুই, মুখ ভরে বমি করা। তিন, শরীরের যেকোনও জায়গা থেকে রক্ত, পুঁজ, পানি বের হয়ে গড়িয়ে পড়া (এক্ষেত্রে যদি রক্ত পানি বারবার মুছে ফেলার কারণে গড়িয়ে না পড়ে এবং এ ধারণা হয় যে পানি না মুছলে তা গড়িয়েপড়া পরিমাণ হয়ে যেত তাহলে অজু ভেঙে যাবে)। চার, থুতুর সঙ্গে রক্তের পরিমাণ সমান বা বেশি হওয়া। পাঁচ, চিৎ, কাত কিংবা হেলান দিয়ে ঘোমানো। ছয়, পাগল, মাতাল এবং অচেতন হওয়া। সাত, নামাজে উচ্চস্বরে হাসা।
হাঁটু বের হলে কি তবে কোন ক্ষতি নেই?
শুধু অজু করার পরই না; বরং যেকোনও সময় হাঁটু বের হলে কবিরা গুনাহ হবে। কেননা, হাঁটু ফরজ সতরের অন্তর্ভূক্ত। আর সতর ঢেকে রাখা প্রত্যেক মুসলিম নারী-পুরুষের জন্য ফরজ ও আবশ্যকীয়। যেকোনও ফরজ ছুটে যাওয়া ইসলামের দৃষ্টিতে গর্হিত কাজ। এরূপ হয়ে গেলে খাটি দিলে তওবা করতে হবে এবং আল্লাহর সঙ্গে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে যে এরকম কাজ ভবিষ্যতে আর হবে না।
সতর কি?
‘সতর’ শব্দটি আরবি ‘আস-সাতরু’ ধাতুমূল থেকে নির্গত। আভিধানিক অর্থ হলো, ঢেকে রাখা। অর্থাৎ শরীরের যেসব অঙ্গ লজ্জার কারণে ঢেকে রাখা হয় শরিয়তে তাকে সতর বলা হয়।
পুরুষের সতর কতটুকু?
ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায়, পুরুষের সতর হলো-নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত। অর্থাৎ এতটুকু স্থান অন্য ব্যক্তিদের সামনে ঢেকে রাখা ফরজ। তবে জনসম্মুখে যাওয়ার সময় ক্ষেত্র ও সমাজ হিসেবে এমন পোশাক পরিধান করা উত্তম, যা শালীনতা ও খোদাভীতি প্রকাশ করে।
নারীদের সতর
নারীদের সতরের ক্ষেত্রে মাহরামদের (যাদের সঙ্গে বিয়ে হারাম) সামনে এবং গাইরে মাহরামদের সামনে সতরের সীমানা ভিন্ন ভিন্ন।
মাহরামদের সামনে তাদের সতর হলো-মাথা, চুল, চেহারা, কান, গলা, গলার সংশ্লিষ্ট সিনার উপরিভাগ, হাত, পা এবং টাখনু ছাড়া বাকি পূর্ণ শরীর। তাদের নামাজের সময় চেহারা, হাত ও পা ছাড়া সমস্ত শরীর-ই সতর।
আর গাইরে মাহরামদের (যাদের সঙ্গে বিয়ে বৈধ) সামনে তাদের সম্পূর্ণ শরীর-ই সতর। তবে খুব প্রয়োজন হলে চেহারা, হাত ও পা খোলার অবকাশ আছে। যেমন: আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় ইত্যাদি।
সতর খুলে গেলে কি নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে?
জুমহুর ইসলামি স্কলারদের অভিমত হলো-সতরের অঙ্গগুলোর কোন একটির চার ভাগের এক ভাগ বা তার বেশি ইচ্ছাকৃতভাবে এক মুহূর্তের জন্যও খোলা হলে নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে। আর ব্যাপারটি যদি অনিচ্ছাকৃত ঘটে তাহলে তিন তাসবিহ (তিনবার সুবহানাল্লাহ বলা) পরিমাণ সময় কিংবা তার বেশি খোলা থাকলে নামাজ নষ্ট হবে, এরচেয়ে কম সময় খোলা থাকলে নষ্ট হবে না।
তথ্যসূত্র: (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া : ৫/৩২), (ফাতাওয়ায়ে শামি : ১/৪০৬, ফাতাওয়ায়ে রহিমিয়া : ৪/১০৬) এবং (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া : ১/১০৬) ইত্যাদি
লেখক: বেলায়েত হুসাইন, শিক্ষক-মারকাযুদ দিরাসাহ আল ইসলামিয়্যাহ ঢাকা।