Monday, December 23
Shadow

নিমপাতার বড়ি : এর গুণগুলো জানলে চমকে উঠবেন

নিমপাতার বড়ি তৈরি করে নিজেই হয়ে উঠুন আপনার ডাক্তার। কি শিরোনাম দেখে চমকে উঠলেন? চমকাবারই তো কথা। কারণ ডাক্তার হওয়ার কথায় মানুষ চমকে ওঠে। আসলে বাংলাদেশে আমরা প্রত্যেকেই ডাক্তার। সবাই একজন রোগী দেখলে বলেন, এটা খান, ওটা খান কমে যাবে।

তবে আজকের আয়োজন অন্যভাবে। আসলে আপনিও হয়ে উঠতে পারেন আপনার শরীরের বা পরিবারের একজন চিকিৎসক। কিন্তু কীভাবে, তা জানতে চান?

বাংলাদেশের প্রায় সবত্রই নিম গাছ জন্মে। প্রাপ্ত বয়স্ক হতে সময় লাগে ১০ বছর। নিম গাছ সাধারণত উষ্ণ আবহাওয়া প্রধান অঞ্চলে ভাল হয়। মাটির পিওএই ৬.২-৮.৫ এবং বৃষ্টিপাত ১৮-৪৬ ইঞ্চি ও ১২০ ডিগ্রী ফারেনহাইট তাপমাত্রা নিম গাছের জন্য উপযোগী।

নিমের পাতা থেকে বর্তমানে প্রসাধনীও তৈরি হচ্ছে। কৃমিনাশক হিসেবে নিমের রস খুবই কার্যকরী। নিমের কাঠ খুবই শক্ত। এই কাঠে কখনো ঘুণ ধরে না। পোকা বাসা বাঁধে না। উইপোকা খেতে পারে না। এই কারণে নিম কাঠের আসবাবপত্রও বর্তমানে তৈরি করা হচ্ছে। এছাড়া প্রাচীনকাল থেকেই বাদ্যযন্ত্র বানানোর জন্য কাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে। এর উৎপাদন ও প্রসারকে উৎসাহ এবং অন্যায়ভাবে নিম গাছ ধ্বংস করাকে নিরুৎসাহিত করছে। নিমের এই গুনাগুনের কথা বিবেচনা করেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‌একে ‘একুশ শতকের বৃক্ষ’ বলে ঘোষণা করেছে।

নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ এর উপকারিতা বলে বা লিখে শেষ করা যাবে না। নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ এর এই বড়িটি খেলে এটি আপনার শরীরে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক উভয়ভাবে কাজ করবে।

এই বড়িটি বানাতে যা যা লাগবে–

(১) নিম পাতা
(২) কাঁচা হলুদ ২৫০ গ্রাম
(৩) পানি প্রয়োজন মত

পদ্ধতি: এবার প্রথমে নিমের পাতাগুলো আঁটি থেকে ছিঁড়ে নিয়ে ভাল করে পানি দিয়ে ধুতে হবে। কাঁচা হলুদ ও খোসা কেটে পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। এবার নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ আলাদা আলাদা বা একত্রে শীল পাটায় খুব মিহি করে বেটে নিবেন।

এবার এই মিশ্রণটি থেকে অল্প অল্প করে মিশ্রণ নিয়ে দুই হাতের তালুর সাহায্যে ছোট ছোট বড়ি তৈরি করুন। তবে খেয়াল রাখতে হবে যে খুব বেশি ছোট যেন না হয়। কারণ রোদে শুকালে এগুলো আরও ছোট হয়ে যাবে। এবার সবগুলো বড়ি একটি ট্রে’তে বিছিয়ে নিয়ে রোদে শুকাতে দিতে হবে। মাঝে মধ্যে ২-১ বার এপাশ ওপাশ করে উলটে দিতে হবে যেন কোন পাশ ভেজা না থাকে। এভাবে ৩-৪ দিন রোদে শুকালে বড়িগুলো থেকে সব পানি শুকিয়ে যাবে। এখন একটি পরিষ্কার বায়ুরোধী পাত্রে বড়িগুলো আপনি অনেকদিন ধরে সংরক্ষণ করতে পারবেন। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে বা রাতে ঘুমানোর আগে একটি করে বড়ি পানি দিয়ে গিলে খেয়ে ফেলুন।

জেনে নিন নিমের যতো উপকারিতা :

নিমের ফুল, পাতা ,বাকল তেল ব্যবহার করে মানুষের প্রায় ১০০ রোগের চিকিৎসা করা হয়। যেমন-নিম পাতা
ম্যালেরিয়াঃ নিম পাতার নির্যাস ব্যবহারে ম্যালেরিয়া প্রশমিত হয়। পানি বা এলকোহল মিশ্রিত নিম পাতার নির্যাস ব্যবহারে একই ধরনের ফল পাওয়া যায়।

মানসিক চাপ ও অশান্তিঃ অল্প পরিমাণ নিম পাতার নির্যাস খেলে মানসিক চাপ ও মানসিক অশান্তি কমে যায়।

জন্ম নিয়ন্ত্রণঃ নিম পুরুষ ও মহিলা উভয়েরই জন্ম নিয়ন্ত্রণের ঘটক (Agent) হিসেবে কাজ করে। সহবাসের পূর্বে নিম তেল তুলায় ভিজিয়ে স্ত্রী যৌন অঙ্গে ১৫ মিনিট রাখলে স্পার্ম মারা যায়। নিম লিফ টেবলেট পুরুষের জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
প্রতিদিন এক মুঠো নিম পাতা খেলে গর্ভধারণ হয় না। ৬ সপ্তাহ পুরুষ নিম তেল সেবনে স্ত্রী গর্ভবতী হয় না।

এইডসঃ নিম গাছের বাকল হতে আহরিত নির্যাস এইডস ভাইরাসকে মারতে সক্ষম। নিম পাতার নির্যাস অথবা পুরু পাতা অথবা নিম পাতার চা পান করলে এইডস উপশম হয়।

আলসারঃ নিম পাতার নির্যাস ও নিম বীজ হতে নিম্বিডিন নির্যাস খেলে পেপটিক ও ডিওডেনাল আলসার উপশম হয়।

ব্রণঃ নিম পাতা পিষ্ট করে মধুর সাথে মিশিয়ে প্রলেপ দিলে ব্রণ সেরে যায়।

জন্ডিসঃ ২৫-৩০ ফোঁটা নিম পাতার রস একটু মধুর সাথে মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খেলে জন্ডিস আরোগ্য হয়।

বহুমূত্র রোগঃ প্রতিদিন ১ টেবিল চামচ নিম পতার রস সকালে খালি পেটে ৩ মাস খেলে ডায়বেটিস আরগ্য হয়। প্রতিদিন সকালে ১০টি নিম পাতা গুড়া বা চিবিয়ে সেবন করলে ডায়বেটিস ভাল হয়। নিম পাতার রস খেলে ৩০-৭০% ইনসুলিন নেয়ার প্রবণতা কমে যায়।

বসন্তঃ কাঁচা হলুদের সাথে নিম পাতা বেটে বসন্তের গুটিতে দিলে গুটি দ্রুত শুকিয়ে যায়।

রাতকানাঃ নিম ফুল ভাজা খেলে রাতকানা উপশম হয়।

চোখের ব্যথাঃ নিম পাতা সামান্য শুস্ক আদা ও সৈন্ধব লবণ একত্রে পেষণ করে সামান্য গরম করে একটি পরিস্কার পাতলা কাপড়ে লাগিয়ে তা দ্বারা চোখ ঢেকে দিলে চোখের স্ফীতি ও ব্যথা সেরে যায়।

লাল মেহরোগঃ নিম মূলের ছালের রস ও কাঁচা দুধ মিশিয়ে কিছুদিন খেলে লাল মেহরোগ উপশম হয়।

মাথাধরাঃ নিম তেল মাখলে মাথা ধরা কমে যায়।

ক্যান্সারঃ নিম তেল, বাকল ও পাতার নির্যাস ব্যবহারে ক্যান্সার-টিউমার, স্কীন ক্যান্সার প্রভৃতি ভাল হয়।

উকুনঃ নিমের ফুল বেটে মাথায় মাখলে উকুন মরে যায়।

হৃদরোগঃ নিম পাতার নির্যাস খেলে হৃদরোগে উপকার পাওয়া যায়। নিম নির্যাস ব্লাড প্রেসার ও ক্লোরেস্টোরল কমায়। রক্ত পাতলা করে, হার্টবিট কমায়।

কৃমি নিরসনঃ ৩-৪গ্রাম নিম ছাল চূর্ণ সামান্য পরিমাণ সৈন্ধব লবণসহ সকালে খালি পেটে সেবন করে গেলে কৃমির উপদ্রব হতে রক্ষা পাওয়া যায়। নিয়মিত এক সপ্তাহ সেবন করে যেতে হব। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ১-২ গ্রাম মাত্রায় সেব্য।

রক্ত পরিস্কার ও চর্ম রোগঃ কাঁচা নিম পাতা ১০ গ্রাম ২ কাপ পানিতে জ্বাল করে ১ (এক) কাপ অবশিষ্ট থাকতে ছেঁকে নিয়ে প্রয়োজন মতো চিনি মিশিযে সেব্য।

উল্লেখিত নিয়মে প্রত্যহ ২-৩ বার, নিয়মিত ১-২ মাস সেবন করে যেতে হবে।

দাঁতের যত্নঃ কচি নিম ডাল দিয়ে দাঁত মাজলে দাঁত ভাল থাকে। নিম পাউডার দিয়ে দাঁত মাজলে দাঁত ও মাঁড়ি ভাল থাকে। নিম পাতার নির্যাস পানিতে মিশিয়ে বা নিম দিয়ে মুখ আলতোভাবে ধুয়ে ফেললে দাঁতের আক্রমণ, দাঁতের পচন, রক্তপাত ও মাড়ির ব্যথা কমে যায়।

স্বপ্নদোষ প্রশমনঃ নিম ছালের রস ১-২ চা চামচ ১ (এক) গ্লাস পরিমাণ গরুর দুধে মিশিয়ে রাত্রে শয়নকালে সেবন করলে স্বপ্নদোষ প্রশমিত হয়।

খোস-পাঁচড়া ও পুরনো ক্ষতঃ নিম পাতার সাথে সামান্য কাঁচা হলুদ পিষে নিয়ে আক্রান্ত স্থানে প্রলেপ আকারে ৭-১০ দিন ব্যবহার করলে খোস-পাঁচড়া ও পুরনো ক্ষতের উপশম হয়। নিম পাতা ঘিয়ে ভেজে সেই ঘি ক্ষতে লাগালে ক্ষত অতি সত্বর আরোগ্য হয়।
বমিঃ বমি আসতে থাকলে নিম পাতার রস ৫-৬ ফোঁটা দুধ দিয়ে খেলে উপশম হয়।

এসব যাদের আছে তাদের শ্বেতী হবার প্রবণতা বেশি থাকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!