class="post-template-default single single-post postid-15924 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

ভেটিরিনারি চিকিৎসক হওয়া যদি আপনার স্বপ্ন হয়

ভেটিরিনারি

রোগী নিজের রোগের কথা মুখ ফুটে বলতে অপারগ। ভাবে-ভঙ্গিতে, ইশারায় যে সে নিজের অসুবিধের কথা ব্যক্ত করবে, সে ক্ষমতাও তার নেই। এমতাবস্থায় স্রেফ তাকে পরীক্ষা করে বুঝতে হবে কী তার সমস্যা। রোগ সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে পারলে তারপর সেইমতো চিকিৎসার বিধান। চিকিৎসার পর রোগ সারল কিনা, তাও কিন্তু রোগী নিজের মুখে জানাতে পারে না। তার সুস্থতা বা অসুস্থতা পরখ করে নিতে হবে ডাক্তারকেই। না-মানুষদের চিকিৎসা তাই মানুষের চিকিৎসার চেয়ে নিঃসন্দেহে শতগুণে কঠিন কাজ। এই কাজে সর্বাগ্রে তাই প্রয়োজন জীব-জন্তুর প্রতি নিখাদ ভালবাসা। অবলা জীবদের রোগ বুঝে চিকিৎসার জন্য অবশ্যই আরও যে জিনিসগুলো চাই, তা হল, ধৈর্য, বুদ্ধি এবং সঠিক প্রশিক্ষণ।

কেরিয়ার হিসেবে কেমন?

নিজের সঙ্গে এক বা একাধিক পোষ্য জন্তু রাখার মানুষের স্বভাব হালের কোনও ‘আদিখ্যেতা’ নয়। বরং সেই গুহামানবদের আমল থেকেই এই জিনিসে মানুষ অভ্যস্ত। আজও প্রতি দশটি বাড়ির অন্তত চারটেয় পোষা কুকুর, বিড়াল অথবা পাখি কিংবা নিদেনপক্ষে অ্যাকোয়ারিয়ামে রং-বেরংয়ের মাছ খুঁজে পাওয়া একেবারেই শক্ত কাজ নয়। দিন-দুনিয়ার পরিবর্তনের সঙ্গে-সঙ্গে পোষ্যদের যত্ন নিয়েও মানুষ দিন-দিন হয়ে উঠছে আরওই সচেতন। ঠিক-ঠিক সময়ে তাদের ভ্যাকসিন দেওয়ানো, ওষুধ খাওয়ানো, তারা অসুস্থ হলে চিকিৎসা করানো, সমস্ত দিকেই আম আদমি খেয়াল রাখছে পুঙ্খানুপুঙ্খ। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে ভেটিরিনারি সায়েন্সেসে অভিজ্ঞ মানুষজনের চাহিদা লাফিয়ে-লাফিয়ে বাড়ছে। পশু-পাখির বড়-বড় পোলট্রি-ফার্মের সংখ্যাও দিন-দিন বাড়ছে বই কমছে না। জীবজন্তুর প্রতি সামান্য প্রেম থাকলেও তাই এই চাকরি এই মুহূর্তে যথেষ্ট লোভনীয়।

কাজটা কী?

† চিড়িয়াখানা, ডেয়ারি, পোলট্রি, গোটারি এবং অন্যান্য পশুখামারের জন্তু ও গৃহপালিত পশুপাখি, এককথায় প্রাণিসম্পদের হেল্থকেয়ার সংক্রান্ত যে-কোনও ধরনের কাজ ও গবেষণা।

† পশুপাখিদের স্বাস্থ্যসমস্যার ডায়াগনোসিস করা, তাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে টীকাকরণ, বিভিন্ন ক্ষত ড্রেসআপ করা, সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা নির্মূল করা, সার্জারি ইত্যাদি।

† প্রাণিসম্পদের প্রিভেনটিভ কেয়ার।

† স্বাভাবিকভাবে এবং প্রয়োজনে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে প্রাণিসম্পদ বাড়ানো।

† পশুপাখিবাহিত রোগ, বিশেষত যেগুলি মানুষের পক্ষেও সংক্রামক, তা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা নির্মূল করা।

† খাদ্যসুরক্ষা সংক্রান্ত কাজ। প্রাণিসম্পদ সমৃদ্ধ করার যেসব নিয়মকানুন আছে, তা সঠিকভাবে পালন করার উদ্দেশ্য নিয়ে তদারকি করা।

† বিভিন্ন বায়োলজিকাল, কেমিক্যাল, এগ্রিকালচারাল ও ফার্মাসিউটিক্যাল গবেষণামূলক কাজকর্মের ক্ষেত্রে ভেটিরিনারি বিজ্ঞানীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

† বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বা ওয়াইল্ডলাইফ কনজ়ারভেশন বিষয়ক কর্মসূচীতেও পশুচিকিত্সকদের অংশগ্রহণ করতে হয়।

† ভেটিরিনারি অ্যাসিস্ট্যান্ট বা টেকনিশিয়ানদেরও বিভিন্ন ভেটিরিনারি হাসপাতালে পশুচিকিত্সকদের সহকারীর ভূমিকায় চাকরি দেওয়া হয়।

† লাইভস্টক (পশুসম্পত্তি) ম্যানেজমেন্ট সংস্থায় উপদেষ্টা হিসেবে কাজ পাওয়া যায়।

† বিভিন্ন কলেজে শিক্ষকতারও সুযোগ থাকে।

 

দক্ষিণা কেমন পাওয়া যাবে?

ভারতবর্ষে সরকারি বা বেসরকারি স্তরে ভেটিরিনারি নিয়ে কাজ করে মাসে ১০,০০০ টাকা থেকে শুরু করে ৮০,০০০ টাকা অবধিও উপার্জন করা সম্ভব। পারিশ্রমিকের পরিমাণ, বলাই বাহুল্য, কাজের ধরনের সঙ্গে-সঙ্গে পালটে-পালটে যায় আর পাঁচটা চাকরির মতোই।

 

পরীক্ষা কী দিতে হবে?

যে কোনও ভেটিরিনারি কলেজে চার বছরের ব্যাচেলর ডিগ্রি কোর্সে ভর্তির প্রয়োজনীয় ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা হল পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, জীববিদ্যা এবং ইংরেজি নিয়ে উচ্চমাধ্যমিক পাশ। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী অথবা পাশ করে যাওয়া ছাত্রছাত্রীরা এন্ট্রান্স পরীক্ষায় বসার জন্য আবেদন করতে পারে। পশ্চিমবঙ্গে ওয়েস্ট বেঙ্গল জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের তত্ত্বাবধানে ইভিইটিএস (EVETS) নামে একটি পরীক্ষা হয়, যাতে জীববিদ্যা, রসায়ন ও পদার্থবিদ্যার উপর এমসিকিউ প্রশ্ন থাকে। জীববিদ্যার উপর প্রশ্নের পরিমাণ বাকি দু’টি বিষয়ের চেয়ে বেশি হয়। এই পরীক্ষায় র‌্যাঙ্কের উপর নির্ভর করে কাউন্সেলিং হয় এবং তারপর পশ্চিমবঙ্গের ভেটিরিনারি কলেজগুলিতে ভর্তি নেওয়া হয়। এছাড়া সর্বভারতীয় স্তরে এআইপিভিটি (AIPVT) নামে অন্য একটি পরীক্ষাও হয়। দেশের সমস্ত ভেটিরিনারি কলেজ এই পরীক্ষা থেকে ১৫ শতাংশ আসনে ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি নেয়। দু’টি পরীক্ষারই বিজ্ঞপ্তি প্রতি বছর ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে প্রকাশিত হয় আর পরীক্ষা হয় মে-জুন মাসে। এই কোর্সে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার পর কেউ ভেটিরিনারি স্পেশালিস্ট হতে চাইলে আলাদা ট্রেনিং কোর্স, ইন্টার্নশিপ করার পাশাপাশি নানা পরীক্ষায় বসতে হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!