কবিগুরুর ‘অঘ্রানে তোর ভরা ক্ষেতে কী দেখেছি’-এর দিন পেরিয়ে হলুদ পাতার দিন এল বলে। তবে পাতাঝরার খেলা চলছে এখনই। গাছের নিচ থেকে শুকনো পাতা কুড়িয়ে এনে টুকরো টুকরো শুকনো পাতা জীবনসঙ্গিনীর এলোচুলের দিকে ফুঁ দিন শেষে আর দিনের শুরুতে একটু ঠান্ডা বাতাস মন জুড়িয়ে দিচ্ছে। জানান দিচ্ছে শীত, দেখা হবে খুব শিগগির।
বিশ্বায়নের যুগে প্রাচ্য ঝুঁকছে পাশ্চাত্যের ফ্যাশনধারার দিকে। পৌষ-মাঘের প্রস্তুতি নেওয়ার সময়ও মানুষ খুঁজছে চলতিধারার পোশাক। ফ্যাশন হাউসগুলোও শীতের আয়োজনে ক্রেতাদের স্টাইল চাহিদা পূরণে সচেষ্ট। তাই প্রচলিত সোয়েটার, কার্ডিগান, শালের বাইরেও ভিন্নধারার শীতপোশাক আসছে বাজারে।
বৈচিত্র্যময় চেক ও ডোরাকাটা (স্ট্রাইপ) এবং বিমূর্ত (অ্যাবস্ট্রাক্ট) ছাপা দেখা যাচ্ছে এবার শীতপোশাকের আয়োজনে। জানালেন আইকনিক ফ্যাশন গ্যারেজের স্বত্বাধিকারী তাসলিমা মলি। কিশোরীদের জন্য মোটা সুতির তৈরি লম্বাটে টি-শার্ট রয়েছে, যেগুলোর হাতের নকশায় এসেছে বিভিন্ন প্যাটার্ন। হাতাকাটা আর কোল্ড স্লিভের এসব টি-শার্টের ওপর জ্যাকেট বা ব্লেজার পরা যেতে পারে। হালকা শীতে কেপ (হাতাকাটা কোট) পরতে পারেন। ঢোলা প্যান্ট বা সিকুইন্সের স্কার্ট বেছে নেওয়া যেতে পারে। প্যান্টের পাশের দিকে বা নিচের অংশে থাকছে বৈচিত্র্যময় কাট। বেল্ট বা ফিতা থাকছে প্যান্টে, সামনে ‘বো’ রাখারও সুযোগ আছে।
বাজারে চামড়া বা ডেনিমের সাধারণ নকশার জ্যাকেট আছেই। কোটের মতো কাটের জ্যাকেটও (কেপ জ্যাকেট) পাবেন। কেপ জ্যাকেটের সামনে চেইন; পকেটেও চেইন থাকতে পারে। ব্লেজারের হাতায় বেল্ট কিংবা পাশ দিয়ে ঝোলানো চেইন এবারের নতুন সংযোজন। লম্বাটে কার্ডিগানের নকশায় আছে বৈচিত্র্য। কার্ডিগানের কলার একটু চওড়া করা হয়েছে, যা সামনের দিকে অনেকটা নেমে এসেছে। নেমে আসা পুরো অংশটা মসৃণও হতে পারে, আবার একটু আঁকাবাঁকাও হতে পারে। কোনোটির সামনের অর্ধেকটা অংশে বোতাম, কোনোটিতে নেই আবার বোতামের ব্যবহার। আবার ডান পাশের অংশটি টেনে বাঁ পাশে ও বাঁ পাশের অংশটি টেনে ডান পাশে আটকানো যাবে, এমন ধরনের কার্ডিগানও পাবেন। কোনো কার্ডিগান একরঙা, কোনোটি দুইরঙা। কোনোটির আবার শুধু নিচের অংশের বুননে দুই রঙের ব্যবহার হয়েছে। কোনোটির নিচে ও পেছনে একধরনের নকশা আর সামনের দিকে ওপরে অন্য ধরনের নকশা। উল ছাড়াও গেঞ্জি কাপড়ের মতো একটু মোটা কাপড়ে তৈরি লম্বাটে কার্ডিগান বেছে নিতে পারেন।
ফ্যাশন হাউস জেন্টল পার্কের চেয়ারম্যান ও ডিজাইনার শাহাদাত চৌধুরী জানালেন, উলের কার্ডিগান, উলের অ্যাপ্রোন ও ভিসকস কাপড়ের অ্যাপ্রোন জাতীয় পোশাক পাওয়া যাচ্ছে এবার শীতে। কিশোরীদের উপযোগী হুডিওয়ালা পোশাকগুলোতে করা হয়েছে টাইডাই। আরও রয়েছে সুতির লেগিংস।
ফ্যাশন হাউস মেয়রের জ্যেষ্ঠ মার্চেন্ডাইজার মো. আবদুল্লাহ আল মামুন জানালেন, তাঁরা সব সময়ই পাশ্চাত্য ধাঁচের পোশাক আনেন বাজারে। গতানুগতিক ডিজাইনের বাইরে কাজ করেন তাঁরা। জ্যাকেট, ব্লেজার, হালকা সোয়েটার, টি-শার্ট ও হুডিওয়ালা পোশাক রয়েছে। সিঙ্গল জার্সির হুডিওয়ালা পোশাকে থাকছে প্রিন্টের কাজ আর ক্যাঙারু পকেট। ভেলভেটের জ্যাকেটও পাবেন। প্রিন্টের জ্যাকেটও থাকছে। নিটওয়্যারের ব্লেজার পরলে একটু অন্য রকম দেখায়। হালকা শীতের জন্য মোটা কাপড়ের কুর্তা বেছে নিতে পারেন, কুর্তার গলার পাশ দিয়ে থাকছে ব্লেজারের মতো ডিজাইন।
ফুলেল মোটিফের কাজ রয়েছে শীতপোশাকে। এমব্রয়ডারি থাকছে। কিছু পোশাকে থাকছে নেটের কাজ কিংবা ছোট ঝালর। হাতার নিচে থাকতে পারে ছোট ছোট ঝুলন্ত বল। সাদা, কালো, সবুজ, নীল, কমলা, গোলাপি, ম্যাজেন্টা। বাহারি রং শীতপোশাকগুলোর। একই পোশাকে পাবেন বিভিন্ন রঙের ব্যবহার, ক্যামোফ্লেজ জ্যাকেটেও (মিলিটারি প্রিন্টের মতো) যেমন। একরঙা কাপড়েও রয়েছে বৈচিত্র্য। কমলা রঙের প্যান্টের দুই পাশ দিয়ে যেমন একটুখানি জায়গায় সাদা নকশা করা।
ওভারকোট, পঞ্চো, হুডিওয়ালা চাদর আর হুডিওয়ালা পোশাক—সবই রয়েছে বাজারে। লম্বা হুডিওয়ালা পোশাকের সামনে মখমলের কাজ। বড় টি-শার্ট বেছে নিতে পারেন। ‘সুয়েট টপ’ পোশাকের সামনে পাথরের কাজ করা চেইন দারুণ দেখায়। আবার বড় বোতামটাই একটু আলাদা ছোঁয়া এনেছে কোনো কোনো পোশাকে। জিনস কাপড়ের শার্ট বা প্যান্ট, অন্যান্য গ্যাবার্ডিন কাপড়ের প্যান্ট থাকছে অনেকটা আগের মতোই। একটু মোটা কাপড়ের ফুলহাতা কুর্তা, ভারী টপ, শার্ট কিংবা লম্বাটে কটি হালকা শীতের উপযোগী। কটি হতে পারে স্ট্রাইপের। পোশাকের নিচের অংশে ও হাতার নিচের অংশে হালকা কুঁচির চলও আছে। ছোট ফ্রকের মতো পোশাকেও থাকছে হালকা কুঁচি। কোটের মতো কলারের পোশাকে কলারটি সাধারণ কোটের চেয়ে একটু বেশি চওড়া হলে অন্য রকম দেখায়। পোশাকের থেকে সামনের পকেটের রং যদি আলাদা হয়, তবে তা-ও একটা আলাদা ‘লুক’ আনে।
ঢাকার গ্লোবাল শপিং সেন্টারের মেসার্স সাদিয়া এন্টারপ্রাইজের বিক্রয় সহকারী ইশতিয়াক হুসাইন জানালেন, ‘ইউরোপিয়ান চেক’ নামের ভিন্নধারার চেক নকশায় তৈরি জ্যাকেট জাতীয় পোশাক রয়েছে তাঁদের দোকানে। হুডিওয়ালা পোশাকও রয়েছে।
কোথায় পাবেন
আইকনিক ফ্যাশন গ্যারেজ, জেন্টল পার্ক, মেয়র, এক্সট্যাসি, ইনফিনিটি মেগা মল, সেইলর, স্মার্টেক্স, ইয়েলোসহ অন্যান্য ফ্যাশন হাউসে পাবেন ধরনের পোশাক। বসুন্ধরা সিটি, যমুনা ফিউচার পার্কসহ অন্যান্য শপিং মলের বিভিন্ন দোকানে খোঁজ নিতে পারেন। ঘুরে আসতে পারেন ঢাকা কলেজের উল্টো দিকের নুরজাহান সুপার মার্কেট বা গ্লোব শপিং সেন্টারের মেয়েদের পোশাকের দোকানগুলো থেকেও।