class="post-template-default single single-post postid-21264 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

পরিবারও দেখতে আসছে না আসামিদের

আবরার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুরো দেশের মানুষ যেমন বিচার চাচ্ছে, হত্যায় জড়িত বুয়েট শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরাও বলছেন একই কথা। গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত গ্রেপ্তারদের দেখতে তাঁদের মা-বাবা, ভাই-বোন কিংবা পরিবারের অন্য কোনো সদস্যকে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে আসতে দেখা যায়নি।

হত্যায় জড়িত আসামিদের পরিবারের সদস্যরাও আবরার হত্যার বিচার চাচ্ছেন। মামলার ৯ নম্বর আসামি ইশতিয়াক আহমেদ মুন্নার মা কুলসুমা আক্তার শেলি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমিও আবরার হত্যার বিচার চাই।’

আবরার হত্যাকাণ্ডে জড়িত ১৮ জনকে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এর মধ্যে হত্যাকাণ্ডের পরদিন গ্রেপ্তার হন ১০ জন। তাঁদের ডিবিতে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এর মধ্যে তিন দিন পার হলেও গতকাল পর্যন্ত তাঁদের দেখতে পরিবারের কেউ মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে আসেননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম কলের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের কাছে কেউ আসেনি আসামিদের সঙ্গে দেখা করতে। এ ছাড়া রিমান্ডে থাকা আসামিদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগও নেই।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আবরার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ১৪ জনকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। প্রতিদিন রাতে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বৃহস্পতিবার পুরো রাতও তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

ডিবির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা মামলাটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। কোথাও যেন কোনো গ্যাপ না থাকে, সেদিকে নজর রাখছি। এরই মধ্যে চার্জশিট দেওয়ার মতো তথ্য আমাদের হাতে এসেছে। শিগগিরই চার্জশিট দেওয়া সম্ভব হবে।’

হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের বাসিন্দা ইশতিয়াক আহমেদ মুন্না মামলার ৯ নম্বর আসামি। তিনি ছাত্রলীগ বুয়েট শাখার গ্রন্থ ও প্রকাশনা সম্পাদক। তাঁর মা কুলসুমা আক্তার শেলি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার ছেলেকে পুলিশ আটক করেছে সন্দেহজনকভাবে। আমার ছেলে এমন বর্বর হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রশ্নই আসে না। আজ আবরারের স্থলে আমার ছেলে মারা গেলেও আমি পুত্রহারা হতাম। আমি এ হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার দাবি করছি।’ তাঁর দাবি, ঘটনার রাতে মুন্না চুনারুঘাট উপজেলার ঘরগাঁও গ্রামে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে ছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে রাত সাড়ে ১১টায় মুন্না বাড়ি থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন। মামলার ৫ নম্বর আসামি ইফতি মোশাররফ সকাল দুই ভাইয়ের মধ্যে বড়। তিনি বুয়েটের বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। শেরেবাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন। তাঁর বাড়ি রাজবাড়ী পৌরসভার ধুঞ্চি গ্রামের ২৮ নম্বর কলোনি। তাঁর বাবা ফকির মোশাররফ প্রাইভেট পড়িয়ে সংসার চালান। সকালের বাবাও আবরার হত্যার বিচার দাবি করেছেন। তবে তিনি কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে পারছেন না এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তাঁর ছেলে জড়িত।

সকালের বাবাও বিচার চান

রাজবাড়ী প্রতিনিধি জানান, রাজবাড়ী জেলা শহরে ইফতি মোশাররফ সকালের বাড়িতে গেলে তাঁর পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, সকাল এলাকায় ভদ্র, বিনয়ী, সামাজিক ও পড়ুয়া হিসেবে সবার কাছে পরিচিত। তাঁরা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘যে ছেলে মুরগি জবাই করতেও ভয় পায়, সে কিভাবে এমন ঘটনায় জড়িত থাকতে পারে’ তা তাঁরা ভাবতেও পারছেন না। সকাল জেলা শহরের লক্ষ্মীকোল এলাকার মোশাররফ হোসেনের ছেলে।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে সকালের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় সুনসান নীরবতা। পাকা দেয়াল ও টিনশেড বসতঘরের দরজা লাগানো। দরজা ও জানালাগুলো বেশ পুরনো হওয়ায় তার কিছু অংশ খেয়েছে ঘুণে। বাড়িতে গেলে প্রথমেই এগিয়ে আসেন সকালের চাচা আব্দুস সালাম। তিনি জানান, সকালরা দুই ভাই। ইফতি বড় এবং তাঁর ছোট ভাই স্বপ্নিল রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। তাঁর বাবা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অতিথি শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতার পাশাপাশি কোচিং করিয়ে সংসার চালান।

পরে সকালের বাবা মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে কথা হলে তিনি চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বলেন, বুয়েটের মতো একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একজন সন্তানকে পড়াতে মা-বাবাকে কতটা ত্যাগ স্বীকার করতে হয়, তা ওই ত্যাগ যাঁরা করেন তাঁরাই ভালো জানেন। তিনি বলেন, ‘সকাল অমন ছেলে নয়। ওকে বাধ্য করা হয়েছে। তবে যেই এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকুক না কেন, তার সঠিক বিচার হোক।’

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!