ছাই ইউয়ে মুক্তা
সম্প্রতি মিসরের লোহিত সাগরের তীরবর্তী শার্ম আল-শেখে গাজা শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে একটি শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উদ্দেশ্য ছিল শান্তি প্রক্রিয়ার সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নির্ধারণ, কিন্তু শেষ পর্যন্ত এটি হয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক প্রদর্শনী।

প্রায় ৩০টি দেশ, অঞ্চল ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি এতে অংশ নেন। তবে গাজা সংঘাতকে ঘিরে যে দুই মূল পক্ষ—ইসরায়েল ও হামাস—তাদের কোনো প্রতিনিধিই ছিলেন না এতে। মধ্যপ্রাচ্যের দুই প্রভাবশালী দেশ সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতও প্রতিনিধি পাঠিয়ে দায় সারে।
সেদিন দুপুরে মিসরের প্রেসিডেন্ট দপ্তর ও ইসরায়েল ঘোষণা করে, প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সম্মেলনে যোগ দেবেন। কিন্তু পরে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বিবৃতিতে জানায়, ‘সীমিত সময়সূচির’ কারণে নেতানিয়াহু আসতে পারছেন না। পরে জানা যায়, মূলত আঞ্চলিক নেতাদের আপত্তির কারণেই তার অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত বাতিল হয়।
সম্মেলন শুরু হওয়ার কথা স্থানীয় সময় দুপুর আড়াইটায়। কিন্তু ওই সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলি নেসেটে ভাষণ দিচ্ছিলেন, যা বিক্ষোভের কারণে কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ থাকে। ওদিকে, শার্ম আল-শেখে ততক্ষণে বিশ্বের নানা দেশের প্রতিনিধিরা অপেক্ষায় ছিলেন ট্রাম্পের।
কিছুক্ষণ পর মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাতাহ আল-সিসির সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠকটি সরাসরি সম্প্রচার শুরু হয়। পরে ট্রাম্প মূল মঞ্চে আসেন, অন্য নেতারা তার সঙ্গে ছবি তোলেন ও কথা বলেন।
এরপর সিসি, ট্রাম্প, কাতারের আমির তামিম বিন হামাদ আল-থানি ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান এক যৌথ নথিতে স্বাক্ষর করেন। মিসরের আল-আহরামসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন গণমাধ্যম জানায়, এই নথিতে চার নেতা গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রতি নিজেদের সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দেন।
স্বাক্ষর শেষে সিসি ও ট্রাম্প পৃথক বক্তব্য দেন এবং সম্মেলনের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
ট্রাম্প তার ভাষণে মূলত নিজের ‘সাফল্য’ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, গাজা যুদ্ধ শেষ হয়েছে এবং পুনর্গঠন কাজ ‘সম্ভবত সহজ অংশ’। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার পরবর্তী ধাপ কীভাবে বাস্তবায়ন হবে, সে বিষয়ে কিছু বলেননি তিনি।
বিভিন্ন গণমাধ্যম মার্কিন মধ্যস্থতায় গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে ‘অস্পষ্ট’ বলে মন্তব্য করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এখনই ‘শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে’ বলার সময় হয়নি। কারণ, অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর মেলেনি, যেমন—ইসরায়েল কি পুরোপুরি সেনা প্রত্যাহার করবে? ‘আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী’ গঠন করবে কারা? হামাসের ভবিষ্যৎ কী?
অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, শীর্ষ সম্মেলনের রাজনৈতিক প্রদর্শন শান্তি পরিকল্পনার প্রকৃত সমস্যাগুলো আড়াল করেছে। সিএনএন মন্তব্য করেছে, মার্কিন পরিকল্পনার একটি বড় ত্রুটি হলো—ফিলিস্তিনি জনগণকে নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে প্রকৃত অংশগ্রহণের সুযোগ না দেওয়া।
মধ্যপ্রাচ্যে ‘শান্তির ঐতিহাসিক ভোর’ আসছে—এমন দাবি করা প্রথম মার্কিন রাজনীতিবিদ নন ট্রাম্প। কিন্তু ফিলিস্তিনি সমস্যার সত্যিকারের সমাধান না হলে, এমন কোনো ‘ভোর’ বাস্তবে দেখা যাবে না।
লেখক: সংবাদকর্মী, সিএমজি বাংলা, বেইজিং




















