প্রতিনিয়ত আমাদের জীবনে নানা ধরনের ঘটনা ঘটে যার জন্য আমরা সুখী হই অথবা দুঃখ পাই। তবে সব ঘটনার মধ্যে অনেক ঘটনা ঘটে যা আমাদের মস্তিষ্ককে সুখের অনুভূতি দেয়। আমরা ভেসে যাই সুখের ভেলায়। আচ্ছা আপনি কি কখনো ভেবেছেন এই সুখ আমাদের মস্তিষ্কে আসলে কিভাবে তৈরি হয়? আমার মনে হয় আপনার উত্তর না! আসলে আমাদের মস্তিষ্কে সুখের যে অনুভূতি তৈরি হয় সেটি এমনি এমনি তৈরি হয় না। আমাদের মস্তিষ্কে সুখের অনুভূতি তৈরির পেছনে রয়েছে দারুন রাসায়নিক ক্রিয়া কৌশল। আমাদের মস্তিষ্কে প্রধানত চার ধরনের হরমোন নিঃসৃত হয় যার মাধ্যমে আমরা সুখের অনুভূতি পাই। হরমোন গুলো হলো ডোপামিন, অক্সিটোসিন, সেরোটোনিন ও এন্ডরফিন। তার মানে এটি স্পষ্ট যে আমাদের সুখানুভূতি আসলে রসায়নেরই কারিশমা।
এবার তাহলে জেনে নেওয়া যাক কোন হরমোন কিভাবে আমাদের মস্তিষ্কে সুখের অনুভূতি তৈরি করে।
ডোপামিন
এটি একটি রাসায়নিক যৌগ যা ক্যাটিকল অ্যামিন ও ফেনিথাইল অ্যামিন পরিবারের সদস্য। ডোপামিন সাধারণত নিউরোট্রান্সমিটার ও হরমোন হিসেবে আমাদের দেহে কাজ করে থাকে। আমরা যখন কোন একটি দুঃসাধ্য কাজ সম্পন্ন করি, নিজের যত্ন নেই, পছন্দের খাবার খাই কিংবা জীবনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অর্জনগুলো সেলিব্রেট করি তখন ডোপামিন নামক এই হরমোনটি এই সকল কাজের পুরস্কার হিসেবে আমাদের দেহে থেকে নিঃসৃত হয়। ফলে আমাদের মস্তিষ্কে সুখের অনুভূতি সৃষ্টি হয় এবং আমরা সুখী হই।
অক্সিটোসিন
অক্সিটোসিনকে অনেক সময় ভালোবাসার হরমোন বলা হয়ে থাকে। এটি একটি পেপটাইড হরমোন। এই হরমোনটি সাধারণত হাইপোথ্যালামাসে উৎপন্ন হয় এবং পোস্টেরিয়র পিটুইটারি গ্রন্থির মাধ্যমে নিঃসৃত হয়। যখন আমরা আদরের পোষা প্রাণীর সাথে খেলাধুলা করি, বাচ্চার সাথে একান্ত সময় কাটাই, পরিবারের কারো সাথে কোয়ালিটি সময় পার করি তখন এই হরমোনটি নিঃসৃত হয় ফলে আমরা সুখ অনুভব করি।
সেরোটোনিন
এটি এক ধরনের মনোঅ্যামিন নিউরোট্রান্সমিটার যার রাসায়নিক নাম ৫-হাইড্রোক্সি ট্রিপ্টামিন। এটি সাধারণত আমাদের মেজাজকে স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করে। আমরা যখন মেডিয়েশন করি, দৌড়াই, প্রকৃতির মধ্যে মিশে যাই, সাঁতার কাটি কিংবা সাইক্লিং করি তখন আমাদের দেহে এই হরমোনটি নিঃসৃত হয়। ফলে আমাদের মেজাজ স্থিতিশীল অবস্থায় থাকে এবং আমরা সুখের অনুভূতি পাই।
এন্ডরফিন
আমরা যখন খুব কষ্টের মধ্যে থাকি তখন কষ্টকে প্রশমিত করার জন্য এই হরমোনটি আমাদের দেহে নিঃসৃত হয়। তাই এই হরমোনকে পেইন কিলার হরমোন বলা হয়। যখন আমরা বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ব্যায়াম করি, কৌতুক দেখি কিংবা ডার্ক চকলেট খাই তখন এই হরমোনটি নিঃসৃত হয় ফলে আমরা সুখ অনুভব করি। আমাদের ভেতরে কষ্ট নিমেষেই হারিয়ে যায়।
সুতরাং এটি নিশ্চিত করেই বলা যায় যে আমরা যে সুখ অনুভব করি তা আসলে রসায়ন বিজ্ঞানের জাদু। আর এভাবেই তৈরি হয় সুখের রাসায়নিক ক্রিয়া কৌশল।
লেখক: মোঃ বিল্লাল হোসেন