class="post-template-default single single-post postid-28091 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

ধ্রুব নীলের রম্য রচনা : সাপ ও ওঝা

রম্য গল্প সাপ ও ওঝা
ধ্রুব নীল
এক দেশে ছিল এক সাপ। তার ছিল ভয়ংকর বিষদাঁত। কিন্তু আফসোসসসস্। ফ্ল্যাট-এপার্টমেন্টের যুগে কামড় দেয়া দায়। দাঁতজোড়া সারাদিন কুটকুট করে। ছোবল আর দেওয়া হয় না। কামড় দিয়েই বা লাভ কী। বিদেশি ইনজেকশন চলে এসেছে। মরার জো নেই। ভয়ানক বিষাক্ত হয়েও এমন অস্তিত্ব সংকট আগে কখনও টের পায় নাই বেচারা সাপ।
সারাদিন মুখের মধ্যে একটা মাইনরিটি ভাব নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। এদিকে কাউকে কামড়াতে না পারায় তার বিষগুলো সব জমা হলো মস্তিষ্কে। সেখানে তৈরি হলো এক বিষবুদ্ধি। আধুনিক ওষুধের কারণে ওঝাদের ব্যবসা মন্দা। ওঝারা খেয়ে না খেয়ে আছে। সাপ গেল সেই ওঝার বাড়িতে।
‘ওঝা ভাই। আমি গোবেচারা গোখরা। তোমার সঙ্গে একটা ডিপলোমেটিক আলাপ আছে। দরজা খোলো।’
চিপায় পড়া ওঝা সাত পাঁচ না ভেবে দরজা খুলে দিল। পিঁড়ি পেতে সাপকে বসতে দিল। এরপর দরজা লাগিয়ে শুরু করলো রুদ্ধদ্বার বৈঠক।
‘বল, তোমার অফারটা কী শুনি।’
‘অফারটা সোজা। এখন তো আর সাপে কাটলে তোমাকে কেউ ডাকে না। তাই আমরা একটা চুক্তি করতে পারি। আমি গিয়ে গিয়ে মানুষকে কেটে আসবো, আর সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে তুমি গিয়ে হাজির হবে। গিয়ে বলতে পারবে, বিপদের গন্ধ পেয়েই আমি ছুটে এসেছি। আর মানুষ যতই ডিজিটাল হোক, এসব আধ্যাত্মিক আলাপে ভড়কে যাবেই। তখন ডাক্তারের আগে তোমার কাছেই ধরনা দেবে। আর বুদ্ধি করে তুমি যদি ঝোলার ভেতর ওই বিদেশি ইনজেকশন রাখতে পারো, তবে ষোলআনা আদায়।’
সাপের আইডিয়টা ওঝার দারুন পছন্দ হলো। সে সঙ্গে সঙ্গে সাপকে আপ্যায়ন করার জন্য দুধকলা নিয়ে এলো।
এভাবেই শুরু হয়ে গেল সাপ ওঝার বন্ধুত্ব। সাপ কাটে, ওঝা ঝাড়ে। ঘটনা দেখে লোভাতুর সাপের সংখ্যা বাড়তে থাকে। মানুষরা সব ইঁদুর হয়ে যেতে থাকে। সাপেরা সব দলবদ্ধ ভাবে হামলা চালাতে থাকে।
এক পর্যায়ে তারা কূটনীতি ভুলে যায়। ওঝার তুলনায় সাপ বেড়ে যায়। ওঝা দিশেহারা বোধ করতে থাকে। সে বুঝতে পারে দুধকলা খাওয়ানোটা ভুল হয়েছে। সাপ কখনও পোষ মানে না। এভাবে সাপ বাড়তে থাকলে তো পরে মানুষই পাওয়া যাবে না।
সাপের রাগ বেশি ডাক্তারের ওপর। ডাক্তার দেখলেই তাদের দাঁতের চুলকানি বেড়ে যায়। কারণে ওকারণে কামড়াতে চায়। ওঝা যতই মানা করে, তাতে কান দেয় না। শত হলেও ডাক্তারদের ওপর তাদের ক্ষোভ পুরনো।
এদিকে দিনকে দিন সাপের আচরণ আরো উগ্র হতে থাকে। ওঝা বিব্রত বোধ করে। সে তড়িঘড়ি করে আরো বিদেশি ইনজেকশন আনার জন্য পাশের দেশে যায়। কিন্তু মানুষ ততদিনে টের পেয়ে গেছে ওঝা আর সাপের বন্ধুত্বের কথা। তারা বুঝেও কিছু করতে পারে না। তারা ভাবে আর হাহুতাশ করে। আহা, ওঝা যদি সাপের বন্ধু না হইতো, তবে আমি হয়তো সাপে কাটলে ওঝার কাছেই যাইতাম।
এখন তো আর সে পথ খোলা নাই। সাপও বুঝে গেছে, ওঝার এখন সাপ ছাড়া গতি নাই। লোকে যেমন দুধকলা দিয়া সাপ পুষবে না, তেমনি ভোট দিয়া ওঝাও পুষবে না। কারণ এতসব ঘটনার পর ওঝাকে বিশ্বাস করা চলে না। ওঝা সাপের সঙ্গ ত্যাগ করলেও, বলা তো যায় না, পরে যদি আবার সাপের রাজত্ব ফিরে আসে!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!