আমি তুমি সে নাটকের সব পর্ব (চিত্রনাট্য)
ami tumi se natok full story
দৃশ্য ৫১ থেকে দৃশ্য ৬০
দৃশ্য-৫১
সকাল। আউটডোর। কক্সবাজারের হোটেল। সমুদ্রের ঢেউ। গর্জন শোনা যাচ্ছে।
জেরিন আর নাভিদ সৈকতে হাঁটছে। আরশাদ শিরিনের ছবি তুলছে।
জেরিন: একটা কথা সত্যি করে বলবে?
নাভিদ: এর মানে কি! আমি কি সব সময় মিথ্যে বলি নাকি?
জেরিন: না, তবে সম্ভাবনা আছে বলার।
নাভিদ: আরে এত ভনিতার দরকার নেই। বলো কী বলবে।
জেরিন: আহা.. সৈকতে এভাবে হাঁটছি। একটু সফটলি বলো। এমন মেজাজ গরম করে রেখেছো কেন।
নাভিদ: হুম।
জেরিন: আচ্ছা, কথাটা হলো তুমি কি শিরিনকে পছন্দ করে ফেলেছো।
নাভিদ: (হাসলো) তুমি কত দিন ধরে এই বিষয়টা ভাবছো বলতো?
জেরিন: কতদিন ধরে ভাববো।
নাভিদ: তোমার ধারণা, গতকাল সন্ধ্যায় আমাদের মধ্যে অনেক কিছু হয়ে গেছে, তাই না?
জেরিন: (হাসি হাসি) না, তা বলছি না। তবে হলেই বা কী।
নাভিদ: না, কিছু হয়নি। তবে তুমি মনে করো না আমি তোমাকে কৈফিয়ত দিচ্ছি। এটা কৈফিয়ত দেওয়ার মতো বিষয়ই না।
জেরিন: ধুর। কী বলো না বলো। ভালো কথা তোমার ওই দিওয়ানা মাস্তানা কাজিনটার খবর কী? তোমাকে এভাবে দু দুটো মেয়ের সঙ্গে ছেড়ে দিলো।
নাভিদ: হেহেহে।
জেরিন: যাই হোক, তোমার একটা সিদ্ধান্তে আসা উচিৎ।
নাভিদ: নাহ। সিদ্ধান্ত আমি কখনই নিতে পারি না।
জেরিন: তো কাকে বিয়ে করবে, কার সঙ্গে প্রেম করবে সেটাও আমাকে ঠিক করে দিতে হবে।
নাভিদ: এক্সাক্টলি, এটাই ভাবছিলাম আমি। বলোতো শিরিনকে পটাই কিভাবে। ও কেমন যেন।
জেরিন: ও.. তারমানে ঠিকই। (কিছুটা মুখ গোমড়া, তবে প্রকাশ করলো না পুরোপুরি)
নাভিদ: আরে না
কেন আমার কি কাউকে ভালো টালো লাগতে পারবে না?
জেরিন: দেখো এটাও… মানে..
নাভিদ: কী? বলো।
জেরিন: ওর চিন্তাভাবনা হলো মডেলিং। ওর আর কোনও কিছুর প্রতি এখন টান আছে কিনা জানি না।
নাভিদ: হাহাহা। কী বলো না বলো। মডেলরা কি প্রেম করে না? বিয়ে করে না?
জেরিন: তা হয়তো করে। কিন্তু সেটার মধ্যে,.. সংসারই বা টিকে কজনের।
নাভিদ: হাহা। তুমি নিজে অ্যাড এজেন্সির মালিক হয়ে এসব বললে হবে? তুমিও টিপিক্যাল কথাই বলছো জেরিন।
জেরিন: দেখো আমি চাই না তুমি.. মানে আমি জেনেশুনে শিরিনের মতো।
নাভিদ দাঁড়াবে। তার মেজাজ গরম হয়ে গেছে।
নাভিদ: কী বোঝাতে চাইছো বলো তো? শিরিন যার তার সঙ্গে বিছানায় যাবে? এ জন্য তাকে ভালোবাসতে পারবো না?
জেরিন: হুম, গেলে যাবে।
নাভিদ: মানে! শিরিন যাবে, তুমি শিওর।
জেরিন: দেখো, আমি জানি এ লাইনে কোথায় কী ঘটে, কিভাবে ঘটে।
নাভিদ: ছি জেরিন। ছি।
জেরিন: দেখো, না জেনে না বুঝে এত ছি ছি করো না। আমি যা বলছি সত্য বলছি। তুমি আহত হলে আমি স্যরি।
নাভিদ মেজাজ গরম করে চলে যাবে। জেরিন তার দিকে তাকাবে না। সে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে।
নাভিদ আবার ফিরে আসলো।
নাভিদ: ইউ নো হোয়াট। আমি কেয়ার করি না। শিরিন যদি চায় তো সে যা খুশি করবে। সে স্বাধীন। আই রেসপেক্ট হার। তার অধিকার আছে।
জেরিন কিছু না বলে হাঁটতে শুরু করলো সমুদ্রের দিকে। বিড় বিড় করে তাচ্ছিল্যের সুরে বললো, ‘রেসপেক্ট!’
নাভিদ তাকিয়ে আছে জেরিনের দিকে। এমন সময় ফোন আসলো।
নাভিদ: হ্যাঁ।
পূর্ণতা: কোথায় তুমি।
নাভিদ: দোজখে, কেন।
পূর্ণতা: আমিও আসছি, তাই।
নাভিদ: দেখ এখানে কাজ করতে এসেছি। ঘুরতে না।
পূর্ণতা: আমি ঘুরতেই যাবো। তোমাকে নিয়ে।
নাভিদ: দেখ ঝামেলা করিসনা।
পূর্ণতা: ঝামেলার দেখেছো কী তুমি। আমার সঙ্গে সব করবে, আর ফুর্তি করবে অন্য কারো সঙ্গে। এটা হবে না।
নাভিদ: হোয়াট! কী বলতে চাস তুই! তোর সঙ্গে হয়েছে মানে। দেখ ওটা একটা অ্যাকসিডেন্ট। আমি সত্যিই সেন্সে ছিলাম না। আর দোষ তো তোরও কম ছিল না, তাই না।
পূর্ণতা: তুমি আমাকে বাধা দিতে পারতে।
নাভিদ: সেই সুযোগ কি আমি পেয়েছি। দেখ, বাবা যা হওয়ার হয়ে গেছে। এসব ভুলে যেতে চাই।
পূর্ণতা: ইউ ব্লাডি। তোমাকে আমি দেখে নেবো। আসছি আমি।
নাভিদ: শোন প্লিজ।
পূর্ণতা: আমি আসছি, তোমার সঙ্গে একসঙ্গে থাকবো। দেখবো কে কী করে।
নাভিদ: শোন.. শোন। হ্যালো হ্যালো।
রাগে ফোনটাকে আছাড় দিতে গিয়েও দিলো না।
সামনে তাকিয়ে দেখলো জেরিন সমুদ্রে নেমে যাচ্ছে। নামছে তো নামছেই। আস্তে আস্তে কোমর পানিতে নেমে গেলো।
নাভিদ: জেরিন! জেরিন!
দৌড়াতে শুরু করলো নাভিদ।
আমি তুমি সে নাটকের সব পর্ব (চিত্রনাট্য)
ami tumi se natok full story
প্রথম খণ্ড দৃশ্য ৫১ থেকে দৃশ্য ৬০
দৃশ্য-৫২
আরশাদ আর শিরিনের ফটোশুট চলছে। এমন সময় সেখানে হাজির হবে এক র্যাম্প ও মডেলিং এজেন্সির ম্যানেজার তানভির।
তানভির শিরিনের ছবি তোলা দেখছে খুব কাছ থেকে।
আরশাদ: ভাই কি কিছু বলবেন।
তানভির: না না, আমি কাজ দেখছি। কাজ শেষ হোক তারপর বলবো।
আরশাদ: কিন্তু এভাবে তো ডিসটার্ব হচ্ছে।
তানভির: কী বলেন না বলেন ডিসটার্ব করলাম কোথায়। আমি ভাই ক্রেজি মিডিয়া লিমেটেডের প্রোপাইটর। মডেলকে দেখে পছন্দ হয়েছে তাই।
আরশাদ: তাই বলে তো এভাবে।
শিরিন এগিয়ে আসবে।
শিরিন: আরশাদ ভাই এক মিনিট।
শিরিন এগিয়ে এসে তানভিরের সঙ্গে হাত মেলাবে। তানভির হাত ছাড়তে চাইছে না।
শিরিন: ও হাই। আপনার এজেন্সির কথা আমি শুনেছি। কী সৌভাগ্য আপনার সঙ্গে দেখা হয়ে গেলো। ইনি আরশাদ, আমার বন্ধু। খুব ভালো ছবি তোলেন।
আরশাদ-তানভির হ্যান্ডশেক করলো।
তানভির: ভাই কি শুধু মডেলদের ছবিই তোলেন?
আরশাদ: না না। ইনফ্যাক্ট এটাই আমার প্রথম কাজ।
তানভির: বেশ বেশ। চলুন চা কফি কিছু খাই।
শিরিন: আমার গলা শুকিয়ে কাঠ, বরং ডাব খাওয়া যাক।
তানভির: ওহ গ্রেট। চলুন চলুন।
এদিকে জেরিনের কাছে দৌড়ে গেল নাভিদ। জেরিনের হাত চেপে ধরলো। জেরিন রহস্যময় হাসি দিলো।
নাভিদ: দেখো সমুদ্র জিনিসটা কিন্তু ফাইজলামি না। এতদূর আসা মোটেও ঠিক হয়নি। চলো চলো।
জেরিন দুষ্টুমি হাসি দিল। সে নাভিদের হাত টেনে ধরে তাকে সমুদ্রের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। নাভিদ চিৎকার করছে। সে কান দিচ্ছে না। জেরিন সাঁতার কাটতে লাগলো। নাভিদ ভয়ে কাঠ। সে দ্রুত পাড়ের দিকে চলে আসলো। জেরিন শব্দ করে হাসছে।
দৃশ্য-৫৩
আউটডোর। সৈকত। আরশাদ, শিরিন আর তানভীর খাচ্ছে। এসে যোগ দিল নাভিদ। পরে জেরিন আসবে। পূর্ণতাও এসে হাজির হবে।
নাভিদকে দেখে উঠে হাত বাড়িয়ে দিলো তানভির।
তানভির: আপনি তাহলে মিস্টার নাভিদ।
নাভিদ: ইয়ে হ্যাঁ। আমি। আপনি?
শিরিন: উনি তানভির ভাই।
তানভির: আপনাদের কাজ দেখলাম। শিরিনকে দেখে তো মনেই হয় না ও নতুন।
শিরিন: নাভিদ ভাই আর জেরিন আপুই আমাকে শেখাচ্ছেন আসলে।
আরশাদ: ও আর আমি?
শিরিন: হাহাহা। আপনার কাছ থেকে ক্যামেরাটা শিখতেই হবে। আর আপনি তো কম না, মডেলিং করা শুরু করে দিতে পারেন।
আরশাদ: আমার বাপু অত শেখাশেখির ধৈর্য নাই।
শিরিন: তবে একটা জিনিস আপনাকে শিখতেই হবে।
আরশাদ প্রশ্ন চোখে তাকালো।
শিরিন: সেটা হচ্ছে মনের কথা বলা।
আরশাদ: এটা অবশ্য ভুল বলেননি। কী বলেন তানভির ভাই।
তানভির: হেহেহে। তাহলে বলতে পারেন এই সাবজেক্টে আমার পিএইচডি করা আছে। তবে কথা হলো কি, আমি যে লাইনে আছি, সেখানে মনের কথা বলতেই হয়। (শিরিনের দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে) মনের কথা একদম ক্লিয়ার করে বলে ফেলতে হয়। না বললে কোনও কাজই হবে না। হাহাহহা।
আরশাদ: আপনাদের লাইনের কথাবার্তাগুলো বুঝতেও আমার সময় লাগবে মনে হচ্ছে।
শিরিন: হুম।
নাভিদ: ইয়ে শিরিন একটু আসবে? তোমার সঙ্গে কথা আছে।
শিরিন উঠবে।
শিরিন: তানভির ভাই তাহলে উঠি আজ।
তানভির: হুম। বাট কথা যেন ঠিক থাকে।
শিরিন: জ্বি অবশ্যই।
তানভির: ক্যাফে সায়ন্তনীতে। ঠিক রাত ৯টায়।
তানভির আর আরশাদ কথা বলছে। ডাব খাচ্ছে।
শিরিন: বলো?
নাভিদ: প্রথম কথাটা হলো এসব নাভিদ ভাই টাই চলবে না। শুধু নাভিদ। আর লোকটার সঙ্গে আবার কীসের মিটিং।
শিরিন: বাইরের মানুষের সামনে তো আর হুট করে তুমি বলা যায় না। কী না কী ভাবে।
নাভিদ: করুক মনে।
শিরিন: আর তানভির ভাইয়ের সঙ্গে একটা র্যাম্পে কাজ করবো।
নাভিদ: ও, কী দরকার ওসব র্যাম্প ট্যাম্প করার। ফটোশুটের কাজ ভালো না?
শিরিন: এটা বলার জন্য ডেকেছো?
নাভিদ: না তা না। আসল কথাটা হলো আমার এক বন্ধু আছে পুলিশে। তার সঙ্গে কথা হয়েছে। তাকে সব বুঝিয়ে বলেছি। সে খোঁজ নিয়েছে। তোমার কোনও ছবি পুলিশের হাতে যায়নি।
শিরিন: তুমি বলেছো! সব?!
নাভিদ: দেখো এটাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ হয়েছে। আমি তুমি অত আইন বুঝবো না। ও আমার ছোটবেলার বন্ধু। ও আমাকে জানে, বিশ্বাস করে।
শিরিন: কিন্তু উনি কিন্তু একজন পুলিশও! এখন কী হবে।
নাভিদ শিরিনকে আশ্বস্ত করবে। দূর থেকে সেটা দেখবে জেরিন। জেরিন কাছে আসতে থাকবে।
শিরিন: কিন্তু পুলিশ তো আমাকে থানায় যেতে বলেছে।
নাভিদ: কোনও সমস্যা নেই। তুমি সব বলবে। শুধু তুমি যে সেখানে থাকতে সেটা বলবে না।
শিরিন: পরে যদি তারা জেনে ফেলে।
নাভিদ: জানলে জানবে, কোনও সমস্যা হবে না। তখন বলবে, ভয়ে বলিনি। আর তাছাড়া এই খুনের পেছনে তোমার তো কোনো স্বার্থ নেই। মানে যেটাকে বলে মোটিভ।
শিরিন: তবু, আমার খুব ভয় লাগছে।
নাভিদ: আরে ধুর। আমি আছি না।
জেরিন কাছে আসবে।
জেরিন: কী খুব রোমান্স চলছে।
শিরিন অপ্রস্তুত হাসি। নাভিদ খানিকটা রাগ করলো।
নাভিদ: কাজ কি আজকের মতো শেষ? তাহলে আমরা চললাম।
জেরিন: হাহাহাহ। এত লজ্জা পাওয়ার কী আছে!
নাভিদ বিরক্তভাবে তাকালা জেরিনের দিকে। শিরিনও খানিকটা রাগ। এমন সময় আবার ফোন আসলো শিরিনের ফোনে।
শিরিন পাশে সরে গেলো।
শিরিন: হ্যালো
পুলিশ: ধানমণ্ডি থানা ডিউটি অফিসার মাসুদ বলছি। আপনাকে থানায় আসতেই হচ্ছে ম্যাডাম।
শিরিন: কেন বলুনতো?
পুলিশ: আপনি মিতার বাসায় থাকতেন তাই না? আমাদের কাছে ইনফরমেশন আছে ম্যাডাম।
শিরিন ভয়ে ভয়ে নাভিদের দিকে তাকাবে। নাভিদ জেরিনকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
নাটকের স্ক্রিপ্ট : আমি তুমি সে : দৃশ্য ৫১ থেকে দৃশ্য ৬০
দৃশ্য-৫৪
আগের দৃশ্যের ধারাবাহিকতা। নাভিদ আর জেরিন হাঁটছে। পেছনে খানিকটা দূরে শিরিন।
নাভিদ: দেখো জেরিন। এটা কমপ্লিটলি বাড়াবাড়ি।
জেরিন: বাড়াবাড়ি আমি করছি? প্রথম দিন থেকে দেখে আসছি কারা বাড়াবাড়ি করছে। আমি কিচছু বলিনি এতদিন।
নাভিদ: আরে বাবা কোথায় কোন জায়গায় বাড়াবাড়ি হয়েছে বুঝিয়ে দাও।
জেরিন: তুমি এমন ছিলে না নাভিদ। তোমার মাথা নষ্ট করেছে ওই মেয়ে, না না ভুল বললাম। তুমিই তোমার মাথা নষ্ট করেছো। ছোট কাপড় দেখে..।
নাভিদ: উফফ শাট আপ জেরিন। সিম্পলি শাট ইট আপ।
জেরিন: আমার বলার অধিকার আছে নাভিদ। আজীবন বলে এসেছি।
নাভিদ: তাই বলে যা মুখে আসবে…।
জেরিন: যা মুখে নয়, যা চোখে আসে তাই বলি। তবে পাস্ট ইজ পাস্ট। সামনে যেন আর না..।
নাভিদ: মানে কী! তুমি আবার আমার অভিভাবক হলে কবে থেকে।
জেরিন: কোন দিন ছিলাম না। হ্যাঁ, বলো বলো কবে ছিলাম না। এই শিরিন কয়দিনের? ও তোমার কে? ও তোমার জন্য কী করেছে। ও এখানে কেন এসেছে, তুমি জানো না ? বুঝো না।
নাভিদ: তুমি আসলে কী বলতে চাচ্ছো ঝেড়ে কেশে বলো।
জেরিন: আমি বলতে চাই, তুমি শিরিনের সঙ্গে এত আদিখ্যেতা দেখাতে যেও না।
নাভিদ: এটা আদিখ্যেতা তোমাকে কে বললো। প্রেমও তো হতে পারে।
জেরিন: প্রেম! হুহ। এটাকে প্রেম বলে প্রেমের অপমান করতে যেও না বুঝলে।
নাভিদ: আমি কাকে পছন্দ করবো না করবো সেটা আমার ব্যাপার।
জেরিন: না, সেটা শুধু তোমার একার ব্যাপার হতে পারে না। এতদিন যে তোমার…।
নাভিদ: দেখো আমি এতসব শুনতে চাই না। আমার এসব শুনতে ভালো লাগে না। তুমি আগে পরিস্কার করে বলো তুমি কী বলতে চাও না চাও।
জেরিন: ঠিকাছে বলবো। আজই সব বলবো।
নাভিদ: আমি এখন রুমে গেলাম।
নাভিদ চলে গেলো।
ইনডোর।
রিজোর্টে নাভিদের রুম। নাভিদ ভেতরে ঢুকতেই অবাক হয়ে গেলো। ভেতরে পূর্ণতা।
পমূর্ণতা: হ্যালো নাভিদ। কেমন আছো।
দৃশ্য-৫৫
ইনডোর। নাভিদ পূর্ণতা আর শিরিন।
নাভিদ: (পূর্ণতাকে দেখে) হোয়াট দ্য..। তুই?
পূর্ণ: তুমি ভেবেছো তোমাকে এমনি এমনি ছেড়ে দেবো?
নাভিদ: তুই… ওহহ। আমি সুইসাইড করবো বুঝলি!
পূর্ণ: চলো না.. একসঙ্গেই করি!
নাভিদ: ঠিকাছে তুই আগে কর। আমি পরে।
পূর্ণ: আবার এমনও হতে পারে যে, আমি আগে তোমাকে মেরে ফেললাম, তারপর আমি…।
নাভিদ: সেটাই কর। তোর সঙ্গে প্রেম করার চাইতে মরাই ভালো।
পূর্ণ: ও! ও! বাহ বাহ! আমার সঙ্গে ওসব করতে পারবে, একটুও বাধলো না তোমার। আর প্রেম করতেই যত দোষ!
নাভিদ: দেখ তোর পায়ে পড়ি। যা হয়েছে ভুল হয়েছে।
শিরিন এসে ঢুকলো। তাকে বেশ ভয়ার্ত দেখাচ্ছে। সে কিছু একটা বলতে চাইবে। কিন্তু বাকি দুজনের জন্য বলতে পারছে না।
পূর্ণতা: ভুল! এটা তোমার ভুল! আমার সারা জীবন আর তুমি বলছো তোমার ভুল!
শিরিন: আ.. নাভিদ.. নাভিদ শোনো।
নাভিদ: এক মিনিট। পূর্নতা প্লিজ, তুই ঝামেলা করিস না আর। আর যেটা ভুল সেটা ভুলই। সেটার জন্য তুই কম দায়ী না। আমি শুরু করিনি কিছু। দোষ যদি দিতে হয়, তোরই বেশি।
পূর্ণতা: আমি এত সব বুঝি না। আমি কিচছু বুঝি না। আমি বুঝি তোমাকে।
নাভিদ: কিন্তু আমি তোকে বুঝি না। এখন বল তুই এখানে এলি কী করে। কাকে বলে এসেছিস?
শিরিন: ইয়ে ও আমাকে ফোন করেছিল। আমিই।
নাভিদ: হোয়াট! ওহ, তলে তলে এতদূর!
পূর্ণতা তাচ্ছিল্যের সঙ্গে অন্য দিকে তাকালো।
শিরিন: কিন্তু নাভিদ। একটা জরুরি কথা..।
পূর্ণতা: কী জরুরি কথা এখানে বলো।
নাভিদ: না এখানে না। চলো শিরিন তোমার রুমে চলো।
নাভিদ শিরিনকে নিয়ে অনেকটা জোর করে তার রুমে গেলো। পূর্ণতা পেছন পেছন আসলো। কিন্তু নাভিদ শিরিনকে তার রুমে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো। পূর্ণতা হতভম্ব আহত। ধীরে ধীরে ক্রোধে ফুঁসতে লাগলো সে।
পূর্ণতা: আমি দেখে নেবো, আমি দেখে নেবো।
নাটকের স্ক্রিপ্ট : আমি তুমি সে : দৃশ্য ৫১ থেকে দৃশ্য ৬০
আমি তুমি সে নাটকের সব পর্ব (চিত্রনাট্য)
ami tumi se natok full story
প্রথম খণ্ড দৃশ্য ৫১ থেকে দৃশ্য ৬০
দৃশ্য-৫৬
নাভিদ ও শিরিন। ইনডোর।
শিরিন: পুলিশ আবার ফোন দিয়েছিল। ওরা সব জানে।
নাভিদ: এক মিনিট।
নাভিদ ফোন বের করে কল দেবে। সে ফোনে কথা বলছে। শিরিন দুশ্চিন্তা করছে। নাভিদ কার সঙ্গে কথা বলছে তা শোনা গেল না।
নাভিদ: আমি মাসুদের সঙ্গে কথা বলেছি। ওরা আসলে আশপাশের প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলেই সব জেনেছে। আর ওরা সব জানে। তবে মিতা মারা যাওয়ার সময় যে আমরা সেখানে ছিলাম, তা তারা জানে না। আর মিতার গায়ে মারের দাগ দেখে তারা বুঝতে পেরেছে কারা মেরেছে। আর এটা যে তোমার কাজ নয় সেটাও তারা জানে। তাই আমাদের ভয় নেই।
পূর্ণতা কান পেতে শুনছে সব।
শিরিন: আমরা কোনও ভুল করছি না তো? আমার.. আমার তো মনে হয় শুরু থেকে আমাদের থানায় সব বলা উচিৎ ছিল।
পূর্ণতা: (চোখ কুঁচকে নিজে নিজে) থানা!
নাভিদ: তাহলে আর কোনও কাজই করা হতো না। কাজটাই হাতছাড়া হয়ে যেত। উল্টো খুনের মামলায় জড়িয়ে এখন দুজনকেই হাজতে থাকতে হতো।
পূর্ণতা: খুন! তার মানে নাভিদ বড় ধরনের কোনো বিপদে পড়েছে! নিশ্চয়ই শিরিনের কারণে।
শিরিন: এখন কী করবো। একটা কিছু তো বের করতে হবে।
নাভিদ: ভাবছি। মাসুদের সঙ্গে আলাপ করলাম। ও তেমন কিছু বলতে পারলো না। তবে তোমাকে ওরা সন্দেহ করছে না। ওরা জানে এটা পুরুষেরই কাজ। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এখনও আসেনি। তবে ওরা সন্দেহ করছে কোনও পুরুষকে। মিতার কললিস্ট থেকে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
শিরিন: ভালো কথা। ওই দিন তো তুমিও এসেছিলে!
নাভিদ: হুম। তাই তো!
পূর্ণতার চোখেও টেনশন।
নাভিদ: তবে এটাও ঠিক, আমার সঙ্গে তো তার আগের কোনও সম্পর্ক ছিল না।
শিরিন: তুমি তোমার বন্ধুটার সঙ্গে আরও ভালো করে কথা বলে দেখো। ঘটনা তো গত রাতের। এখনও কিন্তু দেরি হয়ে যায়নি।
পূর্ণতা: আচ্ছা, গতরাতের ঘটনা, আর মেয়েটার নাম মিতা। খবরের কাগজে নিশ্চয়ই কিছু বেরিয়েছে।
নাভিদ: আমার কথা হলো, যত যাই ঘটুক, তুমি সেইফ।
শিরিন: আমারও তাই মনে হচ্ছে। আমার কিছু হবে না। কিন্তু আমার চিন্তা তোমাকে নিয়ে।
পূর্ণতা: ইশশ.. কী দরদ! আমার চিন্তা তোমাকে নিয়ে।
পূর্ণতা চলে যেতে ধরবে। আরশাদের সঙ্গে মুখোমুখি।
আরশাদ: আপনি? কী করছেন এখানে।
পূর্ণতা: আমি নাভিদের ওয়াইফ। আপনি কে?
আরশাদ: ইন্টারেস্টিং। কখনও শুনলামই না।
কথা শুনে নাভিদ শিরিন বের হয়ে আসবে।
আরশাদ: (নাভিদকে) কী ব্যাপার ভাবির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন না যে। হাহাহাহা।
নাভিদ: ভাবি!
পূর্ণতা: এখনও হইনি। হতে যাচ্ছি। আর পরিচয়টা না হয় আমিই করিয়ে দিলাম।
নাভিদ: ভালো কথা তুই এখানে কী করছিলি দাঁড়িয়ে।
আরশাদ: হুমমম।
পূর্ণতা আরশাদের দিকে অনুনয়ের চোখে তাকাবে। নাভিদ আরশাদের দিকে প্রশ্ন নিয়ে তাকাবে।
আরশাদ: আমি মাত্র এসেছি ভাই, আমি কিছু জানি না। আর তা ছাড়া।
নাভিদ: ও আমার কাজিন। মাথায় একটু গণ্ডগোল আছে।
পূর্ণতা: নাভিদ! তুমি মডেলের সঙ্গে দরজা বন্ধ করে রুমের ভেতর… আর আমি পাগল? আমার মাথায় গণ্ডগোল? আমার সঙ্গে এতসব করলে আর শেষে কিনা ছি!
শিরিন নাভিদের দিকে তাকালো।
নাভিদ: কিছুই হয়নি তোর সঙ্গে বুঝলি। কিছুই না। সব তোর কল্পনা। যত্তসব বাজে কথা।
শিরিন চলে গেলো। নাভিদও চলে গেলো।
আরশাদ: আপনি এ রুমে এসে বসুন। জেরিন আসবে একটু পর।
পূর্ণতাকে আরশাদ তার রুমে নিয়ে বসালো। সে নিজেও বের হয়ে গেলো।
আমি তুমি সে নাটকের সব পর্ব (চিত্রনাট্য)
ami tumi se natok full story
প্রথম খণ্ড দৃশ্য ৫১ থেকে দৃশ্য ৬০
৫৭
বিকাল। সৈকত। নাভিদ ও জেরিন। কক্সবাজারের নির্জন সৈকত। কিছু প্রাকৃতিক দৃশ্য্। দূর থেকে দেখা যাবে এক যুবক যুবতী আসছে। জেরিনের নাভিদের হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে একদিকে।
নাভিদ: আহা কোথায় নিয়ে যাচ্ছো।
জেরিন: আগে আসোই তো।
নাভিদ: ওরা কেউ খুঁজে পাবে না তো।
জেরিন: এই জন্যই তো।
নাভিদকে টেনেটুনে একটা চেয়ারে বসাবে জেরিন। দুটো পাশাপাশি চেয়ার। নাভিদ স্বাভাবিক, জেরিন বেশ রোমান্টিক মুডে আছে।
নাভিদ: দেখো এসবের কোনো দরকারই ছিল না। তুমি জানো আমি কী বলবো।
জেরিন: আমি কিছু জানি না।
নাভিদ: উফফ সেই এক কথা।
জেরিন: শোনো। নাভিদ।
জেরিন এগিয়ে এসে নাভিদের কাঁধে হাত রাখবে।
জেরিন: ছোটবেলা থেকে আমি তোমাকে নিয়েই স্বপ্ন দেখে এসেছি। তোমার বাইরে আসলে আমার জীবনে আর কোনও ছেলেও আসেনি। সেটা তুমি ভালো করেই জানো।
নাভিদ: কই আরশাদের সঙ্গে কদিন দেখলাম বেশ…।
জেরিন: হাহাহা। কেন তুমি জেলাস?
নাভিদ: অবশ্যই না। আমার কথা হলো তুমি ওকে পছন্দ করে ফেলো। ও তোমাকে।
জেরিন: নাভিদ! আমি আরশাদের গল্প করতে তোমাকে এতদুর টেনে আনিনি। আমি তোমাকে বলতে এসেছি যে… আমি তোমাকে।
নাভিদ: ওকে, আমি বুঝতে পেরেছি। আর কী বলতে চাও বলো।
জেরিন: (নাভিদের গাল ধরবে দুহাত দিয়ে) তুমি আমার কথা শুনছো? মন দিয়ে শুনছো?
নাভিদ: না শুনছি না। শুনতে চাচ্ছি না। তুমি আমাদের সম্পর্কটা ভাঙতে চাইছো, এটা বুঝতে পেরেছি।
জেরিন: নাভিদ, তুমি শুরু থেকেই জানতে, তোমার প্রতি আমার মনের অবস্থা কেমন।
নাভিদ: আমি এখনও জানি না। সত্যি বলছি।
জেরিন:ওকে.. কিন্তু তুমি সব বুঝো তাই না।
নাভিদ: উফফ। আমি উঠলাম। তুমি আসো।
জেরিন: না আমি পানিতে নামবো। ডুবে মরবো। হিহিহি।
নাভিদ: আবার। এসব রিস্কি ফাইজলামি আমার পছন্দ না। এমনিতে অনেক বড় বিপদে আছি।
জেরিন: ও.. সেটা তো আবার আমাকে বলা যাবে না। তোমার সব গোপন কথা তো শিরিনের সঙ্গে।
নাভিদ: আরে বিপদটা ওকে নিয়ে.. ইয়ে মানে কিছু না।
জেরিন: কী! তার মানে!
নাভিদ: কী?
জেরিন: ও কি প্রেগনেন্ট? সত্যি করে বলো!
নাভিদ: ও মাই গড.. উফফ..আমার মাথা ধরে গেলো। তোমার মাথায় কি এর বাইরে আর কিছু ঘোরে না।
জেরিন:আমি শিরিনকে নিয়ে চিন্তিত না। কারণ দুদিন গেলেই ও তোমাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চলে যাবে। কিন্তু আমি জেরিন কখনও যাব না। আর যদি প্রেগনেন্ট হয়েই যায় তাহলে ঠিকই বিপদে পড়তে যাচ্ছ। তোমার মা কখনও শিরিনকে মেনে নেবে না দেখো।
নাভিদ: শিরিন যার সঙ্গে থাকতো, সেই মেয়েটা খুন হয়েছে।
জেরিন: হোয়াট!
নাভিদ: হুম।
জেরিন: তো এটা ওকে সামলাতে দাও। তুমি এর মধ্যে কেন?
নাভিদ: দেখো, তুমি ভালো করেই জানো কেন আমি এর মধ্যে। আমি ওকে ভালোবাসি জেরিন। তোমাকে না। ও আমাকে দুদিন বাদে ছেড়ে গেলেও বাসবো। ওটা বরং আমার নিজের ব্যাপার।
জেরিন: কিন্তু দেখো ও ঠিকই তোমাকে ছেড়ে চলে যাবে। এক দিনও লাগবে না ওর যেতে। একটা ভালো অফার পেলেই।
নাভিদ: এনাফ! জেরিন এনাফ!
জেরিন কোনও কথা বলবে না। চোখমুখ শক্ত করে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করবে। চোখ বেয়ে তারপরও এক ফোঁটা পানি বের হবে।
নাভিদ চলে যাবে। জেরিন কঠোর দৃষ্টিতে সূর্যাস্ত দেখছে।
৫৮
রাত। রেস্টুরেন্টের খোলা জায়গা। শিরিন ও তানভির খাচ্ছে।
তানভির: তোমাকে আগাতে হবে ধাপে ধাপে। মানে বুঝলাতো? স্টেপ বাই স্টেপ।
শিরিন: হুম। কিন্তু ধাপগুলো তো বুঝতে পারছি না।
তানভির: আজ থেপকে.. ধরে নাও তোমার সব টেনশন আমার। আমি হলাম তানভির.. কিন্তু লোকে আমাকে ডাকে ডন। মানে ফ্যাশন লাইনের ডন। যাদের সঙ্গে এখন কাজ করছো, তাদের দৌড় ওই ফটোশ্যুট পর্যন্তই।
শিরিন: নাহ, তারা আমার জন্য…।
তানভির: যা করছে সেটাকে যথেষ্ট মনে করছো? পেমেন্ট কেমন পাচ্ছো? পাঁচ হাজার? দশ হাজার? আর ফ্রিকোয়েন্সি কেমন? মাসে একটা দুটা বা বড়জোর তিনটা? যে টাকা পাবে সেটা দিয়ে তো একটা দামি ব্র্যান্ডের কসমেটিক্সও কিনতে পারবে না, চলবে কী করে বলো?
শিরিন: হুম। ভুল বলেননি।
তানভির: ভুল সঠিকের বিষয় না। বিষয় হলো প্রতিভা নষ্ট করার। আমি বলবো এদের সঙ্গে কাজ করে করে তোমার প্রতিভায় মরচে ধরে যাচ্ছে।
শিরিন: হাহাহা।
তানভির: মডেলিং বলো, র্যাম্প বলো, নাটক সিনেমা বলো, মোটামুটি সব এক সুতোয় গাঁথা। প্রথম ধাপগুলো একটু কঠিন বটে। একটু না। একটু বেশিই কঠিন বলতে পারো। পরে শুধু উঠবে আর উঠবে। সাঁই সাঁই করে উঠবে।
শিরিন: ধীরে সুস্থেই না হয়।
তানভির: উঁহু। তোমার হাতে আছে আর বড়জোর ১০ বছর। তোমার এখন যা বয়স, আর বছর দশেক ইন্ডাস্ট্রিতে টিকতে পারবে। এরপর আর কেউ তোমাকে খুঁজবে না।
শিরিন: হুম।
তানভির: সময় একদমই নেই। ইনফ্যাক্ট তোমার সঙ্গে যদি আমার বনিবনা না হয়, আমি কালকেই তোমাকে ভুলে যাব। হাহাহা। কিছু মনে করো না। জাস্ট জোকিং। তবে যাই হোক, ফালতু স্বপ্ন আমি দেখাই না। যা হবার হবে। সব চাবি তোমার হাতে।
শিরিন: নাহ.. আপনার কথাই ঠিক তানভির ভাই। কিন্তু আসলে আমি ভাবছিলাম, যে কঠিন পথের কথা বলছেন, সেটা আমি বুঝতে পেরেছি, এর কি কোনও বিকল্প নেই।
তানভির: থাকবে না কেন? অবশ্যই আছে। তোমার ব্যাংকে যদি কোটি কোটি টাকা থাকে, তবে একশটা নাটক বানাও নিজের টাকা খরচ করে। ভালো কাজ করে দেখাও। নিজেই নিজেকে স্টার বানিয়ে ফেলতে পারবে। কোনও ব্যাপারই না। কিন্তু নিজে কিছু করতে না পারলে নো বিকল্প। কার এত ঠেকা পড়েছে বলো তোমাকে এমনি এমনি স্টার বানিয়ে দিতে।
শিরিন: হুম। বুঝতে পেরেছি।
তানভির: শুধু পয়সা নয়, কেউ এমনি এমনি সময়ও দেবে না। তুমি ভাবো। ভেবে ভেবে সময় নষ্ট করো। হেহেহে। আমি ইনফ্যাক্ট আজ রাতই আছি। কাল সকালে আবার ঢাকায় চলে যাব। সেখানে আরও অনেক অনেক মডেল আমার জন্য অপেক্ষায় আছে।
ফোন আসলো তানভিরের।
তানভির: হাই সুইটহার্ট। না না আমি কালকেই আসবো। জ্যাক অ্যান্ড জোনসেরটা তোমার জন্য কনফার্ম করা হয়েছে। আর জেলিনারটা মুম্বাইতে হবে। ডিজাইনার জেলিনা। হ্যা হ্যা। মাধুরির শাড়ির লাইনেও তোমার নাম আছে। তবে এখনও.. না না চিন্তার কারণ নেই। আমি আছি না।
শিরিন: মাধুরি? মানে..?
তানভির: হ্যা মাধুরি দিক্ষিত। ওর আবার শাড়ির বিজনেস আছে জানো তো। ওটা নিয়ে একটা শো হবে মুম্বাইতে। বাংলাদেশ থেকে ইরিনাকেই পাঠাচ্ছি।
শিরিন: ইরিনা মানে সুপারমডেল ইরিনা?
তানভির: বাহ, তুমি দেখি চিনো সবাইকে। খোঁজখবর রাখা হয় ভালোই।
শিরিনের চোখ চকচক করবে।
তানভির: ঠিকাছে। আমাকে আবার উঠতে হচ্ছে। আর তোমার কাছে আমার মোবাইল নম্বর আছে, হোটেলের রুম নম্বরও আছে। বাকিটা তোমার ব্যাপার।
শিরিন খাওয়া শেষ করে উঠলো। তানভিরের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করলো। সে চিন্তিত। ভাবছে। তানভির তার মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু বোঝার চেষ্টা করলো।
শিরিন হাঁটছে একা একা। রাত।
শিরিন ভাবছে: কী করবো আমি। তানভির যা বলেছে তা তো সত্যি। অক্ষরে অক্ষরে সত্যি। আমি কি এই ক্যারিয়ার ছেড়ে দেবো। না, তা কি করে হয়। না কিছুতেই না। আমি সুপারস্টার হবোই। মডেল আমাকে হতেই হবে। শিরিন পেছনে তাকালো। সামনে ধীরলয়ে হাঁটছে। শিরিন দাঁড়াবে। কনফিউজড দেখাচ্ছে।
আমি তুমি সে নাটকের সব পর্ব (চিত্রনাট্য)
ami tumi se natok full story
প্রথম খণ্ড দৃশ্য ৫১ থেকে দৃশ্য ৬০
নাটকের স্ক্রিপ্ট : আমি তুমি সে : দৃশ্য ৫১ থেকে দৃশ্য ৬০
৫৯
আগের দৃশ্যের ধারাবাহিকতা। রাত। নাভিদ শিরিন। আউটডোর।
শিরিন একা দাঁড়িয়ে ভাবছে। এমন সময় নাভিদের ফোন।
নাভিদ: কোথায় তুমি। ডিনার খাবেনা। তোমার সঙ্গে আমার জরুরি আলাপ আছে।
শিরিন: আমি ডিনার করে ফেলেছি।
নাভিদ: কোথায়, কার সঙ্গে!
শিরিন: তানভির ভাই খাওয়ালো।
নাভিদ: শিরিন তুমি কোথায়, রিসোর্টের সামনে আসো। তোমার সঙ্গে পারসোনাল কথা আছে।
শিরিন: কিন্তু, ইয়ে মানে। নাভিদ ভাই আমাকে একটু হোটেল শ্যামলীমায় যেতে হতো। পরিচিত একজন আছে। দেখা করার জন্য।
নাভিদ: আমি বেশি সময় নেবো না। জাস্ট কিছু কথা।
শিরিন: কাল বললে হয় না, বা ফোনে?
নাভিদ: না, সামনা সামনি বলতে হবে। কথা শেষ হলে তুমি কার সঙ্গে দেখা করবে কোরো।
শিরিন: আচ্ছা ঠিকাছে। আসছি।
রাত। হোটেলের সামনের সৈকত। গর্জন শোনা যাচ্ছে। নাভিদ দাঁড়িয়ে আছে। শিরিন আসলো।
নাভিদ: শিরিন। এতক্ষণ লাগলো তোমার।
শিরিন: আমি একটা কাজ পেয়েছি।
নাভিদ: কাজ? কার কাজ, কীসের কাজ।
শিরিন: আছে একটা কোম্পানির। আগে এটা শেষ হোক। তারপর। এখনও ডেট ফাইনাল হয়নি।
নাভিদ: ও। তারমানে তুমি এখন.।
শিরিন: আমি এখন কী নাভিদ।
নাভিদ: না কিছু না। আমি ভেবেছিলাম, আমরা একসঙ্গে।
শিরিন: আমরা একসঙ্গে কাজ তো করছিই। কিন্তু আমাকে তো আরও আরও কাজ করতে হবে তাই না। বাই দ্য ওয়ে কী বলার জন্য ডেকেছো।
নাভিদ: তোমার কাছ থেকে একটা ফাইনাল উত্তর আমার চাই।
শিরিন: ফাইনাল উত্তর? কিন্তু প্রশ্নটা কী?
নাভিদ: তুমি বুঝতে পারছো না? আমি কী বলতে চাই?
শিরিন: না নাভিদ। আমি আসলেই।
নাভিদ: শিরিন আমি তোমাকে ভালোবাসি। আই লাভ ইউ।
শিরিন: আ.. হাহ। আচ্ছা। আচ্ছা। এতক্ষণে বুঝতে পেরেছি। কিন্তু কিন্তু নাভিদ। সত্যি বলতে কি, আমি এসব নিয়েই একদম ভাবছি না।
নাভিদ: তোমাকে এখন কিছু ভাবতে হবে না। একদমই না। তুমি যখন ভাববে.. তখন না হয়।
শিরিন: হাহাহ। এভাবে কি আর এসব হয় বলো? আমি আসলেই বুঝতেই পারছি না তোমাকে আমি এখন কী বলবো। তোমাকে আমি এখন আসলে ভালো বন্ধুই ভাবি। তাতে আমার আসলে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু তুমি যেটা চাচ্ছো, সেটা অনেক গভীর একটা বিষয়। আমি সেটা ভাবার জন্য এখনও তৈরি না।
নাভিদ: ওই তো, যখন তৈরি হবে।
শিরিন: ততদিনে কখন কে কোথায় থাকি…।
নাভিদ: আমি তো তোমাকে ছাড়বো না। আই মিন, আমি তোমাকে হারাবো না। তুমি যেখানেই থাকো আমি আছি।
শিরিন: হাহাহা। সত্যি বলতে কি তোমাকে এখনই আমার প্রেমিকের মতোই মনে হচ্ছে। তবে আসল ব্যাপারটা হলো, ওই প্রেম প্রেম ফিলিংসটা কেমন সেটা আমি এখনও টের পাচ্ছি না। আমার স্বপ্ন একটাই। সেটা তুমি জানো। আমি অনেক বড় স্টার হতে চাই। আমি সুপারমডেল হতে চাই।
নাভিদ: আমি তোমাকে বানাবো। মানে আমি তো আছি।
শিরিন: আমি চাই না, কেউ আমাকে বানাক। আমি নিজেও চেষ্টা করে যাব। আর হ্যাঁ, তোমাদের সঙ্গে আমার কাজের শুরু। এটা আমার জন্য অনেক বড় একটা সুযোগ ছিল। কিন্তু আমাকে তো আমার মতো করে একটা প্ল্যান করতে হবে।
নাভিদ: ভালো কথা তুমি কি ওই তানভির না কী যেন নাম, তার সঙ্গে তোমার কোনও কথার দরকার নেই। লোকটা কিন্তু সুবিধার না।
শিরিন: তুমি কী করে বুঝলে?
নাভিদ: আমি দেখেই বুঝতে পারি।
শিরিন: ওরে বাবা। তোমার অন্তদৃষ্টিও আছে দেখছি। তাহলে জেরিনের ভালোবাসাটা ধরতে পারো না কেন?
নাভিদ: ওহ। কিন্তু আমি ওকে কোনোদিন ওইভাবে দেখিনি।
শিরিন: (ঘড়ি দেখবে) আমি যাই।
নাভিদ: তুমি কোথায় যাবে।
শিরিন: বললাম না, আমার পরিচিত একজন।
নাভিদ: আচ্ছা আচ্ছা। কিন্তু আমার প্রশ্নের উত্তর আমি।
শিরিন: আমি জানি না নাভিদ। তোমাকে আমার ভালো লাগে, তোমার মধ্যে.. তোমার মধ্যে একটা ছেলেমানুষী আছে। ওটা আমার ভীষণ ভালো লাগে। এর চেয়ে বেশি এখন…।
নাভিদ: (এগিয়ে এসে শিরিনের হাত ধরবে) প্লিজ.. শিরিন। প্লিজ।
শিরিন হাত ছাড়িয়ে নেবে।
শিরিন: আমি আসি নাভিদ।
৬০
রাত। জেরিন সমুদ্রের পাড়ে বসে আছে। আরশাদ এসে বসবে পাশে। জেরিন মদ খাচ্ছে।
আরশাদ: বাহ.. দারুণ তো। তুই এসব খাওয়া শিখলি কবে।
জেরিন: কেন, মেয়ে হয়েছি বলে খেতে পারবো না।
আরশাদ: কই, আমি তো ছেলে হয়ে খাচ্ছি।
জেরিন: কিছু বলবি? না বললে যা। আমি একটু একা থাকতে চাই।
জেরিনের গলা একটু জড়িয়ে আসছে।
আরশাদ: তোর মন খারাপ তা বুঝতে পারছি। কিন্তু এখানেই তো সব শেষ নয়।
জেরিন: তো? কী বলতে চাস তুই? এখন তোর সঙ্গে প্রেম করবো। নাভিদ সুন্দরী মডেলের পেছনে ঘুর ঘুর করছে বলে এখন আমাকেও তোর সঙ্গে প্রেম করতে হবে?
আরশাদ: হাহাহা। তুই ভালোই মাতাল হতে পারিস। এটা ভালো বটে। সবাই মাতাল হতে পারে না।
জেরিন: আমি মাতাল হইনি! যা বলছি সজ্ঞানে বলছি। তুই আমাকে ভালোবাসিস না বল?
আরশাদ: আশ্চর্য, ভালোবাসবো না কেন? অবশ্যই ভালোবাসি। তবে আমার প্রকাশটা ভিন্ন। ভালোবাসা এমন একটা জিনিস, যেটা আসলে তুই চাপা রাখতে পারবি না। আর যেটা চাপা রাখা যায়, সেটা আসলে ভালোবাসাই না।
জেরিন: জ্ঞান দিবি না একদম। ভালো লাগছে না।
আরশাদ: আচ্ছা, ঠিকাছে। দিবো না। পাশে বসে থাকি? ভালোবাসি যেহেতু।
জেরিন হাসলো কিছু বললো না।
আরশাদ: অনেকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে, আমার নিজেরই অস্বস্তি লাগছে। উঠবি?
জেরিন: নাহ। কে তাকিয়ে আছে ডাক তাকে। এই যে ভাই শোনেন? আমার দিকে তাকিয়ে আছেন কেন? তাকিয়ে থেকে কী হয় বলেন তো!
দুয়েক জন যারা তাকিয়ে ছিল, তারা চলে গেল। আরশাদ তাদের দিকে অপরাধীর মতো করে হাসলো।
জেরিন: তুই একটু স্ট্যাচু হয়ে বসে থাকবি?
আরশাদ: কেন?
জেরিন: আমি একটু তোর কাঁধে মাথা রাখবো। একজন সত্যিকারের প্রেমিকের কাঁধে মাথা রাখি। এটাকে আবার প্রেম টেম ভেবে ভুল করিস না। ভুল করলে পস্তাবি।
আরশাদ: হাহাহা। ওকে, রাখ রাখ।
জেরিন আরশাদের কাঁধে মাথা রাখবে। আরশাদ আস্তে করে তার হাতের গ্লাসটা সরিয়ে নেবে। ওর ব্যাগ থেকে বোতলটা বের করে ভেতরে থাকা মদ বালিতে ঢেলে দেবে।
জেরিন: আমি সেই ছোটবেলা থেকে তাকে আমার বর ভেবে এসেছি। বড় হয়ে ভাবিনি যে ও আমাকে অন্য কিছু ভাববে। আমি নাকি তার শুধু বন্ধু।
আরশাদ: হুম
জেরিন: (জড়ানো গলা) অথচ সেই কলেজ থেকে ওদের বাসায় আমার আসা-যাওয়া। ওর মা আমার মায়ের মতো।
আরশাদ: আমি সবই জানি। এখন মনে হয় ওঠা দরকার। এখানে ঘুমিয়ে গেলে আবার বিপদ। তোর অনেক ওজন। আমি তোকে তুলে নিয়ে যেতে পারবো না।
জেরিন: হেহেহে। আমি ঘুমাবো। সমুদ্রে ঘুমাবো। যাই সমুদ্রে যাই। সমুদ্র আমাকে নাম ধরে ডাকছে। জেরিন.. জেরিন.. ও জেরিন।
আরশাদ: চল চল উঠ। সমুদ্রে যাই চল।
দুজন উঠবে। জেরিন সমুদ্রের দিকে যেতে চাইবে। আরশাদ তাকে উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দেবে। আরশাদ তাকে জড়িয়ে ধরে ধরে রিসোর্টের রুমের দিকে নিয়ে আসছে।
আরশাদ: সমুদ্র এই দিকে চল।
জেরিন: তুই অনেক পাজি। তুই অনেক ভালো। তোর অনেক ভালো একটা মেয়ের সঙ্গে বিয়ে হবে।
আরশাদ: হয়েছে। থাম। আমার বিয়েই করা লাগবে না।