মো আবুল কালাম: ভবিষ্যতে মহান হওয়ার সম্ভাব্য, সম্ভাবনাময় বর্ণচোরা ‘আরিফ’ সম্পর্কে আমার শালা হয়। তার বয়স বাড়েনা, তার মুখ মন্ডলের পশম সমূহ বিসর্জন দিয়ে ১৫ বছরের বালক বলে দিব্যি চালিয়ে দেয়া সম্ভব, যদিও তার বয়স ২৫!
সে অনাহারে না থাকলেও তাকে মঙ্গাপিড়িত এলাকার ক্ষুধার্ত বলে চালিয়ে নিতে কারো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। আকৃতি বা প্রকৃতি যেকোনভাবেই সে বয়স, পেশা, জন্ম বা পড়াশোনা সবকিছু লুকানোর সকল বৈশিষ্ট্যই তাহার বাহ্যিক আবয়বে বিদ্যমান। বর্ণচোরা শব্দটা তার জন্য আবিষ্কার হয়েছিল বললে শব্দটাকে যথার্থ মূল্যায়ন করা হবে বলে অন্তত আমার মনে হয়।
এই চোরা (চোরা শব্দটি সম্পর্কের খাতিরে আমার জন্য প্রযোজ্য , আপনারা পড়ুন বর্ণচোরা) তার পরিবারের বড় সন্তান, মাস্টার্স ফাইনাল শেষ হতে মাস কয়েক অবশিষ্ট আছে। সে এখনো নিজের দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত হতে পারেনি। তার পড়াশোনা ও আনুষাঙ্গিক খরচের জন্য মা-বাবা বা ছোট ভাইয়ের উপর অনেকটা নির্ভরশীল।
তাকে যতই বলি নিজে কিছু করার চেষ্টা কর, পরিবারের হাল ধরো। সে মলিন চেহারাটাকে আরো মলিন করিয়া বিমর্ষতায় ঢেকে দেয়।মনে হয় সে মনে কষ্ট পেয়েছে। তার চেহারার মলিনতার সাথে লজ্জা মিশ্রিত হয়ে নতুন রেসিপি তৈরি করে, সে কারণে লজ্জা পায় অকারণেও লজ্জা পায়।আমার ধারণা এই লেখাটা পড়ার সময় তার চেহারায় লজ্জা মিশ্রিত মলিনতা আবারো দৃশ্যমান হবে।

সে প্রায়ই ভাবে তাকে কিছু একটা করতেই হবে কিন্তু কি করা উচিত তা সে ভেবে পায়না।
তার এই স্বভাবের আমার দুইজন আত্নীয় আছে তারাও প্রায় ভাবতো তাদের কিছু করতে হবে। তাদের একজন ভাইয়ের দয়ায় অন্যজন নিজ গুনে কিছু করেছিল, যদিও জীবনের মধ্য বয়সে এই দুইজনই বর্তমানে বেকার।
আরিফ চাকরির চিন্তা করে কিন্ত কখনো কোন চাকরির পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে এমনটা কেহ শুনেনি। সে ব্যাবসা করবে কিন্ত তার কোন পুঁজি নেই।
এদানিং সে সিরিয়াস তাকে কিছু একটা করতেই হবে! কেহ পরামর্শ দিলে তার বর্ণচোরা মুখ মন্ডল মোবারক মলিন থেকে মলিনতর হয়ে যায়, পাশে সে কষ্ট পায় তাই আমি দুলাভাই হয়ে তাকে কটু কথা কইতে পারিনা।
কিন্ত তাকে কিছু একটা করতেই হবে, সে সিরিয়াস! অনেক ভাবিয়া সে তরকারির মশলা অনলাইনে বিক্রি করার একটা প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। যদিও সামনে ঈদুল ফিতর কয়েকদিন পর মানুষ কিনবে পোশাক সে বেচতে চায় পরের ঈদের অর্থাৎ কোরবানির ঈদের উপকরণ মশলা।
তাও আমি কটু কথা কইতে পারিনা কারণ সে আমার শালা। শালাকে দুলাভাইয়ের কটু কথা বলা মানা।
আমি তার কথায় সায় না দিলে তার চেহারা মোবারক আবারো মলিন হতে পারে তাই আমি চুপ মেরে থাকি।
তাকে কিছু একটা করতেই হবে!
তার ছোট ভাই সরকারি চাকরি করে কিছুদিন পর সে বিয়ে করতে চাইবে তখন সে কি করবে সে কিভাবে ঠেকাবে এই বিয়ে। আবার তার একমাত্র বোনও বিয়ের উপযুক্ত: এতে অবশ্য সে সম্মানহানীর কিছু দেখেনা। ছোট বোনের বিয়ে বড় ভাইদের আগে হওয়ার মধ্যে অসম্মানজনক কিছু তার গোচরাভূত হয়নি। এটা হল এই দেশে মেয়ে হবার সুবিধা।
যত সমস্যা তার বিটকেল বেশরম ছোট ভাই, সে প্রায়শই বিয়ে করে ফেলার হুমকি দিচ্ছে এতে শালার চেহারা আবারো মলিন হয়।
এই অত্যাচার থেকে বাচার জন্য সে প্রবাসী হতে চায় এবং এই জীবনে সে বাংলার আলো বাতাস আর না নেয়ারও পরিকল্পনা করে যাচ্ছে কিন্ত প্রবাসী হওয়ার মত অর্থ তার নাই। সে আরো হতাশ হয়ে কিছু একটা করার চেষ্টা করেই যাচ্ছে।
এর মধ্যে সে ৩ হাজার টাকা বেতনের একটা চাকরি অবশ্য করেছিল পরে সেটা আর থাকেনি এখন ৬ হাজার টাকার বেতনে চাকরি করে যাচ্ছে এগুলো তার সফলতার কয়েকটি দৃস্টান্ত।
তার সফলতার পলকে ইদানিং আরেকটা পলক যুক্ত হয়েছিল যদিও সে কৃতিত্ব মাত্র সপ্তাহ খানেক টিকেছিল। সে রাত নয়টার দিকে চট্টগ্রাম শহরের জিইসি মোড়ে দাঁড়িয়েছিল, একটা ৮/১০ বছরের টোকাই চলন্ত রিকশার এক যাত্রীর মোবাইল নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছিল। দৌড়ে পালাতে গিয়ে উক্ত টোকাই আমার শালার প্রতি দয়া পরববশত তাকে গৌরবান্বিত করার জন্যে তাহার সামনে হোচট খেয়ে পড়ে গেল। এই বিরত্বের সুযোগ কি আর হাত ছাড়া করা যায়? যেইনা মাটিতে পড়া, শালা আমার বীরের বেশে তাহাকে ধরতে গেলে টোকাই বেচারার প্যান্ট খুলে গেল।ইত্যবসরে আশপাশের লোকজন আসিয়া তাকে আটকাইয়া ফেলায় রিকশা যাত্রীর মোবাইলটা রক্ষা পাইলো। বাসায় এসে তার কি খুশি! সে তার বোন ভাগিনাদের এই বীরত্বের কাহিনী বলে হেসেই যাচ্ছিল।
তার জীবনে হাসির ঘটনা আমার জানামতে খুব বেশী নাই। কিন্ত আমি বিশ্বাস করি উপরওয়ালা দয়া করে তাকে একটু হাসার উপকরণ উপহার দিয়েছে, সে ছিনতাইকারীকে আটকিয়ে মোবাইল উদ্ধার করতে পারবে এটা আমি তখনও বিশ্বাস করিনি এখনো করিনা।
তার কপাল আবারো মন্দ! তার এই আনন্দ আজকে আবার বিষাদে পরিণত হয়েছে, আজকে তাকে আবার ছিনতাইকারীরা ধরেছিল, শুনেছি তার বসের সুবাধে রক্ষা পেয়েছে।
যাহোক তাকে কিছু করতেই হবে। অবশেষে আজকে আমাকে জানালো যে, আমার পরিচিত কেহ থাকলে যেন হেল্প করি যাতে সে এই ঈদে অনলাইনে পাঞ্জাবি বিক্রি করতে পারে।
তার ভাবনাটা আমার কাছে যৌক্তিক মনে হল। তাই আমার এক পরিচিতকে বলে দিয়েছি যাতে তাকে হেল্প করে, বাকিটা তার সামর্থ্যের উপর নির্ভর করবে।
যে ভবিষ্যতে করবে আমি তার সাথে নাই কারণ এই ভবিষ্যৎ কখনো আসেনা। যে কিছু করার জন্য সম্পূর্ণ আমার বা অন্য কারো উপর নির্ভরশীল আমি তার জন্যও নাই কারণ সম্পূর্ণভাব অন্যের সহযোগিতা নিয়ে ব্যাবসা হয়না। যে নিজ থেকে এক কদম এগিয়ে যায় আমি তাকে পিছন থেকে ধাক্কা দিয়ে আরেক কদম সামনে ঠেলে দিতে প্রস্তুত আছি।
তথাপিও অগ্রিম শুভকামনা রইল সম্ভাব্য অনলাইনের পাঞ্জাবি বিক্রেতা বর্ণচোরা আরিফের জন্য।