নাটক: বাল্যবিয়ে ও এর কুফল
চরিত্র: সুলতানা (২২), রিনির মা, রিনি ও তার স্কুলের ম্যাডাম
দৃশ্য-১ স্কুলের শব্দ। ছেলেমেয়েদের কথাবার্তা। খেলা।
সুলতানা: এই রিনি। কীরে মনমরা ক্যান। ক্লাস করবি না?
রিনি: না সুলতানাবু। আজকে থেইকা খেলাধুলা বন্ধ।
সুলতানা: ক্যান, তোর অসুখ হইসে? পায়ে ফোসকা পড়সে?
রিনি: বাড়ি থেকে নিষেধ আছে।
সুলতানা: ঘটনাটা কী?
রিনি: ঘটনা কওয়া যাইব না। লজ্জার বিষয়।
সুলতানা: কী ঘটনা আমারে বল। কোনও পোলা তরে ডিসটার্ব করে? ইভ-টিজিং করে? সোজা পুলিশে ধরায়া দিবো।
রিনি: না। কেউ ডিসটাব করে না। আমি যাই। আমার কিছু ভালা লাগতেসে না।
সুলতানা: আজব মাইয়া। এই বয়সে এত টেনশন কীয়ের। তোর বয়সে তো আমি বান্দরের মতো লটকন গাছে
দৃশ্য-২ রিনির বাড়ি। রান্নাঘর। রান্নার শব্দ।
রিনির মা: মুখ এমন বান্দরের মতো করে রাখবি না।
রিনি: মুখ কীসের মতো কইরা রাখমু?
মা: মুখটা পাখির মতো কইরা রাখ। লক্ষী আম্মা আমার। তোরে দেখতে যেন ময়নার লাহান লাগে।
রিনি: (রাগ) ময়নার মতো লাগলে কী হইব। কাজটা তো অবৈধ।
মা: ওমমা! ১৩ বছরের পুচকি, আমারে আইন কানুন শিখাস? আমারে আদালত দেখাস! আমি এমনে এমনে বুড়া হইসি!
রিনি: তুমিই তো কইলা ১৩। ১৩ বছরে কারও বিয়া হয়?
মা: কিডা কইসে হয় না? তোর বান্ধবী সাবিনার হইসে না? ভুইলা গেছস?
রিনি: মা। সাবিনা মইরা গেছে।
মা: মরণ কপালে থাকলে কেউ ঠেকাইতে পারে? বাচ্চা হইতে গিয়া এমুন অনেকে মরে। সব কপাল। দোষ হয় বিয়ার। খবরদার কইলাম, বিয়ার কথা কাউরে কবি না। কেউ যাতে না জানে।
রিনি: মা, আমাদের স্কুলের ম্যাডাম কইসে…।
মা: চুপ! ওইসব ম্যাডাম ফ্যাডামের কতা আমারে হুনাইবি না। ম্যাডাম তোরে ভাত রাইন্ধা খাওয়ায় না। আমি খাওয়াই।
রিনি: আমি বিয়া করুম না।
মা: (প্রচণ্ড রেগে যাবে) তোরে আইজ (হাড়ি পাতিল পড়ার শব্দ)
রিনি: ওমা ওমা।
রিনির মা: (চিৎকার করে) কদিন পর জামাইর বাড়ি যাবি। সুখের সংসার করবি। তখন তো আমার খবর নিবি না। তুই এখখন গোসল টোসল কইরা শাড়ি পিন্দন শিখবি। সারাদিন খালি ফরক পইরা আর ঘুরন লাগতো না।
(রান্নার হাঁড়ি পাতিলের শব্দ। দরজা খোলার শব্দ)
দৃশ্য-৩
(পাখির ডাক। সকাল। রিনি হাঁটছে। সুলতানার সঙ্গে দেখা)
সুলতানা: কীরে, তোর ঠ্যাং তো দেখি ভালই আছে। এখন কি গাছে উঠতে পারবি? চল ওই আমগাছে উডি।
রিনি: মায়ে দেখলে আবার মারবো।
সুলতানা: একবার মাইর খাইয়া ফেলসিস নাকি।
রিনি: হ।
সুলতানা: ক্যান মারসে আমারে কবি না?
রিনি: না। কইলে মায়ে মাইরা ফেলবে।
সুলতানা: তুই দেহি শাড়ি পিনছোস। ঘটনা কী।
রিনি: ঘটনা কিছু না। বিয়ার আগে..
সুলতানা: কী কইলি।
রিনি: কিছু না। মন চাইসে তাই পরসি।
সুলতানা: তোর বিয়া হইব! এই জইন্য তুই স্কুল বন্ধ দিসোস.. শাড়ি পিন্দা ঘুরতেসিস। বিরাট মাইয়া হইয়া গেসিস।
রিনি: মায়ে বিয়া দিব কয়।
সুলতানা: আমি ডেনজার সুলতানা থাকতে তোর মায়ে তোরে বিয়া দিতে পারবো? জীবনেও না।
রিনি: কী করবা তুমি।
সুলতানা: তোর মায়েরে আমি পুলিশে দিমু।
রিনি: মায়েরে পুলিশ ধইরা নিয়া গেলে আমি কার কাছে থাকুম। আমার তো বাপ নাই।
সুলতানা: সেটাও তো চিন্তার কথা। তা বিয়ার দিন তারিখও ঠিক হইয়া গেছে নাকি!
রিনি: জানি না।
সুলতানা: এখন একটা কিছু তো করন লাগবো।
দৃশ্য-৪: সুলতানা, স্কুলের ম্যাডাম ও রিনির মা
সুলতানা: খালা দরজা খোলেন।
রিনির মা: কে?
সুলতানা: আমি সুলতানা, পুলিশ নিয়া আসছি। দরজা খোলেন।
রিনির মা: পুলিশ! আমি কী করসি! ও রিনি।
সুলতানা: রিনির বাল্যবিবাহ দিতেছেন শুনলাম।
(দরজা খুললো রিনির মা।)
রিনির মা: পুলিশ, পুলিশ কই!
স্কুলের ম্যাডাম: ও আসলে আমাকে নিয়ে এসেছে। আমি রিনির স্কুলের আপা। আপনার সঙ্গে কথা বলতে এসেছি।
রিনির: ওহ। কী ডরান ডরাইসিলাম। আসেন আপা বসেন।
সুলতানা: আপা যা যা বলতে মনযোগ দিয়া শুনবেন খালা।
রিনির মা: কিন্তু আমারে এমুন ডর দেখাইলা কেন।
ম্যাডাম: ও ভয় দেখালেও আপনি যে কাজ করতে যাচ্ছেন, তাতে কিন্তু পুলিশ আসবে। ধরেও নিয়ে যাবে আপনাকে। এমনকি আপনার দুই বছরের জেলও হতে পারে।
রিনির মা: অ্যাঁ, এসব তো জানি না।
সুলতানা: পঞ্চাশ হাজার টেকা আছে খালা?
রিনির মা: পঞ্চাশ হাজার! কী কও।
সুলতানা: কারণ শুধু জেল না, এই বয়সে রিনির বিয়া দিলে আপনার পঞ্চাশ হাজার টেকা জরিমানাও হইবো। টেকাটা রেডি রাইখেন। অবশ্য টাকা না থাকলে আরও তিন মাস জেল খাটন লাগবো।
রিনির মা: ও আল্লাহ। কী কথা কইতাসো।
ম্যাডাম: আপনি রিনিকে এখন বিয়ে না দিয়ে স্কুলে পাঠান। একটু কষ্ট করে ওকে পড়ালেখা করতে দিন। তাছাড়া বাল্যবিয়ের ফলে মেয়েদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যর খুব ক্ষতি হয়।
রিনির মা: কী ক্ষতি। বিয়ার আবার ক্ষতি কী?
ম্যাডাম: দেশে এমনিতেই সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে বছরে পাঁচ হাজারেরও বেশি মা মারা যাচ্ছে। অল্প বয়সে মা হলে তো এই ঝুঁকি আরও বেশি। এখন আপনি বলুন, মেয়ের জীবন বড় নাকি তাড়াতাড়ি বিয়ে?
রিনির মা: কী কন আফা! মাইয়ারে দরকার হয় বিয়াই দিমু না। তবু আমার রিনি বাঁইচা থাকুক।
সুলতানা: সময় হোক। তারপর মেয়ে নিজেই ঠিক করবো বিয়া কবে করবো না করবো। আমি তো ঠিক করসি, অনার্স পাশের আগে বিবাহ টিবাহ করবো না।
রিনির মা: মা সুলতানা, তুমি আবার থানায় যাইও না কইলাম।
সুলতানা: এখন আর থানায় যাওন লাগে না খালা। ট্রিপল নাইনে একটা কল দিলে পুলিশই চইলা আসবো।
রিনির মা: না না। আমি বুঝতে পারসি। রিনি ও রিনি, এদিকে আয়। ডরাইস না মা। আমার ভুল হইয়া গেছে।