Monday, March 17

তসলিমা নাসরিনের কবিতা : যৌবন

তসলিমা নাসরিন
তসলিমা নাসরিনের কবিতা : যৌবন

যৌবন

গোটা যৌবন একাই কাটিয়েছি।
এখন আবার হঠাৎ একা লাগবে কেন আমার!
যদি লাগেও, ও মনের ভুল।
অথবা হয়তো শরীরের ভুল!
যাকে তাকে স্পর্শ করিনি গোটা যৌবন,
কেঁচোর মতো গুটিয়ে থাকতে কেঁচোও জানে না আমার চেয়ে বেশি!
গোটা যৌবন একা একা গেছে,
পুরুষ ডিঙিয়ে ডিঙিয়ে দ্রুত দৌড়ে গেছি ঘরে।

কাঙ্খিত দূরত্বে আজ মনে হয় পড়ে আছি হাজার বছর একা,
মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে বেরোই,
একটু ঝঞ্ঝাট বাধুক কোথাও, দেখি,
কেউ যদি ঠেলাঠেলি ভিড়ে হাতদুটো ধরে, না হয় ধরুক।
কেউ যদি গায়ে গা ঠেকিয়ে বসে, না হয় বসুক।
আচমকা কী জানি কী মনে করে চুমু খায় যদি, খাক।
অসাবধানে বুকে যদি হাত লাগে কারো, না হয় লাগুক।
এ শুধু ভাবাই সার।
অভ্যেসের দোষে এখনও খেঁকিয়ে উঠি ত্রিসীমানায় ভিড়তে চাইলে কেউ।

গোটা যৌবন একা পার করে অভ্যেসের দোষে একাই পড়ে আছি একা একা।
নাকি গুণে? অভ্যেসের?
মাঝে মাঝে ভাবি,
না হলে ছিঁড়ে খেতো একশ ধর্ষক,
না হলে ভুলে যেতে হতো স্বাধীনতা কার নাম।
না হলে যাপন করতে হতো সেই জীবন যে জীবন আসলে আমার জীবন নয়।

গোটা যৌবন একাই কাটিয়েছি,
এ আমার দোষ নয়।
এ দোষ আমার নয়।
এ আমার স্বপ্ন ছিল না কোনোদিনই,
স্রোতের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হয়েছে আমাকে ধীরে ধীরে।
আজ না হয় বলিই সে কথা,
পুরুষই ছিল শুধু চারপাশে, মানুষ ছিল না।

মানুষ মানুষ করে এখনও পুরুষের ঘন বনে আমার অশরীরী শরীর দৌড়োয়।
এখনও অমাবস্যার রাতগুলোয়।
এত কিছু মেলে, মানুষ মেলে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *