লেখক: মিশক আল মারুফ
আমার নতুন গার্লফ্রেন্ড তিথির সাথে আজ দেখা করতে যাচ্ছি। এই নিয়ে আমার উত্তেজনার শেষ নেই কেননা এখন পর্যন্ত যতগুলো মেয়েকে পটিয়েছি তার থেকে তিথির মতো সুন্দরী মেয়ে আর দুটো নেই।
তিথির সাথে আমার পরিচয়টা গত একমাস যাবৎ ফেইসবুকের কল্যাণেই। মূলত আমার ফেইক আইডি দিয়েই ওর সাথে পরিচয়। এখন অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে যে আসল প্রোফাইল বাদ দিয়ে কেনো আমি ভুয়া আইডি দিয়ে প্রেম করছি? এর উত্তরটাও বেশ সহজ, মূলত আমার চেহারা তেমন একটা ভালো না তাছাড়া গায়ের রংটা কালো না হলেও বেশ শ্যামবর্ণের। অপরদিকে তিথির প্রোফাইল ঘেটে আমি ওর যতগুলো ছবি দেখেছি তাতে আমার মনে হয়েছে ওর চেহারায় একটু খানি তামিল নায়িকাদের রেশ বয়ে গেছে। যেমনি ধবল সুন্দর ওর শরীর তেমনি চেহারার সুনিপুণ কারুকার্য।
অপরদিকে আমার প্রোফাইলে দেওয়া ছিল এক সুদর্শন পুরুষের বেশ কয়েকটি ছবি। আমার যতটুকু ধারণা তিথিও আমার এসব ভুয়া ছবি দেখেই হয়তো প্রেমে পরেছে।
তিথি আমার সামনে নিশ্চুপে বসে আছে আর আমিও নিশ্চুপ। কারো মুখেই কোনো কথা নেই, হ্যাঁ ঠিকই ভাবছেন তিথি আর কেউ নয় বরং পাশের ফ্ল্যাটের সেই মেকআপ সুন্দরী মেয়েটিই। আমি আজকে তিন হাজার টাকা বাসা থেকে নিয়ে এসেছিলাম এই ভেবে যে আজকে আমার সুন্দরী প্রেমিকাকে ইচ্ছেমতো খুশি করবো যাতে ও আমার চেহারা দেখে নিরাশ হলেও ওকে এটা ওটা খাইয়ে খুশি করতে পারি। কিন্তু আমার সেই তিথিও যে আমার মতোই ফেইক এটা জানলে তিন হাজার কেনো তিন টাকাও নিয়ে আসতাম না। তবে নিজের দিক ভাবলে চলবে না সেটাও ঠিক, কারণ ওর মনেও যে আমার মনের মতোই আগুন জ্বলছে তাও অস্বীকার করার সুযোগ নেই।
কিছুক্ষণ পর ওয়েটার এসে বললো,
“স্যার! আপনাদের জন্য কি অর্ডার করবো?”
ওয়েটারের কথা শুনে আমি মেয়েটার দিকে একনজর তাকালাম এমনকি সেও তাকালো। আমি হাত কচলাতে কচলাতে হাসিমুখে ওয়েটার কে বললাম,
“আচ্ছা আমরা একটু পরে অর্ডার দিচ্ছি। আপনাকে ডাক দিবো কিছু লাগলে।”
“জ্বী স্যার! ঠিক আছে।”
এই বলেই সে প্রস্থান করলো।
মনে মনে ভাবছি মেয়েটিকে কিছুক্ষণ ঝাড়ি দিয়ে বাসায় চলে যাই, কারণ এমন মেয়েকে ঝাড়ি দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। যখনি নিরবতা ঠেলে কিছু বলতে যাবো ঠিক তখনি তিথি অর্থাৎ আমার ফেইক গার্লফ্রেন্ড অস্ফুট স্বরে ইতঃস্তত ভঙ্গিতে বললো,
“আমি আসলে খুবই দুঃখিত আপনার সাথে এরকম একটি মিথ্যার আশ্রয় নেওয়ার জন্য। আসলে কি বলবো আমারো সুন্দরী হতে ইচ্ছে হয় কিন্তু আমি জানতামনা এসব কৃত্রিম জিনিস দিয়ে কখনো সুন্দরী হওয়া যায় না। বান্ধবীরা যখন নিজেদের গায়ের চামড়া দেখিয়ে একসাথে পাঁচ-ছয়টা প্রেম করতো তখন আমার খুব আফসোস হতো। কারণ এই কৃত্রিম সুন্দরী মেয়ের দিকে কোনো ছেলে ঘুরেও তাকাতো না। অথচ আমি চাইতাম জীবনে আমাকে যদি কোনো ছেলে ভালোবাসে তাহলে আমি তার হাতটি সবসময় আগলে ধরে রাখবো, বান্ধবীদের মতো এতোগুলো ছেলের সাথে মিথ্যা প্রেমের অভিনয় কখনোই করবো না। কিন্তু কে জানতো এসব মিথ্যা দিয়ে কখনো ভালোবাসা হয়না এবং চেহারা সুন্দর না হলে কোনো ছেলে ঘুরেও তাকায় না। আর আমি এও জানতাম এতো কিছু করে আমি যার সাথেই দেখা করতে আসি না কেনো সে আমাকে কখনোই পছন্দ করবে না, তবুও এটা ছিল একটুখানি মনের প্রশান্তি খোঁজার চেষ্টা।”
এই বলেই মেয়েটির দুচোখ থেকে দুফোঁটা অশ্রু ওর গাল বেয়ে গড়িয়ে পরলো এবং মেকআপের আস্তরণকেও সামান্য ধুয়ে দিয়ে গেলো। আমি একদমই চুপচাপ, মুখ থেকে সামান্য টু শব্দটিও বের করলাম না। পরক্ষণেই তিথি নিজের চোখের অশ্রুটুকু মুছে বললো,
রোমান্টিক গল্প : মিথ্যার আশ্রয়
“আপনিও যে আমার মতোই সেইম কাজ করেছেন সেটা আমি বুঝতে পেরেছি। তবে আপনাকে আমার বেশ ভালোই লেগেছে। যাইহোক আপনার সাথে এরকম কাজ করার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত, ক্ষমা করবেন। আজ তাহলে আসি।”
এই বলেই যখন তিথি ভ্যানিটি ব্যাগটি নিয়ে প্রস্থান করতে যাবে তখনি পেছন থেকে আমি ওর ব্যাগটি টান দিয়ে ধরে ফেলি। কৌতূহল বসত ও পেছনে ফিরে তাকাতেই আমি বললাম,
“তুমি না ওয়াদা করেছিলে আমাকে সামনাসামনি দেখে তুমি চলে যাবেনা? এমনকি তুমিও বলেছিলে তোমাকে দেখে যেনো আমি চলে না যাই। তাহলে এখন কেনো আমাকে রেখে চলে যাচ্ছো? হয়তো আমরা দুজনেই ধোঁকাবাজির আশ্রয় নিয়েছি কিন্তু চাইলেই আমরা নতুনভাবে শুরু করতে পারি। তোমার উপরটা কালো হলেও ভিতরটা যে কতটা সুন্দর সেটা আমি তোমার কথাগুলো না শুনলে হয়তো বুঝতে পারতাম না। এক্ষুণি বসো এখান থেকে এক পাও নড়বে না।”
তখনি আমি ওয়েটার কে ডাক দিয়ে একসাথে আট টা দামী আইটেম অর্ডার দিলাম। মেয়েটি আমার এমন কান্ডে হয়তো অবাক হয়েছে তবে আমি একটা জিনিস উপলব্ধি করতে পারছি যে মেয়েটিকে যদি আমি বিয়ে করি তবে প্রকৃত ভালোবাসার মর্মটা আমি খুব ভালো করেই বুঝতে পারবো যেটা হয়তো সব মেয়েদের মধ্যে পাওয়া যাবে না। মিথ্যা থেকে যদি ভালো কিছুর সূচনা হয় তাহলে দোষ কি তাতে?