গর্ভস্থ শিশুর নড়াচড়া বা কিক প্রথম যেদিন অন্তঃসত্ত্বা মা টের পান, সেদিনকার অভিজ্ঞতার কোনো তুলনাই হয় না। এই আনন্দময় মুহূর্তের জন্য মা অপেক্ষা করে থাকেন। চিকিৎসকেরা এই নড়াচড়াকে গর্ভস্থ শিশুর সুস্থতার একটি বড় লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। মাকে তাঁরা তাই বলে দেন যেন সারা দিনের নড়াচড়া খেয়াল করে রাখা হয়। কোনো ব্যত্যয় ঘটলে তা চিকিৎসককে দ্রুত জানাতে হবে।
■ সাধারণত ১৮ থেকে ২৪ সপ্তাহে মা প্রথম পেটের ভেতর শিশুর নড়াচড়া টের পেতে শুরু করেন। এ সময় মৃদু কম্পন বা ধাক্কার মতো হবে অনুভূতিটা। ক্রমে মা নড়াচড়া আরও ভালো টের পেতে শুরু করবেন। প্রথম মা অনভিজ্ঞতার কারণে ১৮ সপ্তাহে তা না-ও বুঝতে পারেন। এতে ভয়ের কিছু নেই।
■ একেক শিশুর নড়াচড়ার ধরন একেক ধরনের। শিশু সব সময় নড়তেই থাকবে, তা-ও নয়। যেমন ঘুমের সময়। গর্ভের মধ্যেও শিশু বিশ্রাম নেয় বা ঘুমায়। তবে এই সময় একটানা ৯০ মিনিটের বেশি হওয়ার কথা নয়। মাকে বুঝে নিতে হবে তার শিশুটি কখন কতক্ষণ সাধারণত ঘুমায়।
■ ২৮ থেকে ৩৬ সপ্তাহ গর্ভকালে সবচেয়ে বেশি নড়াচড়া বোঝা যায়। এতে মায়েরা অভ্যস্তও হয়ে পড়েন। সাধারণত খাওয়াদাওয়ার পর নড়াচড়া বেশি বেড়ে যায়।
■ ৩৬ থেকে ৪২ সপ্তাহ গর্ভকালে গর্ভস্থ শিশু আকারে বেশ বড় হয়ে যায় ও তার নড়াচড়ার স্থান যায় কমে। ফলে নড়াচড়ার তীব্রতা কমে যায়। কিন্তু নড়াচড়া কমে না।
■ নড়াচড়া গণনা করার সবচেয়ে ভালো সময় হলো দুপুরে ভরপেট খেয়ে বাঁ কাতে শুয়ে বিশ্রাম নেওয়ার সময়। নড়াচড়া গণনার জন্য কাউন্ট টু টেন হচ্ছে সবচেয়ে সহজ ও স্বীকৃত পদ্ধতি। এটা হলো প্রতি দুই ঘণ্টায় বাচ্চা কতবার নড়ে উঠল, তার হিসাব রাখা। ২ ঘণ্টায় অন্তত ১০ বার নড়াচড়া করা স্বাভাবিক।
■ কিছু কিছু কারণে বাচ্চার নড়াচড়া কমে যেতে পারে বা দীর্ঘ সময় ধরে না-ও নড়তে পারে। এগুলো হলো গর্ভফুল সামনের দিকে থাকা, তীব্র ব্যথানাশক বা ঘুমের ওষুধ খাওয়া, মা অ্যালকোহলে আসক্ত বা ধূমপায়ী হলে, জরায়ুর পানি অতিরিক্ত কমে গেলে, মায়ের যেকোনো জটিল শারীরিক-মানসিক সমস্যা, শিশুর শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি। নড়াচড়া হঠাৎ কমে যাওয়া মানে গর্ভস্থ শিশু নিস্তেজ হয়ে পড়ছে। কিক কাউন্ট কমে গেলে মৃত সন্তান প্রসবের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই গর্ভকালে, বিশেষ করে শেষের দিকে কিক কাউন্ট করা ও যথাযথ সময়ে প্রয়োজনে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি।