শুধু কিছু ঘনিষ্ট মুহূর্ত জলজ্যান্ত গোপন ইতিহাস হয়ে থেকে যায় দুটো মানুষের ভেতর - Mati News
Friday, December 5

শুধু কিছু ঘনিষ্ট মুহূর্ত জলজ্যান্ত গোপন ইতিহাস হয়ে থেকে যায় দুটো মানুষের ভেতর

দুদিনের আলাপে কাউকে পুরোপুরি না জেনে তার সাথে শারীরিক ভাবে মিলিত হয়েছেন? একটা মানুষকে না জেনেশুনে তার সাথে খুব ঘনিষ্ট হয়েছেন? সাতপাঁচ না ভেবে কারোর সাথে কয়েক মুহূর্তের জন্য জড়িয়ে পড়েছেন?

Platonic Love

প্রায় প্রতিটা মানুষের জীবনে কোনো না কোনো সময়ে এমন কেউ না কেউ আসে, যার কথা বলার ধরণ, হাসি, হাঁটাচলার স্টাইল, ব্যবহার, ব্যক্তিত্ব আমাদের মুগ্ধ করে…

আমরা খুব কম সময়ের মধ্যেই মানুষটার ভেতর এমনভাবেই ডুবে যাই, যে আমরা আমাদের বাস্তব সম্পর্কগুলোকে, বাস্তব জীবনটাকে, বাস্তব পরিস্থিতিটাকে, সবকিছুকে অস্বীকার করে সেই মানুষটার পায়ের সাথে পা মিলিয়ে হাঁটতে চাই, হাতে হাত ধরে ইশারায় বলতে চাই,

“একটা দিন শুধু তোর আর আমার নামে লেখা থাক প্লিজ'”

এতটাই সেই মানুষটার সাথে ঘনিষ্ঠ হয়ে যাই জাস্ট দুদিনের আলাপে যে নিজের সমস্ত আবেগ, নিজের সমস্ত ফিলিংসের উপর আর কোনো কন্ট্রোল থাকে না….

মনে হয়, এই মানুষটা শুধু আমার একার হলেও পারতো, মনে হয় যেন এই মানুষটার সাথে সংসার না হোক, জমিয়ে প্রেম করাটা খুব দরকার, তাতে আমাদের জীবনটা স্বার্থক হবে….

কাছে না যাওয়া পর্যন্ত মানুষটার সাথে একবেলা কথা না বললে বুকের ভেতরটা যেন আনচান করে, অথচ মানুষটার সাথে কোনো ভবিষ্যৎ নেই….

মানুষটার সাথে কোনোদিন কোনো সামাজিক বন্ধন তৈরি হতে পারে না জেনেও আমরা মানুষটাকে ছুঁতে চাই, কয়েক মুহুর্তের জন্য হলেও আমাদের খুব দামি খুব গোপন কিছু স্মৃতি তৈরি করতে চাই….

আমরা নগ্ন হতে চাই মানুষটার কাছে, শারীরিক ভাবে ও মানসিক ভাবে। কোত্থেকে যেন একটা চূড়ান্ত বিশ্বাস কাজ করে, যে আর যাই হোক এই মানুষটা আমাদের ঠকাবে না…

মানুষটাকে দেওয়ালে ঠেসে ধরে চুমু খাওয়ার পর, খোলা পিঠে দশ আঙুলের আঁচড় কাটার পর, গোটা শরীরে হাত বোলানোর পর আমরা কেঁদে ফেলি। স্বপ্নের জগৎ থেকে বাস্তবের মাটিতে ফিরতে হবে ভেবে কেঁদে ফেলি, মানুষটাকে এবার ছাড়তে হবে ভেবে কেঁদে ফেলি….

খুব খুব ঘনিষ্ঠ হওয়ার পর আমরা উঠে বসে হাতে হাত রেখে বলি “বোধহয় খুব ভুল কাজ করলাম, কিন্তু যা কিছু আমাদের মধ্যে হয়েছে, তার মতো পবিত্র আর কিছু হয় না।

এই স্মৃতিটুকু, এই একে অপরকে ছোঁয়ার মুহূর্তটুকুই আমাদেরকে সারাজীবনের মতো বেঁধে রাখবে যতই যোগাযোগ নিভে যাক না কেন! আমাদের এটাই হয়তো শেষ দেখা, তবুও আমরা একে অপরের ভেতরে থেকে যাবো যেভাবে ডিমের ভেতর রাখা থাকে নরম কুসুম”….

আসলে মানুষটার সাথে আমরা থাকতে চাই না, কিন্তু জীবনের একটা সন্ধে বেলা কিংবা একটা গোটা দিন সেই মানুষটার কাছে আজীবনের মতো জমা রাখতে চাই….

কোনো এক গ্রীষ্মের দুপুরে হড়হড় করে বৃষ্টি নামলে যাতে মানুষটার কথা হুট করেই মনে পড়ে যায়, একবার কথা বলতে ইচ্ছে হয়, জিগ্যেস করতে ইচ্ছে হয় “কেমন আছো?”…..

কোনো এক রাতের বেলায় আচমকা ঘুম ভেঙে গেলেই মানুষটার কথা মনে করে যেন চোখের কোনে হালকা চিকচিকে জল জমে….

কোনো একদিন রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে যদি তার ডাকনাম ধরে কেউ ডাকে, যাতে আমরা থমকে যেতে পারি, পেছনে ঘুরে তাকিয়ে মানুষটাকে খুঁজতে পারি তন্নতন্ন করে, অথচ জানি মানুষটাকে ফিরে পাওয়া সম্ভব না….

ফিরে পেলেও আগলে রেখে দেওয়া আর সম্ভব না…

কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল, এতকিছু বিচার করে কোনোদিন জীবন চলেনি, জীবন তো আর পাতায় পাতায় সূত্র মেলানো কোনো অঙ্ক নয়, ভুল হয়ে যায় বারবার….

কিছু ভুল আমরা ইচ্ছে করেই করি, একটা মুহূর্ত সৃষ্টি করার জন্য আমরা কিছু ভুল করি, তারপর গোটা জীবন সেই ভুলটাকে খুব গোপনে লুকিয়ে বাঁচিয়ে বয়ে নিয়ে বেড়াই আমৃত্যুকাল পর্যন্ত….

গভীর সম্পর্ক সবার সাথে তৈরি করতে নেই, সবার সাথে গোটাজীবন থাকতে নেই! কিছু মানুষকে বৃষ্টি ভেজা চড়ুইপাখি ভাবতে হয়, ঝড়ের প্রকোপ থেকে বাঁচতে আমাদের বারান্দায় আশ্রয় নেয়, ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি শুরু হয়, দুই কাপ কফি হাতে তার সাথে দু একটা মধুর গল্প তৈরি হয়….

বৃষ্টি থামে, সন্ধে নামার আগে তারা উড়ে যায়। পাখিদের বাঁধতে নেই, যতটুকু সময় থাকে, ওটুকু সময় হাতের মুঠোয় আলতো করে আগলে রাখতে হয়…

ব্যস এভাবেই মানুষ ফুরোয়, গল্প ফুরোয়….

শুধু কিছু ঘনিষ্ট মুহূর্ত জলজ্যান্ত গোপন ইতিহাস হয়ে থেকে যায় দুটো মানুষের ভেতর….

(সোহানা খানের ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *