নাটক নির্মাণের সংখ্যা প্রতিবছরই বাড়ছে কয়েকশ করে। সেইসাথে নাটক দেখার মাধ্যমও বাড়ছে। টেলিভিশনে নাটক দেখার দর্শক কমে এখন বাড়ছে মুঠোফোনে নাটক দেখার দর্শক। এ বছর ছোটপর্দায় যারা সারাবছর নাটকে ব্যস্ত ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম তানজিন তিশা। অন্যদিকে গত কয়েকবছরের চেয়ে এবার পেশাদার অভিনেত্রী হিসেবে অভিনয় শুরু করেছেন তিনি। নিজের ব্যস্ততা, ক্যারিয়ার নিয়ে বিনোদন বিভাগে কথা বলেন তিনি।
বর্তমান কাজের ব্যস্ততা নিয়ে জানতে চাই…
তানজিন তিশা: এখন টানা কাজ করে যাচ্ছি। প্রতিদিনই শুটিং করছি। আগের থেকে এখন অনেক বেশি মনোযোগ দিয়ে কাজ করছি এখন। রেগুলার কাজের বাইরেও বিজয়ের মাস এবং সামনে ভালোবাসা দিবসের কিছু কাজও করেছি। আর নিয়মিত কাজ তো আছেই। এর মধ্যে মাবরুর রশীদ বান্নাহ, কাজল আরেফিন অমি, সাজ্জাদ খান, তপু খান ও শিহাব শাহীন ভাইয়ের কাজ করলাম।
মাঝখানে আপনার একটা অল্প সময়ের বিরতি ছিল। এরপর আপনি কাজের প্রতি বেশ মনোযোগী হয়েছেন এবং কাজও করছেন অনেক। এ বিষয়টা নিয়ে কিছু বলেন…
তানজিন তিশা: মডেলিংসহ নাটক মিলিয়ে আমি কাজ করছি প্রায় ছয় বছরের মত। আর নাটকে কাজ করছি চার বছরের মত। মাঝখানে কাজ নিয়ে তেমন সিরিয়াস ছিলাম না। কিন্তু এখন গত ১ বছর ধরে আমই কাজ নিয়ে খুবই সিরিয়াস। এখন কাজ করার ক্ষেত্রে কাজের মান এবং প্রোডাকশন দেখে খুব বেছে বেছে করি। যখন কাজটাকে সিরিয়াসলি নিয়ে কাজ করা শুরু করলাম এবং দেখলাম খুব ভালো সাড়া পাচ্ছি সব দিক থেক তখন টানা কাজ করা শুরু করেছি, এখনও করে যাচ্ছি।
কাজের প্রতি এই যে মনোযোগটা কতদিন ধরে রাখতে পারবেন বলে মনে করেন?
তানজিন তিশা: এখন আমার সবটা মনোযোগ কাজ নিয়ে। কোন কাজটা করবো কিভাবে করবো এখন শুধু এটা নিয়েই ভাবি। অনেকগুলো কাজ করেছি সেখান থেকে অনেক সাড়াও পেয়েছি, এখনও পাচ্ছি। এখন মনোযোগ দিয়ে কাজটা করে যেতে চাই। আমার কাছে মনে হলো দেখি আমি আরও ভালো কিছু করতে পারি কিনা। করলে ভালো করে করবো, না হলে করবোই না। যখন মনে হবে আমার মত করে আমি কাজ করতে পারছি না পাচ্ছি না তখন হয়তো আর কাজই কারবো না। কিন্তু সে পর্যন্ত খুব সিরিয়াসলি কাজ করব।
‘ইমোশনাল ফুল’ নাটকটা নিয়ে কিছু বলুন…
তানজিন তিশা: এই নাটকটা খুবই ইন্টারেস্টিং একটা গল্প। এটাতে কমেডি এবং ফান আছে। দর্শকরা অনেক মজা পাবে কাজটা দেখে। আমি মনে করি মানুষকে কাঁদানো অনেক সহজ আর হাসানো অনেক কঠিন। এখানে আমার চরিত্রের নাম থাকে কেয়া। এখানে আমার একটা হাইড এন্ড সিক এর একটা ব্যাপার থাকে। ভিলেন টাইপ একটা গল্প থাকে আমার যেটা আমি লুকাই, একটা সময় সেটা ফাঁস হয়ে যায়।
সাম্প্রতিক করা কোন কাজগুলো থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছেন?
তানজিন তিশা: আমি এখন খুব বেছে বেছে কাজ করি। সেই কাজগুলো থেকেই সাড়া পাচ্ছি যেগুলো আমি বেছে করেছি। একটা গল্প শুনার পর আমি যখন সে চরিত্রটা ফিল করতে পারি তখন আমি সে কাজটা করি। আমি যদি ফিলই না করতে পারি তবে আমি সে কাজটা করি না, আর করতেও চাই না। সেই কাজগুলো মানুষের মধ্যে খুব সাড়া ফেলে যে কাজগুলা মানুষের মধ্যে খুব কানেক্ট করতে পারে। এমন কিছু গল্পে কাজ করেছি যেগুলা মানুষকে খুব কানেক্ট করেছে এই কাজ গুলা থেকেই খুব ভালো সাড়া পেয়েছি। সবগুলা কাজের নাম তো মনে থাকেনা তাই আর বলছি না।
আপনি তো নাচের শিল্পী। আগে নাচে নিয়মিত ছিলেন। এখন তেমন একটা দেখা যায় না। এখন নাটকের বাইরে নাচ কিংবা অন্য কোন কাজ করছেন না?
তানজিন তিশা: না তেমন কিছু করছি না। আমার কাছে মনে হয় একসাথে সব কাজ হয় না আর করা ও সম্ভব না। এখন নাটক নিয়েই ব্যস্ত থাকতে চাই। আমি যখন নাচ করতাম তখন নাচ করেছি কিন্তু এখন আর ঐ ভাবে নাচ করতে পারছি না। নাছের শোতে অংশও নিতে পারছিনা। আমি যখন নাচ করতাম তখনও আমি নাটকে আসি নি। কিন্তু এখন আমার মনে হচ্ছে নাচ করছি মডেলিং করছি কিন্তু এখন ঐ দুটো বিষয়ের চেয়ে অভিনয়ের গুরুত্ব আমার কাছে বেশি। এখন চিন্তা করি আমার অভিনয়টাকে আরও কিভাবে পাকাপোক্ত করবো , কিভাবে আরও উন্নত করবো। সো নাচ, মডেলিং ও অভিনয় একসাথে করাটা আমি প্রেফার করি না এখন।
আপনাকে মিউজিক ভিডিওতে খুব কম দেখা যায়। এর কারণ কি?
তানজিন তিশা: আমি মিউজিক ভিডিও খুব একটা করি না। তবে যতগুলা করেছি এখন পর্যন্ত সবগুলো থেকে খুব ভালো সাড়া পেয়েছি। আমি এমন কাজগুলোই করেছি যেগুলোতে ভালো একটা সাড়া পাব এবং পেয়েছিও। এদিকে সর্বশেষ ইমরানের ‘আমার মন’ শিরোনামের একটা গানের শুট করেছি লাদাখে আর কাশ্মীরে। এই প্রথম বাংলাদেশের কোন গানের শুটিং লাদাখে হয়েছে। সো এরকম সবকিছু মিলিয়ে যদি ভালো মনে হয় তবেই আমি কাজ করি।
আপনাকে ধারাবাহিক নাটকে দেখা যায় না কেন?
তানজিন তিশা: আমার লাইফে আমি মাত্র চারটা ধারাবাহিকে কাজ করেছি। এরপর আর কোন ধারাবাহিকে কাজ করিনি। এখন তো ধারাবাহিকে কাজ করার সময়ও নেই। এখন আমি ঠিকমত ঘুমাতেই পারছি না কাজের ব্যস্ততায়। আরও না করার কারণ হল একটা ধারাবাহিকে অনেক আর্টিস্ট থাকে সেখানে একটা একটা চরিত্র অনেকদূর টেনে নিয়ে যাওয়া আর একটা চরিত্রকে ধরে রাখা সম্ভব হয় না। আর মোট কথা হচ্ছে নিজের চরিত্রটাকে মনের মত করে ফুটিয়ে তোলা যায় না।
গল্পে আর চরিত্রে গতানুগতিক বিষয়টাকে দেখেন?
তানজিন তিশা: সব গল্প আর চরিত্র কিন্তু এক নয়। যারা আসলে নিয়মিত কাজ দেখে তারা বলতে পারে পার্থক্যটা কোথায়। আমরা নিয়মিত কাজ দেখতে পারি না বা দেখি না বলে মনে হয় যে কাজটা গতানুগতিকই। দর্শকরা যখন একই শিল্পীর কয়েকটা কাজ একসাথে দেখবে তখন সে তার পার্থক্যটা খুঁজে পাবে। আমার ক্ষেত্রে যদি বলি, আমি গত এক বছরে দেখেছি আমার যারা দর্শক তারা চরিত্র আমার ভিন্নতা খুঁজে পেয়েছে। আর সেটা পেয়েছে বলেই কিন্তু তারা মন্তব্য করতে পারছে। আর এখন আমাদের নাটক বেস্ট পজিশনে আছে। আগে মানুষ নাটক দেখতো না কিন্তু এখন দেখে কারণ কাজ ভালো হচ্ছে আর কাজের মানও অনেক ভালো হচ্ছে। সো দর্শকদেরও যেমন কাজ দেখার আগ্রহ বেড়েছে, আমাদেরও কাজ করার আগ্রহ বেড়েছে।