রাত তখন ১২টা ছুঁইছুঁই। প্রায় শুনশান দিল্লির রাস্তা। অফিসের কাজ মিটিয়ে রাস্তার সামনে এসে দাঁড়ালেন তরুণী। বাড়ি ফেরার জন্য অটোর অপেক্ষা করছিলেন। ঠিক সেই সময়ই সামনে একটা অটো এসে দাঁড়ায়। যেন ঈশ্বর প্রেরিত দূত!সুরক্ষিত ভাবে বাড়িতে পৌঁছে দেন ওই ব্যক্তি। বিনিময়ে কোনও টাকাও নিলেন না।রাতের রাস্তায় যেখানে তরুণীকে একা পেয়ে পরিস্থিতির সুযোগ নিতে চান একদল মানুষকিংবা রাতবিরেতে গন্তব্যে পৌঁছনোর জন্য প্রচুর ভাড়া হাঁকান চালকেরা, সেখানে দিল্লির রাস্তায় রাতে এমন একজন চালকও অটো নিয়ে ঘুরে বেড়ান, যাঁর উদ্দেশ্য মহিলাদের সুরক্ষিত স্থানে পৌঁছে দেওয়া!কোনও টাকা ছাড়াই! সম্প্রতি এমন এক অটো চালকের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে নেহা দাস নামে এক তরুণীর। চালকের ছবি-সহ সেই অভিজ্ঞতা নিজের ফেসবুক ওয়ালে শেয়ারও করেন।
ফেসবুকে নেহা লিখেছেন,‘অন্যান্য দিনের মতো গতকালও অফিস গিয়েছিলাম।ঠিক রাত ১২টার আগে কাজ মিটিয়ে বেরিয়ে পড়ি। বাইরে বেশ শীত শীত ভাব, রাস্তাঘাট প্রায় ফাঁকা। অফিসের বাইরে অটোর জন্য অপেক্ষা করছিলাম, ওই ভদ্রলোক আমার সামনে অটো নিয়ে এসে দাঁড়ান। ভাড়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, ম্যাডাম ম্যায় কুছ নেহি লেতা লড়কিঁয়সে ইতনি রাত কো। উনকো ঠিক সে ঘর পৌঁছনা জাদা জরুরি হ্যায় (রাতে মেয়েদের থেকে আমি কোনও ভাড়া নিই না। তাঁদের ঠিকমতো বাড়ি পৌঁছে দেওয়াটাই জরুরি।) তাঁর কথা শুনে আমি কিছুক্ষণ থ হয়ে গেছিলাম। আমার সন্দেহও হয়। ভুল লোকে ভরে গিয়েছে দিল্লি, সেখানে এমন দয়ালু মানুষও রয়েছেন!খুব সুরক্ষিতভাবে আমাকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়াটাই তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমি তাঁকে বেশি টাকা দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তিনি নেননি।বাড়ি পৌঁছনোর পর তাঁর একটা ছবি তুলতে চাই, সুন্দর একটা হাসিও দিয়েছেন তিনি।’ এমন সৎ মানুষজনও যে আমাদের চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তার জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন নেহা।
নেহার পোস্ট থেকেই জানা গিয়েছে ওই ব্যক্তির নাম প্রবীণ রঞ্জন। তিনি প্রতি রাতে অটো নিয়ে বেরিয়ে থাকেন। রাতে কোনও মহিলা গাড়ির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকলে তাঁকে বিনা পয়সায় বাড়ি পৌঁছে দেন প্রবীণ। এটাই নাকি তাঁর কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। ইতিমধ্যে নেহার পোস্ট ৪০০টি প্রতিক্রিয়া পেয়েছে। এমন একজন মানসিকতার ব্যক্তিকে সম্মান জানিয়েছেন সকলে।
এই দিল্লিতেই ২০১৩ সালে নির্ভয়া কাণ্ড ঘটেছিল। কিছু দিন আগে এক সমীক্ষায় এই দিল্লিই ভারতের মধ্যে পঞ্চমতমমহিলাদের জন্য বিপজ্জনক শহর হিসাবে উঠে এসেছে। মহিলাদের রাতের সুরক্ষা দেওয়াটা এখন পুলিশের কাছে অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। সেখানে এমন একজনও রয়েছেন যিনি নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে একাই মহিলাদের জন্য সুরক্ষিত দিল্লি উপহার দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।