বিশ্বের কয়েকটি শীর্ষ অপরাধের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মানবপাচার । বিশেষ করে গরিব দেশগুলোতেই আদ মানবপাচারকারীরা তাদের সুবিধা হাসিল করে থাকে। আর কোন দেশের রাজনৈতিক অবস্থা অস্থীতিশীল থাকলে তো কথাই নেই, তখন চলে মানবপাচারকারীদের শুভ সময়। বিশ্বের কতগুলো দেশ আছে যেখানে মনে হয় মানবপাচার ঐতিহ্যগতভাবে চলে আসছে কিন্তু সরকারের কোন গুরুত্ব নেই। আসুন, মানব পাচারে শীর্ষ এরকম পাঁচটি দেশের অবস্থা দেখা যাক-
মিয়ানমার
মিয়ানমার দক্ষিণ এশিয়ার একটি সামরিক বাহিনী শাসীত দেশ। গণতন্ত্রপন্থী নেত্রীকে দীর্ঘদিন গৃহবন্দি ও সামরিক জান্তার একরোখা স্বভাব বিশ্বের কাছে দেশটিকে পরিচিত করে তুলেছে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে আরেকটি বিষয়ে দেশটি সবার সেরা তা হলো মানবপাচার। সামরিক শাসনের শুরু থেকেই বার্মা ধনী দেশের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মধ্যে আছে। অর্থনৈতিক স্থবিরতা ও কর্মসংস্থানের অভাবে এদেশের মানুষ বিভিন্ন দেশে স্থানান্তরিত হয়ে যাচ্ছে। আর এই সুযোগটাই নিচ্ছে পাচারকারীরা। চীন, থাইল্যান্ড, বাংলাদেশ ও ভারতে বার্মার নারীদের চাকুরীর প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা হচ্ছে এবং শিশুদের দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। সামরিক জান্তার অবশ্য এ নিয়ে খুব একটা মাথা ব্যাথা নেই কারণ সামরিক বাহিনীতেই কাজ করছে সেদেশের শিশুরা। ২০০৬ সালে জান্তা সরকার ৪০০ পাচারকারীকে শাস্তি দিলেও এখন পর্যন্ত পাচার রোধ করা সম্ভব হয়নি।
সোমালিয়া
আফ্রিকার এ দেশটির অবস্থা একেবারেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে। মানব পাচারের ক্ষেত্রে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের কোন কিছুই করার নেই কারণ সেদেশের সরকারের তেমন কোন কিছুর ওপরই নিয়ন্ত্রণ নেই। অর্থনৈতিক দৈন্যতার ফলে মানব পাচার এখানে অনেকটা স্বেচ্ছায় হয়ে থাকে। অধিকাংশ গরীব পরিবার তাদের সন্তানদের বিক্রি করে দেন পাচারকারীদের কাছে। যেসব জনগণ শরণার্থী শিবিরচ্যুত হন তাদের দূর্দশার সীমা থাকে না এবং তারাই পাচারকারীর খোপ্পরে পড়ে বিভিন্ন দেশে স্থানান্তরিত হয়ে যায়।
তুর্কমেনিস্তান
মানবপাচার ও বাধ্য শ্রম তুর্কমেনিস্তানের অন্যতম সমস্যা। দেশটির দরিদ্র নারীরা তুরস্ক, রাশিয়া ও যুক্তরাজ্যে পাচার হয়ে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য হচ্ছে। দেশটিতে প্রকাশ্যে মানব পাচার হলেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তা রোধ করতে ব্যর্থ হয় মূলত অর্থনৈতিক দৈন্যতার কারণে। এ পর্যন্ত দেশটির সরকার পাচার রোধ বা পাচারকারীর শাস্তি বিধান- কোনটাই করতে পারে নি।
উত্তর কোরিয়া
উত্তর কোরিয়া মূলত বিশ্ব থেকেই আলাদা। অর্থনৈতিক সংকটের চরম সীমায় থাকলেও দেশটির একরোখা শাসক এখন পর্যন্ত পশ্চিমা তথা বিশ্বের কোন ধনী দেশের সঙ্গেই সম্পর্ক রাখেনি এবং এরই কুফল ভোগ করছে সেদেশের সাধারণ জনগণ। পাচারকারীদের পোয়া বারো করে কর্মসংস্থানের খোঁজে অনেকেই চলে আসে চীনে এবং বাধ্য হচ্ছে পতিতাবৃত্তি ও অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ কাজে। নাগরিকত্ব না থাকায় চীনা কর্তৃপক্ষও তাদের বিষয়ে নমনীয় হয় না। অবৈধভাবে চীনে বাস করা কোরিয়ান নাগরিকদের কর্তৃপক্ষ আবারও কোরিয়ায় ফিরতে বাধ্য করে এবং দেশে ফিরেই তাদের পড়তে হয় কঠিন শাস্তির মুখে। সুতরাং বিদেশে যত খারাপ কাজই করতে হোক না কেন পাচারকারীরা পাচ্ছে হাজার হাজার নিরীহ জনগণ।
ভেনিজুয়েলা
ভেনিজুয়েলা হচ্ছে মানবপাচারের একটি উর্বর ট্রানজিট। দেশটির অভ্যন্তরেই জনগণ পাচারের শিকার হচ্ছে। সেখানকার প্রত্যন্ত এলাকা থেকে নারী ও শিশুদের শহরে এনে পতিতাবৃত্তি ও শিশুশ্রমে বাধ্য করা হচ্ছে এবং তাদের অনেককেই পাচার করা হচ্ছে প্রতিবেশী দেশে। অপরিচিতদের মিথ্যা চাকরীর প্রলোভনে পড়ে সবাই কাজের আশায় নিজেকে বিক্রি করছে সেখানে। দেশটির সরকারও এদিকে তেমন গুরুত্ব দেয় না। যদিও দেশটিতে পাচার রোধে আইন আছে তবে তার প্রয়োগ নাই বললেই চলে। পাচারকারীর হাত থেকে কোনভাবে বাঁচতে পারলেও তাদের পূণর্বাসনের তেমন কোন ব্যবস্থা নেই সেখানে। মূলত বেসরকারী উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান বা এনজিওদের ওপরই নির্ভর করতে হয় এ ব্যাপারে। রাজনৈতিক অস্থীতিশীলতার কারণেই সেখানকার পরিস্থিতি এতটা খারাপ।