class="post-template-default single single-post postid-48646 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

রম্য গল্প: হাবুডাস্টিং

রম্য গল্প: হাবুডাস্টিং

লেখক: ধ্রুব নীল

 

‘তৈয়ব, একটা সমস্যায় পড়েছি।’

দুলাভাইয়ের কথায় অবাক হলো তৈয়ব। লোকে টাকা ধার চাওয়ার সময় এভাবে মাথা নিচু করে হালকা গলায় কথাটা বলে। তৈয়ব বেকার। সে নিজে খায়-পরে বড় বোনের সংসারে। তার কাছে টাকাটুকা ধার চাওয়ার প্রশ্নই আসে না। তবে?

 

‘ইদানিং ভুলে যাচ্ছি। আবার হালকা হালকা মনেও পড়ছে। কিন্তু…।’

 

মাথাভর্তি টাক হওয়ার কারণে কথাটা বলার সময় মাথা চুলকোতে পারলেন না ইফতেখার সাহেব। তিনি ভাবছেন, একান্ন-বায়ান্ন এমন কোনো বয়স না। এ বয়সে এমন বিকট সমস্যায় পড়ার মানে হয় না।

 

‘খুবই কমন সমস্যা দুলাভাই। ডায়াবেটিস কন্ট্রোলে রাখেন। আমিও ভুলে যাচ্ছি। গতকাল একটা চাকরির এপ্লাই করার লাস্ট ডেট ছিল।’

 

‘ওই ভোলা না। মানে, একেবারে ঠুস করে ভুলে যাওয়া। গত কয়েক দিন ধরে এ সমস্যা। মাথাটাও কেমন কেমন করে। পরে আবার মনে পড়ে, কিন্তু আমার মনে হয় কাজটা আমি করি নাই।’

 

‘ডাক্তার দেখান। মাথার ইসিজি-এক্সরে করাতে হবে। নিউরন কী পরিমাণ ড্যামেজ হলো দেখতে হবে। আবার ব্রেইন…’

 

‘আরে না, টিউমার ফিউমার না। আমি সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কী কী করেছি সেটা ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। অনেক কিছু করি, কিন্তু মনে হয় হুঁশ থাকে না তখন। এটা নিয়ে তোমার আপারও মেজাজ সুবিধার না। আমাকে অবশ্য ঝাড়িটাড়িও দেয়নি সারাদিন। শুধু বলল, সকালের দিকে নাকি আমাকে ভূতে ধরেছিল। ভালো কিসিমের ভূত। আমি নাকি তিড়িং বিড়িং করে লাফিয়েছি আর গান করেছি।’

 

‘অ্যাঁ! এ তো ক্যালাঙ্কাসাঁ সিচুয়েশন!’

 

সামনের বইমেলা টার্গেট করে তৈয়ব নতুন প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে। একটা ভিনগ্রহের অভিধান লিখবে। ক্যালাঙ্কাসাঁ ওই অভিধানের একটা শব্দ।

 

তৈয়ব ঘাবড়ে গেলো। কারণ তার দুলাভাইয়ের কপালে বন্দুক ধরেও কেউ রসিকতা করাতে পারবে না। উনাকে একটা রুমে বসিয়ে রাখলে মহাবিজ্ঞানী হাইজেনবার্গও অনিশ্চয়তায় পড়ে যাবেন, লোকটা এখানে আছে নাকি নেই! সেই নিরামিষ দুলাভাই করবেন নাচানাচি! সঙ্গে আবার গান!

 

রম্য গল্প: হাবুডাস্টিং

 

‘হুটহাট করে ভুলে যাচ্ছি বুঝলে? সকাল, এই ধরো আটটা থেকে দশটা বা এগারোটা…।’

‘মানে সকালের তিন ঘণ্টার মেমোরি গায়েব?’

‘হুঁ। পুরোপুরি না। তবে ঝাপসা হয়ে যায়। তোমার কাছে আসলাম। তুমি ইন্টারনেট ঘাঁটা লোক।’

‘ওই সময়ে আপনি কী করেছেন সেটা হালকা হালকা মনে পড়ে, কিন্তু কাজটা আপনি নিজে করেছেন, এমনটা মনে হয় না?’

‘হুম অনেকটা এমনই।’

‘এ তো দেখছি.. এক মিনিট কী যেন নাম.. কী যেন.. আরে ওই যে ব্র্যাড পিটের মুভিটা… ফাইট! ফাইটার! না না! ওহ হ্যাঁ, ফাইট ক্লাব! আপনারও সেইম অবস্থা।’

‘কী অবস্থা!’

‘পুরা সিনেমাটিক কেইস দুলাভাই। আপনি ডা. জেকিল ও মিস্টার হাইড।’

‘তোমার আপা অবশ্য একবার ডাক্তারের কথাও বলল।’

‘আরে না! ডাক্তারের কাছে এসবের চিকিৎসা নেই। এসব রোগ মুভিতে দেখা যায়। পারসোনালিটি ডিজঅর্ডার টাইপ। ভালো কথা! এটার তো নাম দেওয়া হয় নাই। এক মিনিট। কলমটা গেলো কই! আপনার হাবুডাস্টিং হয়েছে দুলাভাই। হাবুডাস্টিং!’

‘প্রণববাবুর কাছে গেলে কি…।’

‘কোনও ডাক্তার কিচ্ছু করতে পারবে না। আগে স্টাডি করতে হবে। আপনি কখন কী করছেন। রেকর্ড করে রাখা হবে। তারপর গবেষণা। এমন রোগ কোটিতে এক।’

 

তৈয়বের সঙ্গে বিকালে আর কথা এগোলো না ইফতেখার সাহেবের। তিনি রাতে বসে টুকটাক অফিসের কাজ করছেন। একটু পর পর উঁকি দিয়ে যাচ্ছে তৈয়ব। এটা ওটা জিজ্ঞেস করছে। বাজারে যেতে হবে কিনা, স্ট্যাপলার মেশিনটা কই, ঘরে ইদানিং মশা কম কেনÑ এসব বলার আড়ালে আসলে নজর রাখছে। দুলাভাই কখন ডা. জেকিল থেকে মিস্টার হাইড হবেন সেই আশায় আছে।

 

‘দুলাভাই, কী মনে হয়? ঘটনা কখন ঘটবে?’

জবাব দিলেন না ইফতেখার। স্থির দৃষ্টিতে ল্যাপটপের স্ক্রিনে তাকিয়ে আছেন। মনে হবে যেন এক্সেলের শিটে সূক্ষ্ম কোনও ভুল ধরার চেষ্টা করছেন। তৈয়ব দেখলো ল্যাপটপের স্ক্রিনে দুলাভাই ও বড় আপার বিয়ের ছবি। এত দিন আগের ছবিতে হঠাৎ কী ভুল ধরলেন আবার কে জানে!

 

দুম করে মাথাটা ল্যাপটপের কীবোর্ডে রাখলেন ইফতেখার।

‘হইলোটা কী!’ চেঁচিয়ে উঠলেন শান্তনা মানে তৈয়বের বড় বোন।

‘দুলাভাই! আপনার বুকের বাম পাশে কি ব্যথা হচ্ছে?’

‘ও তৈয়ব! কী বলিস এসব! হার্ট অ্যাটাক করেছে নাকি!’

দুম করে আবার মাথাটা খাড়া করে ফেললেন ইফতেখার সাহেব। মুখটাকে অস্বাভাবিক চওড়া করে তৈয়বের দিকে তাকিয়ে হাসলেন। তবে শব্দ করে নয়। মজার কিছু বলার আগে মানুষ যেভাবে হাসে।

‘শালাবাবু, মাথাটা কেমন হাউস্কা হাউস্কা লাগছে।’

‘অ্যাঁ, হাউস্কা আবার কী?’

‘নতুন শব্দ শুধু তুমি বানাতে পারো? আমি পারি না ভেবেছো? হে হে। পৃথার মা, তোমাকে নীল শাড়িতে বড়ই চমতাংশু লাগছে।’ রোবটের মতো তৈয়বের দিকে মাথাটা ঘুরিয়ে বললেন, ‘এর মানে হলো অন্যরকম সুন্দর। ইহজগতের কোনো সৌন্দর্যের সঙ্গে যার মিল নেই, সেটাই চমতাংশু।’

‘খবরদার! খবরদার এখন নাচানাচি শুরু করবে না! আমি পুলিশে ফোন দেবো!’

আপার ধমকে বিরক্ত হলো তৈয়ব। একটা মানুষ নাচলে পুলিশে ফোন করতে হবে কেন?

রম্য গল্প: হাবুডাস্টিং

 

ইফতেখার সাহেবের ঘটনা শুরু হয়েছে বুঝতে পেরে ভেতরে ভেতর খানিকটা ভয়ই পেলো তৈয়ব। না জানি কী ঘটিয়ে বসে সাধাসিধে দুলাভাই।

‘দুলাভাই, আপনি এখন কে বলুন তো? আপনার নাম কী?’

‘আমার নাম ইফতেখার হোসেন বিসটু। আই অ্যাম দ্য গ্রেট বিসটু।’

আবারও চেঁচিয়ে উঠলেন শান্তনা চৌধুরী। ‘তোমার নাম ইফতেখার হোসেন বজলু! তোমার ডাক নাম বজলু! বিসটু কে! কে বিসটু!’

‘আহা শান্তু! একটা নাম নিয়ে এত চেঁচানোর কী আছে। ছোটবেলায় নামটা আমিই রেখেছিলাম। একটু আনকমন রাখলাম, এই যা।’

‘তারমানে দুলাভাই, ঘটনার শুরু ছোটবেলায়! একদম ইস্টাকুলিং ঘটনা! তা দুলাভাই, বিকালে আপনার সঙ্গে আমার কী কী কথা হয়েছিল, মনে আছে?’

‘আরে! সব কথা কী মনে থাকে! তোমার ছোটবেলার কথা মনে আছে? একটু আগে অফিসের কী ঘোড়ার ডিম কাজ করছিলাম সেটাই তো মনে পড়ছে না। মনে না থাকা নিয়ে একটা জোকস মনে পড়লো,এক লোক ছোটবেলায় স্কুলব্যাগ নিতে ভুলে যেত, তো তার একদিন শখ হলো স্কাইডাইভিং করবে। স্কাইডাইভিং মানে বোঝোতো? ওই যে আকাশ থেকে লাফ দেয়.. হা হা হা।’

জোকস বুঝতে পেরেও হাসতে পারলো না তৈয়ব। দুলাভাই নিজেই হো হো করে হেসে যাচ্ছেন। রাগলে তৈয়বের বড় আপার চোখ সরু হয়ে আসে। তাকে এখন দেখাচ্ছে চাইনিজদের মতো।

‘তো দুলাভাই,এখন কী করবেন? শুধু নাচবেন? নাকি…।’

‘একটা ফেসবুক গ্রুপ খুলেছিলাম। দুই দিনে সাড়ে সাতশ লোকাল মেম্বার। সবাইকে বলেছি প্রতিদিন বিকালের পর দিঘীর পাড়ের মাঠে আসতে।’

‘সবাই মিলে নাচবেন?’

‘নাচবো, কৌতুক বলবো। আমার আবার গান গাওয়ার শখ। তুমি দেখোতো অনলাইন পেইজগুলোতে হ্যান্ডমাইক জাতীয় কিছু পাওয়া যায় কিনা। মাইক ছাড়া গান গেয়ে মজা নাই।’

 

একটু পর ইফতেখার সাহেব বের হয়ে গেলেন। তৈয়বের মনে হলো, দিঘীর পাড়ের মাঠে দুলাভাই গিয়ে একটা ধরা খাবেন। গিয়ে দেখবেন তিনি একা। বাকিদের কারও কোমরে ব্যথা, কেউ বাজারে, কেউ সোফায় আধশোয়া হয়ে ম্যাগাজিন ওল্টাচ্ছে।

 

রাতে কোচিং থেকে পৃথা এসে দেখলো বাবা নেই। কিন্তু ফোনটা ফেলে গেছে। মন্ত্রমুগ্ধের মতো সেটা হাতে নিয়ে গেম খেলা শুরু করলো পৃথা। তার মন মুহূর্তে ঢুকে পড়লো ফোনের দ্বিতীয় জগতে। খেলতে খেলতে গেলো মামা ওরফে তৈয়ব আখন্দের রুমে।

‘মামা। খাদিজা বললো, বাবা নাকি দুইটা মানুষ হয়ে গেছে।’

‘উলা, উলা। মানে হ্যাঁ।’

‘তারমানে ফ্রি ওয়ার্ল্ডের মতো?’

‘ওটা কী রে! গেইমস নাকি? শুনতে তো পলিটিক্সের মতো লাগছে।’

‘এটা ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড। ওখানে তুমি নতুন মানুষ হতে পারবে। যেমন ধরো, আমার মন চাইলো ফ্রি ওয়ার্ল্ডে গিয়ে নামকরা ব্যাংক ডাকাত হবো, কিংবা ধরো সিরিয়াল কিলার। আবার কেউ চাইলে সিএনজি অটোরিকশাও চালাতে পারে।’

‘কী মারাত্মক! একেবারে মিংকাস্কু গেম দেখি! তোর বাবার ওইরকমই কিছু হয়েছেরে। সমস্যা হলো, এটা ভার্চুয়াল দুনিয়া না। বাস্তব দুনিয়া অনেক..।’

তৈয়ব আটকে গেলো। বাস্তব দুনিয়া কঠিন হবে কেন? ভার্চুয়ালের চেয়ে বাস্তবই তো সহজ। বাস্তবে সিএনজি অটোরিকশা চালালে টাকা কামানো যায়। গেম খেললে পাওয়া যাবে না।

‘মামা, তুমিও খেলো। তুমি চাইলে বোতলবন্দি জিনের ক্যারেকটার নিতে পারো। সে সবার উপকার করে বেড়ায়।’

‘কুরামুকা! এটাই করবো! দরকার হলে একটা অ্যাপ বানাবো। টাকা-পয়সা ছাড়া যেকোনও সাহায্য পেতে এই বাটন চাপ দিন। ভালো আইডিয়া পৃথা। তবে তার আগে তোর বাবার কেইসের সমাধান করতে হবে। খাদিজা! এক কাপ চা দাও!

 

রাত দশটায় কাঁচুমাচু মুখ করে ঢুকলেন ইফতেখার সাহেব। ঘেমে একাকার।

‘দুলাভাই, কেমন নাচলেন? দিঘীর পাড়ে কেউ এসেছিল?’

ইফতেখার সাহেব কিছু না বলে মাথা নাড়াতে নাড়াতে বাথরুমের দিকে গেলেন। যেন মহা অনর্থ হয়েছে। বিড়বিড় করে বললেন, ‘এসব কী! এসব কী!’

 

শান্তনা কিছু বললেন না। তিনি সারাদিন এ বিষয়ে তার গোটা পাঁচেক বান্ধবীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন, গ্রুপে ভিডিও চ্যাট করেছেন। কেউ সুরাহা দিতে পারেনি। সবচেয়ে বড় কথা, একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের নামও বলতে পারলো না কেউ। শান্তনা তো অবাক, দেশে কি পাগলের অভাব পড়েছে! অবশ্য তিনি নিজেও এমন কোনও ডাক্তার চেনেন না।

রম্য গল্প: হাবুডাস্টিং

 

‘তুমি কি এখনও বিসটু?’

‘মানে! আমি বিসটু হবো কেন। এ নাম তুমি জানলে কী করে? এ নাম তো কারও জানার কথা না।’

‘ও! তার মানে আমাদের বজলু সাহেব ফিরে এসেছেন। তা শরীর ভালো আপনার?’ সুর বদলে গেলো শান্তনার। ঝড়ের আগের শান্ত পরিস্থিতি যাকে বলে।

‘শরীর ভালো। শুধু নাচতে নাচতে সুগার ফল করেছিল। মানে…ইয়ে…ব্যায়াম করতে করতে সুগার ফল…। আমি নাচবো কেন! আমি পাগল নাকি!’

তৈয়ব আর পৃথা ছুটে এলো।

‘দুলাভাই! এদিক তাকান! পৃথা ক্যামেরা রেডি?’

‘রেডি মামা।’

‘দুলাভাই, এবার বলুন, আপনাকে এখন নাচতে হবে। ব্যালে ড্যান্স। এ নৃত্যে ভুড়ি কমে। আপনার তো ভুড়ি আছে। নাচেন দুলাভাই। রেডি ওয়ান টু…।’

ইফতেখার হোসেন ওরফে বজলু সাহেব সহজে রাগতে পারেন না। তিনি অসহায়ের মতো পাথুরে চোখ করে তাকিয়ে থাকেন। এরপর তোতলাতে থাকেন।

‘পা..পা পাগল ছাগলে ভরে গেছে ঘরটা! আমি নাচবো! ভরতনাট্যম করবো! আর সেটা ভিডিও করবে! হু!’

ওহ দুলাভাই। আমি ভাবলাম আপনি বিসটু ভাই অবস্থায় আছেন। আবার যখন বদলে যাবেন তখন ডাক দেবেন। আপনার নাচের ভিডিও করবো। আপনি সম্ভবত বাংলাদেশের প্রথম হাবুডাস্টিং রোগী।’

‘পৃথা! যাও পড়তো বোস!’

পৃথা মনমরা হয়ে চলে গেলো। তৈয়বও ঘাঁটালো না আর। বেচারা এমনিতেই টায়ার্ড।

 

এক সপ্তাহ যেতেই ইফতেখার সাহেবের বিষয়টা মোটামুটি গা সওয়া হয়ে গেছে সবার। জানাজানিও হয়েছে। অনেকেই দেখতে এসেছেন। অফিসের কলিগরাও। তারা এসে শান্তনার সঙ্গে গল্পও করে গেছেন। ‘ভাবী, ইফতেখার স্যার যখন বিসটু থাকেন, তখন অফিস মাতিয়ে রাখেন। এমন সব জোকস বলেন যে আমাদের ডিডি স্যারও হেসে গড়াগড়ি। আর স্যার হাসলে বাকিরা তিনগুণ জোরে হেসে ওঠে। হি হি হি।’

 

এদিকে মনে রাখা নিয়ে ইদানিং আর সমস্যা হচ্ছে না ইফতেখার সাহেবের। তৈয়বের বুদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো তিনি ডায়রিতে টুকে নিচ্ছেন। তাই বিসটু-বজলু যে-ই আসুক, কাজের সমস্যা হচ্ছে না।

 

আরও সপ্তাহখানেক পর। তৈয়বের বড় মামা এলেন এক ভদ্রলোককে সঙ্গে নিয়ে। ডাক্তার ফারুক। গোলগাল ভারী চশমা পরা পরিপাটি মুখ তার। তৈয়বের নতুন অভিধানের ভাষায় একেবারে মাটিয়ালি চেহারা।

তিনি এমনভাবে হাসলেন যেন এক হাসিতেই তিনি তৈয়বের গোটা আত্মজীবনী পড়ে ফেলেছেন। তৈয়ব ছুটে গেলো তার আপার দরবারে।

‘আপা! দুলাভাই কই? ডাক্তার এসেছে।’

‘জানি না। আজ সম্ভবত আন্ধারমানিক গ্রামে গেছে। গ্রামবাসীকে ম্যাজিক দেখাবে আর জোকস বলে লোক হাসাবে। সঙ্গে দুতিনজন জুটিয়েছে। ওরা লোকজনের কাছ থেকে টাকাপয়সা তুলবে।’

‘দুলাভাই তো ম্যাজিক পারে না। দেখাবে কী?’

‘আরে ওটাই তো। জাদুকর জাদু দেখাতে পারছে না, সেটা দেখে লোকে নাকি হেসে গড়াগড়ি খাবে। যত হাসি তত টাকা।’

তৈয়ব চিন্তায় পড়ে গেলো। আপা এত নির্বিকারভাবে এমন সিরিয়াস কথা বলছে কেন? আপাকেও হাবুডাস্টিংয়ে ধরলো নাকি?

‘আমিও ভাবছি একটা কিছু করবো রে তৈয়ব।’

‘তুমি তো মাস্টারি করছো। দুইটা ব্যাচও পড়াও। এখন কি অনলাইনে জামা-কাপড় বেচবে?’

‘না। তোর দুলাভাইয়ের মতো হবো। আমার নতুন নাম দিলরুবা খাতুন। আমি মানুষের বাসায় ছুটা বুয়ার কাজ নেবো।’

‘ব্যাপারটা ইস্টাকুলিং, তবে কিছুটা ভ্যাংকু টাইপ কাজ। তোমাকে দিয়ে হবে না। তুমি দুলাভাইর সঙ্গে সঙ্গে থাকো। জাদুকরের অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে।’

 

চেহারাটা রোবটের মতো করে চলে গেলেন শান্তনা। তিনি মনে হয় এখনই দিলরুবা খাতুনের ভূমিকায় অভিনয় করার চেষ্টা করছেন। খাদিজা কয়েকবার আড়চোখে দেখলো। শান্তনার কথায় তৈয়বের মতো সেও খানিকটা বিরক্ত।

 

ডাক্তার সাহেবকে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো না। ইফতেখার সাহেব চলে এলেন তাড়াতাড়ি। এসেই মামা শ্বশুরকে লম্বা করে সালাম দিলেন। বোঝা গেলো তিনি এখনও বিসটুই আছেন। তৈয়বের মামা অন্যমনষ্ক হওয়ার ভান করে উঠে গেলেন। ভাগনি বলেছে পাগলের ডাক্তার নিয়ে আসতে, তিনি নিয়ে এসেছেন। বাকি কাজ ডাক্তারের।

 

কথা শুরু করলেন ডাক্তার ফারুক।

‘আচ্ছা, ইফতেখার সাহেব। আপনি কি ছোটবেলায় খুব কড়া শাসনে ছিলেন? মানে আপনাকে কেউ…।’

‘কী বলেন ডাক্তার সাহেব! মারের চোটে চোখে আন্ধার দেখতাম। আমাদের বয়সী যারা, তাদের মধ্যে কে কড়া শাসনে ছিল না বলেন তো? জীবনে একটা চড়-থাপ্পর খান নাই? পশ্চিম দিকে ফিরে চোখ ধরে বলেন তো? মার-টার খেয়ে আপনি কি আমার মতো পাগলা কিছিমের মানুষ হয়ে গেছেন?’

‘হুমম। ঠিক বলেছেন। তবে আপনি তো পাগল কিছিমের না।’

‘তো এখন কী করবেন? আমার চিকিৎসা করবেন?’

‘সেজন্যই তো এসেছিলাম। তবে মনে হচ্ছে না আপনার কিছু হয়েছে। পুরোটা অভিনয়। এ টাইপ রোগ হুট করে হওয়ার কথা নয়।’

‘এক্সাক্টলি। আমার তো আসলে কোনো রোগই হয়নি। রোগ হলে হয়েছে ওই বজলু বেটার। মানুষ না হয়ে তার হওয়া উচিত ছিল বদঙ্গা। মানে সারাদিন বসে কাজ করবে, খাবে, ঘুমাবে, বাথরুমে যাবে, চুল আঁচড়াবে, ক্যালেন্ডার দেখবে, ক্যালেন্ডারে দাগ দেবে.. ওয়াক! বমি আসার মতো লাইফ।’

‘তারমানে আপনি এখন সেকেন্ডারি ক্যারেক্টারে আছেন। যে চরিত্রটা আপনার অবচেতনে আপনি এতদিন লালন করে আসছেন…।’

‘উল্টোটাও হতে পারে। এতদিন আমি ওই বজলুর ভান ধরে ছিলাম। যে কিনা একটা গামবুশকা টাইপ লোক।’

‘কী টাইপ?’

‘ও বুঝবেন না। নতুন শব্দ।’

‘ওহ। ইন্টারেস্টিং। আমি অবশ্য আপনার মধ্যে সমস্যা আসলেই দেখছি না। কিন্তু আপনার মামা শ্বশুর আমার পরিচিত। উনি খুব করে বললেন আপনার সঙ্গে একটু আলাপ করে যেতে। বাই দ্য ওয়ে, এই আলাপটা কিন্তু।’

‘আই নো। আমি জানি। এসব নিয়ে আমার পড়াশোনা করা শেষ। এটাকে বলে টক থেরাপি। পারসোনালিটি ডিজঅর্ডার হলে দিতে হয়। কথা, কথা আর কথা। মানে বক বক বক বক। খাঁটি বাংলায় বকবক চিকিৎসা। হা হা হা। তা সারাদিন লোকজনের সঙ্গে বক বক করেন? এর জন্য ভিজিটও নেন? কত মিনিটে কত নেন?’

‘ভিজিটটা ধরেন, হাজারখানেক। আমাদের কাছে তো লোকজন খুব একটা আসে না। বক বক করেই চলতে হয়। তবে হ্যাঁ, কিছু ওষুধপত্তর আছে বটে। আপনি যদি চান তো…।’

‘আপনি বুদ্ধিমান মানুষ। জীবনটাকে এভাবে একটা কাজ করে শেষ করে দেওয়ার মানে হয় না। আপনি হয়ে যান কথাবাবা। এখন নতুন কিছু করার যুগ। আপনি একটা সেন্টার খোলেন। নাম দেন কথাবাবার দরবার। লোকজন তাদের মনের কথা, দুঃখের কথা বলতে আপনার কাছে আসবে। আপনি পড়াশোনা জানা লোক। বিচিত্র সব আলাপ করবেন, আলাপের ফাঁকে চিকিৎসাও চলবে। তবে বেশভুসা বদলাতে হবে। এমন শার্টপ্যান্ট সুট-টাই পরে হবে না। ফ্যাশন ডিজাইনার ডেকে একটা সাদা আলখাল্লা বানিয়ে নিন। শুরুতে বেশি ভিজিট নেবেন না।’

 

সাইকিয়াট্রিস্ট ভদ্রলোক চিড়িং করে লাফিয়ে উঠলেন। ঈদের দিনের মতো করে কোলাকুলি করলেন ঘটা করে।

‘আপনার চিকিৎসা করবো কি ভাই, আপনি আমার করে ফেললেন। এই নেন পাঁচশ টাকা। আমার কাছে আর নেই। থাকলে এক হাজারই দিতাম। কালকেই কথাবাবা সেন্টার উদ্বোধন হবে। প্লিজ আর কাউকে আইডিয়াটা দেবেন না।’

 

আড়াল থেকে যারা ঘটনাটা দেখলো, তারা একইসঙ্গে ভুরু কোঁচকালো, আবার খুশিও হলো। তৈয়ব বিড় বিড় করে বললো, ‘ঘটনা পুরো লদুভদু হয়ে গেলো। বিসটু দুলাভাই আসলেই জিনিয়াস।’

 

আরো কিছু দিন পর। শান্তনার বড় খালা শেফালি বেগম এসেছেন। সঙ্গে ছোট খালা, খালু, বাচ্চা-কাচ্চা। তৈয়বের মেজো মামা-মামিরাও হাজির। ঘরভর্তি লোকজন। তবে থমথমে পরিবেশ। কারণ ছোটখাটো একটা দরবার বসিয়েছেন বড় খালা। দরবারের মধ্যমণি হয়ে টুলে মাথা নিচু করে বসে আছেন ইফতেখার হোসেন বজলু।

ওদিকে সবার জন্য নাশতা আর রান্না নিয়ে নাকানিচুবানি খাচ্ছেন শান্তনা আর খাদিজা। অন্যসময় হলে রান্নাঘরে ভালোই সময় দিতেন ইফতেখার হোসেন। কিন্তু আজ পারছেন না। কারণ তাকে বসে থাকতে হচ্ছে। উঠতে গেলেই উঁহু করে উঠছেন বড় খালা। তিনি এসেছেন তার ভাগনি-জামাইয়ের দ্বৈতসত্ত্বা সংক্রান্ত সমস্যার চূড়ান্ত সমাধান করতে।

টুলের ওপর বসে ঠিক সুবিধা করতে পারছেন না ইফতেখার হোসেন বজলু। হেলান দেওয়ার মতো সোফা হলে ভালো হতো। কিন্তু সোফা সব অতিথিদের দখলে।

একটু পর পর শান্তনাকে চা-বিস্কিট দিতে বলছেন খালা। পৃথা মোবাইলের ক্যামেরা অন করে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। তবে সামনে আসছে না। এই নানীকে সে বাঘের মতো ভয় পায়।উনার সামনে তার জাঁদরেল মাও বিড়ালের মতো মিউ মিউ করে।

‘তা তোমার এসব নাটক কদিন চলবে শুনি?’

‘জি খালা আর চলবে না। ঠিক করেছি রুমে নিজেকে বেঁধে রাখবো। নাচগান, ম্যাজিক, ভাঁড়ামি যা হবে সব ঘরের ভেতর হবে।’

‘ঘরে বসে থাকলে চাকরি করবে কে? বউ চাকরি করে বলে বসে বসে খাবা?’

‘হোম অফিস করবো। এরপর যত ছুটি আছে সব নেবো। কয়েকমাস বন্দি থাকলে সেরে যাবে মনে হয়।’

‘সদরুল আমিন পীরের কাছে নিয়ে যাবো। তোমার এইটা ভালো জিন না।’

‘আমারও তাই মনে হয়, জিনেটিক সমস্যা হতেই পারে। তবে আমার বংশে…।’

তৈয়বের ইশারায় চুপ করে গেলেন ইফতেখার।

‘দুলাভাই ইয়ে.. এই জিন সেই জিন না। এটা হলো মানে.. জিন ভূতের…।’

‘তৈয়ব! ভূত কীরে? খবরদার ভূতটুত বলবি না। জিনজাতি নিয়ে মশকরা না! আমি অনেকবার জিনের সঙ্গে কথা বলেছি!’

‘জি খালা। জিন নিয়ে টলকামি করা, ইয়ে মানে মশকরা করা ঠিক না।’

 

শান্তনা চৌধুরী চা-বিস্কিট রেখে পাশে বসলেন। চিনচিনিয়ে উঠলেন বড় খালা।

‘তুই আবার বসলি কেন? কয়টা বাজে খেয়াল আছে? আমার ডায়াবেটিস জানিস না? সাড়ে আটটার মধ্যে খেতে হয়।’

‘চুলায় মুরগি। ওটা হলেই খাবার দিচ্ছি।’

‘খাদিজাকে বল শুকনা সুপারি আর হাকিমপুরি জর্দার পান আনাতে। ভাত খাওয়ার পর রাতে ফলটল খাই। নাশপতি আনানোর ব্যবস্থা কর। তোর ফ্রিজে দেখলামফল নাই। আইসক্রিমে ভর্তি। কে খায় এত আইসক্রিম! পৃথা খায় নাকি? থাবড়াইয়া আইসক্রিম খাওয়া বন্ধ করাবি। তা না হলে পেটে লম্বা লম্বা কৃমি হবে। তারপর রাত-বিরাতে সেই কৃমি..।’

‘ঠিক আছে খালাম্মা। আমি পান আনাচ্ছি। আপনি তাবিজ আনার ব্যবস্থা করেন। কাকে ফোন করবেন করেন।’

‘ফোনে কাজ হবে না। জিনে ধরা লোককে সাথে নিয়ে যেতে হয়।’

‘নিয়ে যান। লোক ভাড়া করে আনতে হবে। ও সহজে যেতে চাইবে না। দড়ি দিয়ে বেঁধে চ্যাংদোলা করে নেবে।’

‘তোর কি ধারণা সেই ব্যবস্থা করি নাই? কাল সকালে দেখবি খেলা। সোহেল আর মজিব মিয়াকে আসতে বলসি।’

 

তৈয়ব আর পৃথা মুখ চাওয়া-চাওয়ি করলো। যত যাই হোক, তারা বিসটু চরিত্রটাকে বেশ পছন্দ করে। কারণ ফ্রিজের আইসক্রিমগুলো বিসটুই নিয়ে আসেন।

কিন্তু বড় খালা ধরে বেঁধে দুলাভাইকে এভাবে নিয়ে যাবে, এটা মেনে নিতে পারছে না তৈয়ব। এদিকে বড় খালার কাছে তার বড় আপাও মহা অসহায়।

‘খাদিজা! এই শরবত চা বদলাইয়া আন। আরও দুই চামচ পাতা দিবি। খবরদার চিনি দিবি না!’

‘আমিই যাচ্ছি খালাম্মা।’

শান্তনা সামনে থেকে পালিয়ে বাঁচলেন যেন। বজলুর দিকে তাকিয়ে তার মায়াও হচ্ছিল। বেচারা এমনিতেই লোকজনের সামনে বসতে পারে না।

 

‘খালা একটা কথা। ইয়ে মানে…।’

কাঁচুমাচু হয়ে আছেন বজলু। তারপর দুম করে মাথাটা একেবারে বুকের কাছে মিশে গেলো ইফতেখার হোসেনের। বাকিরা ঘাবড়ে গেলেও তৈয়ব আর পৃথা টানটান উত্তেজনা নিয়ে তাকিয়ে আছে।

যথারীতি তড়াক করে মাথা তুললেন ইফতেখার হোসেন বিসটু। তারপর মুখটাকে জোকারের মতো চওড়া করে জোরসে বললেন, ‘আমি খাই আইসক্রিম! সব আমার কেনা। এর মধ্যে বাটার আইসক্রিমটা আমার ফেভারিট।কারণ ওটা খেলে আইসক্রিম খাচ্ছি নাকি মাখন খাচ্ছি টের পাওয়া যায় না।’

 

তৈয়ব আর পৃথা খুশিতে প্রায় লাফই দিতে বসেছিল। ওদিকে বিসটুর গলা শুনে শান্তনার ঠোঁটের কোনায়ও সামান্য হাসি খেলে গেলো। মনে মনে বললেন, ‘যাক এতক্ষণে আসার সময় হয়েছে উনার।’

‘কী! তুমি এই বুড়া বয়সে আইসক্রিম খাও?’ বড় খালার মন চাইলো খাদিজাকে দিয়ে বেত আনাতে। কিন্তু দোকানে সম্ভবত আজকাল বেত বিক্রি করে না।

‘জি খালা। আপনি লাস্ট কবে আইসক্রিম খেয়েছেন বলেন তো?’

বড় খালা নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছেন না। তবে মনে মনে ঠিকই হিসাব করতে শুরু করেছেন। গত সপ্তাহে ফিরনি আর পায়েস খেয়েছিলেন সামান্য। তবে শেষ কবে আইসক্রিম খেয়েছেন সত্যিই মনে পড়ছে না তার।

 

ইফতেখার হোসেন বিসটুর কথায় সোফায় বসে থাকা মেজো মামা আর মামিও উসখুস করে কী যেন বললেন। পরে সাহস করে একটু গড়া চড়িয়েই মেজো মামা বললেন, ‘আমার গলাটা কেমন শুকনা শুকনা লাগছে। তৈয়ব, বাটিতে করে সবাইকে একটু আইসক্রিম দাও।’

বাবাকে বাদ দিয়ে বাকিদের আইসক্রিম খাওয়ার ভিডিও করতে শুরু করলো পৃথা। শান্তনা চটজলদি কাচের বাটি আর চামচ নিয়ে হাজির। খাদিজা মহা উৎসাহে ফ্রিজ থেকে একটার পর একটা আইসক্রিমের বক্স বের করছে।

ছোট খালুও বললেন, ‘আইসক্রিম দিয়ে তো দেখছি হাতমুখ ধোয়া যাবে। জামাই বাবার দেখি ভালোই মিষ্টি খাওয়ার অভ্যাস।’

‘এই নেন খালা। এক চামচ খেয়ে দেখেন। নতুন ফ্লেভার।’

 

ইফতেখার হোসেন ওরফে বিসটু উঠে এক চামচ আইসক্রিম বাড়িয়ে ধরেছেন বড় খালার দিকে। মুখের কয়েক ইঞ্চি দূরে গোলগাল চামচে শোভা পাচ্ছে গোলাপী রঙের আইসক্রিম। সেটা থেকে আবার শীতল বাষ্প উঠছে। সত্যি সত্যি মাখনের গন্ধও পাচ্ছেন বড় খালা। তার মনে হলো বেঁচে থাকতে কি সত্যিই তার আর আইসক্রিম খাওয়া হবে? মুখের ভেতর এক ধরনের হাহাকার জন্মালো যেন। কড়া কোনো কথাও মাথায় আসছে না এ মুহূর্তে। মনের একটা অংশ নিশ্চিত হলো যে ইফতেখারকে আবার সেই জিনে ধরেছে। তাকে আইসক্রিম দিয়ে কাবু করার চেষ্টা করছে জিনটা। আবার মনে হলো, সামান্য এক চামচ আইসক্রিমই তো। বিষ তো আর না।

 

‘কই খালা, গলে যাবে তো! নিন। হা করেন। আমি খাইয়ে দেই। নিজে থেকে খেলে অপরাধবোধ কাজ করবে। আমি খাওয়ালে বলতে পারবেন, জামাইর আবদার ফেলতে পারি নাই। তাই খেয়েছি।’

হো হো করে হেসে উঠলো সবাই। শেষ পর্যন্ত আলগোছে চামচটা মুখে পুরেই ফেললেন বড় খালা।

‘ওরে কী ঠান্ডারে। আমার দাঁত আছে নাকি এসব ঠান্ডা খাওয়ার। তারউপর আবার ইনসুলিন নেই নাই। সুগার বাড়লে আমি জানি না বাপু।’

এমন আরও কী কী সব বললেন বড় খালা। সেসব কথায় কারও কান নেই।

তৈয়বের মেজো মামি বাচ্চাকাচ্চাদের সঙ্গে একটা খেলা শুরু করে দিয়েছেন। টিসু দলা পাকিয়ে ময়লার ঝুড়িতে ছুড়ে ফেলার খেলা। মেজো মামা তাকে বোঝাচ্ছেন, ‘ফ্যানের বাতাসের গতিবেগটা তোমাকে বুঝতে হবে। বাতাসের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ছুড়তে হবে। তখন মারবে একদিকে, যাবে ঝুড়িতে।’

এদিকে ছোট খালুর হাতে গিটার ধরিয়ে ইফতেখার হোসেন বললেন ‘খালু আপনি গিটার বাজান। আমি গান ধরি। এর মধ্যে কয়েকটা গান নিজে বানিয়েছি। একটা লাইন এমন- ওরে আজ তোরা নাচরে ঘরের বাহিরে। আইসক্রিম খেয়ে গলা গরম হয়ে গেছে। এখন গান না গাইলে হচ্ছে না।’

ওদিকে তৈয়ব দ্রুত নোট নিচ্ছে। ‘হাবুডাস্টিংয়ের প্রথম উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো, এটি মারাত্মক ছোঁয়াছে। সম্ভবত মস্তিষ্ক থেকে নির্গত তরঙ্গ আকারে এটি ছড়ায়।’

বিসটু সাহেব হেঁড়ে গলায় গান ধরতেই শান্তনার মনে হলো তার এখনই পুলিশে ফোন দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো আশপাশের কোনো থানার নম্বর সেভ করা নেই। বান্ধবী নিপুর কাছে নিশ্চয়ই কারও না কারও নাম্বার আছে। তাকে ভিডিও কল দিতে হবে। মোবাইল ফোন আনতে উঠে গেলেন তিনি।

 

তারপর? তারপর বড় খালার সঙ্গে আইসক্রিম খেতে খেতে খাদিজা যখন তার ভূত দেখার গল্পটা বলছে, তখন তৈয়বের মাথায় এলো নতুন শব্দটা, পৃথাকে ডেকে বললো, দেখ পৃথা! জীবনটা কত ফিড়িংশু!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!