মৃত্যু নিয়ে অপার কৌতূহল মানুষের। আর সেই কৌতূহলকে আনুষ্ঠানিক রূপ দিতে আয়োজন করা হয় নানা উৎসবের।
মৃত্যুর দরজা থেকে, স্পেন
পুরাণে আছে, মারা যাওয়ার পর আবার জীবিত হয়েছিল লাজারুশ। সেই লাজারুশের বোন মার্তা প্রায় মৃত্যুর হাত থেকে ফিরে এসেছিল। মার্তার ফিরে আসাটাকে উদযাপন করা হয় স্পেনের ছোট শহর লাস নিয়েভেসে। উৎসবের নাম ফিয়েস্তা দে সান্তা মার্তা দে রিবারতেমে। এক বছর আগে যে মানুষগুলো প্রায় মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছিল, তাদের শোয়ানো হয় খোলা কফিনে। এর পর কফিন কাঁধে শুরু হয় পদযাত্রা। একপর্যায়ে ওই ব্যক্তি ঘটা করে নেমে আসেন কফিন থেকে। এর মাঝে চলে হই-হুল্লোড় আর খানাপিনার পার্টি।
ওবোন, জাপান
মেক্সিকোর ডে অব দ্য ডেড বেশ জনপ্রিয় হলেও জাপানেও আছে কাছাকাছি আরেকটা উৎসব। যাকে বলে ওবোন। বছরের একটি নির্দিষ্ট দিন মৃতরা মর্ত্যে ফিরে আসে এ বিশ্বাস থেকেই এ উৎসবের শুরু। চান্দ্রবর্ষের সপ্তম মাসের ১৫তম দিনে (আগস্টের মাঝামাঝি) অনেক শহরেই দেখা যায় পথেঘাটে লণ্ঠন জ্বলতে। মৃতরা যাতে পথ চিনে যার যার বাড়ি যেতে পারে সে জন্য এ ব্যবস্থা। বাড়িতে আবার বিশেষ বেদি বানিয়ে তাতে রাখা হয় বাহারি সব খাবার। এর পর আবার আত্মারা যাতে পরপারে তাদের প্রিয়জনদের কাছে ফিরে যেতে পারে সে জন্য পানিতে ভাসিয়ে দেওয়া হয় লণ্ঠনগুলো।
চুমবেন, কম্বোডিয়া
এক-দুদিন নয়, টানা ১৫ দিন চলে এ উৎসব। মৃতদের প্রতি সম্মান দেখাতে সবাই জড়ো হয় এ সময়। যত ব্যস্ততাই থাকুক, কম্বোডিয়ানরা এ সময় প্যাগোডাগুলোতে গিয়ে খাবার দিয়ে আসবেই। শেষ দিনটা সাধারণত উদযাপন করা হয় ২৮ সেপ্টেম্বর। ক্যালেন্ডারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন হিসেবে দেশের সব জায়গায় সারি সারি মানুষ এক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে চুপচাপ।
রাদোনিৎসা, রাশিয়া-ইউক্রেন-বেলারুশ
তিনটি দেশেরই সাধারণ উৎসব এটি। মৃতদের স্মরণে উৎসব হলেও রাদোনিৎসা মানে স্ফূর্তি। অর্থাৎ স্মরণটা করা হয় বেশ আনন্দ-উৎসবের মধ্য দিয়েই। ২৫ এপ্রিল উৎসবের দিন রাশিয়া, ইউক্রেন ও বেলারুশের মানুষরা সমাধিগুলোতে গিয়ে যথারীতি ফুল, খাবার ও ইস্টার এগ রেখে আসে। অবশ্য চলমান যুদ্ধের কারণে আসন্ন রাদোনিৎসায় সবার মধ্যে আদৌ আনন্দের আমেজ থাকবে কিনা তা নিয়ে আছে ঘোরতর সন্দেহ।
ক্ষুধার্ত ভূত, চীন
উৎসবের ইংরেজি নাম হাংরি ঘোস্ট ফেস্টিভাল। জপানের ওবোন উৎসবের দিনই এটি পালন করা হয়। তবে এ ক্ষেত্রে চীনারা পৃথিবীর বুকে ফিরে আসা মৃত আত্মাদের একটু বেশিই ভয় পায়। তাদের মতে, আত্মারা এদিন ফিরে আসে দারুণ খিদে নিয়ে। যে কারণে দিনভর চলতে থাকে রান্নাবান্না। ‘ভূতে’র জন্য খাবারভর্তি টেবিল সাজিয়ে-গুছিয়ে তারা নিজেরা খেতে বসে আলাদা একটি জায়গায়। আত্মাদের মেজাজ-মর্জি ঠিক রাখতে এ সময় জ্বালানো হয় নানা ধরনের ধূপকাঠি।
(আমাদের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে মাত্র ১০ টাকা দিয়ে অংশ নিতে বিকাশ করুন 01976-324725 নম্বরে)
তিওয়াহ, ইন্দোনেশিয়া
ইন্দোনেশিয়ার সেন্ট্রাল কালিমান্তান এলাকায় থাকে দায়াক নাজু নামের একটি গোষ্ঠী। মৃতের জন্য তারা পালন করে অদ্ভুত আচার ‘তিওয়াহ’। সমাহিত করার এক মাস বা এক বছর পর তারা মৃতদেহটি আবার মাটি থেকে তুলে আনে। এর পর হাড়গোড় বা অবশিষ্টাংশ যা-ই থাকুক, সেটাকে তুলে সমাহিত করে অন্যত্র। এমনটা না করলে নাকি ঘোর অমঙ্গল নেমে আসবে ওই গোষ্ঠীর ওপর।