‘কারও ওপর ক্ষোভ থেকে দেশ ছাড়িনি। দুই দিনের জন্য গিয়েছিলাম। ওখানে গিয়ে এমন ফেঁসে গেলাম, আর আসতে পারিনি।’ বললেন চিত্রনায়িকা অঞ্জু ঘোষ। তিনি এখন স্থায়ীভাবে আছেন ভারতের কলকাতায়। মাঝে মাঝে বাংলাদেশে আসেন, তবে এবার অনেক বছর পর এসেছেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (বিএফডিসি)। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি গত শতকের আশি ও নব্বইয়ের দশকের জনপ্রিয় এই চিত্রনায়িকাকে সংবর্ধনা দিয়েছে। আজ রোববার বিকেলে রাজধানীর এফডিসিতে সংগঠনটির কার্যালয়ে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে শুরু হয় অনুষ্ঠান। এ ব্যাপারে চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন হাসতে হাসতে বলেন, ‘আজ আমি নিজেই একটু দেরি করে এসেছি। কারণ আজ আর সেই বেদের মেয়ে জোসনার জন্য অপেক্ষা করতে চাইনি। আমি চেয়েছি, আজ অন্তত জোসনা আমার আগে চলে আসুক।’
তোজাম্মেল হক বকুল পরিচালিত ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ ছবিতে একসঙ্গে অভিনয় করেন ইলিয়াস কাঞ্চন ও অঞ্জু ঘোষ । ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৮৯ সালে। এরপর ছবিটি যে ব্যবসা করেছে, বলা হয় বাংলাদেশে আর কোনো চলচ্চিত্র এখন পর্যন্ত সেই রেকর্ড ভাঙতে পারেনি। আজকের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তাই বারবার সেই চলচ্চিত্রের প্রসঙ্গ সামনে চলে আসে।
কোন অভিমান থেকে ভারতে চলে গিয়েছিলেন অঞ্জু ঘোষ? সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি আবারও বলছি, কোনো ক্ষোভ থেকে আমি সেখানে যাইনি। গিয়েছিলাম বেড়াতে। তারপর ওখানে ছবিতে কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি, আর ফেরা হয়নি।’ সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বললেন, ‘আপনারা যে আমাকে এখনো মনে রেখেছেন, আমি সত্যিই দারুণ খুশি হয়েছি। সবার ভালোবাসা দেখে বারবার আমার চোখ ভিজে যাচ্ছে।’
অঞ্জু ঘোষ যখন বাংলাদেশ থেকে চলে গিয়েছিলেন, সেই সময়ের চলচ্চিত্র নিয়ে বললেন, ‘আমি যখন এই ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছিলাম, তখন ক্লাস নাইনে পড়তাম। সেই থেকে অনেক বছর এখানেই কাজ করেছি। এই এফডিসি তখন কী জমজমাট ছিল! একসঙ্গে চার-পাঁচটি ছবির শুটিং হতো এখানে। শিল্পীদের ভিড় লেগে থাকত। তখন পুরো এফডিসি জুড়ে কী ব্যস্ততা ছিল! এটাই ছিল আমাদের ঘরবাড়ি। এটাই ছিল সংসার। কিন্তু এবার এসে হতাশ হয়েছি। সব পাল্টে গেছে। দর্শক যাতে আবার প্রেক্ষাগৃহে ফিরে আসেন, তার জন্য সবাইকে চেষ্টা করতে হবে।’
‘বেদের মেয়ে জোসনা’ ছবির দারুণ সাফল্য নিয়ে অঞ্জু ঘোষ বলেন, ‘ছবিটিতে মাটির টান ছিল। আমরা সবাই মাটিকে ভালোবাসি। এ কারণেই ছবিটি সুপার-ডুপার হিট হয়েছিল।’
অঞ্জু ঘোষকে স্বাগত জানিয়ে আজকের অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন আহমেদ শরীফ, অঞ্জনা, সুব্রত, নাদের খান প্রমুখ। অনুষ্ঠানে অঞ্জু ঘোষের হাতে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির আজীবন সদস্যপদের চিঠি তুলে দেন সংগঠনটির সভাপতি মিশা সওদাগর ও সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান।