লালমনিরহাটে এখন আগাম আলু চাষে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকরা। জেলার বিভিন্ন উঁচু জমিতে আগাম জাতের আলুর পরিচর্যা করতে দেখা গেছে কৃষাণ-কৃষাণীদের। ক্ষেতগুলোতে সবুজ রঙে ভরে উঠেছে আলুর গাছ। স্বল্প সময়ে ফলন এবং বাজারে ভালো দাম পাওয়ার কারণে এখানকার কৃষকদের আগাম আলু চাষের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে।
আগাম আলু চাষ পদ্ধতি
আগাম আলু চাষে সফল হতে চাইলে সঠিক পদ্ধতি মেনে চলা গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষজ্ঞদের মতে:
- উপযুক্ত জমি নির্বাচন: উঁচু ও সুনিষ্কাশিত জমি আগাম আলু চাষের জন্য উপযুক্ত।
- মাটির প্রস্তুতি: জমি ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে আলু চাষের জন্য প্রস্তুত করা হয়। মাটিতে জৈবসার ব্যবহার ফলন বাড়ায়।
- সার প্রয়োগ: প্রতি একর জমিতে ১২০-১৫০ কেজি ইউরিয়া, ২০০ কেজি টিএসপি, ২৫০ কেজি এমওপি, এবং ৫-৬ কেজি দস্তা সার প্রয়োজন। সারের পরিমাণ জমির ধরন ও অবস্থা অনুযায়ী কমবেশি হতে পারে।
- বীজ নির্বাচন ও রোপণ: আগাম জাতের উচ্চ মানের বীজ বেছে নেওয়া জরুরি। প্রতি বিঘায় ৮-১০ মণ বীজ লাগে। বীজ রোপণের পর প্রয়োজন নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার, সেচ এবং মাটি আলগাকরণের।
- রোগবালাই দমন: আগাম আলুর রোগবালাই তুলনামূলক কম হলেও সঠিক বালাই ব্যবস্থাপনা ও সময়মতো ওষুধ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
চাষাবাদের বর্তমান চিত্র
জেলা সদরের কৃষক আব্দুল মজিদ জানিয়েছেন, প্রতি বিঘায় আলুর উৎপাদন ৪৫ থেকে ৬০ মণ পর্যন্ত হতে পারে। তবে গত বছরের তুলনায় বীজ, সার ও কীটনাশকের দাম বেড়ে যাওয়ায় এবার উৎপাদন খরচ বেড়েছে।
এদিকে, বড়বাড়ি বাজারের রাসায়নিক সার ব্যবসায়ী মো. জাহিদ হোসেন জানান, একরপ্রতি ৬০০-৭০০ কেজি বীজ আলুর প্রয়োজন হয়। মাটির উর্বরতা বাড়াতে ৪-৫ টন জৈবসার ব্যবহার ফলনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
সদর উপজেলার কৃষক আজিত হাসান বলেন, “আগাম আলুতে রোগবালাই কম হয় এবং বাজারে ভালো দাম পাওয়া যায়। এ বছর আমি ১ বিঘা জমিতে আগাম আলু চাষ করেছি।”
কৃষি বিভাগের উদ্যোগ
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. সাইফুল আরিফিন জানান, চলতি বছর লালমনিরহাটে ৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ করা হবে। কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন। এবার প্রতি হেক্টরে প্রায় ২৯ টন আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
আগাম আলুর বাজার
আগাম আলু সাধারণত ডিসেম্বরের শেষ থেকে জানুয়ারির মাঝামাঝি বাজারে আসে। এই সময় বাজারে দাম ভালো পাওয়া যায়। ফলে কৃষকরা আগাম আলু চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
লালমনিরহাটের মাটি ও আবহাওয়া আগাম আলু চাষের জন্য খুবই উপযোগী। সময়মতো পরিচর্যা ও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত হলে কৃষকরা আরও লাভবান হবেন।