আমাদের গ্যালাক্সির ঠিক কেন্দ্র বরাবর আছে কিছু বিশেষ তারকা। এগুলোর আচার আচরণ খানিকটা ‘অদ্ভুত’। সম্প্রতি ওই নক্ষত্রগুলোর কর্মকাণ্ড নিয়ে নতুন এক তত্ত্ব দিয়েছেন কয়েকজন গবেষক। বলছেন, তারকাগুলোর বয়স স্বাভাবিক তারার চেয়ে অনেক বেশি হলেও সেগুলো দেখতে বেশ তরুণ। বলতে গেলে অমরত্ব পাওয়ার কাছাকাছি আছে ওই নক্ষত্রগুলো। নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ছে ডার্ক ম্যাটার।
arxiv.org এ প্রকাশিত সাম্প্রতিক গবেষণা প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন ইসাবেল জন, রেবেকা লিন ও টিম লিনডেন। তাদের গবেষণা বলছে, গ্যালাক্সির কেন্দ্র থেকে মাত্র আলোকবর্ষ দূরত্বে থাকা নক্ষত্রগুলোর ভেতর ‘ডার্ক ম্যাটার অ্যানাইহিলেশন’ নামের একটি প্রক্রিয়া চলমান। প্রক্রিয়াটির কারণে নক্ষত্রগুলো নিজেদের মাধ্যাকর্ষণের ফলে চুপসে না গিয়ে বাইরের দিকে এক ধরনের চাপ অনুভব করতে থাকে। অর্থাৎ তারকাগুলো অনেকটা ফুলতে থাকা বেলুনের মতো আচরণ দেখায়। ঠিক এ কারণেই ওরা একটা পর্যায়ে ধ্বংস বা ব্ল্যাকহোলে পরিণত না হয়ে ‘নতুন তৈরি হওয়া তারকা’র মতো আচরণ করে।
নক্ষত্রগুলোর অবস্থান আমাদের গ্যালাক্সির এস-ক্লাস্টার নামের জায়গায়। মিল্কি ওয়ের বাদবাকিসব তারকার মতো নয় এরা। মূলত আমাদের গ্যালাক্সির কেন্দ্রে থাকা স্যাগিটেরিয়াস-এ নামের অতিকায় ব্ল্যাকহোলটিকে ঘিরে দারুণ বেগে প্রদক্ষিণ করছে নক্ষত্রগুলো। গতি সেকেন্ডে প্রায় কয়েক হাজার কিলোমিটার। এমন পরিবেশে মূলত নক্ষত্রের জন্ম হওয়ারই কথা নয়। আবার কেন্দ্রের কাছাকাছি ওই তারকাগুলোর ঔজ্জ্বল্য দেখেও গবেষকরা জানালেন, বয়সের তুলনায় এগুলোকে বেশি ‘তরুণ’। গবেষকদের মতে, ডার্ক ম্যাটারের কণা ও প্রতিকণার সংঘর্ষে (ডার্ক ম্যাটার অ্যানাইহিলেশন) সৃষ্ট এক ধরনের বহির্মুখী বলের কারণেই ওই তারকাগুলো নিজেদের টিকিয়ে রাখতে পারছে এবং সেই সঙ্গে তারা যতটা জোরে ঘোরার কথা, তারচেয়ে বেশি জোরে প্রদক্ষিণ করছে।
স্টকহোম এবং স্ট্যানফোর্ডের একটি গবেষণা দলও খুঁজে পেয়েছেন যে, ডার্ক ম্যাটারের শক্তির কারণেই কেন্দ্রের কাছাকাছি থাকা নক্ষত্রগুলো বাড়তি গতি পেয়েছে, যা কিনা তাদের ভেতরে চলমান নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়ার চেয়েও বড় শক্তির যোগানদাতা। মূলত এ তত্ত্ব সত্য হলে আমাদের গ্যালাক্সিতে ডার্ক ম্যাটারের বিন্যাস এবং সেগুলোর কার্যক্রম নিয়ে অনেক রহস্যের সমাধান মিলবে।
প্রতিবেদনের সহ-লেখক স্টকহোম ইউনিভার্সিটির ইসাবেল জন বলেছেন, ‘আমাদের সিমুলেশন দেখাচ্ছে যে, নক্ষত্রগুলো তাদের জ্বালানি হিসেবে শুধু ডার্ক ম্যাটারের ওপরও বেঁচে থাকতে পারে। আর গ্যালাক্টিক সেন্টারের কাছে অত্যন্ত বেশি পরিমাণে ডার্ক ম্যাটার আছে। এর ফলে ওই নক্ষত্রগুলোকে অমর বলা যায়।
উল্লেখ্য, আমাদের গ্যালাক্সি মিল্কিওয়ের কেন্দ্র বেশ উজ্জ্বল। ক’দিন পর ওই অঞ্চল বরাবর তাক করা হবে একটি ৩০ মিটার ব্যাসের টেলিস্কোপ। এতে ওই এলাকার ডার্ক ম্যাটারের ঘনত্ব ও তারকার অন্যরকম আচরণের আরও পরিষ্কার ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। — নূসরাত জাহান নিশা
#darkmatter #cosmos #galaxy