করোনা প্রতিরোধ করবে এমন কাপড় এর উৎপাদন শুরু করেছে দেশীয় প্রতিষ্ঠান জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফেব্রিকস লিমিটেড। ‘করোনা ব্লক’ নামের এই কাপড় দিয়ে মাস্ক ও পিপিইর মতো ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রীর পাশাপাশি শার্ট, প্যান্ট, জ্যাকেটসহ সব ধরনের পোশাক তৈরি করা যায় বলে দাবি প্রতিষ্ঠানটির।
সুইজারল্যান্ডের দুটি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় এই বিশেষ কাপড় নিজেদের টঙ্গীর কারখানায় উৎপাদন করছে জাবের অ্যান্ড জোবায়ের। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, তাঁদের এই কাপড় স্বাস্থ্যসম্মত। কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। এই কাপড়ের সংস্পর্শে আসার ১২০ সেকেন্ড বা দুই মিনিটের মধ্যেই ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ করোনাভাইরাস ধ্বংস হবে। ২০ থেকে ৩০ বার ধোয়া পর্যন্ত কাপড়ের কার্যকারিতা বজায় থাকবে। তবে সাধারণ কাপড়ের চেয়ে করোনা ব্লক কাপড়ের দাম ২০ শতাংশ বেশি হবে। মানভেদে দাম কিছুটা কমবেশি হতে পারে।
রাজধানীর গুলশানে জাবের অ্যান্ড জোবায়েরের নিজস্ব কার্যালয়ে আজ বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে করোনা প্রতিরোধ করবে এমন কাপড় সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানের চিফ বিজনেস ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড মার্কেটিং অফিসার রাশীদ আশরাফ খান ও সিনিয়র ব্র্যান্ড ম্যানেজার অনল রায়হান।
অনল রায়হান বলেন, ‘আড়াই মাসের পরিশ্রমের ফসল করোনা প্রতিরোধ করবে এমন কাপড়। ইতিমধ্যে বিদেশের পরীক্ষাগারে আইএসও ১৮১৮৪–এর অধীনে কাপড়ের পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। আমরা ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে কাপড়টি রপ্তানি করার জন্য আন্তর্জাতিক মানসনদ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সনদ নিয়েছি। পরীক্ষাগারে প্রমাণ হয়েছে যে বিশেষ এই কাপড়ে মাত্র ১২০ সেকেন্ডে ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ করোনাভাইরাস ধ্বংস হয়। এই কাপড়ে কোনো রকম স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই।’ তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে জাবের অ্যান্ড জোবায়েরই প্রথম করোনা ব্লক কাপড় তৈরি করেছে। বর্তমানে কঠিন সময় পার করা রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পকে টিকিয়ে রাখতে কাপড়টি বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
৫ মে বিদেশি ক্রেতাদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে করোনা প্রতিরোধ করবে এমন কাপড় উন্মুক্ত করা হয়। এমন তথ্য দিয়ে অনল রায়হান বলেন, ইতিমধ্যে এইচঅ্যান্ডএম, জারা, এমঅ্যান্ডএস, লাফ লরেনসহ শতাধিক ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান ও ব্র্যান্ড এই কাপড়ের প্রতি ব্যাপক আগ্রহ দেখিয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) ইউনাইটেড গ্লোবাল হোল্ডিং নামের ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানও এই বিশেষ কাপড় দিয়ে তৈরি ৫ লাখ পিস মাস্ক তৈরির ক্রয়াদেশ দিয়েছে। ঈদের আগেই এসব মাস্ক চলে যাবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, করোনা ব্লক কাপড় দিয়ে তৈরি পিপিই, মাস্কসহ অন্যান্য সুরক্ষা পোশাক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিনা মুনাফায় দেশের হাসপাতালগুলোয় সরবরাহ করতে চায় জাবের অ্যান্ড জোবায়ের। সে জন্য আগামী সপ্তাহে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। এ ছাড়া করোনা ব্লক কাপড় দিয়ে তৈরি করোনা প্রতিরোধ করবে এমন কাপড় এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে অনলাইনে দেশের বাজারে বিক্রি করা হবে।
অন্যদিকে রাশীদ আশরাফ খান বলেন, ‘সুতি, পলিয়েস্টার, ভিসকসসহ সব ধরনের সুতা দিয়েই করোনা ব্লক কাপড় তৈরি করেছি আমরা। তবে নিটেও বিশেষ এই কাপড় উৎপাদন করা যায় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
পরে জানতে চাইলে জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফেব্রিকসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ জাবেদ বলেন, ‘সুইজারল্যান্ডের দুই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বছর দুই আগে ব্যাকটেরিয়া-প্রতিরোধী কাপড় তৈরি করেছিলাম আমরা। সেই ধারাবাহিকতায় করোনাপ্রতিরোধী কাপড় উৎপাদন করেছি। এই কাপড় দিয়ে সুরক্ষা পোশাকসহ সব ধরনের পোশাক প্রস্তুত করা যাবে। স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভাইরাস ধ্বংস হওয়ার কারণে পোশাক না ধুলেও নিরাপদ থাকবে। ফলে এই কাপড়ের পোশাক পরিধান করলে বর্তমানের চেয়ে বেশি সুরক্ষিত থাকা যাবে।’
জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফেব্রিকস লিমিটেড নোমান গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান। নোমান গ্রুপের যাত্রা শুরু হয় ১৯৮৭ সালে। প্রতিষ্ঠার ১৩ বছর পর ২০০০ সালে রপ্তানি বাজারে প্রবেশ করে তারা। এ জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয় জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফেব্রিকস নামে রপ্তানিমুখী হোম টেক্সটাইল প্রতিষ্ঠান। এ পর্যন্ত নোমান গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সেরা রপ্তানিকারক হিসেবে ৪৬টি জাতীয় রপ্তানি পদক পেয়েছে। এর মধ্যে ১১টি ছিল শীর্ষ রপ্তানিকারকের স্বীকৃতি।
নোমান গ্রুপের সেরা রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শীর্ষে আছে জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফেব্রিকস। এ প্রতিষ্ঠানটি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা নুরুল ইসলামের দ্বিতীয় ও তৃতীয় ছেলের নামে নামকরণ করা হয়েছে। জাবের অ্যান্ড জোবায়েরের বর্তমানে ১৮ থেকে ২০ ধরনের পণ্য যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়।