class="post-template-default single single-post postid-648 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

ঢাকায় অপ্রতিরোধ্য ছিনতাই , ভয়ানক টানা পার্টির ভয়ানক ১৪১ স্পট

প্রশাসনের উদাসীনতায় রাজধানীতে ছিনতাই বাড়ছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ‘টানা পার্টি’র দৌরাত্ম্য; যারা ছোঁ মেরে ব্যাগ, ল্যাপটপসহ মূল্যবান সামগ্রী ছিনিয়ে নেয়।

crime

রাজধানীতে গত দুই মাসের অপরাধ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ছিনতাইকারীদের গুলি ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নিহত হয়েছে তিনজন, আহত অর্ধশতাধিক।

মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডে টানা পার্টির কবলে পড়ে গত ৫ ডিসেম্বর মারা যান জাতীয় হৃদেরাগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসক ফরহাদ আলম। গত ২৯ নভেম্বর বিকেলে কর্মস্থল থেকে রিকশায় মোহাম্মাদিয়া হাউজিং সোসাইটির বাসায় ফেরার পথে ছিনতাইকারীরা টান দিয়ে তাঁর ব্যাগ নিয়ে যায়। এতে তিনি ছিটকে রাস্তায় পড়ে আহত হয়েছিলেন।

এ ছাড়া গত ৮ অক্টোবর টিকাটুলীতে এক নারীকে ছিনতাইকারীদের কবল থেকে বাঁচাতে গিয়ে খুন হন ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী আবু তালহা খন্দকার। সোমবার ভোরে দয়াগঞ্জ রেললাইনের কাছে ছিনতাইকারী গৃহবধূ আকলিমা বেগমের ভ্যানিটি ব্যাগ টান দিলে তাঁর কোল থেকে পড়ে মারা যায় ছয় মাসের শিশু আরাফাত।
দেখা গেছে, গত দুই মাসে টানা পার্টির হাতে তিন ডজন ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। ভোরে, বিকেলে এবং সন্ধ্যার পর ঘটেছে এসব ঘটনা। অথচ পুলিশের নথিপত্রে মাত্র ১২টি ছিনতাইয়ের ঘটনার কথা উল্লেখ আছে।
ছিনতাইয়ের শিকার ব্যক্তি ও তাঁদের পরিবারের কাছ থেকে জানা গেছে, প্রতিকার না পাওয়ায় ভুক্তভোগীরা পুলিশের কাছে যাচ্ছে না। তাদের অভিযোগ, ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি চৌকি (চেকপোস্ট) বসালেও গাড়ির কাগজপত্র দেখায়ই বেশি ব্যস্ত থাকেন পুলিশ সদস্যরা। তা ছাড়া ভোরে ও বিকেলে টহল ও তল্লাশি থাকে না বেশির ভাগ এলাকায়। এ সুযোগে বেড়ে গেছে ছিনতাইকারীচক্র।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, রাজধানীর ১৪১টি স্পট আছে যেখানে বেশি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এলাকাভিত্তিক বখাটেরা ছিনতাইয়ের ‘গ্যাং পার্টি’ গড়ে তুলেছে। এরই মধ্যে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ছিনতাইকারীদের বেশ কিছু চক্রের তথ্য সংগ্রহ করেছে। এলাকাও শনাক্ত করা হচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি এলাকায় ছিনতাই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এর মধ্যে মোহাম্মদপুরের কলেজগেট থেকে রিং রোড, আগারগাঁওয়ের সংযোগ সড়ক, খিলক্ষেত থেকে বিমানবন্দর সড়ক, মৌচাক মার্কেট থেকে মগবাজার, সদরঘাট থেকে সূত্রাপুর-দয়াগঞ্জ, ওয়ারী, উত্তরা থেকে আব্দুল্লাহপুর, ঝিগাতলা থেকে রায়েরবাজার-শংকর, মিরপুরের রূপনগর-বেড়িবাঁধ, যাত্রাবাড়ীর দোলাইরপাড়-শ্যামপুর উল্লেখযোগ্য।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খিলক্ষেত থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত সড়কে রাতে ও ভোরে প্রায়ই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি ওই এলাকায় ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ৪০ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।

এদিকে চলতি বছর দুইবার ছিনতাইকারীর কবলে পড়েছিলেন নিউ মার্কেটের কাপড় ব্যবসায়ী আব্দুল মজিদ। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রতি রাতে উত্তরায় বাসায় ফেরার সময় একটা-দুটো চেকপোস্ট দেখি। সেখানে পুলিশ অপরাধী বের করার তল্লাশি করে না। করে ট্রাফিক পুলিশের কাজ। ঝামেলা দেখলে চলে দেনদরবার। তখন অপরাধীরা পাশ দিয়ে চলে যেতে পারে। ’ তিনি আরো অভিযোগ করেন, ‘ভোরে চেকপোস্ট বলে কিছু থাকে না। ’

এর আগে ২০১৪ সালের ২৮ অক্টোবর ধানমণ্ডির সোবহানবাগে টানা পার্টির কবলে পড়ে শিশুসন্তান রাইসার সামনে প্রাণ হারান মা রিপা। ২০১৫ সালের ২৪ আগস্ট কমলাপুরে চিকিৎসক দম্পতি সানজানা জেরিন খান ও মোনতাহিন আহসান ভূঁইয়া রনি একইভাবে পড়েন টানা পার্টির কবলে। মাথায় গুরুতর জখমে কোমায় চলে গেছেন ডা. জেরিন।

এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানার এসআই পীযূষ কুমার সরকার জানান, এই চক্রটি শংকর, রায়েরবাজার ও জাফরাবাদসহ আশপাশে ছিনতাই করত। গেণ্ডারি সোহাগ, সোহেল ও চাচা টুটুলসহ কয়েকজন এই চক্রের হোতা।

গত বছরের ডিসেম্বরে মিরপুর থেকে ছিনতাইকারী চক্রের হোতা গোপালগঞ্জ ছাত্রলীগ নেতা তুহিনকে গ্রেপ্তার করে পল্লবী থানা পুলিশ। পরে তুহিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানায়, মিরপুর কলেজ ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে মিরপুর, পল্লবী, কালশী ও কাফরুল এলাকায় মোটরসাইকেল দিয়ে রিকশাআরোহীদের ব্যাগসহ দামি জিনিস ছিনিয়ে নিত চক্রটি।
ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার নুরুল আমিন বলেন, ছিনতাইরোধে এলাকায় চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এর পরও বিচ্ছিন্নভাবে ঘটনা ঘটে। তবে অপরাধীরাও ধরা পড়ে।
ডিএমপির অপরাধ বিভাগের তথ্য অনুয়ায়ী, গত দুই মাসে ডিএমপিতে মাত্র ১২টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। যেসব ঘটনায় মামলা হয়েছে সেগুলোই তাঁরা বিবেচনায় নিয়েছেন। ডিবি পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, এরই মধ্যে ১৪১ এলাকা বা স্পটকে শনাক্ত করা গেছে। এসব এলাকায় কারা ছিনতাই করছে তা খোঁজ নিচ্ছে ডিবি। হালনাগাদ করা হচ্ছে ছিনতাইকারীদের তালিকা। শিগগিরই বিশেষ অভিযান শুরু হবে। সূত্র: কালের কণ্ঠ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!