ইন্দোনেশিয়ার যাত্রীবাহী বিমান লায়ন এয়ার গত সোমবার সমুদ্রে বিধ্বস্ত হওয়ার পর গতকাল মঙ্গলবার চালকবিহীন বিমান (ড্রোন) ও সোনার প্রযুক্তি ব্যবহার করে উদ্ধার অভিযান চালানো হয়। বিমানের ১৮৯ আরোহীর কেউই বেঁচে নেই বলে মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া গেছে। সমুদ্র থেকে বিমানের ধ্বংসাবশেষ এবং নিহতদের জিনিসপত্র উদ্ধার করা হচ্ছে। তবে উড্ডয়নের মাত্র ১৩ মিনিটের মধ্যে বিমানটি কেন দুর্ঘটনার কবলে পড়ল তা জানা যায়নি। কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত শুরু হয়েছে।
কর্মকর্তারা জানান, পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর পাংকাল পিনাংগামী বিমানটির পাইলট বিমান ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ টাওয়ারের সঙ্গে যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হওয়ার আগে জাকার্তার সুকর্ণ-হাত্তা বিমানবন্দরে ফেরত আসার অনুমতি চেয়েছিল। জানা গেছে, দুর্ঘটনার আগের দিন বালি থেকে জাকার্তার পথে উড়াল দেয় বিমানটি। সে সময়ই এতে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। যদিও বিমান কর্তৃপক্ষের দাবি, সেই ত্রুটি মেরামত করা হয়েছে। বিমানটি অবশ্য পুরনো নয়। গত আগস্টে লায়ন এয়ারের বিমানবহরে যোগ দেয় এটি। একই সময় মোট ১১টি বিমান কেনে কম্পানিটি। দুর্ঘটনাকবলিত বিমানটির মোট উড্ডয়নকাল মাত্র ৮০০ ঘণ্টা।
নিহতদের স্বজনরা গতকাল সময় পার করেছে অপেক্ষায়। তবে তাদের প্রিয়জন ফিরবে—এমন অপেক্ষা আর তাদের মধ্যে ছিল না। তারা মৃতদেহ পাবে, এমন আশায় বসে ছিল। মোট ২৪টি লাশবাহী ব্যাগে গতকাল জাকার্তা পুলিশ হাসপাতালে লাশ নিয়ে আসে। তবে সংকট হলো, এই ২৪টি ব্যাগে ২৪টি লাশই রয়েছে, এমন নিশ্চয়তা দিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। তারা মনে করে, একই ব্যাগে একাধিক ব্যক্তির দেহাবশেষ ঢুকে যেতে পারে।
বোয়িং ৭৩৭ এমএএক্স ৮ নামের এই বিমানটিতে যাত্রী ছিল ১৮১ জন। কেবিন ক্রু ছয়জন এবং দুজন পাইলট। উদ্ধারকারী কর্মকর্তা ইউসুফ লাতিফ বলেন, কাউকে জীবিত পাওয়া গেলে সেটি হবে অলৌকিক ঘটনা। গতকাল উদ্ধারকাজ দেখতে যান দেশটির প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো। যোগাযোগমন্ত্রী বুদি কারিয়া সুমাদিও উদ্ধারকাজে হাত লাগান।
ইন্দোনেশিয়ার দুর্যোগ মোকাবেলা সংস্থার প্রধান সুতোপো পুরো নুগ্রোহো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুর্ঘটনা নিয়ে নানা বার্তা ছড়ানোর বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন। কেউ কেউ কিছু ছবি পোস্ট করে দাবি করেছে, বিমানটি দুর্ঘটনায় পড়ার আগে ছবিগুলো তুলেছে যাত্রীরা। এগুলোর বিষয়েও সতর্ক করে দেন তিনি।
এদিকে এক উদ্ধার কর্মকর্তা জানান, বিমানটি সমুদ্রে ডুবে যাওয়ায় এর ব্ল্যাকবক্স আর নাও পাওয়া যেতে পারে। এর আগে মালয়েশিয়ার যে বিমানটি হারিয়ে যায় সেটিরও ব্ল্যাকবক্স পাওয়া যায়নি।
ইন্দোনেশিয়ায় অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচল ব্যবস্থার ব্যবহার খুব বেশি হলেও নিরাপদ নয়। অভ্যন্তরীণ বিমান ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশ্বে তাদের অবস্থান পঞ্চম। তবে নিরাপত্তা ঘাটতির কারণে ইন্দোনেশিয়ার ওপর দুই বছর আগেও ইউরোপীয় দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞা ছিল। গত সোমবারের দুর্ঘটনার পর আবারও অস্ট্রেলিয়া সে দেশের নাগরিকদের এই কম্পানির বিমান ব্যবহারের ব্যাপারে সতর্ক করে দেয়। সূত্র : বিবিসি, সিএনএন, এএফপি।